স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য নানামুখী গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে ভারত। এর একটি অংশ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখা শান্তি বাহিনীকে ব্যবহার করা। বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন জোরদার এবং অস্থিতিশীল করার জন্য ভারত শান্তিবাহিনীর সদস্যদের গোপনে আশ্রয়, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিতে থাকে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে জেএসএস ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন করে অস্থিতিশীল ও বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। কেবল ভারত নয়, পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের কিছু রাজনীতিবিদ ও সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে তৎপর পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করাসহ এ অঞ্চল ঘিরে সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে অর্ধ ডজনের বেশি সংগঠন রয়েছে, যারা তাদের সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক দল হিসেবে দাবি করে। কাগজে-কলমে তাদের প্রত্যেকেরই দাবি পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা। তবে এই দাবির আড়ালে তাদের মূল লক্ষ্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন জুম্মুল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করা। তবে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের এই দাবির সঙ্গে বৃহত্তর পাহাড়ি সাধারণ জনগোষ্ঠীর সমর্থন নেই।
বাংলাদেশের সমতলে মূলধারার যত রাজনৈতিক দল আছে, তার কোনো একটিরও সামরিক শাখা নেই। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের যে অর্ধডজনের বেশি সংগঠন নিজেদের রাজনৈতিক দল দাবি করে, তাদের প্রত্যেকটির রয়েছে সশস্ত্র শাখা। এরূপ প্রতিটি সামরিক শাখায় রয়েছে কয়েক হাজার করে প্রশিক্ষিত যোদ্ধা। তাদের কাছে অস্ত্র আসে সীমান্তবর্তী ভারত ও মিয়ানমারের রাজ্যগুলো থেকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের যেসব সংগঠন নিজেদের রাজনৈতিক দল দাবি করে স্বায়ত্তশাসনের নামে আন্দোলন করছে, তারা মূলত বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন। রাজনৈতিক দলের পরিচয়কে ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। একই সঙ্গে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে আদিবাসী, মানবাধিকার, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও ধর্মীয় ইস্যুসহ আরো বিভিন্ন ইস্যু।
বাংলাদেশে বিএনপি, জামায়াতসহ বড় যেসব রাজনৈতিক দল আছে, তাদের প্রত্যেকটির জন্য যদি একটি করে সামরিক শাখা থাকত এবং এসব সামরিক শাখায় যদি হাজার হাজার অস্ত্রধারী নিয়মিত প্রশিক্ষিত সেনা থাকত, সেটি কি বাংলাদেশের সরকার মেনে নিত? এসব রাজনৈতিক দল যদি তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তাদের সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায় এবং সেনাসদস্যদের হত্যা করে, তবু কি চুপ থাকবে সরকার ও সেনাবাহিনী? তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের যেসব সংগঠন নিজেদের রাজনৈতিক দল পরিচয় দেয়, তাদের প্রত্যেকের এরূপ সশস্ত্র শাখা থাকার বিষয় এবং সেনাবাহিনীর ওপর নিয়মিত হামলার ঘটনা কেমন করে এতকাল ধরে মেনে নিচ্ছে বাংলাদেশের সরকার? কেবল তা-ই নয়, সশস্ত্র এসব সংগঠনের অনেক নেতাই জাতীয় সংসদের নির্বাচনে পর্যন্ত অংশ নিয়েছে। মনিপুর ও মিজোরামে কুকি-চিনের প্রশিক্ষণ চলাকালে ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় নাথান বম। এর আগে ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ইউপিডিএফ প্রধান প্রসীত খীসা। কোনো সন্দেহ নেই, তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে নিজেদের আর দশজন রাজনীতিকের মতো স্বাভাবিক রাজনৈতিক নেতা এবং নিজেদের সংগঠনকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচয় দেওয়ার নীলনকশার অংশ হিসেবে।
অনেক আগে থেকেই এটি প্রতিষ্ঠিত যে, রাজনৈতিক দল পরিচয় দেওয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের এসব অস্ত্রধারী সংগঠনগুলোর মূল পরিচয় হলো তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী। তারা দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে। ১৯৯৭ সালে দেশবিরোধী শান্তিচুক্তির পরও পাহাড়ের কথিত এসব রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসীদের হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে সহস্রাধিক মানুষ, গুম হয়েছে দেড় হাজারের বেশি। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের হামলায় নিহত হয়েছেন সাত সেনাসদস্য।
রাজনৈতিক দলের পরিচয় আর স্বায়ত্তশাসনের দাবির আড়ালে পার্বত্য চট্টগ্রামের এসব সশস্ত্র সংগঠন প্রায় পাঁচ দশক ধরে যা করে আসছে, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই—তারা সশস্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী। তারা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতার প্রতি প্রকাশ্য ও ঘোষিত শত্রু। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র যদি তার ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখতে চায়, রাষ্ট্রের প্রতি ইঞ্চি ভূমিতে তার সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যদি রাষ্ট্রের আহ্বানে অস্ত্র ত্যাগ করে শান্তির পথে ফিরে না আসে, তাহলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব এরূপ ঘোষিত ও প্রকাশ্য শত্রুদের নির্মূল করা। আর এটাই হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পথ।
আর বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে সরকার ও সেনাবাহিনী যদি চায় তাহলে পাহাড়ের এসব সন্ত্রাসীকে দমন করে বিচ্ছিন্নতাবাদের স্থায়ী সমাধান করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য মামুলি একটি বিষয়। এজন্য প্রয়োজন কেবল একটি বলিষ্ঠ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
বিভিন্ন সময় সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কেন এতকাল ধরে বাংলাদেশ সরকার এই রাষ্ট্রদ্রোহী অস্ত্রধারী বাহিনীগুলোর অস্তিত্ব মেনে নিয়েছে?
পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী এই সন্ত্রাসীদের পেছনের মূল শক্তি ভারত। শেখ হাসিনাসহ ভারতের প্রতি অনুগত অতীতের সরকারগুলো তাই তাদের নির্মূলে পদক্ষেপ নেয়নি। এছাড়া পশ্চিমা বিভিন্ন মহলের রোষানলে পড়ার আশঙ্কায়ও কোনো কোনো সরকার তাদের বিরুদ্ধে পুরোপুরি দমনাভিযান পরিচালনা করেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাদের আদিবাসী পরিচয় দিচ্ছে। তাদের এ মিথ্যা পরিচয়, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা এবং ধর্মীয় পরিচয়সহ আরো বিভিন্ন অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি ও আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত পশ্চিমা কিছু সংস্থা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। পাহাড়ের সন্ত্রাসীরা এসব স্পর্শকাতর পরিচয়কেও ব্যবহার করে আসছে ঢাল হিসেবে এবং এর মাধ্যমে তারা পশ্চিমা বিভিন্ন সংস্থা ও দেশের সমর্থন লাভের চেষ্টা করছে। তাদের পক্ষে নিয়োজিত আছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক লবিস্ট ও সংস্থা। পাহাড়ের এসব সন্ত্রাসী পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্য সব মিথ্যাচার প্রচার করে বেড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ছিল এবং এখনো আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার সামরিক অভিযান চালিয়ে তাদের নির্মূল করেছে এবং এখনো অনেক দেশ একইভাবে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার তামিলরা স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য টানা ২৬ বছর ধরে যুদ্ধ করেছে। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালিয়ে নির্মূল করে। একইভাবে দীর্ঘ সামরিক অভিযান ও আলোচনার মাধ্যমে তুরস্কও চলতি বছর দমন করেছে কুর্দিশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দীর্ঘ আন্দোলন। ভারতের কাশ্মীরসহ সমগ্র সেভেন সিস্টার্সে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ভারত সরকার কঠোরভাবে দমন করছে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে। বর্তমানে সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্য ভারতের মাওবাদী আন্দোলন চিরতরে নির্মূলের ঘোষণা দিয়ে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতীয় আর্মি গোটা ভারতে অভিযান চালিয়ে হত্যা করে চলছে শত শত মাওবাদীকে। একইভাবে পাকিস্তানেও সামরিক অভিযান চলছে বেলুচিস্তানের সশস্ত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে।
বর্তমানে বিশ্বে এমন কোনো রাষ্ট্র নেই, যে রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বরদাশত করে—যেমনটা করছে বাংলাদেশ। পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের বিষয়ে দশকের পর দশক ধরে সরকারের নীরবতার কারণে সেখানে দুর্বল হচ্ছে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ। সর্বশেষ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খাগড়াছড়ির বর্মাছড়িতে একটি সেনা ক্যাম্প স্থাপন করতে চাইলে সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ তাতে বাধা আরোপ করে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।
১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা সরকার তথাকথিত শান্তিচুক্তি করে জেএসএসের সঙ্গে। অনেক ছাড় দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিচুক্তি করলেও এটা যে সমস্যা সমাধানের কোনো পথ ছিল না, তা শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের দিনই প্রমাণিত হয়ে যায়। চুক্তি স্বাক্ষরের দিনই এ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে সন্তু লারমার ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নেতা প্রসীত বিকাশ খীসা। ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে খীসার নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ ঘটে আরেকটি সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ। পরবর্তী সময়ে জেএসএস এবং ইউপিডিএফ ভেঙে আরো দুটি সশস্ত্র সংগঠনের জন্ম নেয়। তাদের এ চারটিসহ মোট ছয়টি সশস্ত্র সংগঠন বর্তমানে পাহাড়ে অবাধে দেশবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে চলছে।
চুক্তি অনুযায়ী, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে ২৪১টি সেনা ক্যাম্প সরিয়ে আনা হয়। কিন্তু লোকদেখানো কিছু অস্ত্র জমা দিয়ে গোপনে সশস্ত্র কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে জেএসএস। দুর্গম এলাকা থেকে সেনা ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়ার সুযোগে জেএসএস এবং অন্যান্য সংগঠন সেখানে গোপন ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে।
প্রকাশিত বিভিন্ন খবর অনুযায়ী, গোটা পাহাড় বর্তমানে জিম্মি এসব সশস্ত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীদের হাতে। গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন আর সর্বগ্রাসী চাঁদাবাজিতে জড়িত তারা। বছরে ৪০০ কোটি টাকা থেকে এক হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলে তারা। বিপুল এ চাঁদার টাকায় তারা পাহাড়ে গড়ে তুলেছে অস্ত্রের ঘাঁটি। একদিকে তারা শান্তিচুক্তির কারণে সরকারের কাছ থেকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে, অপরদিকে চালিয়ে যাচ্ছে দেশবিরোধী গোপন সশস্ত্র তৎপরতা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৭০০ জেএসএস সন্ত্রাসী দেশে প্রবেশ করেছে। জেএসএস মূল নেতা সন্তু লারমাসহ অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী নেতাদের নিয়ে বাংলাদেশবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে ভারত।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে নিরাপত্তা সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে, তা রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। তাই রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় করণীয় বিষয়ে সরকারের কাছে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে নিরাপত্তা সংস্থার পক্ষ থেকে, যা গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনায় জনসংহতি সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে যেসব দাবি পেশ করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো—১. পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসন ও আলাদা সংসদ প্রতিষ্ঠা; ২. ১৯৪৭ সালের পর থেকে পাহাড়ে যত বাঙালি বসতি স্থাপন করা হয়েছে, তাদের সরিয়ে আনা; ৩. পাহাড়ে বাঙালি বসতি স্থাপন করা যাবে না; এবং ৪. ১৯০০ সালের ব্রিটিশ রেগুলেশন জারি রাখা, যেখানে বলা হয়েছে, পাহাড়ে কোনো সমতলের মানুষের প্রবেশের ক্ষেত্রেও তাদের অনুমতি লাগবে।
এর কোনো একটি দাবিও মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না বাংলাদেশের কোনো সরকারের পক্ষে। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের অতীতের সরকারগুলো যদি শুরুতে এ সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ নিত, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের এ সমস্যা আজ এভাবে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টি হতো না। পার্বত্য চট্টগ্রাম আজ পরিণত হয়েছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের একটি গুটিতে।
বর্তমান ড্রোন প্রযুক্তির যুগে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসীদের দমনে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মতো অভিযানের প্রয়োজন নাও হতে পারে। পাহাড়ে পর্যাপ্ত সেনা ক্যাম্প স্থাপন এবং প্রতি ইঞ্চি ভূমিতে সার্বক্ষণিক ড্রোন নজরদারির মাধ্যমেই তাদের দমন করা সম্ভব হতে পারে। এসব আয়োজনের লক্ষ্য হতে হবে—দেশবিরোধী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় নয়।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, আমার দেশ


বামপন্থা ও স্বৈরাচার
বিনোদনের বিপ্লব ও জেন-জি সংস্কৃতি
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব?