আরিফুর রহমান
শেখ পরিবারের অন্যতম সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস অবৈধভাবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আওতাধীন ঢাকার নদীতীর ও ঘাট দখলে নেন। এগুলো ইজারা দিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা লোপাট করেন। এর পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের আশপাশে নদীতীরের বেশকিছু এলাকা দখলে নেওয়ার ছকও এঁকেছিলেন তিনি।
জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ’র আওতাধীন নদীবন্দরের জমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের তৎকালীন মেয়র তাপস ক্ষমতার দাপটে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ইজারার মাধ্যমে দখল নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ১৯৫৮ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিআইডব্লিউটিএ নদীবন্দর সীমানায় এবং সীমানার বাইরে ঘাট-পয়েন্ট উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা করবে।
সে অনুযায়ী ঢাকা নদীবন্দরের সীমানা ফতুল্লার বিজি মাউথ থেকে আশুলিয়ার ধউর ব্রিজ পর্যন্ত। নদীবন্দরের প্রজ্ঞাপন জারির পর নিয়মানুযায়ী জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ’র সমন্বয়ে নদীবন্দরের সীমানাভুক্ত বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর তীরভূমি যৌথ জরিপ শেষে তফসিল প্রস্তুত ও ম্যাপ প্রণয়ন করা হয় এবং তফসিলভুক্ত তীরভূমিতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক বন্দর উন্নয়ন ও নৌবাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য রাজস্ব নির্ধারণ করে নিয়মিতভাবে জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করে আসছে।
এ কারণে বিআইডব্লিউটিএ নদীর বিস্তৃত তীরভূমিতে বন্দর উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনাসহ বিভিন্ন স্থানে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে পন্টুন, গ্যাংওয়ে ও জেটি স্থাপন, সিঁড়ি নির্মাণ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে। কিন্তু তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার পর সিটি করপোরেশনসংলগ্ন নদীর তীরভূমি এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ইজারা দেন। এর মাধ্যমে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় থেকে রাস্তার দক্ষিণ পাশে মিলব্যারাক পর্যন্ত ট্রাক পার্কিং স্ট্যান্ড ঘোষণা করে ইজারা দেন তাপস। ওই ইজারা কার্যক্রম বন্ধ করে ট্রাকস্ট্যান্ডটি অন্যত্র স্থানান্তরের আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
সদরঘাটসংলগ্ন প্রাচীন স্থাপত্য ‘লালকুঠি হল’ ঘিরে তাপস ঢাকা নদীবন্দরের পূর্ব সীমানায় নির্মাণ করা লঞ্চ টার্মিনালটি উচ্ছেদ করার নীলনকশা তৈরি করে হকারের মাধ্যমে দখল করেন। বিআইডব্লিউটিএ অফিসিয়াল নোটিসের মাধ্যমে সিটি কপোরেশনের এসব কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য বলে।
‘রূপলাল’ ঢাকা নদীবন্দরের উত্তর-পূর্ব পাশে অবস্থিত। ভবনটির সামনে বর্তমানে বিআইডব্লিউটিসির ওয়াটার বাস চলাচলের সুবিধার্থে একটি ছোট গ্যাংওয়ে ও একটি ছোট পন্টুন রয়েছে। তার পূর্ব পাশে তিনতলা শ্যামবাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণ পাশে শ্যামবাজার, তার দক্ষিণ পাশে বাঁকল্যান্ড বাঁধ বা রাস্তা বিদ্যমান। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা শ্যামবাজারের আড়তগুলোর কারণে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে রূপলাল হাউস এবং রূপলাল হাউস থেকে বুড়িগঙ্গা নদী দেখা যায় না।
নদীর তীরে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত গাছ লাগানো হয়েছে। টার্মিনাল এলাকা অর্থাৎ পূর্বে লালকুঠি হয়ে শ্যামবাজার মসজিদ এবং পশ্চিমে সিমসনঘাট-ওয়াইজঘাট হয়ে বাদামতলী পর্যন্ত সম্প্রসারণ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। ঢাকা সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন হ্যারিটেজ ভবন ‘লালকুঠি হল’-এর দক্ষিণ পাশে অবস্থিত টার্মিনাল এবং ফরাশগঞ্জ হোল্ডিংসের ‘রূপলাল হাউস’ ও ‘আহসান মঞ্জিল’-এর সম্মুখভাগের স্থাপনা সরিয়ে বিআইডব্লিউটিএ-কে নোটিস দেন তাপস।
আহসান মঞ্জিল টার্মিনাল সিটি করপোরেশন ভবনের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। আহসান মঞ্জিলের সামনের রাস্তাটি সিটি করপোরেশন অবৈধভাবে ফলের মার্কেট হিসেবে পরিচালনা করে থাকে। টার্মিনালসংলগ্ন আহসান মঞ্জিলের সামনের অংশে নদীর সীমানায় দুটি পন্টুন ও একটি গ্যাংওয়ে স্থাপন করা আছে।
ওই স্থানে জেলা প্রশাসন ও ডিএমপির ছোট ছোট নৌযান রয়েছে এবং ওয়াটারবাস চলাচল করে। পটুয়াখালীগামী লঞ্চগুলো ওয়াইজঘাট এলাকায় অবস্থান করে। বিআইডব্লিউটিএ’র এসব স্থাপনাও সরিয়ে নিতে নোটিস দেন তাপস। এভাবে তাপস বিআইডব্লিউটিএ’র নদীতীরের ভূমিগুলো তার বাহিনী দিয়ে দখলে নিয়ে ইজারার মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হাতিয়ে নিয়েছেন।
আইন অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ’র অন্যতম দায়িত্ব ফেরিঘাট, লঞ্চ ও খেয়াঘাট উন্নয়ন ও পরিচালনা। সারা দেশে এ ধরনের ৪৬৮টি ঘাট রয়েছে। ঢাকার খোলামোড়া-কামরাঙ্গীরচর খেয়াঘাট, ঝাউচর-কামরাঙ্গীরচর খেয়াঘাট, শ্যামলাসি-কলাতিয়াপাড়া ফেরিঘাট এবং বসিলা-ওয়াশপুর ফেরিঘাট ঢাকা নদীবন্দরের আওতায়।
জানা যায়, ওই ঘাটগুলো নিয়ে ঢাকা জেলা পরিষদের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র বিবাদ দীর্ঘদিনের। সব মিলিয়ে ঢাকার ১৮ ঘাট নিয়ে এ ধরনের দ্বন্দ্ব চলছে। এ ঘাটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতেই নানামুখী কৌশলের আশ্রয় নেন তাপস।
ঘাটে মালামাল ওঠানো-নামানো, স্থান ও স্থাপনা ব্যবহারের অনুমতি দেয় বিআইডব্লিউটিএ। পন্টুন স্থাপন, জেটি নির্মাণ, লঞ্চঘাটে যাত্রীছাউনি তৈরি ও পন্টুনের উভয় পাশে ৫০০ গজ তীরভূমি নির্মাণের কাজও করে থাকে সংস্থাটি। তাই ইজারা দেওয়া ও রাজস্ব আদায়ের এখতিয়ারও তাদের। ২০২৪ সালের মার্চে বিআইডব্লিউটিএ’র সঙ্গে ঘাট ইজারা দেওয়া সংস্থার মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও সাবেক মেয়র তাপসের হস্তক্ষেপে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিআইডব্লিউটিএ জানায়, ঢাকা নদীবন্দর এলাকায় ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিয়মিত নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই সময়ে এক হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা ও ৩১ একর জমি উদ্ধার করা হয়। এর বাজারমূল্য শতকোটি টাকা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদীর বসিলা থেকে ধলেশ্বরী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নদীপথের দুই পাড়ই দখল করে ফেলেছে প্রভাবশালীরা। কামরাঙ্গীরচর থেকে বসিলা পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪১ মাইল এলাকায় নদীটি দখল হয়েছে ৯৭ দশমিক ১৭ একর। তুরাগ নদীর আবদুল্লাহপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত ৫ দশমিক ৭৬ মাইল এলাকাজুড়ে দখল হয়েছে ১২০ দশমিক ৭৯ একর। বালু নদীর ডেমরা থেকে নন্দীপাড়া পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ মাইলজুড়ে দখল হয়েছে। তুরাগের মোট এলাকার মধ্যে দখল হয়েছে ৮ দশমিক ৮৪ একর জায়গা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের তথ্যমতে, শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় দখল হয়েছে মারাত্মকভাবে। নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানীর সঙ্গে লাগোয়া এলাকাজুড়েই শীতলক্ষ্যাপাড়ের প্রায় ১৫ কিলোমিটারের বেশি এলাকা দখল হয়ে গেছে বিভিন্ন গ্রুপের কলকারখানা ও ইটভাটার মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
তাপসের নদীতীর দখল বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আমার দেশকে বলেন, তাপস ছিলেন ফ্যাসিবাদের দোসর। তিনি যখন দায়িত্বে ছিলেন, তখনই তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। তার দুর্নীতি জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে এবং তাকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, তাপস হাসিনা পরিবারের সদস্য হওয়ায় ছিলেন প্রচুর ক্ষমতাশালী। নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও নদীবন্দরের চারপাশ দখল বাণিজ্য করে শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি করে গেছেন।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর ও পরিবহন বিভাগের পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন আমার দেশকে বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক মেয়র তাপস ঢাকার বিভিন্ন নদীবন্দর এলাকা দখল করতে চেয়েছিলেন।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন আমার দেশকে বলেন, তাপস কী চেয়েছেন সেটা জাতি জানে। এটা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি, এটা এ মন্ত্রণালয়ের অধিকার। তিনি সিটি কপোরেশনের মাধ্যমে যে নীলনকশা তৈরি করতে চেয়েছিলেন, তা কখনই বাস্তবায়ন হবে না। আমরা নদীর চারপাশ কীভাবে আরো সুন্দর করা যায়, সেটা দেখছি।
শেখ পরিবারের অন্যতম সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস অবৈধভাবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আওতাধীন ঢাকার নদীতীর ও ঘাট দখলে নেন। এগুলো ইজারা দিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা লোপাট করেন। এর পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের আশপাশে নদীতীরের বেশকিছু এলাকা দখলে নেওয়ার ছকও এঁকেছিলেন তিনি।
জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ’র আওতাধীন নদীবন্দরের জমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের তৎকালীন মেয়র তাপস ক্ষমতার দাপটে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ইজারার মাধ্যমে দখল নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ১৯৫৮ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিআইডব্লিউটিএ নদীবন্দর সীমানায় এবং সীমানার বাইরে ঘাট-পয়েন্ট উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা করবে।
সে অনুযায়ী ঢাকা নদীবন্দরের সীমানা ফতুল্লার বিজি মাউথ থেকে আশুলিয়ার ধউর ব্রিজ পর্যন্ত। নদীবন্দরের প্রজ্ঞাপন জারির পর নিয়মানুযায়ী জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ’র সমন্বয়ে নদীবন্দরের সীমানাভুক্ত বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর তীরভূমি যৌথ জরিপ শেষে তফসিল প্রস্তুত ও ম্যাপ প্রণয়ন করা হয় এবং তফসিলভুক্ত তীরভূমিতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক বন্দর উন্নয়ন ও নৌবাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য রাজস্ব নির্ধারণ করে নিয়মিতভাবে জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করে আসছে।
এ কারণে বিআইডব্লিউটিএ নদীর বিস্তৃত তীরভূমিতে বন্দর উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনাসহ বিভিন্ন স্থানে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে পন্টুন, গ্যাংওয়ে ও জেটি স্থাপন, সিঁড়ি নির্মাণ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে। কিন্তু তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার পর সিটি করপোরেশনসংলগ্ন নদীর তীরভূমি এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ইজারা দেন। এর মাধ্যমে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় থেকে রাস্তার দক্ষিণ পাশে মিলব্যারাক পর্যন্ত ট্রাক পার্কিং স্ট্যান্ড ঘোষণা করে ইজারা দেন তাপস। ওই ইজারা কার্যক্রম বন্ধ করে ট্রাকস্ট্যান্ডটি অন্যত্র স্থানান্তরের আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
সদরঘাটসংলগ্ন প্রাচীন স্থাপত্য ‘লালকুঠি হল’ ঘিরে তাপস ঢাকা নদীবন্দরের পূর্ব সীমানায় নির্মাণ করা লঞ্চ টার্মিনালটি উচ্ছেদ করার নীলনকশা তৈরি করে হকারের মাধ্যমে দখল করেন। বিআইডব্লিউটিএ অফিসিয়াল নোটিসের মাধ্যমে সিটি কপোরেশনের এসব কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য বলে।
‘রূপলাল’ ঢাকা নদীবন্দরের উত্তর-পূর্ব পাশে অবস্থিত। ভবনটির সামনে বর্তমানে বিআইডব্লিউটিসির ওয়াটার বাস চলাচলের সুবিধার্থে একটি ছোট গ্যাংওয়ে ও একটি ছোট পন্টুন রয়েছে। তার পূর্ব পাশে তিনতলা শ্যামবাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণ পাশে শ্যামবাজার, তার দক্ষিণ পাশে বাঁকল্যান্ড বাঁধ বা রাস্তা বিদ্যমান। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা শ্যামবাজারের আড়তগুলোর কারণে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে রূপলাল হাউস এবং রূপলাল হাউস থেকে বুড়িগঙ্গা নদী দেখা যায় না।
নদীর তীরে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত গাছ লাগানো হয়েছে। টার্মিনাল এলাকা অর্থাৎ পূর্বে লালকুঠি হয়ে শ্যামবাজার মসজিদ এবং পশ্চিমে সিমসনঘাট-ওয়াইজঘাট হয়ে বাদামতলী পর্যন্ত সম্প্রসারণ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। ঢাকা সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন হ্যারিটেজ ভবন ‘লালকুঠি হল’-এর দক্ষিণ পাশে অবস্থিত টার্মিনাল এবং ফরাশগঞ্জ হোল্ডিংসের ‘রূপলাল হাউস’ ও ‘আহসান মঞ্জিল’-এর সম্মুখভাগের স্থাপনা সরিয়ে বিআইডব্লিউটিএ-কে নোটিস দেন তাপস।
আহসান মঞ্জিল টার্মিনাল সিটি করপোরেশন ভবনের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। আহসান মঞ্জিলের সামনের রাস্তাটি সিটি করপোরেশন অবৈধভাবে ফলের মার্কেট হিসেবে পরিচালনা করে থাকে। টার্মিনালসংলগ্ন আহসান মঞ্জিলের সামনের অংশে নদীর সীমানায় দুটি পন্টুন ও একটি গ্যাংওয়ে স্থাপন করা আছে।
ওই স্থানে জেলা প্রশাসন ও ডিএমপির ছোট ছোট নৌযান রয়েছে এবং ওয়াটারবাস চলাচল করে। পটুয়াখালীগামী লঞ্চগুলো ওয়াইজঘাট এলাকায় অবস্থান করে। বিআইডব্লিউটিএ’র এসব স্থাপনাও সরিয়ে নিতে নোটিস দেন তাপস। এভাবে তাপস বিআইডব্লিউটিএ’র নদীতীরের ভূমিগুলো তার বাহিনী দিয়ে দখলে নিয়ে ইজারার মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হাতিয়ে নিয়েছেন।
আইন অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ’র অন্যতম দায়িত্ব ফেরিঘাট, লঞ্চ ও খেয়াঘাট উন্নয়ন ও পরিচালনা। সারা দেশে এ ধরনের ৪৬৮টি ঘাট রয়েছে। ঢাকার খোলামোড়া-কামরাঙ্গীরচর খেয়াঘাট, ঝাউচর-কামরাঙ্গীরচর খেয়াঘাট, শ্যামলাসি-কলাতিয়াপাড়া ফেরিঘাট এবং বসিলা-ওয়াশপুর ফেরিঘাট ঢাকা নদীবন্দরের আওতায়।
জানা যায়, ওই ঘাটগুলো নিয়ে ঢাকা জেলা পরিষদের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র বিবাদ দীর্ঘদিনের। সব মিলিয়ে ঢাকার ১৮ ঘাট নিয়ে এ ধরনের দ্বন্দ্ব চলছে। এ ঘাটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতেই নানামুখী কৌশলের আশ্রয় নেন তাপস।
ঘাটে মালামাল ওঠানো-নামানো, স্থান ও স্থাপনা ব্যবহারের অনুমতি দেয় বিআইডব্লিউটিএ। পন্টুন স্থাপন, জেটি নির্মাণ, লঞ্চঘাটে যাত্রীছাউনি তৈরি ও পন্টুনের উভয় পাশে ৫০০ গজ তীরভূমি নির্মাণের কাজও করে থাকে সংস্থাটি। তাই ইজারা দেওয়া ও রাজস্ব আদায়ের এখতিয়ারও তাদের। ২০২৪ সালের মার্চে বিআইডব্লিউটিএ’র সঙ্গে ঘাট ইজারা দেওয়া সংস্থার মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও সাবেক মেয়র তাপসের হস্তক্ষেপে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিআইডব্লিউটিএ জানায়, ঢাকা নদীবন্দর এলাকায় ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিয়মিত নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই সময়ে এক হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা ও ৩১ একর জমি উদ্ধার করা হয়। এর বাজারমূল্য শতকোটি টাকা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদীর বসিলা থেকে ধলেশ্বরী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নদীপথের দুই পাড়ই দখল করে ফেলেছে প্রভাবশালীরা। কামরাঙ্গীরচর থেকে বসিলা পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪১ মাইল এলাকায় নদীটি দখল হয়েছে ৯৭ দশমিক ১৭ একর। তুরাগ নদীর আবদুল্লাহপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত ৫ দশমিক ৭৬ মাইল এলাকাজুড়ে দখল হয়েছে ১২০ দশমিক ৭৯ একর। বালু নদীর ডেমরা থেকে নন্দীপাড়া পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ মাইলজুড়ে দখল হয়েছে। তুরাগের মোট এলাকার মধ্যে দখল হয়েছে ৮ দশমিক ৮৪ একর জায়গা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের তথ্যমতে, শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় দখল হয়েছে মারাত্মকভাবে। নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানীর সঙ্গে লাগোয়া এলাকাজুড়েই শীতলক্ষ্যাপাড়ের প্রায় ১৫ কিলোমিটারের বেশি এলাকা দখল হয়ে গেছে বিভিন্ন গ্রুপের কলকারখানা ও ইটভাটার মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
তাপসের নদীতীর দখল বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আমার দেশকে বলেন, তাপস ছিলেন ফ্যাসিবাদের দোসর। তিনি যখন দায়িত্বে ছিলেন, তখনই তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। তার দুর্নীতি জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে এবং তাকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, তাপস হাসিনা পরিবারের সদস্য হওয়ায় ছিলেন প্রচুর ক্ষমতাশালী। নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও নদীবন্দরের চারপাশ দখল বাণিজ্য করে শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি করে গেছেন।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর ও পরিবহন বিভাগের পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন আমার দেশকে বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক মেয়র তাপস ঢাকার বিভিন্ন নদীবন্দর এলাকা দখল করতে চেয়েছিলেন।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন আমার দেশকে বলেন, তাপস কী চেয়েছেন সেটা জাতি জানে। এটা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি, এটা এ মন্ত্রণালয়ের অধিকার। তিনি সিটি কপোরেশনের মাধ্যমে যে নীলনকশা তৈরি করতে চেয়েছিলেন, তা কখনই বাস্তবায়ন হবে না। আমরা নদীর চারপাশ কীভাবে আরো সুন্দর করা যায়, সেটা দেখছি।
প্রত্যাশার চাপে নুয়ে পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই প্রতিনিয়ত রোগী ভিড় করে হাসপাতালটিতে।
১৪ ঘণ্টা আগেপ্রবাসে থাকা ১৮ বছরের কম বয়সি বাংলাদেশিরা পাবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। এজন্য ১৮ বছর বা তার বেশিদের পাশাপাশি ১৬ ও ১৭ বছর বয়সিদের অগ্রিম দুই বছরের তথ্য নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
১৪ ঘণ্টা আগেক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে সড়ক ও সেতু বিভাগ ছিল কমিশন বাণিজ্যের হাট। এ খাত থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়েছেন পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ প্রভাবশালী চক্র।
১৫ ঘণ্টা আগেখাতা-কলমে বছরে ২৬ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষম রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের। সক্ষমতার সবটুকু ব্যবহার করার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে ছোটখাটো কিছু প্রকল্প নিয়ে বর্তমানে ৩৩ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু চাহিদা রয়েছে আরো বেশি।
১ দিন আগে