Ad T1

অভাবে চাপা বৈশাখের আনন্দ

পীর জুবায়ের
প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৪: ২০
‘ভাই এক প্যাকেট পিয়ারা লন, মাত্র বিশ টাকা। না হয় এই দিক দিয়া আমড়া লন ভাই একই দাম। বিট লবণ আর মরিচের গুড়া মিশাইল আছে, খাইলে ভালা লাগবো’। চোখেমুখে অভাবের ছাপ নিয়ে রমনা পার্কে ফেরি করে এভাবেই কথাগুলো বলছিলো ১০ থেকে ১১ বছরের মো. রাজিম।
তার সঙ্গে কথা হলে এ প্রতিবেদককে সে জানায়, মালিবাগ আমবাগান এলাকায় সে থাকে। তার বাবাও একজন ফেরিওয়ালা। ফেরি করে পিয়ারা, আম, আমড়া বিক্রি করেন। স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত রাজিম জানায় তিন ভাইয়ের মধ্যে সে বড়। তাই বাবার সঙ্গে সংসারের হাল ধরতে সেও ফেরি করে বেড়ায়।
Nobo-2
সরেজমিন দেখা যায়, সোমবার সকাল থেকে বর্ষবরণ উপলক্ষে রমনার বটমূলজুড়ে ব্যস্ততার চিত্র ছিল চোখে পড়ার মতো। লাল শাড়ি সাদা পাঞ্জাবিতে প্রিয়জনের সঙ্গে পাশাপাশি বসে কেউ ব্যস্ত সংস্কৃতি অনুষ্ঠান দেখায়। কেউ আবার পান্তা-ইলিশে বর্ষবরণের তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। অনেকেই ছোট সন্তানদের নিয়ে আসছেন বৈশাখের এ আনন্দ যেন উপভোগ্য হয়। এজন্য সন্তানদের আবদার মেটাতে চড়কি, নাগরদোলা, দোলনায় তুলার পাশাপাশি খেলনা, বেলুন হাতে দিয়েছেন।
এর ফলে রমনার ভেতরে বৈশাখের আনন্দ কেবল বড়দের মিলনমেলাই নয়, বরং কোমলমতিদের নিষ্পাপ হাসিতেও মুখর হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে গালে ‘শুভ নববর্ষ’ লেখা শিশুদের উচ্ছ্বাস আর খুশি বিশেষভাবে নজর কেড়েছে সবার। সেক্ষেত্রে রাজিমদের জীবনের চিত্র তার ঠিক উল্টো।
ফেরি করার সময় তার সমবয়সী শিশুরা যখন মা-বাবার সঙ্গে নাগরদোলা, দোলনায় খেলা করছে তখন সে অভাবের সংসারের দায়িত্বভার নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে তাদের খেলা। আজকে পহেলা বৈশাখে সবাই ঘুরাফেরা করছে, আনন্দ করছে... এমন প্রশ্ন শেষ করার আগেই সে বললো, আমগো কি আর বৈশাখ আছে ভাই! বৈশাখ বলতে আমরা বুঝি এদিন মাল একটু বাড়াইয়া বেচুম। যখন মাল বেশি বেচি তখন ঘরে ভালা খাওন যায়। আব্বায় খুশী থাকে।
সে আরো বলে, আমারও অনেক খায়েশ লাগে বেড়াইতে, দোলনায় উঠি, বেলুন কিনি। কি করুম কন, ফেরি না করলে ঘরে খাওন যাইতো না। অভাব তো আর বৈশাখ বুঝতো না। আমি সকাল থেকে আইছি এহনও ৫শ টাকা বেচতেম পারিনি। তয় আজ এত্ত মানুষ সুন্দর সুন্দর পোশাক পড়ে আসছে দেখে ভালো লাগতাছে।
তোমার বাবা কোথায় এমন প্রশ্নে সে জানায়, আব্বায় এই পার্কের ভেতরে ফেরি করছে। হয়তো এদিক-ওদিক কোনহানে আছে। তয় একটু পর গান হবে, এজন্য কত্ত চেয়ার আনা হইছে। হেই সময় বেচা কেনা বাড়তে পারে। এর লাগি আব্বায় হয়তো হেই দিকে আছে।
Nobo-3
নতুন কাঁপড় কেনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে সে বলে, অন্যদের মতো আমারো খায়েশ করে বৈশাখী পোশাক কিনতে। জামা-কাপড় কোনোবার কিনি নাই। এই যে দেহছেন বেচতাছি একটু পর সব টেহা আব্বারটি জমা দিমু। সন্ধ্যায় এই টাহা দিয়া আব্বায় মুরগি কিনে বাসায় নিবো। আমরা তো ভাই বাঁচা লাগবো, বেচা কেনা না করলে যে খাইতে পারুম না।
উল্লেখ্য, বাংলা বর্ষপঞ্জিতে ১৪৩১ সনকে বিদায় জানিয়ে ১৪৩২ সনকে বরণ করতে উচ্ছ্বসিত মানুষের উৎসব আয়োজনে ঢল নামে রাজধানীর রমনায়। সোমবার ভোর ৬টার পর রমনার বটমূলে শুরু হয় বর্ষবরণের প্রধান আয়োজন বর্ষবরণ উৎসব। ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের বিভেদ ভুলে সবাই মিলে একাকার হয়ে উঠেন উৎসব আনন্দে। রমনার সবুজ চাদরে জেগে উঠে প্রাণের জোয়ার। নব আনন্দে মুখরিত হয় শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই। রঙে রঙে রঙিন হয় উৎসব ঐতিহ্যের এই প্রাঙ্গণ।
Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত