ডা. মুহা. মুহিউদ্দিন মজুমদার
সেদিন বন্ধু রাজু আমার চেম্বারে এসে হাজির । ইদানীং তিনি কিছুটা আতঙ্কিত তার কিডনি ঠিক আছে কি না! কারণ তার এক আত্মীয়র কিডনি রোগ বেশ খানিকটা দেরিতে ধরা পড়ে। সেজন্য তিনি এখন নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন? রাজুর মতো জিজ্ঞাসা অনেকের, তাই আজ আলাপ করব কিডনি রোগের লক্ষণ নিয়ে।
কিডনি রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ
আমরা সবাই জানি কিডনি মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা আমাদের প্রস্রাব বা মূত্র তৈরিতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে আমাদের শরীরে যে প্রতিনিয়ত বর্জ্য পদার্থ তৈরি হচ্ছে, কিডনি সেগুলো বের করতে সাহায্য করছে। পাশাপাশি আমাদের শরীরে পানি, লবণ, পটাসিয়াম প্রভৃতি পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা করছে। ফলে কিডনি যখন তার কার্যকারিতা হারায়, তখন আমাদের শরীরে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়, সেগুলো দেখা দেবে। যেমন-
প্রস্রাবের সমস্যা : প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘনঘন প্রস্রাব, প্রস্রাবের রঙের পরিবর্তন, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, কিংবা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, ধীরে ধীরে প্রস্রাব হওয়া বা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া।
শরীর ফুলে যাওয়া : আমাদের মুখ, পা ও সারা শরীর ফুলে যেতে পারে। রোগীরা অনেক সময় বলে থাকেন, ‘আমি ঘুম থেকে উঠে দেখলাম আমার চোখের পাতাগুলো ভারী হয়ে আছে।’
কোমরব্যথা : কতিপয় কিডনি রোগী কোমরব্যথা নিয়েও আসতে পারেন । যেমন প্রস্রাবের ইনফেকশন যদি কিডনি পর্যন্ত পৌঁছায়, কিডনিতে কোনো প্রদাহ, সিস্ট বা পাথর দেখা দেয় এবং ইউরেটারে পাথর হয়, তা হলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ : একজন দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগী উচ্চ রক্তচাপ নিয়েও ডাক্তারের কাছে আসতে পারেন। উচ্চ রক্তচাপ যেমন কিডনি রোগের কারণ, তেমনি আবার আমরা দেখতে পাই, যখন দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ হয়, তার একটি পর্যায়ে এসে মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভোগে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপেরও অনেকগুলো কারণ আছে, যেগুলো কিডনি রোগের কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা তরুণ ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাদেরও অনেকের কিডনিজনিত রোগ থাকতে পারে।
রক্তস্বল্পতা : যারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভোগেন, তারা রক্তস্বল্পতা (ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া) ও রক্তস্বল্পতার লক্ষণ, যেমন বুক ধড়ফড় (palpitation), দুর্বলতা, মাথা ঝিমঝিম করা প্রভৃতি সমস্যা নিয়েও ডাক্তারের কাছে আসেন।
ত্বকের সমস্যা : কিডনির কার্যকারিতা যখন অনেকাংশেই কমে যায়, তখন রোগীদের ত্বকে শুষ্কতা ছাড়াও চুলকানি হতে পারে।
অন্যান্য লক্ষণ : শরীরের লবণপানির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং কিডনির কার্যকারিতা যদি অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়, তখন রোগীদের বমি-বমি ভাব, এমনকি বমিও হতে পারে, খাওয়াদাওয়ায় অরুচি হতে পারে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে, রোগী অসংলগ্ন কথা বলতে পারে এবং রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
উপরোক্ত অনেকগুলো লক্ষণই প্রকাশ পায় যখন কিডনি তার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে । তাই বিশেষ করে যারা ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোন দীর্ঘমেয়াদি রোগ বা প্রায়ই ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাদের নিয়মিত কিডনি চেকআপ করা প্রয়োজন।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান (নেফ্রলজি)
ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত স্বৈরাচারের দোসর রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
১ ঘণ্টা আগে