ইঞ্জিনিয়ার নিজাম উদ্দিন
বিশ্ব অর্থনীতি আজ যে কটি বড় ও শক্তিশালী সেক্টরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তার অন্যতম হলো কেমিক্যাল সেক্টর। বৈশ্বিক কেমিক্যাল বাজারের মাত্র দুই শতাংশ দখল করলেই বাংলাদেশ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে এই সেক্টর থেকে। এই লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি মাস্টার প্ল্যান, যেখানে থাকবে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, দক্ষ জনবল গঠন, নিরাপদ অবকাঠামো, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও বিনিয়োগ আকর্ষণের সুনির্দিষ্ট কৌশল। এই মাস্টার প্ল্যানই পারে কেমিক্যাল সেক্টরকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাতে পরিণত করতে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কেমিক্যালের রয়েছে ব্যাপক ব্যবহার। সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করার মুহূর্ত থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা কোনো না কোনোভাবে কেমিক্যালের সংস্পর্শে থাকি। এই অবিচ্ছেদ্য ব্যবহার কেমিক্যাল সেক্টরকে একটি বিশাল ও লাভজনক বাজারে পরিণত করেছে। যারা সময়মতো এই খাতের সম্ভাবনা অনুধাবন করতে পেরেছেন, তারা আজ এটি বিনিয়োগের একটি নির্ভরযোগ্য ক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং নিয়মিত লাভবান হচ্ছেন। ফলে যেকোনো উদ্যোক্তা খুব সহজেই টেকসই মুনাফা অর্জন করতে পারেন।
সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তি ও মার্কেট স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কেউ যদি এই সেক্টরে প্রবেশ করে, তাহলে কেমিক্যাল সেক্টরই হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও লাভজনক বিনিয়োগ ক্ষেত্র। বিশ্বের অর্থনৈতিক কাঠামোতে কেমিক্যাল শিল্প আজ একটি অপরিহার্য স্তম্ভ। কৃষিক্ষেত্র থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, নির্মাণ, টেক্সটাইল কিংবা নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো খাতে কেমিক্যালের ব্যবহার এতটাই ব্যাপক যে এই শিল্পকে বাদ দিয়ে আধুনিক সভ্যতা কল্পনাও করা যায় না।
বাংলাদেশে কেমিক্যাল শিল্পের অবস্থান এখনো অনেকাংশে আমদানিনির্ভর। তবে এই নির্ভরতাই আজ সম্ভাবনার নতুন বার্তা দিচ্ছে। বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, দ্রুত সম্প্রসারিত শিল্প খাত ও দক্ষ মানবসম্পদের প্রাচুর্য—এই তিনটি শক্তির সমন্বয়ে বাংলাদেশ আজ এই খাতে বিনিয়োগের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্যে পরিণত হতে চলেছে।
বৈশ্বিক কেমিক্যাল মার্কেট
২০২৩ সালে বৈশ্বিক কেমিক্যাল বাজারের মূল্য ছিল পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে সাত ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। চীন এই বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে, ভারতও দ্রুত এগোচ্ছে। চীন বিশ্ববাজারের ৪০ শতাংশ কেমিক্যালের একক জোগানদাতা। আর ভারত ২০২৩ সালে এককভাবে প্রায় ৬৬ বিলিয়ন ডলারের কেমিক্যাল রপ্তানি করে বিশ্ববাজারে।
প্রধান সাবসেক্টর : ১. পেট্রোকেমিক্যালস, ২. অ্যাগ্রোকেমিক্যালস, ৩. স্পেশালটি কেমিক্যালস ও ৪. কনজ্যুমার কেমিক্যালস। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, টেকসই ও গ্রিন কেমিক্যালে বাড়ছে বিনিয়োগ, যা ভবিষ্যতের নেতৃত্ব নির্ধারণ করবে। এখনই সময় কেমিক্যাল শিল্পে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের জন্য কৌশলগত অবস্থান তৈরি করার।
বাংলাদেশে কেমিক্যাল শিল্পে বিনিয়োগ : সম্ভাবনা ও সুযোগ
বাংলাদেশে কেমিক্যাল শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এটাই প্রমাণ করে, এ খাতে স্থানীয় উৎপাদনের বিশাল সুযোগ রয়েছে। সরকার এই শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদানে শুল্ক ছাড়, ট্যাক্স হলিডে এবং সহায়ক শিল্পনীতি গ্রহণ করেছে, যা বেসরকারি খাতকে আগ্রহী করে তুলেছে। শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি বিকাশের জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ ও স্থানীয় দক্ষ জনবল তৈরি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সরকার যদি গবেষণায় সহযোগিতা বাড়ায়, তাহলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক কেমিক্যাল বাজারে আরো প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও কৌশলগত সুবিধাগুলো, যেমন বিশাল কর্মক্ষম জনবল, সমুদ্রবন্দর, ইকোনমিক জোন ও আশেপাশের বড় বাজারে সহজ প্রবেশাধিকার বাংলাদেশকে কেমিক্যাল শিল্পের জন্য একটি আঞ্চলিক হাবে পরিণত করার বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
বাংলাদেশের কেমিক্যাল শিল্পের চ্যালেঞ্জ ও আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা
বাংলাদেশের কেমিক্যাল শিল্পে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জও আছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিনিয়োগের সংকোচন। অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণ নিতে ভয় পায়, আবার যারা চায়, তারাও উচ্চসুদের হার ও কঠিন ঋণ শর্তাবলির কারণে পিছিয়ে পড়ে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রেও অনিশ্চিত নীতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে শঙ্কা কাজ করে। এ ছাড়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন এরই মধ্যে বিশ্ব কেমিক্যাল বাজারে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে।
২০২৩ সালে ভারত একাই প্রায় ৬৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের কেমিক্যাল পণ্য রপ্তানি করেছে। এটি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি খাত। বাংলাদেশ যদি সেক্টরে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চায়, তাহলে এই শিল্পকে আরো দক্ষ, প্রযুক্তিনির্ভর, গবেষণাভিত্তিক ও গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে প্রস্তুত করতে হবে। পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি ও সুবিধাজনক অর্থায়ন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
কেমিক্যাল সেক্টরে বিনিয়োগ : বোঝার সহজ উপায়
বাংলাদেশে যারা ১০-১৫ বছর আগে কেমিক্যাল সেক্টরে একটি কারখানা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তারা এখন চার থেকে পাঁচটি কারখানার মালিক। যাদের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল দিনে ১০০ টন, তারা এখন দিনে ৩০০ টন উৎপাদন করছেন। এটি প্রমাণ করে, এই সেক্টরে বিনিয়োগ করলে লাভ হয়।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও কেমিক্যাল প্রজেক্ট কীভাবে সফল হবে? বাস্তবতা হলো সব কেমিক্যাল প্রজেক্টে গ্যাস বা উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় না। বর্তমান প্রযুক্তির উন্নয়ন আমাদের এমন অনেক কেমিক্যাল প্ল্যান্ট নির্মাণের সুযোগ দিয়েছে, যেগুলো নিজেই শক্তির উৎস হয়ে উঠতে পারে। আমরা কিছু কেমিক্যাল প্ল্যান্টের উদাহরণ দিতে পারি।
১. সালফিউরিক অ্যাসিড প্ল্যান্ট : এই প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রক্রিয়ায় প্রচুর তাপ (heat) উৎপন্ন হয়, যা মূলত এক্সোথার্মিক রিয়্যাকশন থেকে আসে। এই তাপকে স্টিমে রূপান্তর করে ওয়েস্ট হিট বয়লারের মাধ্যমে আবার ব্যবহার করা যায়, যার ফলে গ্যাস বা বিদ্যুৎ ছাড়াই কার্যক্রম চলতে থাকে।
২. ক্লোর-আলকালি প্ল্যান্ট : পুরোনো প্রযুক্তিতে অধিক গ্যাস প্রয়োজন হলেও বর্তমানে নতুন প্রযুক্তিতে এই চাহিদা কমে এসেছে। প্রযুক্তির আপগ্রেডে বাইপোলার জিরো গ্যাপ ইলেকট্রোলাইজারে বিদ্যুতের ব্যবহার প্রায় ১০-২০ শতাংশ সাশ্রয় হয়। এর ফলে প্রজেক্টটি কম শক্তি খরচে কার্যকরভাবে চালানো সম্ভব। অর্থাৎ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে কেমিক্যাল প্রজেক্টগুলো গ্যাস বা বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এনে নিজের শক্তি উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে। এতে করে প্রজেক্টের অপারেশন খরচ কমে আসে এবং বাংলাদেশের বর্তমান শক্তির সমস্যা সত্ত্বেও এই খাতকে টেকসই করা সম্ভব হচ্ছে। সঠিক প্রযুক্তি ও পরিকল্পনা নির্বাচন নিশ্চিত করলে এবং যেসব কেমিক্যাল উৎপাদনে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা কম, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিলে কেমিক্যাল খাত বাংলাদেশে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও টেকসই হয়ে উঠতে পারে।
এনার্জি শেয়ারিং মডেল
এনার্জি শেয়ারিং মডেলটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী কৌশল, যা উৎপাদন খরচ কমাতে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এমনকি কিছু উন্নত দেশ, যেমন জার্মানি, সুইডেন ও নেদারল্যান্ডসে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও ইকোনমিক জোনে এই মডেল বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেখানে একাধিক কেমিক্যাল প্রজেক্ট ও শিল্পকারখানা পরস্পরের শক্তি ভাগ করে নেয়, যেমন বর্জ্য তাপ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি, অথবা বায়োএনার্জি। এটি নিশ্চিত করে, একে অপরের শক্তি ব্যবহার করে খরচ কমানো এবং শক্তির অপচয় প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, এক প্রক্রিয়া থেকে উৎপন্ন অতিরিক্ত তাপ অন্য প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়। ফলে উৎপাদন কার্যক্রমে শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায় এবং খরচ কমে আসে।
এ ধরনের শক্তিসাশ্রয়ের মডেল বিশেষ করে কেমিক্যাল প্রজেক্টে উৎপাদন খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় কমিয়ে এনে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য আমাদের পণ্যকে আরো প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। এটি টেকসই, লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব একটি পদ্ধতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করবে, যা বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়নকে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে সক্ষম।
লেখক : সিনিয়র মার্কেট ম্যানেজার, সিএনসিইসি
টেকসই কেমিক্যাল প্রজেক্ট বিনিয়োগ গবেষক ও কৌশলগত পরামর্শদাতা
বিশ্ব অর্থনীতি আজ যে কটি বড় ও শক্তিশালী সেক্টরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তার অন্যতম হলো কেমিক্যাল সেক্টর। বৈশ্বিক কেমিক্যাল বাজারের মাত্র দুই শতাংশ দখল করলেই বাংলাদেশ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে এই সেক্টর থেকে। এই লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি মাস্টার প্ল্যান, যেখানে থাকবে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, দক্ষ জনবল গঠন, নিরাপদ অবকাঠামো, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও বিনিয়োগ আকর্ষণের সুনির্দিষ্ট কৌশল। এই মাস্টার প্ল্যানই পারে কেমিক্যাল সেক্টরকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাতে পরিণত করতে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কেমিক্যালের রয়েছে ব্যাপক ব্যবহার। সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করার মুহূর্ত থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা কোনো না কোনোভাবে কেমিক্যালের সংস্পর্শে থাকি। এই অবিচ্ছেদ্য ব্যবহার কেমিক্যাল সেক্টরকে একটি বিশাল ও লাভজনক বাজারে পরিণত করেছে। যারা সময়মতো এই খাতের সম্ভাবনা অনুধাবন করতে পেরেছেন, তারা আজ এটি বিনিয়োগের একটি নির্ভরযোগ্য ক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং নিয়মিত লাভবান হচ্ছেন। ফলে যেকোনো উদ্যোক্তা খুব সহজেই টেকসই মুনাফা অর্জন করতে পারেন।
সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তি ও মার্কেট স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কেউ যদি এই সেক্টরে প্রবেশ করে, তাহলে কেমিক্যাল সেক্টরই হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও লাভজনক বিনিয়োগ ক্ষেত্র। বিশ্বের অর্থনৈতিক কাঠামোতে কেমিক্যাল শিল্প আজ একটি অপরিহার্য স্তম্ভ। কৃষিক্ষেত্র থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, নির্মাণ, টেক্সটাইল কিংবা নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো খাতে কেমিক্যালের ব্যবহার এতটাই ব্যাপক যে এই শিল্পকে বাদ দিয়ে আধুনিক সভ্যতা কল্পনাও করা যায় না।
বাংলাদেশে কেমিক্যাল শিল্পের অবস্থান এখনো অনেকাংশে আমদানিনির্ভর। তবে এই নির্ভরতাই আজ সম্ভাবনার নতুন বার্তা দিচ্ছে। বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, দ্রুত সম্প্রসারিত শিল্প খাত ও দক্ষ মানবসম্পদের প্রাচুর্য—এই তিনটি শক্তির সমন্বয়ে বাংলাদেশ আজ এই খাতে বিনিয়োগের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্যে পরিণত হতে চলেছে।
বৈশ্বিক কেমিক্যাল মার্কেট
২০২৩ সালে বৈশ্বিক কেমিক্যাল বাজারের মূল্য ছিল পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে সাত ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। চীন এই বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে, ভারতও দ্রুত এগোচ্ছে। চীন বিশ্ববাজারের ৪০ শতাংশ কেমিক্যালের একক জোগানদাতা। আর ভারত ২০২৩ সালে এককভাবে প্রায় ৬৬ বিলিয়ন ডলারের কেমিক্যাল রপ্তানি করে বিশ্ববাজারে।
প্রধান সাবসেক্টর : ১. পেট্রোকেমিক্যালস, ২. অ্যাগ্রোকেমিক্যালস, ৩. স্পেশালটি কেমিক্যালস ও ৪. কনজ্যুমার কেমিক্যালস। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, টেকসই ও গ্রিন কেমিক্যালে বাড়ছে বিনিয়োগ, যা ভবিষ্যতের নেতৃত্ব নির্ধারণ করবে। এখনই সময় কেমিক্যাল শিল্পে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের জন্য কৌশলগত অবস্থান তৈরি করার।
বাংলাদেশে কেমিক্যাল শিল্পে বিনিয়োগ : সম্ভাবনা ও সুযোগ
বাংলাদেশে কেমিক্যাল শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এটাই প্রমাণ করে, এ খাতে স্থানীয় উৎপাদনের বিশাল সুযোগ রয়েছে। সরকার এই শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদানে শুল্ক ছাড়, ট্যাক্স হলিডে এবং সহায়ক শিল্পনীতি গ্রহণ করেছে, যা বেসরকারি খাতকে আগ্রহী করে তুলেছে। শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি বিকাশের জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ ও স্থানীয় দক্ষ জনবল তৈরি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সরকার যদি গবেষণায় সহযোগিতা বাড়ায়, তাহলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক কেমিক্যাল বাজারে আরো প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও কৌশলগত সুবিধাগুলো, যেমন বিশাল কর্মক্ষম জনবল, সমুদ্রবন্দর, ইকোনমিক জোন ও আশেপাশের বড় বাজারে সহজ প্রবেশাধিকার বাংলাদেশকে কেমিক্যাল শিল্পের জন্য একটি আঞ্চলিক হাবে পরিণত করার বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
বাংলাদেশের কেমিক্যাল শিল্পের চ্যালেঞ্জ ও আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা
বাংলাদেশের কেমিক্যাল শিল্পে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জও আছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিনিয়োগের সংকোচন। অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণ নিতে ভয় পায়, আবার যারা চায়, তারাও উচ্চসুদের হার ও কঠিন ঋণ শর্তাবলির কারণে পিছিয়ে পড়ে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রেও অনিশ্চিত নীতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে শঙ্কা কাজ করে। এ ছাড়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন এরই মধ্যে বিশ্ব কেমিক্যাল বাজারে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে।
২০২৩ সালে ভারত একাই প্রায় ৬৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের কেমিক্যাল পণ্য রপ্তানি করেছে। এটি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি খাত। বাংলাদেশ যদি সেক্টরে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চায়, তাহলে এই শিল্পকে আরো দক্ষ, প্রযুক্তিনির্ভর, গবেষণাভিত্তিক ও গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে প্রস্তুত করতে হবে। পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি ও সুবিধাজনক অর্থায়ন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
কেমিক্যাল সেক্টরে বিনিয়োগ : বোঝার সহজ উপায়
বাংলাদেশে যারা ১০-১৫ বছর আগে কেমিক্যাল সেক্টরে একটি কারখানা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তারা এখন চার থেকে পাঁচটি কারখানার মালিক। যাদের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল দিনে ১০০ টন, তারা এখন দিনে ৩০০ টন উৎপাদন করছেন। এটি প্রমাণ করে, এই সেক্টরে বিনিয়োগ করলে লাভ হয়।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও কেমিক্যাল প্রজেক্ট কীভাবে সফল হবে? বাস্তবতা হলো সব কেমিক্যাল প্রজেক্টে গ্যাস বা উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় না। বর্তমান প্রযুক্তির উন্নয়ন আমাদের এমন অনেক কেমিক্যাল প্ল্যান্ট নির্মাণের সুযোগ দিয়েছে, যেগুলো নিজেই শক্তির উৎস হয়ে উঠতে পারে। আমরা কিছু কেমিক্যাল প্ল্যান্টের উদাহরণ দিতে পারি।
১. সালফিউরিক অ্যাসিড প্ল্যান্ট : এই প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রক্রিয়ায় প্রচুর তাপ (heat) উৎপন্ন হয়, যা মূলত এক্সোথার্মিক রিয়্যাকশন থেকে আসে। এই তাপকে স্টিমে রূপান্তর করে ওয়েস্ট হিট বয়লারের মাধ্যমে আবার ব্যবহার করা যায়, যার ফলে গ্যাস বা বিদ্যুৎ ছাড়াই কার্যক্রম চলতে থাকে।
২. ক্লোর-আলকালি প্ল্যান্ট : পুরোনো প্রযুক্তিতে অধিক গ্যাস প্রয়োজন হলেও বর্তমানে নতুন প্রযুক্তিতে এই চাহিদা কমে এসেছে। প্রযুক্তির আপগ্রেডে বাইপোলার জিরো গ্যাপ ইলেকট্রোলাইজারে বিদ্যুতের ব্যবহার প্রায় ১০-২০ শতাংশ সাশ্রয় হয়। এর ফলে প্রজেক্টটি কম শক্তি খরচে কার্যকরভাবে চালানো সম্ভব। অর্থাৎ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে কেমিক্যাল প্রজেক্টগুলো গ্যাস বা বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এনে নিজের শক্তি উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে। এতে করে প্রজেক্টের অপারেশন খরচ কমে আসে এবং বাংলাদেশের বর্তমান শক্তির সমস্যা সত্ত্বেও এই খাতকে টেকসই করা সম্ভব হচ্ছে। সঠিক প্রযুক্তি ও পরিকল্পনা নির্বাচন নিশ্চিত করলে এবং যেসব কেমিক্যাল উৎপাদনে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা কম, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিলে কেমিক্যাল খাত বাংলাদেশে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও টেকসই হয়ে উঠতে পারে।
এনার্জি শেয়ারিং মডেল
এনার্জি শেয়ারিং মডেলটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী কৌশল, যা উৎপাদন খরচ কমাতে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এমনকি কিছু উন্নত দেশ, যেমন জার্মানি, সুইডেন ও নেদারল্যান্ডসে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও ইকোনমিক জোনে এই মডেল বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেখানে একাধিক কেমিক্যাল প্রজেক্ট ও শিল্পকারখানা পরস্পরের শক্তি ভাগ করে নেয়, যেমন বর্জ্য তাপ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি, অথবা বায়োএনার্জি। এটি নিশ্চিত করে, একে অপরের শক্তি ব্যবহার করে খরচ কমানো এবং শক্তির অপচয় প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, এক প্রক্রিয়া থেকে উৎপন্ন অতিরিক্ত তাপ অন্য প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়। ফলে উৎপাদন কার্যক্রমে শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায় এবং খরচ কমে আসে।
এ ধরনের শক্তিসাশ্রয়ের মডেল বিশেষ করে কেমিক্যাল প্রজেক্টে উৎপাদন খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় কমিয়ে এনে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য আমাদের পণ্যকে আরো প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। এটি টেকসই, লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব একটি পদ্ধতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করবে, যা বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়নকে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে সক্ষম।
লেখক : সিনিয়র মার্কেট ম্যানেজার, সিএনসিইসি
টেকসই কেমিক্যাল প্রজেক্ট বিনিয়োগ গবেষক ও কৌশলগত পরামর্শদাতা
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ করা হচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে দাবি আদায়ের জন্য মিছিল-সমাবেশ বা বিক্ষোভ করার অধিকার সবার আছে।
১৭ ঘণ্টা আগেখুব অস্থির হয়ে আছি। শুধু আমি নই। দেশে, সমাজে, একালে যারা বাস করছেন তারা সবাই অধীর। পরিস্থিতি অস্থির। সময় অধীর। কী হয়, কী হয় শঙ্কা চারদিকে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার এক ঝড়ো অভ্যুত্থানে হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিম পড়ে যায়। কিন্তু সে অভ্যুত্থান ছিল এক অসমাপ্ত বিপ্লব।
২১ ঘণ্টা আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু যেভাবে তিনি ঘোষণাটি দিলেন, তা দেখে রীতিমতো চমকে উঠেছেন বেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। কারণ এ ঘোষণার মাত্র এক দিন আগেই ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘দুটি নিউক্লিয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের যুদ্ধে
২১ ঘণ্টা আগেমাত্র চার দিনের সংক্ষিপ্ত একটি যুদ্ধ। কিন্তু এর প্রভাব ও গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী এবং তাৎপর্যপূর্ণ। কেউ কারো সীমানা অতিক্রম না করে এমন এক যুদ্ধ দেখাল, যা বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর অভূতপূর্ব সাফল্য বিশ্বের তাবৎ সামরিক বিশেষজ্ঞদের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।
১ দিন আগে