ওয়াসিম সিদ্দিকী
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার শেষ ১১ বছরে পুলিশ পদক পান এক হাজার ৬৫৬ জন। বিরোধী দলমতকে দমন-পীড়ন, গুম-খুন ও জঙ্গিনাটক মঞ্চায়নসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িতদের দেওয়া হয় এসব পদক। পদক দেওয়া হয় তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদেরও। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পদক দেওয়া হয় ‘রাতের ভোট’খ্যাত ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের। অতীতের রেওয়াজ ভঙ্গ করে শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া সব আইজিপি এসব পুরস্কারে ভূষিত হন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুককে বেদম পেটানোর পর টানা দুই বছর হারুন অর রশিদকে দেওয়া হয় বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিতে ভূমিকা রাখায় ২০১৬ সালে তাকে দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)। পরবর্তী সময়ে তিনি আওয়ামী স্বার্থরক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। র্যাবে দায়িত্ব পালনকালে গুম-খুনে জড়িত বর্তমানে গ্রেপ্তারে থাকা বিতর্কিত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসানকেও করা হয় পুরস্কৃত। এছাড়াও মনিরুল ইসলাম, বিপ্লব কুমার সাহা, প্রলয় জোয়ার্দারের মতো পুলিশ কর্মকর্তারাও হত্যা, নির্যাতন ও দমন-পীড়নের পুরস্কার হিসেবে এসব পদক পান।
সম্প্রতি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, সাবেক পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশ ও র্যাবের বিভিন্ন পদমর্যাদার ১০৩ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার করা হয়। তাদের পদক বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ১০৩ কর্মকর্তার অনুকূলে দেওয়া বিপিএম, বিপিএম-সেবা, পিপিএম ও পিপিএম-সেবা পদক প্রত্যাহার করা হলো।
পুলিশের পদকপ্রাপ্তদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হাসিনার ক্ষমতার শেষ ১১ বছরে (২০১৩-২৩) এক হাজার ৬৫৬ পুলিশ সদস্যকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ৪০ জন, ২০১৪ সালে ২০ জন, ২০১৫ সালে ৮৬ জন, ২০১৬ সালে ১০২ জন, ২০১৭ সালে ১৩২ জন, ২০১৮ সালে ১৮২ জন, ২০১৯ সালে ৩৪৯ জন, ২০২০ ও ২০২১ সালে ২৩০ জন, ২০২২ সালে ১১৫ জন এবং ২০২৩ সালে ৪০০ জন পুরস্কার পান। তারা এসব পুরস্কার অর্জন করেন বিএনপি ও জামায়াতকর্মীদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন দমন, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সুনাম প্রতিষ্ঠা এবং সাজানো জঙ্গিনাটক মঞ্চায়ন করার মাধ্যমে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পুলিশ বাহিনীতে দুই ধরনের পদক দেওয়া হয়। একটি বিপিএম ও বিপিএম (সেবা) এবং আরেকটি পিপিএম ও পিপিএম (সেবা)। অসীম বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এসব পদকে ভূষিত করা হয়। প্রতিবছর পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে দেওয়া হয় এসব পদক। বিপিএম পদকের জন্য এককালীন এক লাখ টাকা এবং মাসিক এক হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। বিপিএম (সেবা) পদকের জন্য দেওয়া হয় এককালীন ৭৫ হাজার টাকা এবং মাসিক এক হাজার ৫০০ টাকা। পিপিএম পদকের জন্য দেওয়া হয় এককালীন পঁচাত্তর হাজার টাকা ও মাসিক এক হাজার টাকা এবং পিপিএম-সেবা পদকের জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকা ও মাসিক এক হাজার টাকা দেওয়া হয়।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম ও সিটিটিসির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় জঙ্গি নিধনের নামে বিরোধী মত দমন ও ইসলামি ভাবধারার তরুণ-তরুণীদের হত্যার স্কোয়াড। জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে আলেমসহ মেধাবী তরুণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যাকেই শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার ক্ষেত্রে বাধা মনে হয়েছে, তাকেই হত্যা করা হয়। এ অপকর্মে জড়িত ছিল পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখা, র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ, এসবির সংশ্লিষ্ট উইং, সিটিটিসি, এটিইউ এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট উইং।
জঙ্গিবিরোধী অভিযানে পদক পান যারা
২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর নরসিংদীতে ‘গার্ডিয়ান নট’ নামে জঙ্গিবিরোধী অপারেশন পরিচালিত হয়। ওই অভিযানে হত্যা করা হয় এক দম্পতিকে। পরে প্রচার করা হয় তারা নিষিদ্ধ জেএমবির সদস্য ছিলেন। নরসিংদীর ছোট গদাইরচরের নিলুফা ভিলায় মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকেও জঙ্গি সাজিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এবং সিটিটিসির প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মনিরুল।
ওই সব অভিযান, ২০১৮ সালের রাতের নির্বাচন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন দমনের জন্য তিনি সাইবার সিন ক্রাইম বিভাগকে ব্যবহার করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে বিপিএম পদক দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের সময় তিনি স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের পতনের পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান।
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে এএফএম আনজুমান কালাম তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটন’, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ এবং গ্রেপ্তারে সহায়তার জন্য বিপিএম (সেবা) পদক পান। ওই বছরের ২৭ মার্চ থেকে তিনি বিশেষ পুলিশ সুপার (গোপনীয়) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশের স্যুভেনির অনুযায়ী, তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৎকালীন সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র এবং জঙ্গি দমন অভিযানে বিশেষ সফলতা অর্জিত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা এবং তৎকালীন সরকার উৎখাতের চটকদার শিরোনামের আড়ালে ২০১৭ সালে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়, যা আনজুমান কালামের পদকপ্রাপ্তির একটি মূল উপাদান। আলেমদের দমন এবং শেখ হাসিনার জঙ্গি কার্ড ব্যবহারে এই কর্মকর্তা সামনের কাতারে ছিলেন।
পুলিশের স্যুভেনিরে উল্লেখ রয়েছে, আনজুমান কালাম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যকে বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা তথ্যে রূপান্তর করেন এবং পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে সরবরাহ করেন, যা জঙ্গি অপারেশন ও গ্রেপ্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছাত্রজীবনে বামপন্থি রাজনীতি করা এই পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) হিসেবে কর্মরত।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি শাখার অ্যাডিশনাল এসপি ইসতিয়াক উর রশিদ ২০১৪ সাল থেকে কর্মরত। তিনিও তথাকথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের জন্য বিপিএম (সেবা) পদক পান। ২০১৭ সালে পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অভিযানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অথচ তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক শহীদুল হক তার বইয়ে উল্লেখ করেন, তিনি পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি (হাসিনা) তাকে বলেন, ৩২ নম্বরের এত কাছে এই জঙ্গি নাটক না করলেও পারতে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক মানুষকে জঙ্গি সাজিয়ে গ্রেপ্তারের কৃতিত্বও তার পদকের জন্য দেখানো হয়। বর্তমানে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।
পুলিশের ওপর রহস্যজনক হামলার মাধ্যমে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামপন্থি বিরোধীদের দমন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সাজানো অভিযান পরিচালনার জন্য পদক পান এলআইসি শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম হাসানুল জাহীদ। বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে এসবিতে কর্মরত তিনি।
ডিএমপির তৎকালীন উপকমিশনার মোহাম্মদ আশিকুর রহমান পিপিএম (সেবা) পদক পান। তার কৃতিত্ব হিসেবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন দমনের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরো অর্জন হিসেবে রয়েছে—শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার আসামি ফুয়াদ জামান এবং ৪৫ দুষ্কৃতকারীকে গ্রেপ্তার, ১৮টি জিহাদি বই ও বিস্ফোরক উদ্ধার। বর্তমানে এসবির অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পুলিশ সুপার থাকাকালে ২০১৬ সালে মীর আবু তৌহিদ বিপিএম পদক পান। তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয় পুরোনো জেএমবির রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় প্রধানসহ চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার এবং পান্থপথে ওলিও হোটেলে অভিযান পরিচালনার জন্য।
২০১৬ সালে উপকমিশনার (মিরপুর বিভাগ) মাসুদ আহাম্মদ রাজধানীর জাহাজবাড়ীতে সাজানো জঙ্গিনাটকের জন্য বিপিএম (সেবা) পদক পান। অথচ ওই ঘটনায় নিহত ৯ তরুণ আগে থেকেই ডিবিতে গুম অবস্থায় ছিলেন।
২০১৬ সালে বগুড়ার পুলিশ সুপার ছিলেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (পরে সিটিটিসি প্রধান এবং বর্তমানে পলাতক)। তিনি বগুড়া পুলিশ লাইনসে গোপন কারাগার স্থাপন ও সেখানে শত শত নারী-পুরুষকে বন্দি রাখতেন। বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিনাটক সাজাতে ওই বন্দিদের ব্যবহার করতেন তিনি। এমনই সাজানো অভিযানের জন্য তিনি পান বিপিএম (সেবা) পদক।
এছাড়া তথাকথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের জন্য কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার এএইচএম আবদুর রকিব পিপিএম পুরস্কার পান। নূরে আলম বিপিএম (বার) ২০১৩ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। তিনিও তথাকথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের জন্য পুরস্কার পান। নূরে আলম রয়েছেন ডিএমপিতে। ডিএমপির তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার (সিটিটিসি) ড. এএইচএম কামরুজ্জামানকে দেওয়া হয় পিপিএম (সেবা) পদক। তাকে পুরস্কার দেওয়া হয় ২০২৩ সালে মৌলভীবাজারে জঙ্গি অভিযান পরিচালনার জন্য।
বিরোধী দল দমন ও ২০২৪ সালের ডামি ভোটের জন্য যারা পান পদক
অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খানকে পিপিএম (সেবা) পদক দেওয়া হয়। তার সফলতা হলো ২০২৪ সালের জানুয়ারির ডামি ভোট অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার দায়িত্ব অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে আয়োজনে সহযোগিতা করা।
অতিরিক্ত আইজিপি আব্দুল বাতেন বিপিএম ও পিপিএম পুরস্কার পান। তাকে পদক দেওয়া হয় নির্বাচন-পূর্ববর্তী নাশকতার ঘটনা, তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টিকারী ও নাশকতাকারীদের পরিকল্পনা শক্তহস্তে দমনের জন্য।
২০২৩ সালে ডিএমপির উপকমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনকে বিপিএম পদক দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়, দেশবিরোধী বিরোধী দলের (বিএনপি-জামায়াত) নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে তিনি ভূমিকা রেখেছেন।
র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেনকে দেওয়া হয় বিপিএম পদক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনের পুরস্কার হিসেবে।
জঙ্গি দমনে র্যাবের পদকপ্রাপ্তরা
অভিযানের নামে নাটক সাজিয়ে জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের পুরস্কার হিসেবে র্যাবের আলোচিত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনকে পিপিএম (সেবা) পদক দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২ মে ‘আনসার আল ইসলাম’-এর নেতা আবু বক্কর সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করেন তিনি। একই বছরের ২৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানার বনপাড়া এলাকার নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাজ শারকীয়া’র শীর্ষ নেতা আনিসুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় তার নেতৃত্বে।
র্যাব-৯-এর অধিনায়ক থাকাকালে উইং কমান্ডার মোমিনুল হক বিপিএম (সেবা) পদক পান। তিনি সিলেটে দায়িত্ব পালনকালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়া নামে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে কর্নেল অবস্থায় থাকাকালে (পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) কামরুল হাসানকে বিপিএম পদক দেওয়া হয়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, তার দায়িত্ব পালনকালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়া, কেএনএফসহ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলমকে বিপিএম পদক দেওয়া হয় ২০২৩ সালে বান্দরবানের থানছিতে জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের জন্য। র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে দায়িত্ব পালন করা লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমনকে বিপিএম পদক দেওয়া হয় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলাকারী আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করায়।
এছাড়া র্যাব-৬-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফিরোজ কবীর বিপিএম পদক পান চাঞ্চল্যকর জঙ্গি অভিযান পরিচালনার জন্য।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ওমর ফারুক বলেন, আওয়ামী আমলে পুলিশ বাহিনীকে যেভাবে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে, তার একটি দিক হলো বিপিএম ও পিপিএম পদক। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তদন্তসাপেক্ষে তাদের পদক প্রত্যাহার করা যেতে পারে। বিভিন্ন ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, অনেক কর্মকর্তার পদক মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, বিরোধী দল ও আন্দোলন দমন এবং শেখ হাসিনার আনুগত্য প্রদর্শনের পুরস্কার।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া) এইচএম শাহাদাত হোসাইন বলেন, পদক পাওয়ার ক্ষেত্রে অতীতে কোনো অনিয়ম পেলে খতিয়ে দেখা হবে। সম্প্রতি সাত কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার শেষ ১১ বছরে পুলিশ পদক পান এক হাজার ৬৫৬ জন। বিরোধী দলমতকে দমন-পীড়ন, গুম-খুন ও জঙ্গিনাটক মঞ্চায়নসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িতদের দেওয়া হয় এসব পদক। পদক দেওয়া হয় তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদেরও। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পদক দেওয়া হয় ‘রাতের ভোট’খ্যাত ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের। অতীতের রেওয়াজ ভঙ্গ করে শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া সব আইজিপি এসব পুরস্কারে ভূষিত হন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুককে বেদম পেটানোর পর টানা দুই বছর হারুন অর রশিদকে দেওয়া হয় বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিতে ভূমিকা রাখায় ২০১৬ সালে তাকে দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)। পরবর্তী সময়ে তিনি আওয়ামী স্বার্থরক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। র্যাবে দায়িত্ব পালনকালে গুম-খুনে জড়িত বর্তমানে গ্রেপ্তারে থাকা বিতর্কিত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসানকেও করা হয় পুরস্কৃত। এছাড়াও মনিরুল ইসলাম, বিপ্লব কুমার সাহা, প্রলয় জোয়ার্দারের মতো পুলিশ কর্মকর্তারাও হত্যা, নির্যাতন ও দমন-পীড়নের পুরস্কার হিসেবে এসব পদক পান।
সম্প্রতি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, সাবেক পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশ ও র্যাবের বিভিন্ন পদমর্যাদার ১০৩ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার করা হয়। তাদের পদক বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ১০৩ কর্মকর্তার অনুকূলে দেওয়া বিপিএম, বিপিএম-সেবা, পিপিএম ও পিপিএম-সেবা পদক প্রত্যাহার করা হলো।
পুলিশের পদকপ্রাপ্তদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হাসিনার ক্ষমতার শেষ ১১ বছরে (২০১৩-২৩) এক হাজার ৬৫৬ পুলিশ সদস্যকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ৪০ জন, ২০১৪ সালে ২০ জন, ২০১৫ সালে ৮৬ জন, ২০১৬ সালে ১০২ জন, ২০১৭ সালে ১৩২ জন, ২০১৮ সালে ১৮২ জন, ২০১৯ সালে ৩৪৯ জন, ২০২০ ও ২০২১ সালে ২৩০ জন, ২০২২ সালে ১১৫ জন এবং ২০২৩ সালে ৪০০ জন পুরস্কার পান। তারা এসব পুরস্কার অর্জন করেন বিএনপি ও জামায়াতকর্মীদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন দমন, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সুনাম প্রতিষ্ঠা এবং সাজানো জঙ্গিনাটক মঞ্চায়ন করার মাধ্যমে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পুলিশ বাহিনীতে দুই ধরনের পদক দেওয়া হয়। একটি বিপিএম ও বিপিএম (সেবা) এবং আরেকটি পিপিএম ও পিপিএম (সেবা)। অসীম বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এসব পদকে ভূষিত করা হয়। প্রতিবছর পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে দেওয়া হয় এসব পদক। বিপিএম পদকের জন্য এককালীন এক লাখ টাকা এবং মাসিক এক হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। বিপিএম (সেবা) পদকের জন্য দেওয়া হয় এককালীন ৭৫ হাজার টাকা এবং মাসিক এক হাজার ৫০০ টাকা। পিপিএম পদকের জন্য দেওয়া হয় এককালীন পঁচাত্তর হাজার টাকা ও মাসিক এক হাজার টাকা এবং পিপিএম-সেবা পদকের জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকা ও মাসিক এক হাজার টাকা দেওয়া হয়।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম ও সিটিটিসির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় জঙ্গি নিধনের নামে বিরোধী মত দমন ও ইসলামি ভাবধারার তরুণ-তরুণীদের হত্যার স্কোয়াড। জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে আলেমসহ মেধাবী তরুণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যাকেই শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার ক্ষেত্রে বাধা মনে হয়েছে, তাকেই হত্যা করা হয়। এ অপকর্মে জড়িত ছিল পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখা, র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ, এসবির সংশ্লিষ্ট উইং, সিটিটিসি, এটিইউ এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট উইং।
জঙ্গিবিরোধী অভিযানে পদক পান যারা
২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর নরসিংদীতে ‘গার্ডিয়ান নট’ নামে জঙ্গিবিরোধী অপারেশন পরিচালিত হয়। ওই অভিযানে হত্যা করা হয় এক দম্পতিকে। পরে প্রচার করা হয় তারা নিষিদ্ধ জেএমবির সদস্য ছিলেন। নরসিংদীর ছোট গদাইরচরের নিলুফা ভিলায় মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকেও জঙ্গি সাজিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এবং সিটিটিসির প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মনিরুল।
ওই সব অভিযান, ২০১৮ সালের রাতের নির্বাচন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন দমনের জন্য তিনি সাইবার সিন ক্রাইম বিভাগকে ব্যবহার করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে বিপিএম পদক দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের সময় তিনি স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের পতনের পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান।
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে এএফএম আনজুমান কালাম তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটন’, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ এবং গ্রেপ্তারে সহায়তার জন্য বিপিএম (সেবা) পদক পান। ওই বছরের ২৭ মার্চ থেকে তিনি বিশেষ পুলিশ সুপার (গোপনীয়) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশের স্যুভেনির অনুযায়ী, তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৎকালীন সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র এবং জঙ্গি দমন অভিযানে বিশেষ সফলতা অর্জিত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা এবং তৎকালীন সরকার উৎখাতের চটকদার শিরোনামের আড়ালে ২০১৭ সালে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়, যা আনজুমান কালামের পদকপ্রাপ্তির একটি মূল উপাদান। আলেমদের দমন এবং শেখ হাসিনার জঙ্গি কার্ড ব্যবহারে এই কর্মকর্তা সামনের কাতারে ছিলেন।
পুলিশের স্যুভেনিরে উল্লেখ রয়েছে, আনজুমান কালাম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যকে বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা তথ্যে রূপান্তর করেন এবং পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে সরবরাহ করেন, যা জঙ্গি অপারেশন ও গ্রেপ্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছাত্রজীবনে বামপন্থি রাজনীতি করা এই পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) হিসেবে কর্মরত।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি শাখার অ্যাডিশনাল এসপি ইসতিয়াক উর রশিদ ২০১৪ সাল থেকে কর্মরত। তিনিও তথাকথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের জন্য বিপিএম (সেবা) পদক পান। ২০১৭ সালে পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অভিযানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অথচ তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক শহীদুল হক তার বইয়ে উল্লেখ করেন, তিনি পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি (হাসিনা) তাকে বলেন, ৩২ নম্বরের এত কাছে এই জঙ্গি নাটক না করলেও পারতে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক মানুষকে জঙ্গি সাজিয়ে গ্রেপ্তারের কৃতিত্বও তার পদকের জন্য দেখানো হয়। বর্তমানে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।
পুলিশের ওপর রহস্যজনক হামলার মাধ্যমে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামপন্থি বিরোধীদের দমন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সাজানো অভিযান পরিচালনার জন্য পদক পান এলআইসি শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম হাসানুল জাহীদ। বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে এসবিতে কর্মরত তিনি।
ডিএমপির তৎকালীন উপকমিশনার মোহাম্মদ আশিকুর রহমান পিপিএম (সেবা) পদক পান। তার কৃতিত্ব হিসেবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন দমনের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরো অর্জন হিসেবে রয়েছে—শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার আসামি ফুয়াদ জামান এবং ৪৫ দুষ্কৃতকারীকে গ্রেপ্তার, ১৮টি জিহাদি বই ও বিস্ফোরক উদ্ধার। বর্তমানে এসবির অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পুলিশ সুপার থাকাকালে ২০১৬ সালে মীর আবু তৌহিদ বিপিএম পদক পান। তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয় পুরোনো জেএমবির রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় প্রধানসহ চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার এবং পান্থপথে ওলিও হোটেলে অভিযান পরিচালনার জন্য।
২০১৬ সালে উপকমিশনার (মিরপুর বিভাগ) মাসুদ আহাম্মদ রাজধানীর জাহাজবাড়ীতে সাজানো জঙ্গিনাটকের জন্য বিপিএম (সেবা) পদক পান। অথচ ওই ঘটনায় নিহত ৯ তরুণ আগে থেকেই ডিবিতে গুম অবস্থায় ছিলেন।
২০১৬ সালে বগুড়ার পুলিশ সুপার ছিলেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (পরে সিটিটিসি প্রধান এবং বর্তমানে পলাতক)। তিনি বগুড়া পুলিশ লাইনসে গোপন কারাগার স্থাপন ও সেখানে শত শত নারী-পুরুষকে বন্দি রাখতেন। বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিনাটক সাজাতে ওই বন্দিদের ব্যবহার করতেন তিনি। এমনই সাজানো অভিযানের জন্য তিনি পান বিপিএম (সেবা) পদক।
এছাড়া তথাকথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের জন্য কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার এএইচএম আবদুর রকিব পিপিএম পুরস্কার পান। নূরে আলম বিপিএম (বার) ২০১৩ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। তিনিও তথাকথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের জন্য পুরস্কার পান। নূরে আলম রয়েছেন ডিএমপিতে। ডিএমপির তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার (সিটিটিসি) ড. এএইচএম কামরুজ্জামানকে দেওয়া হয় পিপিএম (সেবা) পদক। তাকে পুরস্কার দেওয়া হয় ২০২৩ সালে মৌলভীবাজারে জঙ্গি অভিযান পরিচালনার জন্য।
বিরোধী দল দমন ও ২০২৪ সালের ডামি ভোটের জন্য যারা পান পদক
অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খানকে পিপিএম (সেবা) পদক দেওয়া হয়। তার সফলতা হলো ২০২৪ সালের জানুয়ারির ডামি ভোট অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার দায়িত্ব অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে আয়োজনে সহযোগিতা করা।
অতিরিক্ত আইজিপি আব্দুল বাতেন বিপিএম ও পিপিএম পুরস্কার পান। তাকে পদক দেওয়া হয় নির্বাচন-পূর্ববর্তী নাশকতার ঘটনা, তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টিকারী ও নাশকতাকারীদের পরিকল্পনা শক্তহস্তে দমনের জন্য।
২০২৩ সালে ডিএমপির উপকমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনকে বিপিএম পদক দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়, দেশবিরোধী বিরোধী দলের (বিএনপি-জামায়াত) নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে তিনি ভূমিকা রেখেছেন।
র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেনকে দেওয়া হয় বিপিএম পদক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনের পুরস্কার হিসেবে।
জঙ্গি দমনে র্যাবের পদকপ্রাপ্তরা
অভিযানের নামে নাটক সাজিয়ে জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের পুরস্কার হিসেবে র্যাবের আলোচিত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনকে পিপিএম (সেবা) পদক দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২ মে ‘আনসার আল ইসলাম’-এর নেতা আবু বক্কর সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করেন তিনি। একই বছরের ২৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানার বনপাড়া এলাকার নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাজ শারকীয়া’র শীর্ষ নেতা আনিসুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় তার নেতৃত্বে।
র্যাব-৯-এর অধিনায়ক থাকাকালে উইং কমান্ডার মোমিনুল হক বিপিএম (সেবা) পদক পান। তিনি সিলেটে দায়িত্ব পালনকালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়া নামে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে কর্নেল অবস্থায় থাকাকালে (পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) কামরুল হাসানকে বিপিএম পদক দেওয়া হয়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, তার দায়িত্ব পালনকালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়া, কেএনএফসহ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলমকে বিপিএম পদক দেওয়া হয় ২০২৩ সালে বান্দরবানের থানছিতে জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের জন্য। র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে দায়িত্ব পালন করা লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমনকে বিপিএম পদক দেওয়া হয় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলাকারী আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করায়।
এছাড়া র্যাব-৬-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফিরোজ কবীর বিপিএম পদক পান চাঞ্চল্যকর জঙ্গি অভিযান পরিচালনার জন্য।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ওমর ফারুক বলেন, আওয়ামী আমলে পুলিশ বাহিনীকে যেভাবে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে, তার একটি দিক হলো বিপিএম ও পিপিএম পদক। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তদন্তসাপেক্ষে তাদের পদক প্রত্যাহার করা যেতে পারে। বিভিন্ন ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, অনেক কর্মকর্তার পদক মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, বিরোধী দল ও আন্দোলন দমন এবং শেখ হাসিনার আনুগত্য প্রদর্শনের পুরস্কার।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া) এইচএম শাহাদাত হোসাইন বলেন, পদক পাওয়ার ক্ষেত্রে অতীতে কোনো অনিয়ম পেলে খতিয়ে দেখা হবে। সম্প্রতি সাত কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
১০ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
১ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
১ দিন আগে