আতিকুর রহমান, চবি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতিমা। গতানুগতিক টিউশনের পেছনে না ছুটে নিজেই দাঁড় করিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান। ক্লাস শেষে অবসর সময়ে এই দোকান চালিয়ে পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহ করছেন তিনি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে রান্নায় ব্যস্ত হয়ে যান ফাতিমা। রান্না শেষে সোজা ক্লাসের দিকে দৌড়। ক্লাসের শেষে যে একটু বিশ্রাম নেবেন, সেই সময়টুকুইবা কই? স্বপ্নপূরণে যে তাকে ব্যস্ততার মধ্যেই থাকতে হয়। খালেদা জিয়া হলে থাকেন ফাতিমা। সেখানেই চলে তার ভ্রাম্যমাণ দোকানের সব রান্নাবান্না। ক্লাস শেষে দুপুরে তার দোকানের স্পেশাল খাবার শাহি ফিরনি, স্যান্ডউইচ, পায়েস, ডোনাট এবং চটপটিসহ নানা মুখরোচক খাবার নিয়ে হাজির হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনে।
ফাতিমার দোকানের খাবারগুলোর দাম ৩০ টাকা। দামে সস্তা, মানে ভালো এই কথার সঙ্গে বেশ মিল আছে তার দোকানের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার খাবার খেয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেন। কানিজ ফাতিমা বলেন, ‘আমার ভ্রাম্যমাণ দোকানের খাবার খেয়ে অনেকেই বলেন বাসার রান্নার স্বাদ পাচ্ছে। তাদের এই মন্তব্যগুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভালোই সাড়া পাচ্ছি। আমার দৈনিক প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকার খাবার বিক্রি হয়।’
শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা
একজন নারী শিক্ষার্থী হয়ে ছোট ব্যবসা দাঁড় করানো ফাতিমার জন্য সহজ ছিল না। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা পেয়েছেন। খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট, হাউস টিউটর, ক্লাসের বন্ধুবান্ধব সবাই তাকে উৎসাহ দিয়েছেন। কানিজ ফাতিমা বলেন, ‘প্রথমে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খাবারের স্টল দিই, তখন আমার কিছু বান্ধবী আমাকে সহযোগিতা করেন। হঠাৎ করে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান চালু করা সহজ বিষয় না। আমার পরিচিত মানুষ প্রথমে আমার দোকানের খাবার খেয়েছেন। ভালো রিভিউ দিয়েছেন। তারপর থেকে নিয়মিত খাবারের দোকানের যাত্রা শুরু হয়েছে।’
বাধা মাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে
কানিজ ফাতিমার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। তার পরিবারের সদস্যসংখ্যা পাঁচজন। বাবা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মা গৃহিণী। সন্তানদের মধ্যে সবার বড় ফাতিমা। বড় মেয়ে হিসেবে খুব দ্রুতই বিয়ে দেওয়ার তাগিদে তাকে উচ্চশিক্ষা থেকে নিরুৎসাহিত করে তার পরিবার। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি পরিবারের সম্মতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে নিজের করা সংগ্রাম সম্পর্কে কানিজ ফাতিমা বলেন, ‘কলেজে ওঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন বুনতে থাকি। তবে প্রথমদিকে পরিবারের কেউ রাজি ছিলেন না। এক দিন আমার এক আত্মীয় বলেছিলেন, পরীক্ষা দিলেই তো সবাই চান্স পায় না। এই মন্তব্যটি আমার মনে দাগ কাটে। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার জন্য নিজের মধ্যে আরো প্রবল জেদ সঞ্চয় করি। পরিবার থেকে আর একটি বাধা ছিল, চট্টগ্রামের বাইরে পড়তে যাওয়া যাবে না। এ জন্য আমার প্রথম ও শেষ টার্গেট ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আমি সে অনুযায়ী পরিশ্রম করেছি। পরে আমার বাবা-মা আমাকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন। আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমি এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের একজন শিক্ষার্থী।’
বন্ধুর উৎসাহে স্বপ্ন বুনা
এক বন্ধুর উৎসাহ ও সহযোগিতায় একটি ব্যবসা দাঁড় করানোর ইচ্ছা জাগে ফাতিমার। সেই মোতাবেক ২০২৩ সালের শুরুর দিকে টিউশনের পাশাপাশি ‘কানুরং’ নামে একটি জুয়েলারি ব্যবসা শুরু করেন তিনি। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে এ ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। পরে এক দিন শখের বসে এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে খাবারের স্টল দেন। সেদিন অনেকেই তার বানানো খাবার খেয়ে বেশ প্রশংসা করেন। তাকে এই খাবার নিয়ে কিছু করার উৎসাহও জোগান। এরপর মাঝেমধ্যে অবসর সময়ে ক্যাম্পাসে খাবারের স্টল দেওয়া শুরু করেন ফাতিমা। গত বছরের জুন মাসে তিনি দুটি টিউশনি ছেড়ে দিয়ে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে নিয়মিত হন। তার ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানের নাম ‘বাইটহাট’।
কানিজ ফাতিমা বলেন, ‘এখন বাইটহাট আমাদের ক্যাম্পাসে খাবারের স্বাদ ও মানের কারণে অনেক পরিচিতি পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে। আমরা বাইটহাটের পরিধি বৃদ্ধি করে ক্যাম্পাসের সব শিক্ষার্থীর মধ্যে সুস্বাদু খাবারগুলো পৌঁছে দিতে চাই। বাইটহাট এক দিন সবার কাছে পৌঁছাবে। এর খাবারের স্বাদ সবার মন জয় করবে এবং এর মাধ্যমে কিছু মানুষের উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে এটাই আমাদের স্বপ্ন।’
শেষ কথা
কানিজ ফাতিমা আরো বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমার পরিবার আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমিও চাই পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে। এই চিন্তা থেকেই আমার পরিশ্রম করতে একটুও কষ্ট লাগে না। আলহামদুলিল্লাহ। তবে, এই কাজ শুরু করতে ও চালিয়ে যেতে অনেক পরিশ্রম, সংগ্রাম করতে হচ্ছে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আমি ব্যস্ততার মধ্যে থাকি। ভবিষ্যতে নিজের কাছে বড় কিছু চাওয়া নেই। তবে, আমার মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করে নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় দুজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে চার্জশিট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
১৬ ঘণ্টা আগেসাত বছর আগে দেশে ম্যালেরিয়া রোগীর যে চিত্র ছিল এখনো তা-ই রয়ে গেছে। এজন্য বাহকদের অসচেতনতাকে দায়ী করা হলেও নির্মূল কার্যক্রম নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বছরের পর বছর ধরে কার্যক্রম চললেও নির্মূলে তেমন প্রভাব ফেলছে না। উল্টো নির্মূল হওয়া জেলায়ও সংক্রমণের নজির রয়েছে।
১ দিন আগেছবি কথা বলে। হাজার শব্দের চেয়েও একটি ছবি শক্তিশালী। একজন শিল্পী রঙতুলি দিয়েই মনের অব্যক্ত কথা, আনন্দ-বেদনা, দেশপ্রেম, ভালোবাসা-ঘৃণা সব প্রকাশ করেন। তুলির আঁচড়েই শিল্পী তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও ঘটনা জীবন্ত করে তোলেন। শিল্পীর বড় হাতিয়ার রঙ-তুলি। শিল্পী স্বপ্ন আঁকেন রঙ-তুলি দিয়ে; জীবনের প্রতিচ্ছবি
২ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহনাফ আবীর আশরাফুল্লাহ ২৪-এর স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার পতন যুদ্ধের একজন সাহসী যোদ্ধার নাম। আশরাফ টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা সদরের বারপাখিয়া গ্রামের মো. হারুন অর রশিদ ও মা আছিয়া খাতুনের একমাত্র পুত্রসন্তান এবং তিন বোনের মধ্যে একমাত্র ভাই।
২ দিন আগে