ড. মুহাম্মদ আমিনুল হক
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার দিবাগত রাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে গেল। বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী ও স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা ভেঙে দিয়েছে ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি। নিজের কৃত অপরাধের জন্য গণহত্যায় অভিযুক্ত ফ্যাসিস্ট হাসিনার যেখানে অনুশোচনায় কাতর হওয়ার কথা, সেখানে তিনি বেহায়ার মতো ভারতে বসে অনলাইনে ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে লাইভ বক্তব্য দেওয়ার ঘোষণা দেন। খুনি হাসিনার এই ধৃষ্টতা বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতাকে চরমভাবে ক্ষুব্ধ করেছে—একেবারে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার মতো অবস্থা যাকে বলে।
ফ্যাসিবাদী হাসিনা নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে যত অন্যায় করা দরকার, তার সবটাই করেছেন। হাসিনার কোনো কোনো অপরাধ ছিল নজিরবিহীন। পৃথিবীর অন্য ফ্যাসিস্টরাও তার কাছে হার মেনেছিল। তিনি নিজেকে নব্য হিটলারে পরিণত করেছিলেন। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার মিশনে তার প্রধান সহযোগী ছিল ভারত। দেশটির হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্যায়ভাবে হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে বুদ্ধি-পরামর্শ প্রদান ও সহযোগিতা করে গেছেন। হাসিনাকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় রাখার বিনিময়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির নামে ভারত বাংলাদেশ থেকে অবৈধ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এদেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে।
খুনি হাসিনা তার প্রভু ভারতের পরামর্শে সব ধরনের ঘৃণ্য কাজ করে গেছেন নির্লজ্জভাবে। খুন-গুম ও জেল-জুলুম দিয়ে পুরো দেশটাকে ১৬ বছরে নরকে পরিণত করেছিলেন। এদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের রাজত্ব দিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের নিধনে ভারতপন্থিদের লেলিয়ে দিয়েছিলেন। আয়নাঘর বানিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে জুলুমের ইতিহাস তৈরি করেছিলেন হাসিনা ও তার দোসররা। এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ও আলেম-ওলামাদের টুঁটি চেপে ধরেছিলেন তিনি। শত আলেম-ওলামা খুনি হাসিনার কারাগারে পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
বিএনপি, হেফাজত ও জামায়াত থেকে শুরু করে সকল বিরোধী মতকে বুলডোজার দিয়ে চাপা দিয়ে আইন-আদালতের তোয়াক্কা না করে তিনি ১৬ বছর শুধু নিষ্পেষণের স্টিম রোলার চালিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী রাজ্য থেকে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরগুলো হয় হামলা, মামলা ও গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, না হয় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন, কনক সারোয়ার, পিনাকী ভট্টাচার্য, ড. ফয়জুল হকসহ নাম জানা ও অজানা বহু প্রতিবাদী সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও ইসলামি ব্যক্তিত্বকে বছরের পর বছর নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে বিদেশের মাটিতে কোনো রকম টিকে থাকার লড়াই করে যেতে হয়েছিল।
বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা এমন এক ভূমিতে পরিণত করেছিলেন, যেখানে স্বাধীনতা ছিল শুধু নামে। দিল্লির ইশারা ছাড়া এদেশে কোনো কিছু হতো না। কাকে জেলে নিতে হবে, কাকে খুন করতে হবে, কাকে গুম করে ভারতে নিয়ে যেতে হবে, কাকে আয়নাঘরে নিয়ে আসতে হবে, আর কাকে জেলে ভরে বছরের পর বছর নির্যাতন করতে হবে—এ সবকিছুর নির্দেশনা দিল্লি থেকে আসত। দিল্লির প্রভুত্বকে কবুল করে হাসিনা কেবল এসব অপকর্ম তামিল করে গেছেন।
খুনি হাসিনার রাজত্ব কায়েম হয়েছিল খুন দিয়েই। ২০০৫ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে হাসিনার মিশন শুরু হয়। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১/১১’র মঈন-ফখরুদ্দিন আর দিল্লির সহযোগিতায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় বসেই তিনি পিলখানায় ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করেন পরিকল্পিতভাবে। এই ৫৭ সেনা কর্মকর্তা ছিলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার। এর পর থেকে বাংলাদেশের মানুষ শুধু গুম-খুন আর ক্ষণে ক্ষণে গণহত্যা দেখেছে।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ে ফুসে ওঠা প্রতিবাদী মানুষকে গণহারে হত্যা করে হাসিনার খুনি বাহিনী। হেফাজতের ১৩ দফার আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে ৫ মে রাতে গণহত্যা চালিয়ে তাকে নিস্তব্ধ করে দেওয়া হয়। বিচারের নামে বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতের মীর কাশেম আলী, আলী আহসান মুজাহিদ, কাদের মোল্লাসহ অনেক নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়।
বাংলাদেশের আপসহীন নেত্রী বেগম জিয়া ও তার পরিবারের ওপর হাসিনা সীমাহীন নিপীড়ন চালিয়েছেন। তারেক জিয়ার মেরুদণ্ড ভেঙে দেয় হাসিনার খুনি বাহিনী। খালেদা জিয়া মৃত্যুশয্যায় গেলেও হাসিনার কলিজায় এতটুকু দয়াও দেখেনি কেউ। মানুষ যখন মুক্তির সব পথ ভুলে নিজেদের নিয়তি ও জালেম হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন মুক্তির দূত হয়ে আগমন ঘটে ৩৬ জুলাইয়ের। পৃথিবীর ইতিহাসে একটানা ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল নজিরবিহীন। এই আন্দোলনের পুরো কৃতিত্ব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। তাদের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী মজলুম জনতা যোগ দিয়েছিলেন।
৫ আগস্টের বিপ্লবকে ভারত কোনোভাবে মেনে নিতে পারেনি। দেশটি অন্যায়ভাবে হাসিনাকে তাদের দেশে আশ্রয় দিয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশবিরোধী প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় মিডিয়া। ভারতপন্থি এদেশীয় দোসররাও বসে নেই। জুলাই বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র করছেন তারা। হাসিনার রেখে যাওয়া প্রশাসনের বিভিন্ন পদে হাজার হাজার কর্মকর্তা মাঠে নেমেছেন। তাদের মিশন ভারতের নেতৃত্বে আবারো দেশকে গণহত্যাকারী হাসিনার কাছে সোপর্দ করা।
এজন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ঐক্যকে ভেঙে ফেলতে চলছে নানা অপতৎপরতা। ছাত্রদের যেকোনো দাবিকে সংবিধান ও আইন-আদালতের দোহাই দিয়ে বিলম্বিত করা হচ্ছে। জুলাই ঘোষণাপত্রকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বারবার নির্বাচনের কথা বলে সব ধরনের সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ জুলাই ঘোষণাপত্র রচনা করার নাম করে চলছে টালবাহানা। হাসিনার প্রায় সব সহযোগী আছে বহাল তবিয়তে।
কিছুদিন আগে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতন হয়। সেই দেশের বিপ্লবী জনতার সঙ্গে লড়াই করে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি। একেবারে হাসিনার মতো দশা হয় তার। সিরিয়ার বিপ্লবীরা সেদেশে যা করেছে, এদেশের বিপ্লবীদের সেই কাজগুলোই করা উচিত ছিল। সেদেশে সংবিধান স্থগিত করে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ বিপ্লবীরা নিয়ে নিয়েছেন। এরই মধ্যে বাশারের ৩০ দোসরের ফাঁসি হয়ে গেছে। বাশারের দলকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এ কাজগুলো করতে দেওয়া হয়নি। তাদের কৌশলে বিপ্লবী সরকার গঠন করতে দেওয়া হয়নি। সংবিধান স্থগিত করতে দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপতিকে বরখাস্ত করতেও দেওয়া হয়নি। এগুলো করতে না দেওয়ার মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা দেখে হাসিনা নিশ্চয় খুশি হয়েছিলেন।
দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ আর ক্ষোভ প্রমাণ করে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধীরা দমে যায়নি। যারা ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন, তাদের কাছে ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনাগুলো শক্ত মেসেজ হিসেবেই যাবে। ছাত্র-জনতার এই ক্ষোভ পুরো বাংলাদেশের মজলুম জনতার ক্ষোভ। হাসিনার আমলে বুলডোজার দিয়ে দেশের কত জায়গায় কত মানুষের বাড়িঘর ও স্থাপনা যে ভেঙে ফেলা হয়েছিল, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সেই বুলডোজার যে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ও সুধা সদনের ওপরেও একদিন চড়াও হতে পারে, তা কেবল হাসিনা কেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষই কল্পনা করেননি। শাবাশ, শাবাশ বাংলাদেশের স্বাধীনতাপন্থি দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা। তোমাদের স্যালুট জানাই। ফ্যাসিবাদের সব আস্তানা, দোসর ও শক্তিকে এভাবেই গুঁড়িয়ে দিতে হবে। তা না হলে ফ্যাসিবাদ আবারো ঘুরে দাঁড়াবে।
লেখক: কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার দিবাগত রাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে গেল। বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী ও স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা ভেঙে দিয়েছে ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি। নিজের কৃত অপরাধের জন্য গণহত্যায় অভিযুক্ত ফ্যাসিস্ট হাসিনার যেখানে অনুশোচনায় কাতর হওয়ার কথা, সেখানে তিনি বেহায়ার মতো ভারতে বসে অনলাইনে ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে লাইভ বক্তব্য দেওয়ার ঘোষণা দেন। খুনি হাসিনার এই ধৃষ্টতা বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতাকে চরমভাবে ক্ষুব্ধ করেছে—একেবারে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার মতো অবস্থা যাকে বলে।
ফ্যাসিবাদী হাসিনা নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে যত অন্যায় করা দরকার, তার সবটাই করেছেন। হাসিনার কোনো কোনো অপরাধ ছিল নজিরবিহীন। পৃথিবীর অন্য ফ্যাসিস্টরাও তার কাছে হার মেনেছিল। তিনি নিজেকে নব্য হিটলারে পরিণত করেছিলেন। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার মিশনে তার প্রধান সহযোগী ছিল ভারত। দেশটির হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্যায়ভাবে হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে বুদ্ধি-পরামর্শ প্রদান ও সহযোগিতা করে গেছেন। হাসিনাকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় রাখার বিনিময়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির নামে ভারত বাংলাদেশ থেকে অবৈধ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এদেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে।
খুনি হাসিনা তার প্রভু ভারতের পরামর্শে সব ধরনের ঘৃণ্য কাজ করে গেছেন নির্লজ্জভাবে। খুন-গুম ও জেল-জুলুম দিয়ে পুরো দেশটাকে ১৬ বছরে নরকে পরিণত করেছিলেন। এদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের রাজত্ব দিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের নিধনে ভারতপন্থিদের লেলিয়ে দিয়েছিলেন। আয়নাঘর বানিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে জুলুমের ইতিহাস তৈরি করেছিলেন হাসিনা ও তার দোসররা। এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ও আলেম-ওলামাদের টুঁটি চেপে ধরেছিলেন তিনি। শত আলেম-ওলামা খুনি হাসিনার কারাগারে পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
বিএনপি, হেফাজত ও জামায়াত থেকে শুরু করে সকল বিরোধী মতকে বুলডোজার দিয়ে চাপা দিয়ে আইন-আদালতের তোয়াক্কা না করে তিনি ১৬ বছর শুধু নিষ্পেষণের স্টিম রোলার চালিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী রাজ্য থেকে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরগুলো হয় হামলা, মামলা ও গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, না হয় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন, কনক সারোয়ার, পিনাকী ভট্টাচার্য, ড. ফয়জুল হকসহ নাম জানা ও অজানা বহু প্রতিবাদী সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও ইসলামি ব্যক্তিত্বকে বছরের পর বছর নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে বিদেশের মাটিতে কোনো রকম টিকে থাকার লড়াই করে যেতে হয়েছিল।
বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা এমন এক ভূমিতে পরিণত করেছিলেন, যেখানে স্বাধীনতা ছিল শুধু নামে। দিল্লির ইশারা ছাড়া এদেশে কোনো কিছু হতো না। কাকে জেলে নিতে হবে, কাকে খুন করতে হবে, কাকে গুম করে ভারতে নিয়ে যেতে হবে, কাকে আয়নাঘরে নিয়ে আসতে হবে, আর কাকে জেলে ভরে বছরের পর বছর নির্যাতন করতে হবে—এ সবকিছুর নির্দেশনা দিল্লি থেকে আসত। দিল্লির প্রভুত্বকে কবুল করে হাসিনা কেবল এসব অপকর্ম তামিল করে গেছেন।
খুনি হাসিনার রাজত্ব কায়েম হয়েছিল খুন দিয়েই। ২০০৫ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে হাসিনার মিশন শুরু হয়। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১/১১’র মঈন-ফখরুদ্দিন আর দিল্লির সহযোগিতায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় বসেই তিনি পিলখানায় ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করেন পরিকল্পিতভাবে। এই ৫৭ সেনা কর্মকর্তা ছিলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার। এর পর থেকে বাংলাদেশের মানুষ শুধু গুম-খুন আর ক্ষণে ক্ষণে গণহত্যা দেখেছে।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ে ফুসে ওঠা প্রতিবাদী মানুষকে গণহারে হত্যা করে হাসিনার খুনি বাহিনী। হেফাজতের ১৩ দফার আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে ৫ মে রাতে গণহত্যা চালিয়ে তাকে নিস্তব্ধ করে দেওয়া হয়। বিচারের নামে বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতের মীর কাশেম আলী, আলী আহসান মুজাহিদ, কাদের মোল্লাসহ অনেক নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়।
বাংলাদেশের আপসহীন নেত্রী বেগম জিয়া ও তার পরিবারের ওপর হাসিনা সীমাহীন নিপীড়ন চালিয়েছেন। তারেক জিয়ার মেরুদণ্ড ভেঙে দেয় হাসিনার খুনি বাহিনী। খালেদা জিয়া মৃত্যুশয্যায় গেলেও হাসিনার কলিজায় এতটুকু দয়াও দেখেনি কেউ। মানুষ যখন মুক্তির সব পথ ভুলে নিজেদের নিয়তি ও জালেম হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন মুক্তির দূত হয়ে আগমন ঘটে ৩৬ জুলাইয়ের। পৃথিবীর ইতিহাসে একটানা ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল নজিরবিহীন। এই আন্দোলনের পুরো কৃতিত্ব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। তাদের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী মজলুম জনতা যোগ দিয়েছিলেন।
৫ আগস্টের বিপ্লবকে ভারত কোনোভাবে মেনে নিতে পারেনি। দেশটি অন্যায়ভাবে হাসিনাকে তাদের দেশে আশ্রয় দিয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশবিরোধী প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় মিডিয়া। ভারতপন্থি এদেশীয় দোসররাও বসে নেই। জুলাই বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র করছেন তারা। হাসিনার রেখে যাওয়া প্রশাসনের বিভিন্ন পদে হাজার হাজার কর্মকর্তা মাঠে নেমেছেন। তাদের মিশন ভারতের নেতৃত্বে আবারো দেশকে গণহত্যাকারী হাসিনার কাছে সোপর্দ করা।
এজন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ঐক্যকে ভেঙে ফেলতে চলছে নানা অপতৎপরতা। ছাত্রদের যেকোনো দাবিকে সংবিধান ও আইন-আদালতের দোহাই দিয়ে বিলম্বিত করা হচ্ছে। জুলাই ঘোষণাপত্রকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বারবার নির্বাচনের কথা বলে সব ধরনের সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ জুলাই ঘোষণাপত্র রচনা করার নাম করে চলছে টালবাহানা। হাসিনার প্রায় সব সহযোগী আছে বহাল তবিয়তে।
কিছুদিন আগে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতন হয়। সেই দেশের বিপ্লবী জনতার সঙ্গে লড়াই করে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি। একেবারে হাসিনার মতো দশা হয় তার। সিরিয়ার বিপ্লবীরা সেদেশে যা করেছে, এদেশের বিপ্লবীদের সেই কাজগুলোই করা উচিত ছিল। সেদেশে সংবিধান স্থগিত করে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ বিপ্লবীরা নিয়ে নিয়েছেন। এরই মধ্যে বাশারের ৩০ দোসরের ফাঁসি হয়ে গেছে। বাশারের দলকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এ কাজগুলো করতে দেওয়া হয়নি। তাদের কৌশলে বিপ্লবী সরকার গঠন করতে দেওয়া হয়নি। সংবিধান স্থগিত করতে দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপতিকে বরখাস্ত করতেও দেওয়া হয়নি। এগুলো করতে না দেওয়ার মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা দেখে হাসিনা নিশ্চয় খুশি হয়েছিলেন।
দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ আর ক্ষোভ প্রমাণ করে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধীরা দমে যায়নি। যারা ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন, তাদের কাছে ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনাগুলো শক্ত মেসেজ হিসেবেই যাবে। ছাত্র-জনতার এই ক্ষোভ পুরো বাংলাদেশের মজলুম জনতার ক্ষোভ। হাসিনার আমলে বুলডোজার দিয়ে দেশের কত জায়গায় কত মানুষের বাড়িঘর ও স্থাপনা যে ভেঙে ফেলা হয়েছিল, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সেই বুলডোজার যে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ও সুধা সদনের ওপরেও একদিন চড়াও হতে পারে, তা কেবল হাসিনা কেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষই কল্পনা করেননি। শাবাশ, শাবাশ বাংলাদেশের স্বাধীনতাপন্থি দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা। তোমাদের স্যালুট জানাই। ফ্যাসিবাদের সব আস্তানা, দোসর ও শক্তিকে এভাবেই গুঁড়িয়ে দিতে হবে। তা না হলে ফ্যাসিবাদ আবারো ঘুরে দাঁড়াবে।
লেখক: কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
নির্বিচারে মানুষ হত্যা, হতাহতের ঘটনায় জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। যেমন জুলাই আগস্ট গণহত্যায় যারা নিহত বা আহত হয়েছেন তাদের পরিবার স্বাভাবিকভাবেই মানুষিক ট্রমায় আক্রান্ত। এছাড়া যারা স্বচক্ষে বীভৎস হত্যাকাণ্ড দেখেছে তারাও মানুষিক ট্রমায় আক্রান্ত।
৩০ মিনিট আগেবিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ছাড়াও অন্যান্য ছত্রসংগঠন ইফতারি বিতরণ করছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের ব্যাপক ইফতারি বিতরণ সর্বমহলের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। এটা এ কারণেই যে, শিবির অতীতে এই ক্যাম্পাসে এ রকম মুক্ত পরিবেশ আর কখনো পায়নি।
১ ঘণ্টা আগেজুলহাস যা তৈরি করেছেন, তা মূলত একটি বড় আকারের খেলনা। জুলহাসের এই প্রতিভাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে আমরা ভাবতে পারি। কিন্তু তাকে নিয়ে আমরা অনেকেই যে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি, তা রীতিমতো ভয়ংকর!
১ ঘণ্টা আগেএকটি দেশের গণমাধ্যম তার চেতনার দর্পণ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু যখন সেই দর্পণে প্রতিবিম্বিত হয় অন্য রাষ্ট্রের স্বার্থ, তখন গণমাধ্যম আর স্বাধীন থাকে না, হয়ে ওঠে এক অভিনব উপনিবেশ। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা কতটা ছিল, সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ।
১ দিন আগে