সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
কাপড় তৈরির প্রধান কাঁচামাল সুতা। এই সুতা তৈরি হয় তুলা থেকে। কিন্তু দিন দিন প্রাকৃতিক তুলার উৎপাদন আর সহজলভ্যতা কমতে শুরু করেছে। তাই হু হু করে দাম বাড়ছে। এ বাস্তবতায় বিকল্প হয়ে উঠতে শুরু করেছে পলিয়েস্টার সুতা বা ম্যান মেইড ফাইবার (কৃত্রিম সুতা)। ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে সুতি কাপড়ের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে পলিয়েস্টার বা মিক্সড পলিয়েস্টার কাপড়। কিন্তু বিশ্ববাজারের সঙ্গে এখনো তাল মিলিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ।
তৈরি পোশাকশিল্পের কারখানা যেভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোতে পারেনি টেক্সটাইল খাত। এর অন্যতম কারণ স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল উৎপাদনে বৈষম্যমূলক শিল্পনীতি। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রাইজ ওয়াটার হাউস কুপার্সের (পিডব্লিউসি) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। দেশটি বিশ্বব্যাপী যে পোশাক রপ্তানি করে, তার ৬২ শতাংশ ম্যান মেইড ফাইবারের (এমএমএফ)। বিপরীতে কটনের অংশ মাত্র ২৭ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশের রপ্তানির চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। রপ্তানি পোশাকের মধ্যে ৬৭ শতাংশই কটন। এমএমএফ মাত্র ২৮ শতাংশ। কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের রপ্তানি করা পোশাকের ৬৬ শতাংশ এমএমএফ আর কটন কাপড় মাত্র ৩৬ শতাংশ, তুরস্কের ৪৯ শতাংশ এমএমএফ আর কটন ৪৩ শতাংশ।
গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বব্যাপী কটনের চাহিদা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলেও এমএমএফের চাহিদার প্রবৃদ্ধি ঘটছে অন্তত ৬ থেকে ৭ শতাংশ হারে। কিন্তু সম্ভাবনার এ বাজার ধরতে পারছে না বাংলাদেশ। কারণ পলিয়েস্টার ফাইবার উৎপাদনের জন্য প্রধান কাঁচামাল পেট চিপস, যা এতদিন ছিল আমদানিনির্ভর। হালে চট্টগ্রামের মিরসরাই ইকোনমিক জোনে মডার্ন সিনটেক্স লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি বিনিয়োগ করলেও এ খাতে সরকারের নীতি-সহায়তা না থাকায় বিপুল সম্ভাবনাময় খাতটি থেকে আশানুরূপ সুফল আসছে না।
বাংলাদেশের প্রচলিত টেক্সটাইল খাতে বছরে ১৭০ হাজার টন ম্যান মেইড ফাইবারের চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে কাঁচামাল উৎপাদনকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান মডার্ন পলি ইন্ডাস্ট্রির উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ৮০ হাজার টন, যা মোট চাহিদার ৪৫ শতাংশের বেশি। ১৭০ হাজার টন পেট চিপসের বাজারমূল্য ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। কয়েক বছর আগে এর পুরোটাই চীন থেকে আমদানি করা হতো। তবে এখন একটি প্রতিষ্ঠানটি কাঁচামাল উৎপাদন করায় প্রতি বছর সাশ্রয় হচ্ছে ৬৫ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা।
সম্ভাবনাময় খাতটিতে নজর নেই বাংলাদেশের
তৈরি পোশাকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও এ শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই বাংলাদেশের। গত অর্থবছরে ৩৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু রপ্তানিযোগ্য পণ্য তৈরিতে যে কাঁচামালের প্রয়োজন, তার প্রায় সবটাই আমদানিনির্ভর। এর সিংহভাগই এসেছে চীন থেকে। দেশের এক হাজার ৫১৩টি টেক্সটাইল মিল কাপড় ও সুতা উৎপাদন করছে। কিন্তু এ সুতা তৈরির পুরো কাঁচামালই আনা হয় চীন থেকে। ফলে তৈরি পোশাকের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এই টেক্সটাইল খাত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কারণ, রাষ্ট্রীয়ভাবেও কাঁচামাল উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।
অর্থনীতিবিদ মুহম্মদ সিকান্দার খান বলেন, আরএমজি সেক্টর রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান বলে সুবিধা বেশি পায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রতিষ্ঠানগুলোও রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এগুলো প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাজার অনেকটা বেলুনের মতো ফোলানো অবস্থায় আছে, যে কোনো সময় চুপসে যেতে পারে। তাই দ্রুত এমএমএফের মতো আরএমজি-সংশ্লিষ্ট খাতগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে বৈচিত্র্য আনার বিকল্প নেই। ম্যান মেইড ফাইবারের পাশাপাশি তুলাবহির্ভূত উপকরণের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। নয়তো রপ্তানি বাজারে পিছিয়ে পড়তে হবে।
আমদানিনির্ভরতা কমলে এগিয়ে থাকবে দেশ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) তথ্য বলছে, ম্যান মেইড ফাইবারের পোশাকের চাহিদা বাড়লেও বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হলে বেশি অর্ডার দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেউদ জামান খান বলেন, দেশে ম্যান মেইড ফাইবারের কাঁচামালের ৯০ শতাংশের বেশিই আমদানিনির্ভর। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি পিএসএফ ও পেট চিপসের মতো কাঁচামাল সরবরাহ করতে পারে, তাহলে জাতীয় অর্থনীতির জন্য তা অবশ্যই ইতিবাচক হতো। কিন্তু বৈষম্যমূলক আমদানিনীতির কারণে তা হচ্ছে না। সরকার মুখে বলছে রপ্তানিতে বৈচিত্র্যকরণ দেখতে চায়; কিন্তু বাস্তবে অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাখা হয়েছে। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমদানির সঙ্গে পেরে উঠছে না উৎপাদন। অথচ উৎপাদন বাড়ানো গেলে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে পণ্য রপ্তানির সময় অর্থাৎ লিড টাইমে বিশেষ সুবিধা তৈরি হবে।
প্রধান বাধা বৈষম্যমূলক শিল্পনীতি
মডার্ন পলি ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ছাড়াও দেশে অন্তত ১৫টি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা রয়েছে পেট চিপসের মতো কাঁচামাল উৎপাদনে বিনিয়োগ করার। কিন্তু বৈষম্যমূলক শিল্পনীতির কারণে এগোতে পারছে না সম্ভাবনাময় এ খাত। পিএসএফ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত মূল কাঁচামাল পিটিএ ও এমইজি আমদানিতে এক শতাংশ হারে শুল্ক থাকলেও পিএসএফ উৎপাদনের সহযোগী উপকরণ যেমনÑ কেমিক্যাল, প্যাকিং সামগ্রী প্রভৃতির ওপর ৩১ থেকে ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক রয়েছে। এর ফলে উৎপাদন পর্যায়ে খরচের ক্ষেত্রে টনপ্রতি প্রায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ করে অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া কর অব্যাহতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এক শতাংশ হারে অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স বা এআইটির কারণে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে আমদানি করা পিএসএফের ওপর শুল্কহার শূন্য হওয়ায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের তুলনায় আমদানি করা পণ্যের দাম কম পড়ছে। ফলে স্থানীয় উৎপাদকরা বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। এ কারণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হচ্ছে না। স্থানীয় ক্রেতারা দেশি পণ্য না কিনে আমদানি করা পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে দেশি শিল্প ক্ষতির মুখে পড়ছে।
টেক্সটাইল খাতে সরকারের সহায়তা জরুরি
কৃত্রিম সুতার কাঁচামাল তৈরিতে দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান মডার্ন সিনটেক্স লিমিটেডের মূল কোম্পানি টি কে গ্রুপের ডিরেক্টর মোহাম্মদ মুস্তাফা হায়দার বলেন, পেট চিপসের কাঁচামাল পেট্রোকেমিক্যাল প্রোডাক্ট, যা ন্যাপতা থেকে উৎপাদিত। দেশে ন্যাপতা থেকে পরিশোধন করে জ্বালানি তেল উৎপাদন করলেও শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন করা হচ্ছে না। ফলে পেট চিপসের কাঁচামালও আমদানিনির্ভর। তবে সরকারের নীতিগত সহায়তা পেলে পেট্রোকেমিক্যালেও বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এটা বাস্তবায়ন হলে পোশাকশিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পগুলো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে। ফলে সমৃদ্ধ হবে টেক্সটাইল খাত।
মুস্তাফা হায়দার আরও বলেন, পেট চিপস তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ট্যাক্সের চাপ বাড়ছে। বিপরীতে সরাসরি পেট চিপস আমদানি ভ্যাটমুক্ত। ফলে আমদানির সঙ্গে উৎপাদন প্রতিযোগিতা করতে পারছে না। এ ছাড়া কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনে ভ্যাট ও ট্যাক্সের জটিলতা থাকায় কাপড় ও সুতা আমদানিতে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বাড়ছে, যা দেশের জাতীয় অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই নতুন করে ভ্যাট আরোপের চিন্তা বাদ দিয়ে পিএসএফ উৎপাদনের কাঁচামালের ওপর বিদ্যমান শুল্ক প্রত্যাহার এবং আমদানি করা পিএসএফের ওপর যৌক্তিক হারে শুল্কারোপ করলে উৎপাদনমুখী অর্থনীতি গতিশীল হবে।
কাপড় তৈরির প্রধান কাঁচামাল সুতা। এই সুতা তৈরি হয় তুলা থেকে। কিন্তু দিন দিন প্রাকৃতিক তুলার উৎপাদন আর সহজলভ্যতা কমতে শুরু করেছে। তাই হু হু করে দাম বাড়ছে। এ বাস্তবতায় বিকল্প হয়ে উঠতে শুরু করেছে পলিয়েস্টার সুতা বা ম্যান মেইড ফাইবার (কৃত্রিম সুতা)। ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে সুতি কাপড়ের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে পলিয়েস্টার বা মিক্সড পলিয়েস্টার কাপড়। কিন্তু বিশ্ববাজারের সঙ্গে এখনো তাল মিলিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ।
তৈরি পোশাকশিল্পের কারখানা যেভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোতে পারেনি টেক্সটাইল খাত। এর অন্যতম কারণ স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল উৎপাদনে বৈষম্যমূলক শিল্পনীতি। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রাইজ ওয়াটার হাউস কুপার্সের (পিডব্লিউসি) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। দেশটি বিশ্বব্যাপী যে পোশাক রপ্তানি করে, তার ৬২ শতাংশ ম্যান মেইড ফাইবারের (এমএমএফ)। বিপরীতে কটনের অংশ মাত্র ২৭ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশের রপ্তানির চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। রপ্তানি পোশাকের মধ্যে ৬৭ শতাংশই কটন। এমএমএফ মাত্র ২৮ শতাংশ। কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের রপ্তানি করা পোশাকের ৬৬ শতাংশ এমএমএফ আর কটন কাপড় মাত্র ৩৬ শতাংশ, তুরস্কের ৪৯ শতাংশ এমএমএফ আর কটন ৪৩ শতাংশ।
গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বব্যাপী কটনের চাহিদা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলেও এমএমএফের চাহিদার প্রবৃদ্ধি ঘটছে অন্তত ৬ থেকে ৭ শতাংশ হারে। কিন্তু সম্ভাবনার এ বাজার ধরতে পারছে না বাংলাদেশ। কারণ পলিয়েস্টার ফাইবার উৎপাদনের জন্য প্রধান কাঁচামাল পেট চিপস, যা এতদিন ছিল আমদানিনির্ভর। হালে চট্টগ্রামের মিরসরাই ইকোনমিক জোনে মডার্ন সিনটেক্স লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি বিনিয়োগ করলেও এ খাতে সরকারের নীতি-সহায়তা না থাকায় বিপুল সম্ভাবনাময় খাতটি থেকে আশানুরূপ সুফল আসছে না।
বাংলাদেশের প্রচলিত টেক্সটাইল খাতে বছরে ১৭০ হাজার টন ম্যান মেইড ফাইবারের চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে কাঁচামাল উৎপাদনকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান মডার্ন পলি ইন্ডাস্ট্রির উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ৮০ হাজার টন, যা মোট চাহিদার ৪৫ শতাংশের বেশি। ১৭০ হাজার টন পেট চিপসের বাজারমূল্য ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। কয়েক বছর আগে এর পুরোটাই চীন থেকে আমদানি করা হতো। তবে এখন একটি প্রতিষ্ঠানটি কাঁচামাল উৎপাদন করায় প্রতি বছর সাশ্রয় হচ্ছে ৬৫ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা।
সম্ভাবনাময় খাতটিতে নজর নেই বাংলাদেশের
তৈরি পোশাকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও এ শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই বাংলাদেশের। গত অর্থবছরে ৩৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু রপ্তানিযোগ্য পণ্য তৈরিতে যে কাঁচামালের প্রয়োজন, তার প্রায় সবটাই আমদানিনির্ভর। এর সিংহভাগই এসেছে চীন থেকে। দেশের এক হাজার ৫১৩টি টেক্সটাইল মিল কাপড় ও সুতা উৎপাদন করছে। কিন্তু এ সুতা তৈরির পুরো কাঁচামালই আনা হয় চীন থেকে। ফলে তৈরি পোশাকের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এই টেক্সটাইল খাত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কারণ, রাষ্ট্রীয়ভাবেও কাঁচামাল উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।
অর্থনীতিবিদ মুহম্মদ সিকান্দার খান বলেন, আরএমজি সেক্টর রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান বলে সুবিধা বেশি পায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রতিষ্ঠানগুলোও রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এগুলো প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাজার অনেকটা বেলুনের মতো ফোলানো অবস্থায় আছে, যে কোনো সময় চুপসে যেতে পারে। তাই দ্রুত এমএমএফের মতো আরএমজি-সংশ্লিষ্ট খাতগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে বৈচিত্র্য আনার বিকল্প নেই। ম্যান মেইড ফাইবারের পাশাপাশি তুলাবহির্ভূত উপকরণের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। নয়তো রপ্তানি বাজারে পিছিয়ে পড়তে হবে।
আমদানিনির্ভরতা কমলে এগিয়ে থাকবে দেশ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) তথ্য বলছে, ম্যান মেইড ফাইবারের পোশাকের চাহিদা বাড়লেও বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হলে বেশি অর্ডার দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেউদ জামান খান বলেন, দেশে ম্যান মেইড ফাইবারের কাঁচামালের ৯০ শতাংশের বেশিই আমদানিনির্ভর। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি পিএসএফ ও পেট চিপসের মতো কাঁচামাল সরবরাহ করতে পারে, তাহলে জাতীয় অর্থনীতির জন্য তা অবশ্যই ইতিবাচক হতো। কিন্তু বৈষম্যমূলক আমদানিনীতির কারণে তা হচ্ছে না। সরকার মুখে বলছে রপ্তানিতে বৈচিত্র্যকরণ দেখতে চায়; কিন্তু বাস্তবে অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাখা হয়েছে। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমদানির সঙ্গে পেরে উঠছে না উৎপাদন। অথচ উৎপাদন বাড়ানো গেলে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে পণ্য রপ্তানির সময় অর্থাৎ লিড টাইমে বিশেষ সুবিধা তৈরি হবে।
প্রধান বাধা বৈষম্যমূলক শিল্পনীতি
মডার্ন পলি ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ছাড়াও দেশে অন্তত ১৫টি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা রয়েছে পেট চিপসের মতো কাঁচামাল উৎপাদনে বিনিয়োগ করার। কিন্তু বৈষম্যমূলক শিল্পনীতির কারণে এগোতে পারছে না সম্ভাবনাময় এ খাত। পিএসএফ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত মূল কাঁচামাল পিটিএ ও এমইজি আমদানিতে এক শতাংশ হারে শুল্ক থাকলেও পিএসএফ উৎপাদনের সহযোগী উপকরণ যেমনÑ কেমিক্যাল, প্যাকিং সামগ্রী প্রভৃতির ওপর ৩১ থেকে ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক রয়েছে। এর ফলে উৎপাদন পর্যায়ে খরচের ক্ষেত্রে টনপ্রতি প্রায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ করে অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া কর অব্যাহতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এক শতাংশ হারে অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স বা এআইটির কারণে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে আমদানি করা পিএসএফের ওপর শুল্কহার শূন্য হওয়ায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের তুলনায় আমদানি করা পণ্যের দাম কম পড়ছে। ফলে স্থানীয় উৎপাদকরা বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। এ কারণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হচ্ছে না। স্থানীয় ক্রেতারা দেশি পণ্য না কিনে আমদানি করা পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে দেশি শিল্প ক্ষতির মুখে পড়ছে।
টেক্সটাইল খাতে সরকারের সহায়তা জরুরি
কৃত্রিম সুতার কাঁচামাল তৈরিতে দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান মডার্ন সিনটেক্স লিমিটেডের মূল কোম্পানি টি কে গ্রুপের ডিরেক্টর মোহাম্মদ মুস্তাফা হায়দার বলেন, পেট চিপসের কাঁচামাল পেট্রোকেমিক্যাল প্রোডাক্ট, যা ন্যাপতা থেকে উৎপাদিত। দেশে ন্যাপতা থেকে পরিশোধন করে জ্বালানি তেল উৎপাদন করলেও শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন করা হচ্ছে না। ফলে পেট চিপসের কাঁচামালও আমদানিনির্ভর। তবে সরকারের নীতিগত সহায়তা পেলে পেট্রোকেমিক্যালেও বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এটা বাস্তবায়ন হলে পোশাকশিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পগুলো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে। ফলে সমৃদ্ধ হবে টেক্সটাইল খাত।
মুস্তাফা হায়দার আরও বলেন, পেট চিপস তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ট্যাক্সের চাপ বাড়ছে। বিপরীতে সরাসরি পেট চিপস আমদানি ভ্যাটমুক্ত। ফলে আমদানির সঙ্গে উৎপাদন প্রতিযোগিতা করতে পারছে না। এ ছাড়া কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনে ভ্যাট ও ট্যাক্সের জটিলতা থাকায় কাপড় ও সুতা আমদানিতে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বাড়ছে, যা দেশের জাতীয় অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই নতুন করে ভ্যাট আরোপের চিন্তা বাদ দিয়ে পিএসএফ উৎপাদনের কাঁচামালের ওপর বিদ্যমান শুল্ক প্রত্যাহার এবং আমদানি করা পিএসএফের ওপর যৌক্তিক হারে শুল্কারোপ করলে উৎপাদনমুখী অর্থনীতি গতিশীল হবে।
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস নগদ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে ডাক অধিদপ্তর। ডাক অধিদপ্তরের পরিচালক আবু তালেবকে প্রধান করে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বনানীর নগদ অফিসে গিয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন।
১২ ঘণ্টা আগেইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (চলতি দায়িত্ব) মো. ওমর ফারুক খান- এর সাথে প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, জোন ও শাখাপ্রধানদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগেদেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের উৎপাদন ও বিপণনকারী গ্রুপ ইলেক্ট্রো মার্ট পরিবেশ বান্ধব ও বিশেষ প্রযুক্তি সম্পন্ন নতুন সিরিজ বিপণনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এখন থেকে ইলেক্ট্রো মার্টের সকল রিটেইল শো-রুম এবং পার্টনার শো-রুমে নতুন সিরিজের এই মডেল সমুহ পাওয়া যাবে।
১৬ ঘণ্টা আগের্যালিতে জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ, জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আমিন খান, অর্ধ-শতাধিক ক্ষুদে ক্রিকেটার, ওয়ালটনের বিভিন্ন প্রোডাক্টের চিফ বিজনেস অফিসারগণসহ খুলনা জোনের আওতাধীন তিন শতাধিক পরিবেশক, প্লাজা ম্যানেজার ও বিক্রয় প্রতিনিধি অংশ নেন।
১৬ ঘণ্টা আগে