গাজীউল হাসান খান
কলকাতাসহ ভারতের বেশ কিছু সামাজিক ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক গণমাধ্যম বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে দেশটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত উঠেপড়ে লেগেছে বলে মনে হচ্ছে। তারা শেখ হাসিনার ক্ষমতা হারানোর বিষয়টিকে যেন কোনোমতেই মেনে নিতে পারছেন না। এর বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তারা বাংলাদেশকে বহুভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া ছাড়াও তারা লাগাতার চালিয়ে যাচ্ছে সমূহ অপপ্রচার। রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের কারণে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই উল্লিখিত মহলে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানান জল্পনা-কল্পনা অতিদ্রুত ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে পেছন থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্ররোচনা কিংবা ইন্ধন কতটুকু রয়েছে, তা বোঝা না গেলেও তারা যে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে তাদের গণমাধ্যমের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করবে না, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সামগ্রিকভাবে ভারতীয়দের ধারণা, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির কারণে বাংলাদেশে তাদের কায়েমি স্বার্থ ব্যাহত হবে। মোটা দাগে তারা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে হারিয়ে ফেলতে পারে এবং সেক্ষেত্রে অতিদ্রুত তাদের চিরশত্রু, পাকিস্তান ও চীন কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। সে অবস্থায় বাণিজ্য, যোগাযোগ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ে তারা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমন এক পরিস্থিতিতেও তারা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক বা সাবেক সম্পর্কটি স্বাভাবিক করার চেয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনর্বহাল করতে বরং বেশি আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে তাদের একটি বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছিল যে, তিনি (হাসিনা) তাদের পরীক্ষিত ও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বন্ধু। শেখ হাসিনার সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে তারা ধরে নিয়েছিল না চাইতেই তারা বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু পেয়ে গেছে। এর অন্যতম একটি প্রধান বিষয় হচ্ছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের (সপ্তকন্যা) অখণ্ডতা রক্ষা। শেখ হাসিনার মতে, তিনি এ পর্যন্ত ভারতকে যা দিয়েছেন, সে ঋণ তারা কখনো পরিশোধ করতে পারবে না। কিন্তু কোন শর্তে তিনি ভারতের জন্য এত কিছু করেছিলেন, সেগুলো শেখ হাসিনা গোপনই রেখেছিলেন। শুধু রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার জন্যই তিনি ভারতের কাছে বাংলাদেশের কত স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছেন, সেগুলো কিন্তু শেখ হাসিনা কোথাও উল্লেখ করেননি। সে কারণে ভারতীয় গণমাধ্যমের অনেকে মনে করেছেন, ভারতের স্বার্থেই শেখ হাসিনা এবং তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখা এত জরুরি। তাতে বিশ্বের তথাকথিত বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের লাভ ছাড়া কোনোই ক্ষতি নেই।
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বিভিন্ন কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মণিপুরসহ সাতটি বিচ্ছিন্ন রাজ্যের অখণ্ডতা এখন হুমকির মুখে পড়েছে বলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। মণিপুরে এখন হিন্দু অধিবাসী (মেইতি) এবং নাগা ও কুকিজু উপজাতির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এ রাজ্যগুলো যে কোনো সময় এখন মহাশক্তিধর চীনের হস্তক্ষেপে পৃথক হয়ে যেতে পারে। কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন সামাজিক ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক গণমাধ্যমের মধ্যে সে আশঙ্কা রয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরাও যে সে ধরনের কিছু আশঙ্কা করছেন না, তেমন নয়। সে কারণেই ভারতের সামাজিক গণমাধ্যম ও নিরাপত্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা অবিলম্বে বাংলাদেশের বা উত্তরবঙ্গের নিকটস্থ শিলিগুড়ি করিডোর (যা চিকেন নেক নামেও পরিচিত), ভারতের সে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র পথটির পরিধি বিস্তৃত করার আবশ্যকতা জরুরিভাবে অনুভব করছে। সে কারণে তারা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সুপারিশ করেছে যে, একটি শক্তিশালী ঝটিকা সামরিক আক্রমণের মাধ্যমে সে করিডোরের পাশের অন্তত ৫০ কিলোমিটার বাংলাদেশি ভূখণ্ড দখল করে নিতে হবে। নতুবা প্রয়োজনে ভুটানের অন্যপ্রান্তে অবস্থিত দুখলাম অঞ্চল থেকে চীন যে কোনো সময় তা তাদের দখলে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। কারণ, চীন দীর্ঘদিন যাবৎ এ অঞ্চলে বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি একটি সংযোগ স্থাপন করতে আগ্রহী ছিল। ভারতীয় সামাজিক কিংবা প্রতিরক্ষাবিষয়ক গণমাধ্যমের কাছে বাংলাদেশ নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা নেই। বাংলাদেশ যে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং শিলিগুড়ি করিডোরের পূর্ব পাশ যে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ- তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা মনে করে সামরিক দিক, বিশেষ করে আকাশ শক্তির দিক থেকে বাংলাদেশ অত্যন্ত দুর্বল; সুতরাং ইহুদিবাদী ইসরাইলি কায়দায় তা করা যেতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, চীনের দুখলাম সন্নিকটস্থ বাংলাদেশ ভূখণ্ড আক্রান্ত হলে কি চীন গালে হাত দিয়ে বসে থাকবে? এটি তাদেরও একটি নিরাপত্তাবিষয়ক সংকট। এসব কারণে ভারত কোনোভাবেই চায় না চীন আমাদের তিস্তা প্রকল্পে জড়িত হোক। অন্যদিকে ভারত এটাও চায় না যে, বাংলাদেশ লালমনিরহাটে একটি বিমানঘাঁটি গড়ে তুলে তার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে জোরদার করুক।
ভারতের সামাজিক গণমাধ্যম কিংবা প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা এখন প্রকাশ্যেই চট্টগ্রাম দখল করার কথা বলে যাচ্ছে। ভারতের উত্তর-পূর্বের বিচ্ছিন্ন সাতটি রাজ্যে নৌ-চলাচলের জন্য কোনো জলপথ নেই। তাই তারা তাদের বহির্বাণিজ্য ও উন্নয়নের স্বার্থে বন্দর ব্যবস্থাপনাসহ সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম বিভাগটি দখল করে নিতে আগ্রহী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্য থেকে চট্টগ্রামের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ চালানো সম্ভব। ভারত বাংলাদেশের ফেনী, কুমিল্লা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলকে এ আক্রমণের জন্য ব্যবহার করতে পারে। এ অঞ্চলে অর্থাৎ কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের দোহাজারীতে বাংলাদেশের ৬০ হাজার নিয়মিত সৈন্য থাকলেও বিমান বাহিনীর দিক থেকে আমরা এখনো সুসজ্জিত নই। আমরা আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে এখনো শক্তিশালী করতে পারিনি। সে কারণে অনেকেই আমাদের কুমিল্লা বিমানবন্দরকে অবিলম্বে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার তাগিদ দিয়েছেন। তার পাশাপাশি আমাদের প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিভিন্ন ক্ষমতার জঙ্গিবিমান। ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোর যেহেতু কোনো সমুদ্রসংযোগ নেই, সেহেতু ভারতের একটি বিশেষ মহল চট্টগ্রামকে জোরপূর্বক দখল করে তাদের ‘অষ্টম কন্যা’ বানাতে চায়। তাতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শুধু যে একটি বিশাল বাণিজ্যসংযোগ সৃষ্টি হবে তা নয়, বিনিয়োগ ও উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে সেসব অঞ্চলে। এসব কথা শুধু কলকাতার সাধারণ ইউটিউবাররা প্রচার করছে তেমনটি নয়। সম্প্রতি নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি অধ্যাপক সুমিত গাঙ্গুলিও উপরোল্লিখিত কথাগুলো কোনো রাখঢাক না করে প্রকাশ্যেই প্রচার করেছেন। তিনি ভারতের কয়েকটি বেসরকারি সামরিক চ্যানেল থেকে প্রচারিত লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) পি আর শর্মা ও মেজর জেনারেল (অব.) বকশীর বক্তব্যের সূত্র ধরেই শিলিগুড়ি করিডোর এবং চট্টগ্রাম আক্রমণের কথা প্রকাশ্যেই আলোচনা করেছেন। অবিলম্বে ‘চিকেন নেক’ প্রশস্তকরণ এবং বিশেষ করে চট্টগ্রাম দখলের কথা বলে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি ঝটিকা আক্রমণের সুপারিশ করেছেন, যা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনোমতেই সংঘটিত হতে পারে না। কারণ, আমাদের একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্ত রয়েছে, যা যে কেউ ইচ্ছে করলেই দখল করে নিতে পারে না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশ থেকে সেসব আন্তর্জাতিক রীতিনীতি বহির্ভূত অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কোনো সোচ্চার প্রতিবাদ হচ্ছে না। আমাদের মূলধারার গণমাধ্যমগুলো সে ব্যাপারে আশানুরূপ কোনো পদক্ষেপও নিতে পারেনি এখনো।
উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য চট্টগ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিলম্বে তা দখল করে নিতে হবে বলে বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমের আলোচকরা যেসব সম্প্রসারণবাদী ও আধিপত্যবাদী এবং বেআইনি কথাবার্তা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল থেকে তার বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখা যাচ্ছে না। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়টি নিয়ে এখনো ভারত সরকারের কাছে কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। বাংলাদেশের অনেক নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবী মনে করেন, ভারতীয়দের সেসব বক্তব্য বা অপপ্রচারের পেছনে একেবারেই তাদের সরকারের কোনো মদত নেই, তা হতে পারে না। যদি তা না হতো, তাহলে সরকার তাদের সামাজিক গণমাধ্যম ও তাতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এতদিনে কোনো না কোনো ব্যবস্থা নিত; কিন্তু তা হয়নি। এ ব্যাপারে ভারত সরকার কেন চুপ করে আছে? এটি কীসের আলামত? আমরা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, স্বৈরাচার, দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে একটি গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করেছি, অথচ এ দেশটিকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ কিংবা ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করার নিমিত্তে আরও অনেক গুরুতর বিষয়কে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি। এটি তো দেশপ্রেমিক গণমানুষ, রাজনৈতিক দল কিংবা কোনো সরকারের সচেতনতা বা সজাগ দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ হতে পারে না। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কি তাহলে ভবিষ্যৎ নির্বাচন ও ক্ষমতার রাজনীতি নিয়ে এতটাই নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে যে, ভারতীয় আগ্রাসনের প্রকাশ্য হুমকির মুখেও সহনশীলতা ও নীরবতা পালনের ব্রত গ্রহণ করেছে? জনমনে তাই প্রশ্ন জাগে- তারা ক্ষমতায় গেলেও কী শেখ হাসিনার মতো লোকচক্ষুর অন্তরালে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবে? ভারতীয় মিডিয়ার শিলিগুড়ি করিডোর প্রশস্তকরণ কিংবা চট্টগ্রাম দখলের ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধে ভারত কেন এখনো চুপ করে রয়েছে? তারা পাকিস্তান ও চীনের বিরুদ্ধে তাদের নিরাপত্তাবিষয়ক ক্রম নিরলস চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সে কার্যক্রমে এখন কি তারা বাংলাদেশকেও যুক্ত করেছে? তাহলে তো বাংলাদেশের অখণ্ডতা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নিমিত্তে তার জনগণকে শেষ পর্যন্ত ভিন্ন ব্যবস্থা নিতেই হবে। কারণ, দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এ দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।
লেখক: বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
কলকাতাসহ ভারতের বেশ কিছু সামাজিক ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক গণমাধ্যম বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে দেশটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত উঠেপড়ে লেগেছে বলে মনে হচ্ছে। তারা শেখ হাসিনার ক্ষমতা হারানোর বিষয়টিকে যেন কোনোমতেই মেনে নিতে পারছেন না। এর বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তারা বাংলাদেশকে বহুভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া ছাড়াও তারা লাগাতার চালিয়ে যাচ্ছে সমূহ অপপ্রচার। রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের কারণে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই উল্লিখিত মহলে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানান জল্পনা-কল্পনা অতিদ্রুত ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে পেছন থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্ররোচনা কিংবা ইন্ধন কতটুকু রয়েছে, তা বোঝা না গেলেও তারা যে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে তাদের গণমাধ্যমের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করবে না, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সামগ্রিকভাবে ভারতীয়দের ধারণা, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির কারণে বাংলাদেশে তাদের কায়েমি স্বার্থ ব্যাহত হবে। মোটা দাগে তারা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে হারিয়ে ফেলতে পারে এবং সেক্ষেত্রে অতিদ্রুত তাদের চিরশত্রু, পাকিস্তান ও চীন কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। সে অবস্থায় বাণিজ্য, যোগাযোগ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ে তারা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমন এক পরিস্থিতিতেও তারা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক বা সাবেক সম্পর্কটি স্বাভাবিক করার চেয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনর্বহাল করতে বরং বেশি আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে তাদের একটি বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছিল যে, তিনি (হাসিনা) তাদের পরীক্ষিত ও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বন্ধু। শেখ হাসিনার সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে তারা ধরে নিয়েছিল না চাইতেই তারা বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু পেয়ে গেছে। এর অন্যতম একটি প্রধান বিষয় হচ্ছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের (সপ্তকন্যা) অখণ্ডতা রক্ষা। শেখ হাসিনার মতে, তিনি এ পর্যন্ত ভারতকে যা দিয়েছেন, সে ঋণ তারা কখনো পরিশোধ করতে পারবে না। কিন্তু কোন শর্তে তিনি ভারতের জন্য এত কিছু করেছিলেন, সেগুলো শেখ হাসিনা গোপনই রেখেছিলেন। শুধু রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার জন্যই তিনি ভারতের কাছে বাংলাদেশের কত স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছেন, সেগুলো কিন্তু শেখ হাসিনা কোথাও উল্লেখ করেননি। সে কারণে ভারতীয় গণমাধ্যমের অনেকে মনে করেছেন, ভারতের স্বার্থেই শেখ হাসিনা এবং তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখা এত জরুরি। তাতে বিশ্বের তথাকথিত বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের লাভ ছাড়া কোনোই ক্ষতি নেই।
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বিভিন্ন কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মণিপুরসহ সাতটি বিচ্ছিন্ন রাজ্যের অখণ্ডতা এখন হুমকির মুখে পড়েছে বলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। মণিপুরে এখন হিন্দু অধিবাসী (মেইতি) এবং নাগা ও কুকিজু উপজাতির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এ রাজ্যগুলো যে কোনো সময় এখন মহাশক্তিধর চীনের হস্তক্ষেপে পৃথক হয়ে যেতে পারে। কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন সামাজিক ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক গণমাধ্যমের মধ্যে সে আশঙ্কা রয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরাও যে সে ধরনের কিছু আশঙ্কা করছেন না, তেমন নয়। সে কারণেই ভারতের সামাজিক গণমাধ্যম ও নিরাপত্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা অবিলম্বে বাংলাদেশের বা উত্তরবঙ্গের নিকটস্থ শিলিগুড়ি করিডোর (যা চিকেন নেক নামেও পরিচিত), ভারতের সে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র পথটির পরিধি বিস্তৃত করার আবশ্যকতা জরুরিভাবে অনুভব করছে। সে কারণে তারা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সুপারিশ করেছে যে, একটি শক্তিশালী ঝটিকা সামরিক আক্রমণের মাধ্যমে সে করিডোরের পাশের অন্তত ৫০ কিলোমিটার বাংলাদেশি ভূখণ্ড দখল করে নিতে হবে। নতুবা প্রয়োজনে ভুটানের অন্যপ্রান্তে অবস্থিত দুখলাম অঞ্চল থেকে চীন যে কোনো সময় তা তাদের দখলে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। কারণ, চীন দীর্ঘদিন যাবৎ এ অঞ্চলে বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি একটি সংযোগ স্থাপন করতে আগ্রহী ছিল। ভারতীয় সামাজিক কিংবা প্রতিরক্ষাবিষয়ক গণমাধ্যমের কাছে বাংলাদেশ নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা নেই। বাংলাদেশ যে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং শিলিগুড়ি করিডোরের পূর্ব পাশ যে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ- তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা মনে করে সামরিক দিক, বিশেষ করে আকাশ শক্তির দিক থেকে বাংলাদেশ অত্যন্ত দুর্বল; সুতরাং ইহুদিবাদী ইসরাইলি কায়দায় তা করা যেতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, চীনের দুখলাম সন্নিকটস্থ বাংলাদেশ ভূখণ্ড আক্রান্ত হলে কি চীন গালে হাত দিয়ে বসে থাকবে? এটি তাদেরও একটি নিরাপত্তাবিষয়ক সংকট। এসব কারণে ভারত কোনোভাবেই চায় না চীন আমাদের তিস্তা প্রকল্পে জড়িত হোক। অন্যদিকে ভারত এটাও চায় না যে, বাংলাদেশ লালমনিরহাটে একটি বিমানঘাঁটি গড়ে তুলে তার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে জোরদার করুক।
ভারতের সামাজিক গণমাধ্যম কিংবা প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা এখন প্রকাশ্যেই চট্টগ্রাম দখল করার কথা বলে যাচ্ছে। ভারতের উত্তর-পূর্বের বিচ্ছিন্ন সাতটি রাজ্যে নৌ-চলাচলের জন্য কোনো জলপথ নেই। তাই তারা তাদের বহির্বাণিজ্য ও উন্নয়নের স্বার্থে বন্দর ব্যবস্থাপনাসহ সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম বিভাগটি দখল করে নিতে আগ্রহী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্য থেকে চট্টগ্রামের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ চালানো সম্ভব। ভারত বাংলাদেশের ফেনী, কুমিল্লা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলকে এ আক্রমণের জন্য ব্যবহার করতে পারে। এ অঞ্চলে অর্থাৎ কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের দোহাজারীতে বাংলাদেশের ৬০ হাজার নিয়মিত সৈন্য থাকলেও বিমান বাহিনীর দিক থেকে আমরা এখনো সুসজ্জিত নই। আমরা আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে এখনো শক্তিশালী করতে পারিনি। সে কারণে অনেকেই আমাদের কুমিল্লা বিমানবন্দরকে অবিলম্বে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার তাগিদ দিয়েছেন। তার পাশাপাশি আমাদের প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিভিন্ন ক্ষমতার জঙ্গিবিমান। ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোর যেহেতু কোনো সমুদ্রসংযোগ নেই, সেহেতু ভারতের একটি বিশেষ মহল চট্টগ্রামকে জোরপূর্বক দখল করে তাদের ‘অষ্টম কন্যা’ বানাতে চায়। তাতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শুধু যে একটি বিশাল বাণিজ্যসংযোগ সৃষ্টি হবে তা নয়, বিনিয়োগ ও উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে সেসব অঞ্চলে। এসব কথা শুধু কলকাতার সাধারণ ইউটিউবাররা প্রচার করছে তেমনটি নয়। সম্প্রতি নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি অধ্যাপক সুমিত গাঙ্গুলিও উপরোল্লিখিত কথাগুলো কোনো রাখঢাক না করে প্রকাশ্যেই প্রচার করেছেন। তিনি ভারতের কয়েকটি বেসরকারি সামরিক চ্যানেল থেকে প্রচারিত লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) পি আর শর্মা ও মেজর জেনারেল (অব.) বকশীর বক্তব্যের সূত্র ধরেই শিলিগুড়ি করিডোর এবং চট্টগ্রাম আক্রমণের কথা প্রকাশ্যেই আলোচনা করেছেন। অবিলম্বে ‘চিকেন নেক’ প্রশস্তকরণ এবং বিশেষ করে চট্টগ্রাম দখলের কথা বলে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি ঝটিকা আক্রমণের সুপারিশ করেছেন, যা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনোমতেই সংঘটিত হতে পারে না। কারণ, আমাদের একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্ত রয়েছে, যা যে কেউ ইচ্ছে করলেই দখল করে নিতে পারে না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশ থেকে সেসব আন্তর্জাতিক রীতিনীতি বহির্ভূত অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কোনো সোচ্চার প্রতিবাদ হচ্ছে না। আমাদের মূলধারার গণমাধ্যমগুলো সে ব্যাপারে আশানুরূপ কোনো পদক্ষেপও নিতে পারেনি এখনো।
উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য চট্টগ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিলম্বে তা দখল করে নিতে হবে বলে বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমের আলোচকরা যেসব সম্প্রসারণবাদী ও আধিপত্যবাদী এবং বেআইনি কথাবার্তা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল থেকে তার বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখা যাচ্ছে না। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়টি নিয়ে এখনো ভারত সরকারের কাছে কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। বাংলাদেশের অনেক নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবী মনে করেন, ভারতীয়দের সেসব বক্তব্য বা অপপ্রচারের পেছনে একেবারেই তাদের সরকারের কোনো মদত নেই, তা হতে পারে না। যদি তা না হতো, তাহলে সরকার তাদের সামাজিক গণমাধ্যম ও তাতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এতদিনে কোনো না কোনো ব্যবস্থা নিত; কিন্তু তা হয়নি। এ ব্যাপারে ভারত সরকার কেন চুপ করে আছে? এটি কীসের আলামত? আমরা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, স্বৈরাচার, দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে একটি গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করেছি, অথচ এ দেশটিকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ কিংবা ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করার নিমিত্তে আরও অনেক গুরুতর বিষয়কে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি। এটি তো দেশপ্রেমিক গণমানুষ, রাজনৈতিক দল কিংবা কোনো সরকারের সচেতনতা বা সজাগ দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ হতে পারে না। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কি তাহলে ভবিষ্যৎ নির্বাচন ও ক্ষমতার রাজনীতি নিয়ে এতটাই নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে যে, ভারতীয় আগ্রাসনের প্রকাশ্য হুমকির মুখেও সহনশীলতা ও নীরবতা পালনের ব্রত গ্রহণ করেছে? জনমনে তাই প্রশ্ন জাগে- তারা ক্ষমতায় গেলেও কী শেখ হাসিনার মতো লোকচক্ষুর অন্তরালে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবে? ভারতীয় মিডিয়ার শিলিগুড়ি করিডোর প্রশস্তকরণ কিংবা চট্টগ্রাম দখলের ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধে ভারত কেন এখনো চুপ করে রয়েছে? তারা পাকিস্তান ও চীনের বিরুদ্ধে তাদের নিরাপত্তাবিষয়ক ক্রম নিরলস চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সে কার্যক্রমে এখন কি তারা বাংলাদেশকেও যুক্ত করেছে? তাহলে তো বাংলাদেশের অখণ্ডতা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নিমিত্তে তার জনগণকে শেষ পর্যন্ত ভিন্ন ব্যবস্থা নিতেই হবে। কারণ, দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এ দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।
লেখক: বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ছয় মাসের মাথায় গণহত্যাকারীদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। গত দেড় দশকে মুজিবের রাজপরিবার দেশে যে নিপীড়নমূলক শাসক চাপিয়ে দিয়েছিল, তা স্বাভাবিক করতে ফ্যাসিস্টদের প্রতি মানবিক আচরণ ও সম্মান জানানোর বয়ান হাজির করা হচ্ছে।
১০ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে অন্যতম ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো টোটেম সংস্কৃতি। এর অর্থ হলো, কোনো প্রভাবশালী মৃত ব্যক্তি বা বস্তুকে টোটেম বা ‘পূজার আসনে’ বসানো এবং তাকে ঘিরেই সব রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নির্ধারণ করা।
১১ ঘণ্টা আগেপ্রতিবছর সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সরাসরি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তাই আজ রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে এবারের তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন।
১১ ঘণ্টা আগেস্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আল্লাহ প্রদত্ত মহান এক নিয়ামত। এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর যখনই কোনো নগ্ন থাবা এসেছে, তা রুখে দাঁড়াতে প্রতিবার স্বাধিকার চেতনায় উজ্জীবিত, সৎ-সাহসী কেউ না কেউ এগিয়ে এসেছেন। দেশের আপামর জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার দুর্বার সংগ্রামে।
১২ ঘণ্টা আগে