
গোলাম সোহরাওয়ার্দী

ভারত আর ইসরাইল বড় ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। বিশ্বকে চমকে দিয়েছে এই চুক্তি। দক্ষিণ এশিয়া আর মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব পড়বে অনেক। চুক্তির সময়টাও তাৎপর্যপূর্ণ। সারা বিশ্বের মানুষ এখন গাজা আর পশ্চিম তীরে ইসরাইলের অপকর্মের জন্য তাদের তীব্র নিন্দা করছে। অনেকের নিন্দার ভাষা খুবই কঠোর। কেউ কেউ এটাকে গণহত্যা পর্যন্ত বলেছে। তারপরও ভারত ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এই পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে ভারতকে একটা কঠিন জায়গায় ঠেলে দেবে।
ভারত নিজেদের নৈতিক নেতা মনে করে। দরিদ্র দেশের জন্য তারা কথা বলার চেষ্টা করেছে। বহু বছর ভারত উপনিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের তারা সমর্থন দিয়েছে। স্বায়ত্তশাসনকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। ফিলিস্তিনের ব্যাপারে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিও এর সঙ্গে মানানসই ছিল। ভারতীয়দের অনুভূতির সঙ্গে এর মিল ছিল। দক্ষিণ এশীয় পরিচয়ের সঙ্গেও এর সামঞ্জস্য ছিল।
কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে ভারত পুরোনো পথ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। এখন তারা ইসরাইলের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলছে। এই সম্পর্কটা কৌশলগত। উন্মুক্ত। এমনকি নিজেদের মধ্যে তারা আইডিয়াও বিনিময় করছে।
চুক্তিটা শূন্য থেকে শুরু হয়নি। বহু বছরের কাজের ভিত্তিতে এই চুক্তি হয়েছে। ভারত আর ইসরাইলের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। তারা গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করে, প্রযুক্তি লেনদেন করে। তাদের আসল মনোযোগ নিজের দেশের নিরাপত্তার দিকে। তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। জাতীয় পরিচয় গড়ে তুলছে। সারা বিশ্বে তারা ক্ষমতার প্রদর্শনী করছে। কিন্তু এই চুক্তির তাৎপর্য লিখিত ভাষার চেয়েও বেশি। এটা প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বদলে দেবে। মুসলিম বিশ্বের ওপর এর প্রভাব পড়বে। ভারতের ২০০ মিলিয়ন মুসলিমের গায়ে এর আঁচ লাগবে। এখানে বড় বড় প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে। ভারত এখন কী ধরনের দেশ? বৈশ্বিক যুদ্ধে তারা কাদের পক্ষ নেবে? কীভাবে এটা দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার সমীকরণ বদলে দেবে?
যে অংশীদারত্বের সবটা চোখে দেখা যায় না
বাইরে থেকে এই অংশীদারত্বের একটা যুক্তি আছে। ইসরাইল উচ্চমানের অস্ত্র বানাচ্ছে। তারা সাইবার সরঞ্জাম বানাচ্ছে। ড্রোন তৈরি করছে। তাদের মিসাইল সুরক্ষা সিস্টেম আছে। যুদ্ধের জন্য তারা গোয়েন্দা প্রযুক্তি তৈরি করছে। অসম যুদ্ধে এগুলো সবই দারুণ কাজে লাগে। ভারত তাদের সামরিক বাহিনীকে বড় করতে চায়। তাদের সীমান্তে লড়তে হয়। দেশের ভেতরেও তাদের নিরাপত্তা ইস্যু রয়েছে। ইসরাইলের প্রযুক্তি তাই ভারতের দরকার। প্রতিরক্ষার জন্য দরকার। পুলিশের কাজে তারা এগুলো ব্যবহার করছে। কাশ্মীরসহ যেসব এলাকায় মুসলিমদের সংখ্যা বেশি, সেখানে তারা এগুলো ব্যবহার করছে।
কিন্তু সম্পর্কটা আরো গভীর। এর একেবারে কেন্দ্রে কতগুলো আইডিয়া কাজ করছে। দুটো দেশই পুরোনো গল্প আখ্যানের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের পরিচয় দাঁড় করিয়েছে। ইসরাইল জায়নবাদকে ব্যবহার করছে। ভারতের শাসকরা ব্যবহার করছে হিন্দুত্ববাদকে। উভয়েই নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসিত রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। তারা কিছু পুরোনো যন্ত্রণার গল্প সামনে এনেছে। ভূখণ্ড নিয়ে লড়াইকে তারা জীবন-মৃত্যুর সমান মনে করে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তারা নিরাপত্তাকে অজুহাত হিসেবে কাজে লাগায়। সংখ্যাগরিষ্ঠের অহমকে তারা শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে।
এই চুক্তিটা তাই সহযোগিতার চেয়েও বেশি কিছু। বিশ্বকে দেখার এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে দিচ্ছে এই চুক্তি।
মুসলিম বিশ্বের প্রতি ভূরাজনৈতিক বার্তা
যে সময়ে চুক্তিটা হলো, সেটার কারণে চুক্তিটা আলাদাভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গাজা আর পশ্চিম তীরে ইসরাইলের যে অপকর্ম, সারা বিশ্ব তার নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে ভারত। সবখানে মুসলিমরা যখন প্রচণ্ড আবেগে আক্রান্ত, তখন এই চুক্তিটা করল দিল্লি। বার্তাটা খুবই পরিষ্কার।
এই চুক্তি মুসলিম বিশ্বকে তিনটি বার্তা দিল। প্রথমত, ভারতের কাছে নৈতিকতার চেয়ে কৌশল বড়। দ্বিতীয়ত, মুসলিমদের আবেগ-অনুভূতি আর ভারতের সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলে না। তৃতীয়ত, ভারত মনে করছে উপসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক তাদের রক্ষা করবে। এই উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ অনেক। সেখানে তারা কর্মী পাঠিয়েছে। সেখান থেকে জ্বালানি কিনছে। পাল্টা লড়াইয়ের জন্য উপসাগরীয় দেশগুলোরও ভারতকে খুবই প্রয়োজন।
এখন পর্যন্ত এই বাজি ধরে লাভ হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কাতার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে। তারা বাণিজ্য আর প্রকল্প বাড়িয়েছে। গাজা নিয়ে ক্ষোভের মধ্যেও এটা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের একটা শিক্ষা আছে। মুসলিমদের জনমত অনেক সময় পদক্ষেপে রূপ নিতে পারে। ফিলিস্তিনের মতো ইস্যুতে এটা দ্রুত ঘটতে পারে। যুদ্ধ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ভারতের নিরাপত্তা জাল ছিঁড়ে যেতে পারে।
তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ইরানের মতো দেশগুলো মুসলিম ঐক্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। গ্লোবাল সাউথের যে নৈতিক অবস্থান, ভারতের পদক্ষেপকে তারা এর লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে। এই চুক্তি ভারতকে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন থেকে বের করে এনেছে। এটা ভারতকে মার্কিন-ইসরাইলি নিরাপত্তা গ্রুপের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
পাকিস্তানের জন্য তাৎপর্য : শত্রুতা আরো বাড়বে
পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবেই এটা টের পেয়েছে। তারা নিজেদের মুসলিম স্বার্থের পক্ষে যোদ্ধা হিসেবে দেখে। ফিলিস্তিনের কারণে পাকিস্তান বৈশ্বিক মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিজেদের জুড়ে রাখতে পারছে। ভারত-ইসরাইল চুক্তির কারণে পাকিস্তানের নিরাপত্তা আলোচনার মধ্যে নেতিবাচক বয়ান আরো বাড়বে।
তারা বলেছে, ভারত পাকিস্তানের শত্রুদের আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এই চুক্তির লক্ষ্য হলো পাকিস্তানকে ঘিরে ফেলা। দুর্বল করে ফেলা। তারা বলেছে, ভারত আর ইসরাইল পাকিস্তানের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করছে। পারমাণবিক অস্ত্র থেকে নিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর তথ্য তারা বিনিময় করছে। তারা বলছে, ভারত তাদের পুরোনো নিরপেক্ষ নীতি থেকে সরে গেছে। তারা এখন দক্ষিণ এশিয়ার শত্রু হিসেবে কাজ করছে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের শঙ্কা আরো বাড়তে পারে। সামরিক বাহিনীর ওপর তাদের নির্ভরতা আরো বেড়ে যেতে পারে। ভারতের বিরুদ্ধে ভারসাম্যের জন্য চীনের ওপর তাদের নির্ভরতা আরো বাড়তে পারে। এতে একটা নিরাপত্তা চক্র তৈরি হবে। কঠিন হবে এটা বন্ধ করা। দক্ষিণ এশিয়া আসলে শান্তি আলোচনা থেকে সরে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ : ভারসাম্যের অক্ষে
বাংলাদেশের বিষয়টা জটিল। ঢাকা সম্প্রতি ইসরাইলের সঙ্গে কিছু লেনদেন করেছে। তারা প্রবৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও উন্নত অস্ত্র পেতে চায়। কিন্তু ফিলিস্তিনের ব্যাপারে বাংলাদেশিদের অনুভূতি অনেক গভীর। ইসরাইলের সঙ্গে প্রকাশ্য চুক্তিতে গেলে দেশে রাজনৈতিক নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভারতের চুক্তি বাংলাদেশকে একটা বাধ্যবাধকতায় ঠেলে দিয়েছে। অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক কারণে ভারতের সঙ্গে তাদের শক্তিশালী সম্পর্ক রাখতেই হবে। আবার ফিলিস্তিনকেও তারা অগ্রাহ্য করতে পারবে না। মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি তাদের মনোযোগ দিতেই হবে।
বাংলাদেশ এ বিষয়ে চুপচাপ ও নিরপেক্ষ থাকতে পারে। তাদের সূক্ষ্ম রেখায় হাঁটতে হচ্ছে। ফিলিস্তিনের জন্য আবেগ, আবার ভারতের প্রয়োজনীয়তা—এই দুইয়ের মধ্যে তাদের ভারসাম্য রাখতে হচ্ছে। কিন্তু এই রেখাটা ক্রমেই আরো পাতলা হয়ে আসছে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর ওপর প্রভাব
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিন্ন ইতিহাস রয়েছে। ফিলিস্তিন ইস্যু এই লড়াইয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা শ্রীলঙ্কার শান্তি প্রচেষ্টার সঙ্গেও তুলনা করা চলে। এটা অসমাপ্ত স্বাধীনতার গল্প।
কিন্তু ভারত-ইসরাইলের চুক্তি এই অভিন্ন অতীত ইতিহাসকে অবজ্ঞা করেছে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য রয়েছে। তারা সেখানে কর্মী পাঠায়। এখন তাদের এই সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো আর উপনিবেশবাদ-বিরোধী চরিত্রের জায়গায় টিকে নেই। যুদ্ধের ধকল কাটিয়ে ওঠার সংগ্রামটাও আলাদা হয়ে গেছে। এখন টিকে আছে কেবল শত্রুতা, আর বিভক্ত আইডিয়া।
ভারতের অভ্যন্তরীণ মুসলিম জনগোষ্ঠী : নীরব কিন্তু কেন্দ্রীয় স্তর
চুক্তির আঘাতটা বেশ বড়। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী রয়েছে ভারতে। ভারত আগে ফিলিস্তিনকে যে সমর্থন করত, এটাকে তারা অন্তর্ভুক্তির নীতি হিসেবে দেখত। একটা ন্যায্য অবস্থান ছিল সেটা, যদিও উত্তেজনা বাড়ত যখন-তখন। তবু একটা নীরব আশা এর মধ্যে তারা দেখতে পেত। সারা বিশ্বে মুসলিমদের সম্মান দেখিয়েছিল তখন ভারত।
এখন এই চুক্তি সব বদলে দিয়েছে। গাজায় চলমান পরিস্থিতির মধ্যেও প্রতিশ্রুতি বদলে ফেলেছে ভারত। নাগরিকত্ব, ধর্মীয় গোষ্ঠী, মসজিদ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিয়ে এখন যেসব আলোচনা চলছে, সেগুলো থেকে খারাপ ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
প্রথমত, ভারত তাদের পরিচয় থেকে ন্যায্যতাকে ঝেড়ে ফেলেছে। তারা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনকে বেছে নিয়েছে। এর মাধ্যমে অন্য গোষ্ঠীগুলোকে নিচের স্তরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভারত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মুসলিমদের মতামতকে আর গুরুত্ব দিচ্ছে না। এর মাধ্যমে মুসলিমদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে। সেখানে বিচ্ছিন্নতার গল্প তৈরি হচ্ছে। সামাজিক ভাঙন আরো প্রকট হচ্ছে।
বিশ্ব ব্যবস্থায় ভারতকে ফিরিয়ে আনা
এই চুক্তি দুটো কাজ করেছে। ভারতকে তারা উদীয়মান শক্তি হিসেবে সামনে এনেছে। ভারত যে একটা শক্তিশালী সামরিক গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, সেটা দেখানো হচ্ছে এই চুক্তিতে। আর ভারত তাদের অতীত বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসেছে। মুসলিম বা জোট নিরপেক্ষ গোষ্ঠীর মতামতকে এখন তারা অগ্রাহ্য করছে।
এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভারত নিজেদের বদলে ফেলেছে। মার্কিন-ইসরাইল সম্পর্কে আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে তারা। এর মধ্যে এশিয়া-প্রশান্ত নিরাপত্তাও রয়েছে। গ্লোবাল সাউথ থেকে তারা দূরে সরে গেছে। অথচ এই গোষ্ঠীতে ভারতের কণ্ঠস্বর একসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ভারত এখন জাতীয়তাবাদী পরিচয়কে বেছে নিয়েছে। ন্যায্যতা নয়, খোলা শাসন তাদের অগ্রাধিকার।
ভারত আর মুসলিম বা গ্লোবাল সাউথের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছে না। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি তারা ঝেড়ে ফেলেছে। স্বাধীনতা আর ন্যায়বিচারের ইস্যু পরিত্যাগ করেছে। নৈতিক শক্তিকে বিলিয়ে দিয়ে তারা কৌশলকে বেছে নিয়েছে।
শেষ কথা : নৈতিকতাবিহীন ক্ষমতার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে মূল্য দিতে হয়
এই চুক্তি লিখিত বক্তব্যের চেয়েও বড়। একটা বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিকে তারা সমর্থন দিচ্ছে। ভারতের কৌশলকে এই চুক্তি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছে। গাজা আর ফিলিস্তিনে মানুষের দুর্ভোগ আর অধিকারের দিকে যখন সারা বিশ্বের মনোযোগ, সেই সময়টাতেই এই চুক্তি করল ভারত।
শুধু পেশিশক্তি আর বন্ধুদের ওপর ভর করে বড় শক্তিগুলোর উত্থান হয় না। তাদের কিছু মূল্যবোধ থাকে। বিশ্বাস থাকে। নৈতিক শক্তি থাকে। কিন্তু ভারত এসব অধিকার ছেড়ে ক্ষমতার দিকে ঝুঁকেছে।
কিন্তু ক্ষমতা দ্রুত বদলায়। বন্ধুরা ছেড়ে যায়। সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। জোটগুলো ভেঙে যায়। কিন্তু দেশের লক্ষ্যের প্রতি যে বিশ্বাস, সেটা টিকে থাকে। এটা হারানো কঠিন। আবার এটা ঠিক করতেও বহু সময় লেগে যায়।
লেখক:

ভারত আর ইসরাইল বড় ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। বিশ্বকে চমকে দিয়েছে এই চুক্তি। দক্ষিণ এশিয়া আর মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব পড়বে অনেক। চুক্তির সময়টাও তাৎপর্যপূর্ণ। সারা বিশ্বের মানুষ এখন গাজা আর পশ্চিম তীরে ইসরাইলের অপকর্মের জন্য তাদের তীব্র নিন্দা করছে। অনেকের নিন্দার ভাষা খুবই কঠোর। কেউ কেউ এটাকে গণহত্যা পর্যন্ত বলেছে। তারপরও ভারত ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এই পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে ভারতকে একটা কঠিন জায়গায় ঠেলে দেবে।
ভারত নিজেদের নৈতিক নেতা মনে করে। দরিদ্র দেশের জন্য তারা কথা বলার চেষ্টা করেছে। বহু বছর ভারত উপনিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের তারা সমর্থন দিয়েছে। স্বায়ত্তশাসনকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। ফিলিস্তিনের ব্যাপারে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিও এর সঙ্গে মানানসই ছিল। ভারতীয়দের অনুভূতির সঙ্গে এর মিল ছিল। দক্ষিণ এশীয় পরিচয়ের সঙ্গেও এর সামঞ্জস্য ছিল।
কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে ভারত পুরোনো পথ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। এখন তারা ইসরাইলের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলছে। এই সম্পর্কটা কৌশলগত। উন্মুক্ত। এমনকি নিজেদের মধ্যে তারা আইডিয়াও বিনিময় করছে।
চুক্তিটা শূন্য থেকে শুরু হয়নি। বহু বছরের কাজের ভিত্তিতে এই চুক্তি হয়েছে। ভারত আর ইসরাইলের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। তারা গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করে, প্রযুক্তি লেনদেন করে। তাদের আসল মনোযোগ নিজের দেশের নিরাপত্তার দিকে। তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। জাতীয় পরিচয় গড়ে তুলছে। সারা বিশ্বে তারা ক্ষমতার প্রদর্শনী করছে। কিন্তু এই চুক্তির তাৎপর্য লিখিত ভাষার চেয়েও বেশি। এটা প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বদলে দেবে। মুসলিম বিশ্বের ওপর এর প্রভাব পড়বে। ভারতের ২০০ মিলিয়ন মুসলিমের গায়ে এর আঁচ লাগবে। এখানে বড় বড় প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে। ভারত এখন কী ধরনের দেশ? বৈশ্বিক যুদ্ধে তারা কাদের পক্ষ নেবে? কীভাবে এটা দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার সমীকরণ বদলে দেবে?
যে অংশীদারত্বের সবটা চোখে দেখা যায় না
বাইরে থেকে এই অংশীদারত্বের একটা যুক্তি আছে। ইসরাইল উচ্চমানের অস্ত্র বানাচ্ছে। তারা সাইবার সরঞ্জাম বানাচ্ছে। ড্রোন তৈরি করছে। তাদের মিসাইল সুরক্ষা সিস্টেম আছে। যুদ্ধের জন্য তারা গোয়েন্দা প্রযুক্তি তৈরি করছে। অসম যুদ্ধে এগুলো সবই দারুণ কাজে লাগে। ভারত তাদের সামরিক বাহিনীকে বড় করতে চায়। তাদের সীমান্তে লড়তে হয়। দেশের ভেতরেও তাদের নিরাপত্তা ইস্যু রয়েছে। ইসরাইলের প্রযুক্তি তাই ভারতের দরকার। প্রতিরক্ষার জন্য দরকার। পুলিশের কাজে তারা এগুলো ব্যবহার করছে। কাশ্মীরসহ যেসব এলাকায় মুসলিমদের সংখ্যা বেশি, সেখানে তারা এগুলো ব্যবহার করছে।
কিন্তু সম্পর্কটা আরো গভীর। এর একেবারে কেন্দ্রে কতগুলো আইডিয়া কাজ করছে। দুটো দেশই পুরোনো গল্প আখ্যানের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের পরিচয় দাঁড় করিয়েছে। ইসরাইল জায়নবাদকে ব্যবহার করছে। ভারতের শাসকরা ব্যবহার করছে হিন্দুত্ববাদকে। উভয়েই নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসিত রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। তারা কিছু পুরোনো যন্ত্রণার গল্প সামনে এনেছে। ভূখণ্ড নিয়ে লড়াইকে তারা জীবন-মৃত্যুর সমান মনে করে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তারা নিরাপত্তাকে অজুহাত হিসেবে কাজে লাগায়। সংখ্যাগরিষ্ঠের অহমকে তারা শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে।
এই চুক্তিটা তাই সহযোগিতার চেয়েও বেশি কিছু। বিশ্বকে দেখার এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে দিচ্ছে এই চুক্তি।
মুসলিম বিশ্বের প্রতি ভূরাজনৈতিক বার্তা
যে সময়ে চুক্তিটা হলো, সেটার কারণে চুক্তিটা আলাদাভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গাজা আর পশ্চিম তীরে ইসরাইলের যে অপকর্ম, সারা বিশ্ব তার নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে ভারত। সবখানে মুসলিমরা যখন প্রচণ্ড আবেগে আক্রান্ত, তখন এই চুক্তিটা করল দিল্লি। বার্তাটা খুবই পরিষ্কার।
এই চুক্তি মুসলিম বিশ্বকে তিনটি বার্তা দিল। প্রথমত, ভারতের কাছে নৈতিকতার চেয়ে কৌশল বড়। দ্বিতীয়ত, মুসলিমদের আবেগ-অনুভূতি আর ভারতের সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলে না। তৃতীয়ত, ভারত মনে করছে উপসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক তাদের রক্ষা করবে। এই উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ অনেক। সেখানে তারা কর্মী পাঠিয়েছে। সেখান থেকে জ্বালানি কিনছে। পাল্টা লড়াইয়ের জন্য উপসাগরীয় দেশগুলোরও ভারতকে খুবই প্রয়োজন।
এখন পর্যন্ত এই বাজি ধরে লাভ হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কাতার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে। তারা বাণিজ্য আর প্রকল্প বাড়িয়েছে। গাজা নিয়ে ক্ষোভের মধ্যেও এটা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের একটা শিক্ষা আছে। মুসলিমদের জনমত অনেক সময় পদক্ষেপে রূপ নিতে পারে। ফিলিস্তিনের মতো ইস্যুতে এটা দ্রুত ঘটতে পারে। যুদ্ধ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ভারতের নিরাপত্তা জাল ছিঁড়ে যেতে পারে।
তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ইরানের মতো দেশগুলো মুসলিম ঐক্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। গ্লোবাল সাউথের যে নৈতিক অবস্থান, ভারতের পদক্ষেপকে তারা এর লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে। এই চুক্তি ভারতকে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন থেকে বের করে এনেছে। এটা ভারতকে মার্কিন-ইসরাইলি নিরাপত্তা গ্রুপের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
পাকিস্তানের জন্য তাৎপর্য : শত্রুতা আরো বাড়বে
পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবেই এটা টের পেয়েছে। তারা নিজেদের মুসলিম স্বার্থের পক্ষে যোদ্ধা হিসেবে দেখে। ফিলিস্তিনের কারণে পাকিস্তান বৈশ্বিক মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিজেদের জুড়ে রাখতে পারছে। ভারত-ইসরাইল চুক্তির কারণে পাকিস্তানের নিরাপত্তা আলোচনার মধ্যে নেতিবাচক বয়ান আরো বাড়বে।
তারা বলেছে, ভারত পাকিস্তানের শত্রুদের আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এই চুক্তির লক্ষ্য হলো পাকিস্তানকে ঘিরে ফেলা। দুর্বল করে ফেলা। তারা বলেছে, ভারত আর ইসরাইল পাকিস্তানের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করছে। পারমাণবিক অস্ত্র থেকে নিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর তথ্য তারা বিনিময় করছে। তারা বলছে, ভারত তাদের পুরোনো নিরপেক্ষ নীতি থেকে সরে গেছে। তারা এখন দক্ষিণ এশিয়ার শত্রু হিসেবে কাজ করছে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের শঙ্কা আরো বাড়তে পারে। সামরিক বাহিনীর ওপর তাদের নির্ভরতা আরো বেড়ে যেতে পারে। ভারতের বিরুদ্ধে ভারসাম্যের জন্য চীনের ওপর তাদের নির্ভরতা আরো বাড়তে পারে। এতে একটা নিরাপত্তা চক্র তৈরি হবে। কঠিন হবে এটা বন্ধ করা। দক্ষিণ এশিয়া আসলে শান্তি আলোচনা থেকে সরে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ : ভারসাম্যের অক্ষে
বাংলাদেশের বিষয়টা জটিল। ঢাকা সম্প্রতি ইসরাইলের সঙ্গে কিছু লেনদেন করেছে। তারা প্রবৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও উন্নত অস্ত্র পেতে চায়। কিন্তু ফিলিস্তিনের ব্যাপারে বাংলাদেশিদের অনুভূতি অনেক গভীর। ইসরাইলের সঙ্গে প্রকাশ্য চুক্তিতে গেলে দেশে রাজনৈতিক নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভারতের চুক্তি বাংলাদেশকে একটা বাধ্যবাধকতায় ঠেলে দিয়েছে। অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক কারণে ভারতের সঙ্গে তাদের শক্তিশালী সম্পর্ক রাখতেই হবে। আবার ফিলিস্তিনকেও তারা অগ্রাহ্য করতে পারবে না। মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি তাদের মনোযোগ দিতেই হবে।
বাংলাদেশ এ বিষয়ে চুপচাপ ও নিরপেক্ষ থাকতে পারে। তাদের সূক্ষ্ম রেখায় হাঁটতে হচ্ছে। ফিলিস্তিনের জন্য আবেগ, আবার ভারতের প্রয়োজনীয়তা—এই দুইয়ের মধ্যে তাদের ভারসাম্য রাখতে হচ্ছে। কিন্তু এই রেখাটা ক্রমেই আরো পাতলা হয়ে আসছে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর ওপর প্রভাব
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিন্ন ইতিহাস রয়েছে। ফিলিস্তিন ইস্যু এই লড়াইয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা শ্রীলঙ্কার শান্তি প্রচেষ্টার সঙ্গেও তুলনা করা চলে। এটা অসমাপ্ত স্বাধীনতার গল্প।
কিন্তু ভারত-ইসরাইলের চুক্তি এই অভিন্ন অতীত ইতিহাসকে অবজ্ঞা করেছে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য রয়েছে। তারা সেখানে কর্মী পাঠায়। এখন তাদের এই সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো আর উপনিবেশবাদ-বিরোধী চরিত্রের জায়গায় টিকে নেই। যুদ্ধের ধকল কাটিয়ে ওঠার সংগ্রামটাও আলাদা হয়ে গেছে। এখন টিকে আছে কেবল শত্রুতা, আর বিভক্ত আইডিয়া।
ভারতের অভ্যন্তরীণ মুসলিম জনগোষ্ঠী : নীরব কিন্তু কেন্দ্রীয় স্তর
চুক্তির আঘাতটা বেশ বড়। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী রয়েছে ভারতে। ভারত আগে ফিলিস্তিনকে যে সমর্থন করত, এটাকে তারা অন্তর্ভুক্তির নীতি হিসেবে দেখত। একটা ন্যায্য অবস্থান ছিল সেটা, যদিও উত্তেজনা বাড়ত যখন-তখন। তবু একটা নীরব আশা এর মধ্যে তারা দেখতে পেত। সারা বিশ্বে মুসলিমদের সম্মান দেখিয়েছিল তখন ভারত।
এখন এই চুক্তি সব বদলে দিয়েছে। গাজায় চলমান পরিস্থিতির মধ্যেও প্রতিশ্রুতি বদলে ফেলেছে ভারত। নাগরিকত্ব, ধর্মীয় গোষ্ঠী, মসজিদ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিয়ে এখন যেসব আলোচনা চলছে, সেগুলো থেকে খারাপ ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
প্রথমত, ভারত তাদের পরিচয় থেকে ন্যায্যতাকে ঝেড়ে ফেলেছে। তারা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনকে বেছে নিয়েছে। এর মাধ্যমে অন্য গোষ্ঠীগুলোকে নিচের স্তরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভারত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মুসলিমদের মতামতকে আর গুরুত্ব দিচ্ছে না। এর মাধ্যমে মুসলিমদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে। সেখানে বিচ্ছিন্নতার গল্প তৈরি হচ্ছে। সামাজিক ভাঙন আরো প্রকট হচ্ছে।
বিশ্ব ব্যবস্থায় ভারতকে ফিরিয়ে আনা
এই চুক্তি দুটো কাজ করেছে। ভারতকে তারা উদীয়মান শক্তি হিসেবে সামনে এনেছে। ভারত যে একটা শক্তিশালী সামরিক গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, সেটা দেখানো হচ্ছে এই চুক্তিতে। আর ভারত তাদের অতীত বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসেছে। মুসলিম বা জোট নিরপেক্ষ গোষ্ঠীর মতামতকে এখন তারা অগ্রাহ্য করছে।
এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভারত নিজেদের বদলে ফেলেছে। মার্কিন-ইসরাইল সম্পর্কে আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে তারা। এর মধ্যে এশিয়া-প্রশান্ত নিরাপত্তাও রয়েছে। গ্লোবাল সাউথ থেকে তারা দূরে সরে গেছে। অথচ এই গোষ্ঠীতে ভারতের কণ্ঠস্বর একসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ভারত এখন জাতীয়তাবাদী পরিচয়কে বেছে নিয়েছে। ন্যায্যতা নয়, খোলা শাসন তাদের অগ্রাধিকার।
ভারত আর মুসলিম বা গ্লোবাল সাউথের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছে না। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি তারা ঝেড়ে ফেলেছে। স্বাধীনতা আর ন্যায়বিচারের ইস্যু পরিত্যাগ করেছে। নৈতিক শক্তিকে বিলিয়ে দিয়ে তারা কৌশলকে বেছে নিয়েছে।
শেষ কথা : নৈতিকতাবিহীন ক্ষমতার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে মূল্য দিতে হয়
এই চুক্তি লিখিত বক্তব্যের চেয়েও বড়। একটা বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিকে তারা সমর্থন দিচ্ছে। ভারতের কৌশলকে এই চুক্তি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছে। গাজা আর ফিলিস্তিনে মানুষের দুর্ভোগ আর অধিকারের দিকে যখন সারা বিশ্বের মনোযোগ, সেই সময়টাতেই এই চুক্তি করল ভারত।
শুধু পেশিশক্তি আর বন্ধুদের ওপর ভর করে বড় শক্তিগুলোর উত্থান হয় না। তাদের কিছু মূল্যবোধ থাকে। বিশ্বাস থাকে। নৈতিক শক্তি থাকে। কিন্তু ভারত এসব অধিকার ছেড়ে ক্ষমতার দিকে ঝুঁকেছে।
কিন্তু ক্ষমতা দ্রুত বদলায়। বন্ধুরা ছেড়ে যায়। সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। জোটগুলো ভেঙে যায়। কিন্তু দেশের লক্ষ্যের প্রতি যে বিশ্বাস, সেটা টিকে থাকে। এটা হারানো কঠিন। আবার এটা ঠিক করতেও বহু সময় লেগে যায়।
লেখক:

সৃষ্টির শুরু থেকেই জীবজগতে ছোট-বড় প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ দখলের অলিখিত লড়াই চলছে। বিরামহীন এই লড়াইয়ে সবল প্রাণীরা অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের হারিয়ে ক্রমে এই গ্রহে নিজেদের দখল নিশ্চিত করেছে।
৫ ঘণ্টা আগে
গণতন্ত্রের মোড়কে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ৫৪ বছর পার করেছে, কিন্তু দুর্নীতি আজ সমাজের ক্যানসারে পরিণত। এই দুর্নীতি এখন আর গোপন পাপ নয়, বরং প্রকাশ্য বাণিজ্য। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের বক্তব্য অনুযায়ী
৫ ঘণ্টা আগে
রোহিঙ্গা সংকট দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী মানবিক এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যার একটি। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের কোনো বাস্তব সম্ভাবনা নেই।
৫ ঘণ্টা আগে
চলমান রাজনীতির বৃহত্তর দুই শক্তি বিএনপি ও জামায়াত তাদের অধিকাংশ সংসদ সদস্য প্রার্থীকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগেই। অন্যসব দল অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে কথাবার্তা বললেও এজেন্ডাভিত্তিক প্রাক-নির্বাচনি বিতর্কে যোগদান করেনি এখনো।
৫ ঘণ্টা আগে