‘এই বেয়াদব ছেলে, গেট আউট’, রাকসুর জিএসকে রেজিস্ট্রার

প্রতিনিধি, রাবি
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৭

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ ও রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের মাঝে। রোববার (৯ নভেম্বর) রেজিস্ট্রার কক্ষে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভিডিওতে দেখা গেছে, সালাহউদ্দিন আম্মার রেজিস্ট্রারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি স্যার ভিতরে আসব না?

তখন রেজিস্ট্রার বলেন, তোমাকে আমি বাইরে ১০ মিনিট ওয়েট করতে বলেছি।

তারপর আম্মার বলেন, আপনি স্যার চিঠি (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি অপসারণের চিঠি) আটকায় রাখছেন।

রেজিস্ট্রার বলেন, এই বেয়াদব ছেলে, কিসের চিঠি আটকায় রাখছি আমি?

তখন আম্মার বলেন, বেয়াদব তো আমি। ডেফিনেটলি বেয়াদব।

রেজিস্ট্রার বলেন, আমার সাথে বেয়াদবি কেন? তুমি কি ওই ডিপার্টমেন্টের?

তখন সালাউদ্দিন আমার বলেন, আমি কে মানে? আমি রাকসুর নির্বাচিত জিএস।

সালাউদ্দিন আম্মারের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে রেজিস্ট্রার বলেন, তোমরা কারা?

তারা উত্তরে বলেন, আমরা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।’

তখন তিনি বলেন, তোমরা আসো।

তখন সালাউদ্দিন আমার বলেন, ওরা কথা বলবে! আমিও তো শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি।

সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রার বলেন, তোমাদের শিক্ষকদের সাথে কথা হয়েছে। আমাকে প্রতিটা দিনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে নাকি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফিসারিজ বিভাগের ডিন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মণ্ডলকে দেখিয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, ডিন স্যার বাইরে ওয়েট করতেছিল। তুমি এর ভিতরে ঢুকেছ কেন?

আম্মার বলেন, আমি ঢুকব না? আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমি কেন ঢুকতে পারব না?

রেজিস্ট্রার আম্মারকে বলেন, গেট আউট? আম্মার বলেন, কেন গেট আউট।

রেজিস্ট্রার আরো বলেন, ‘তুমি সবসময় মিথ্যাচার করো। এখানে বিএনপির কেউ নাই। তারা এনসিপির নেতাকর্মী।

তখন আম্মার বলেন, আপনার সচিবকে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে মিটিং চলছে।

রেজিস্ট্রার বলেন, গেট আউট, আমার অফিসে আমার পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হবে। এনারা (এনসিপির নেতাকর্মীরা) ১৫ দিন আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখছে।

আম্মার বলেন, আমার শিক্ষার্থীর অধিকার আগে, এটা ইমার্জেন্সি। আমাকে এখানে আসতে হবে।

রেজিস্ট্রার বলেন, অবশ্যই ইমার্জেন্সি। তোমাকে ওখানে বসতে (ওয়েট) বলেছি। তখন এনসিপির এক নেতা এসে আম্মারকে বলেন, আমরা বিএনপির কেউ না। আমরা এনসিপির নেতাকর্মী।

ঘটনার বিষয়ে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগে টানা ২৩ দিন ধরে চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চলছিল। গত বৃহস্পতিবার উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব ওই বিভাগের চেয়ারম্যানকে অপসারণের আদেশে স্বাক্ষর করে তা রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠান। কাগজটি রোববার পর্যন্ত রেজিস্ট্রার দপ্তরে আটকে রাখা হয়। তিনি বিষয়টি জানতে রেজিস্ট্রার অফিসে গেলে দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ভিতরে মহানগর বিএনপির প্রোগ্রাম চলছে, পরে আসুন। এরপর সালাহউদ্দিন আম্মার ভেতরে প্রবেশ করলে সেখানে শুরু হয় বাগ্‌বিতণ্ডা।

তবে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ জানান, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির বিষয়ে আইনগত সব দিক বিবেচনা করে সকাল থেকেই কাজ করছিলাম। ১২টার পর ভিসি স্যার-এর ফাইনাল অ্যাপ্রুভ হয়। এরপর অফিসিয়াল বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ যেটা নরমালি একদিন লাগেই। আমি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করি যে আজ দেওয়া যায় কি না। বিকেলে শেষ মুহূর্তে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা দেখা করতে গেলে তখনও স্মারক নম্বর বসানোসহ কিছু কাজ বাকি ছিল। তাদের বুঝিয়ে বলায় অত্যন্ত ভদ্রতার পরিচয় দিয়ে তারা চলে যায়। আমি তাদের বলেছি রেডি হলে আজ পাবে; আর তা না হলে আগামীকাল পাবে। এর সাথে আম্মারের যাওয়া; না যাবার কোনও সম্পর্ক নেই।

তবে রেজিস্ট্রারের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের নয় বরং এনসিপির নেতাকর্মীদের সৌজন্য সাক্ষাৎ চলছিল বলে জানান এনসিপির রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক মোবাশ্বের রাজ।

তিনি জানান, কাকতালীয়ভাবে, খুবই অপ্রত্যাশিত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মাঝে পড়ে গেছি আজকে! সালাহউদ্দিন আম্মার ও রেজিস্টার স্যারের সাথে উত্তপ্ত বাগ্‌বিতণ্ডার সময় ওখানে বিএনপির কেউ ছিল না। আমার উপস্থিতিতে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতৃবৃন্দ ছিল। আমরা ওখানে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রেজিস্ট্রার স্যারের পিএস সম্ভবত আমাদের বিএনপির নেতাকর্মী ভেবে তাদের ইনফর্ম করে। এখান থেকে ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত হয়।

ঘটনার বিষয়ে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ বলেন, আমার দপ্তরে এলে সবাই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েই আসেন। তারাও (এনসিপি নেতাকর্মীরা) এক সপ্তাহ আগে থেকেই দেখা করার কথা বলে রেখেছিলেন এবং আজ সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। এরই মধ্যে আরও কয়েকজন শিক্ষকও দেখা করতে এসেছিলেন। সব মিলিয়ে প্রায় দশ মিনিটের মতো ছিলেন তারা। ঠিক তখনই আম্মার আসে, আমি তাকে অপেক্ষা করতে বলি। দুই মিনিটও হয়নি, সে বিনা অনুমতিতে আমার রুমে ঢুকে পড়ে। আমি তখন তাকে বলি, ‘তুমি বিনা অনুমতিতে আমার রুমে কেন ঢুকেছ?’ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির বিষয়টিতে এখন আর শিক্ষার্থীদের কিছু করার নেই, যা করার সব প্রশাসনেরই সিদ্ধান্ত।

তিনি আরও বলেন, সে ভালোভাবেই জানে সেখানে কারা ছিল। সে এখানে বিএনপিকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করছিল, যেটা তার স্বভাব। সে সবসময় মিথ্যা বলে এবং ফুটেজবাজি করে। সে সেখানে উপস্থিত সবাইকে চেনার পরেও সেখানে গিয়ে ওদেরকে দেখার পরেই বলছে উনারা বিএনপির নেতাকর্মী বৈঠক করছে। এরপর সে আমাকে উত্তেজিত করতে থাকলে এক পর্যায়ে আমি তাকে বের হয়ে যেতে বলি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত