
অলিউল্লাহ নোমান

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে কাজ করছে ‘প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন। এই সংগঠনের যুক্তরাজ্য শাখার আহ্বায়ক ইউকে ইমিগ্রেশন ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারক। তার নেতৃত্বে গঠিত সংগঠনের একজন সদস্য হিসেবে আমার মতো নগণ্য ব্যক্তিকেও রাখা হয়েছে। এই সুবাদে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মিটিং ও সভা-সমাবেশে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার। বছরের পর বছর ধরে ভোটাধিকারের জন্য প্রবাসীরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এমনকি নব্বইয়ের দশকে উচ্চ আদালতেও গিয়েছিলেন প্রবাসীরা। উচ্চ আদালত ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু সে রায় কার্যকর করার উদ্যোগ কেউ নেয়নি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অসমাপ্ত বিপ্লবোত্তর কালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার এই দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে—এই উদ্যোগ সফল হবে, নাকি শুধু ঘোষণা দিয়ে প্রবাসীদের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে?
ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতার কথা আগে বলে নিতে চাই। প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য হিসেবে হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বটি আমার ওপর অর্পিত। ইতোমধ্যে হাইকমিশনারের সঙ্গে আমাদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে। অনেক দয়াপরবশ হয়ে হাইকমিশন আমাদের কিছু কথা শুনেছিল। এর পরই তারা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একটি জুম মিটিংয়ের আয়োজন করে। এজন্য হাইকমিশন ধন্যবাদ প্রাপ্য। গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জুম মিটিংয়ে একজন নির্বাচন কমিশনারসহ উচ্চপদের কয়েকজন কর্তাব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে যোগ দেন। এদিকে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদসহ আরো কিছু ব্যক্তিপর্যায় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এই জুম মিটিংয়ে। জুম মিটিংয়ে যোগ দেওয়া সবাই প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে আন্তরিক ছিলেন।
ওই বৈঠক থেকেই আমরা চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হতে পেরেছিলাম, প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। একটি অ্যাপস তৈরির কাজ চলছে। নভেম্বর থেকে এই অ্যাপসের মাধ্যমে প্রবাসী ভোটার হিসেবে তারা ব্যালট পেপার চাইতে পারবেন। এ পর্যন্ত শুনে ভালো লাগবে প্রবাসীদের। কিন্তু অ্যাপসে প্রবেশের জন্য প্রয়োজন ন্যাশনাল আইডি কার্ড (এনআইডি)। ঝামেলা এখানেই।
কারণ যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ৯০ শতাংশ বাংলাদেশির এনআইডি নেই। আমাদের দাবি ছিল অন্তত এই বছর বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জন্মসনদ যাদের রয়েছে, সেটা দিয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ যেন রাখা হয়। কিন্তু আমাদের এই দাবি জুম মিটিংয়েই সরাসরি নাকচ করে দেওয়া হয়েছিল। তখনই আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যদি তা হয়, সেক্ষেত্রে দুই শতাংশ প্রবাসীও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন না এবং এটাই বাস্তবতা। পরবর্তী সময়ে আমলাদের পক্ষ থেকে বলা হবে, প্রবাসীরা ভোট দিতে আগ্রহী নয়। তাই এই প্রক্রিয়া হয়তো আবার বন্ধ হয়ে যাবে।
এনআইডি কার্ড সহজে পাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে কী করা যায়, সেটা নিয়ে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। সিদ্ধান্ত হয় হাইকমিশনের সঙ্গে এ নিয়ে আরেকটি বৈঠকে বসার জন্য। বৈঠকের সময় চেয়ে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ ইউকে’র আহ্বায়ক মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন (ইউকে ইমিগ্রেশন ট্রাইব্যুনাল বিচারক) হাইকমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-মেইল করেন। তিনি আমাকেও এটি ফরোয়ার্ড করেছিলেন। আমিও একই ই-মেইল আবার হাইকমিশনে ফরোয়ার্ড করি। হাইকমিশন অতি ভদ্রতার সঙ্গে ই-মেইল প্রাপ্তি স্বীকার করে। এরপর প্রায় দুই সপ্তাহ চলে যায়—আর কোনো খবর নেই। এদিকে ভোটার নিবন্ধনের জন্য সময়ও ঘনিয়ে এসেছে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর হাইকমিশনের একজন কর্তাব্যক্তিকে ফোন দিই। তিনি প্রথমেই আমাকে বললেন, আপনাদের ই-মেইল তো আমরা অ্যাকনলেজ করেছি। বোঝানোর চেষ্টা করেন, এ বিষয়ে তো একটা মিটিং হয়েছে। আর এ নিয়ে বৈঠকের দরকার আছে বলে তারা মনে করেন না। একপর্যায়ে তাকে আমি বোঝানোর চেষ্টা করি। বুঝতে না চাইলে আমি বলার চেষ্টা করি, আপনারা অন্তত আমাদের কথাগুলো সামনাসামনি বসে শোনেন। আমরা আমাদের কথাগুলো সামনাসামনি বসে বলতে চাই। এনআইডি নিয়ে জটিলতা প্রসঙ্গে আমরা হাইকমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
বৈঠকের তারিখটি ছিল গত ২৭ অক্টোবর বেলা ১টায়। নির্ধারিত সময়ের আগেই ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়কের নেতৃত্বে আমরা সাতজন উপস্থিত হই। এর মধ্যে তিনজন ব্যারিস্টার। আহ্বায়ক নিজে তো একজন ট্রাইব্যুনাল বিচারক এবং বাকি দুজনের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী এবং আরেকজন হলেন বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীণ নাগরিক। তাদের সঙ্গে আমি নগণ্য একজন ছিলাম। এখানে উপস্থিত হওয়া প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ রেখে প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে উপস্থিত হয়েছিলেন।
আমাদের পক্ষ থেকে বারবার বলার চেষ্টা করা হয়, এখানে মিটিংয়ের পরিবেশ নেই। একপর্যায়ে তারা আমাদের নিয়ে উপরে গেলেন এবং হাইকমিশনে নির্ধারিত নিয়মিত বৈঠক রুমে বসার ব্যবস্থা করলেন।
আহ্বায়ক মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন তার নাতিদীর্ঘ প্রেজেন্টেশনটির ড্রাফট কপি তাদের হাতে দিলেন। সঙ্গে কিছু ডকুমেন্টস যুক্ত করা ছিল। মূলত এনআইডির আবেদনের পর মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিলেন। প্রমাণ দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, একজন প্রবাসীর এনআইডি পেতে কতটা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়।
তার এই উপস্থাপনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, সরকার যতই আন্তরিকতা দেখাক, আমলারা আন্তরিক নন। বলতে পারেন, আপনি কীভাবে বুঝলেন, আমলারা আন্তরিক নন। জবাবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে যা বলতে চাই, সেটা হচ্ছে—
এক.
প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কী করতে হবে, সেটা কেউ জানেন না। এ নিয়ে সরকার ও হাইকমিশনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রচারণা চালানো হয়নি প্রবাসীদের মাঝে। হঠাৎ করেই বলা হচ্ছে, ২৫ অক্টোবর প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধনের সময় শেষ হয়ে গেছে। ২৫ অক্টোবরের মধ্যে গড়ে এক শতাংশ প্রবাসীও ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
দুই.
প্রবাসীদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে হলে এনআইডি আবশ্যক। দীর্ঘদিন প্রবাসে স্থায়ীভাবে বসবাসের কারণে অনেকেই এনআইডির বিষয়ে মনোযোগী হননি। এছাড়া স্থায়ীভাবে প্রবাসে বসবাসকারী দ্বিতীয় প্রজন্মের কারো এনআইডি নেই। সুতরাং ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য অতি আবশ্যকীয় এনআইডি না থাকার কারণে অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
তিন.
এনআইডির জন্য আবেদন করার পর বছর পার হয়ে যায়। তারপরও কোনো খবর মেলে না। হাইকমিশনে যোগাযোগ করলে বলা হয়, স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করুন। স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যোগাযোগের মতো কোনো প্রতিনিধি সিলেটের অনেক ব্রিটেন প্রবাসীর নাই। তারা কী করবেন! যাদের রয়েছে, তারা যোগাযোগ করলে ডকুমেন্টসের লম্বা ফর্দ ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ফর্দ অনুযায়ী ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে কেউ সক্ষম হবেন না। তখন শুরু হয় অবৈধ লেনদেনের একটা আলোচনা। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসগুলোর অনেক অনৈতিক লেনদেনের কথাও লন্ডনে চাউর রয়েছে।
চার.
ব্রিটেনে ইমিগ্র্যান্টদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। নাগরিকত্বের আবেদনের সময় নির্ধারিত ফরম পূরণ করে বায়োমেট্রিক বুকিং দিয়ে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে যেতে হয়। সেখানে আগে আপলোড করা ডকুমেন্টস বায়োমেট্রিকের সময় ভেরিফাই করা হয়। বলা হয়, মেইন কপি সঙ্গে নিয়ে বায়োমেট্রিক সেন্টারে যেতে। বায়োমেট্রেক সেন্টারেই ভেরিফিকেশন সমাপ্ত হয়। আমলারা চাইলেই এনআইডির জন্য আবেদনের পর বায়োমেট্রিকের সময় সংশ্লিষ্ট হাইকমিশন বা এম্বাসিগুলোয় ভেরিফাই করার নিয়ম চালু করলে সমস্যা কোথায়! এতে মানুষের হয়রানি যেমন কমবে, তেমনি অনৈতিক লেনদেনের সুযোগও বন্ধ হবে।
পাঁচ.
এনআইডির জন্য আবেদনের সঙ্গে অযথা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বলে কিছু বাড়তি ডকুমেন্টসের কথা বলা রয়েছে। এসব ডকুমন্টেস কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, সেটার কোনো ব্যাখ্যা নেই। এতে সুযোগ নেন অসাধু উপজেলা নির্বাচন অফিসাররা। আবেদনকারীর প্রতিনিধির কাছে পুরো ডকুমন্টেসের লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়, ‘এসব নিয়ে আসেন।’ এতে দেখা যায়, আবেদনাকরীর বাবা-মায়ের এনআইডি, পাসপোর্ট, মৃত হলে বাংলাদেশি মৃত্যু সনদ (অথচ ব্রিটেন প্রবাসীদের অনেকেরই ব্রিটেনে মৃত্যু ও দাফন হয়) বিবাহ সনদ ইত্যাদির কথা বলা আছে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উল্লেখ করে। এই শর্তগুলো শুধু হয়রানির জন্যই বলা চলে।
মোটকথা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার দিলেও জটিলতা ও হয়রানির কারণে এনআইডি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এনআইডি-ই যদি মূল শর্ত হয়, তাহলে সব প্রবাসী নাগরিককে আগে এনআইডি দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং এটির উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল। এখন অবস্থাটা এমন—ঘোড়ার আগেই গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, দৈনিক আমার দেশ

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে কাজ করছে ‘প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন। এই সংগঠনের যুক্তরাজ্য শাখার আহ্বায়ক ইউকে ইমিগ্রেশন ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারক। তার নেতৃত্বে গঠিত সংগঠনের একজন সদস্য হিসেবে আমার মতো নগণ্য ব্যক্তিকেও রাখা হয়েছে। এই সুবাদে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মিটিং ও সভা-সমাবেশে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার। বছরের পর বছর ধরে ভোটাধিকারের জন্য প্রবাসীরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এমনকি নব্বইয়ের দশকে উচ্চ আদালতেও গিয়েছিলেন প্রবাসীরা। উচ্চ আদালত ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু সে রায় কার্যকর করার উদ্যোগ কেউ নেয়নি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অসমাপ্ত বিপ্লবোত্তর কালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার এই দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে—এই উদ্যোগ সফল হবে, নাকি শুধু ঘোষণা দিয়ে প্রবাসীদের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে?
ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতার কথা আগে বলে নিতে চাই। প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য হিসেবে হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বটি আমার ওপর অর্পিত। ইতোমধ্যে হাইকমিশনারের সঙ্গে আমাদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে। অনেক দয়াপরবশ হয়ে হাইকমিশন আমাদের কিছু কথা শুনেছিল। এর পরই তারা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একটি জুম মিটিংয়ের আয়োজন করে। এজন্য হাইকমিশন ধন্যবাদ প্রাপ্য। গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জুম মিটিংয়ে একজন নির্বাচন কমিশনারসহ উচ্চপদের কয়েকজন কর্তাব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে যোগ দেন। এদিকে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদসহ আরো কিছু ব্যক্তিপর্যায় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এই জুম মিটিংয়ে। জুম মিটিংয়ে যোগ দেওয়া সবাই প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে আন্তরিক ছিলেন।
ওই বৈঠক থেকেই আমরা চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হতে পেরেছিলাম, প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। একটি অ্যাপস তৈরির কাজ চলছে। নভেম্বর থেকে এই অ্যাপসের মাধ্যমে প্রবাসী ভোটার হিসেবে তারা ব্যালট পেপার চাইতে পারবেন। এ পর্যন্ত শুনে ভালো লাগবে প্রবাসীদের। কিন্তু অ্যাপসে প্রবেশের জন্য প্রয়োজন ন্যাশনাল আইডি কার্ড (এনআইডি)। ঝামেলা এখানেই।
কারণ যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ৯০ শতাংশ বাংলাদেশির এনআইডি নেই। আমাদের দাবি ছিল অন্তত এই বছর বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জন্মসনদ যাদের রয়েছে, সেটা দিয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ যেন রাখা হয়। কিন্তু আমাদের এই দাবি জুম মিটিংয়েই সরাসরি নাকচ করে দেওয়া হয়েছিল। তখনই আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যদি তা হয়, সেক্ষেত্রে দুই শতাংশ প্রবাসীও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন না এবং এটাই বাস্তবতা। পরবর্তী সময়ে আমলাদের পক্ষ থেকে বলা হবে, প্রবাসীরা ভোট দিতে আগ্রহী নয়। তাই এই প্রক্রিয়া হয়তো আবার বন্ধ হয়ে যাবে।
এনআইডি কার্ড সহজে পাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে কী করা যায়, সেটা নিয়ে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। সিদ্ধান্ত হয় হাইকমিশনের সঙ্গে এ নিয়ে আরেকটি বৈঠকে বসার জন্য। বৈঠকের সময় চেয়ে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ ইউকে’র আহ্বায়ক মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন (ইউকে ইমিগ্রেশন ট্রাইব্যুনাল বিচারক) হাইকমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-মেইল করেন। তিনি আমাকেও এটি ফরোয়ার্ড করেছিলেন। আমিও একই ই-মেইল আবার হাইকমিশনে ফরোয়ার্ড করি। হাইকমিশন অতি ভদ্রতার সঙ্গে ই-মেইল প্রাপ্তি স্বীকার করে। এরপর প্রায় দুই সপ্তাহ চলে যায়—আর কোনো খবর নেই। এদিকে ভোটার নিবন্ধনের জন্য সময়ও ঘনিয়ে এসেছে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর হাইকমিশনের একজন কর্তাব্যক্তিকে ফোন দিই। তিনি প্রথমেই আমাকে বললেন, আপনাদের ই-মেইল তো আমরা অ্যাকনলেজ করেছি। বোঝানোর চেষ্টা করেন, এ বিষয়ে তো একটা মিটিং হয়েছে। আর এ নিয়ে বৈঠকের দরকার আছে বলে তারা মনে করেন না। একপর্যায়ে তাকে আমি বোঝানোর চেষ্টা করি। বুঝতে না চাইলে আমি বলার চেষ্টা করি, আপনারা অন্তত আমাদের কথাগুলো সামনাসামনি বসে শোনেন। আমরা আমাদের কথাগুলো সামনাসামনি বসে বলতে চাই। এনআইডি নিয়ে জটিলতা প্রসঙ্গে আমরা হাইকমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
বৈঠকের তারিখটি ছিল গত ২৭ অক্টোবর বেলা ১টায়। নির্ধারিত সময়ের আগেই ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়কের নেতৃত্বে আমরা সাতজন উপস্থিত হই। এর মধ্যে তিনজন ব্যারিস্টার। আহ্বায়ক নিজে তো একজন ট্রাইব্যুনাল বিচারক এবং বাকি দুজনের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী এবং আরেকজন হলেন বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীণ নাগরিক। তাদের সঙ্গে আমি নগণ্য একজন ছিলাম। এখানে উপস্থিত হওয়া প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ রেখে প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে উপস্থিত হয়েছিলেন।
আমাদের পক্ষ থেকে বারবার বলার চেষ্টা করা হয়, এখানে মিটিংয়ের পরিবেশ নেই। একপর্যায়ে তারা আমাদের নিয়ে উপরে গেলেন এবং হাইকমিশনে নির্ধারিত নিয়মিত বৈঠক রুমে বসার ব্যবস্থা করলেন।
আহ্বায়ক মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন তার নাতিদীর্ঘ প্রেজেন্টেশনটির ড্রাফট কপি তাদের হাতে দিলেন। সঙ্গে কিছু ডকুমেন্টস যুক্ত করা ছিল। মূলত এনআইডির আবেদনের পর মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিলেন। প্রমাণ দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, একজন প্রবাসীর এনআইডি পেতে কতটা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়।
তার এই উপস্থাপনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, সরকার যতই আন্তরিকতা দেখাক, আমলারা আন্তরিক নন। বলতে পারেন, আপনি কীভাবে বুঝলেন, আমলারা আন্তরিক নন। জবাবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে যা বলতে চাই, সেটা হচ্ছে—
এক.
প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কী করতে হবে, সেটা কেউ জানেন না। এ নিয়ে সরকার ও হাইকমিশনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রচারণা চালানো হয়নি প্রবাসীদের মাঝে। হঠাৎ করেই বলা হচ্ছে, ২৫ অক্টোবর প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধনের সময় শেষ হয়ে গেছে। ২৫ অক্টোবরের মধ্যে গড়ে এক শতাংশ প্রবাসীও ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
দুই.
প্রবাসীদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে হলে এনআইডি আবশ্যক। দীর্ঘদিন প্রবাসে স্থায়ীভাবে বসবাসের কারণে অনেকেই এনআইডির বিষয়ে মনোযোগী হননি। এছাড়া স্থায়ীভাবে প্রবাসে বসবাসকারী দ্বিতীয় প্রজন্মের কারো এনআইডি নেই। সুতরাং ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য অতি আবশ্যকীয় এনআইডি না থাকার কারণে অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
তিন.
এনআইডির জন্য আবেদন করার পর বছর পার হয়ে যায়। তারপরও কোনো খবর মেলে না। হাইকমিশনে যোগাযোগ করলে বলা হয়, স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করুন। স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যোগাযোগের মতো কোনো প্রতিনিধি সিলেটের অনেক ব্রিটেন প্রবাসীর নাই। তারা কী করবেন! যাদের রয়েছে, তারা যোগাযোগ করলে ডকুমেন্টসের লম্বা ফর্দ ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ফর্দ অনুযায়ী ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে কেউ সক্ষম হবেন না। তখন শুরু হয় অবৈধ লেনদেনের একটা আলোচনা। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসগুলোর অনেক অনৈতিক লেনদেনের কথাও লন্ডনে চাউর রয়েছে।
চার.
ব্রিটেনে ইমিগ্র্যান্টদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। নাগরিকত্বের আবেদনের সময় নির্ধারিত ফরম পূরণ করে বায়োমেট্রিক বুকিং দিয়ে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে যেতে হয়। সেখানে আগে আপলোড করা ডকুমেন্টস বায়োমেট্রিকের সময় ভেরিফাই করা হয়। বলা হয়, মেইন কপি সঙ্গে নিয়ে বায়োমেট্রিক সেন্টারে যেতে। বায়োমেট্রেক সেন্টারেই ভেরিফিকেশন সমাপ্ত হয়। আমলারা চাইলেই এনআইডির জন্য আবেদনের পর বায়োমেট্রিকের সময় সংশ্লিষ্ট হাইকমিশন বা এম্বাসিগুলোয় ভেরিফাই করার নিয়ম চালু করলে সমস্যা কোথায়! এতে মানুষের হয়রানি যেমন কমবে, তেমনি অনৈতিক লেনদেনের সুযোগও বন্ধ হবে।
পাঁচ.
এনআইডির জন্য আবেদনের সঙ্গে অযথা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বলে কিছু বাড়তি ডকুমেন্টসের কথা বলা রয়েছে। এসব ডকুমন্টেস কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, সেটার কোনো ব্যাখ্যা নেই। এতে সুযোগ নেন অসাধু উপজেলা নির্বাচন অফিসাররা। আবেদনকারীর প্রতিনিধির কাছে পুরো ডকুমন্টেসের লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়, ‘এসব নিয়ে আসেন।’ এতে দেখা যায়, আবেদনাকরীর বাবা-মায়ের এনআইডি, পাসপোর্ট, মৃত হলে বাংলাদেশি মৃত্যু সনদ (অথচ ব্রিটেন প্রবাসীদের অনেকেরই ব্রিটেনে মৃত্যু ও দাফন হয়) বিবাহ সনদ ইত্যাদির কথা বলা আছে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উল্লেখ করে। এই শর্তগুলো শুধু হয়রানির জন্যই বলা চলে।
মোটকথা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার দিলেও জটিলতা ও হয়রানির কারণে এনআইডি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এনআইডি-ই যদি মূল শর্ত হয়, তাহলে সব প্রবাসী নাগরিককে আগে এনআইডি দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং এটির উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল। এখন অবস্থাটা এমন—ঘোড়ার আগেই গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, দৈনিক আমার দেশ

‘নিরপেক্ষতা’ আর নিরপেক্ষ নেই। এর পক্ষ-বিপক্ষ সৃষ্টি হয়েছে। ডালপালা, শাখা-প্রশাখা গজিয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নিরপেক্ষ শব্দটি একটি কূটাভাস। কূটাভাস শব্দটিও পরিচিত নয়। সে জন্য আরো বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
২১ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (মাগা) বা যুক্তরাষ্ট্রকে আবার মহান করার স্লোগান তার নির্বাচনি প্রচারণায় একটি বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছিল। রিপাবলিকান পার্টির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশটির শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণির লোকজনকেও ট্রাম্পের এই রাজনৈতিক স্লোগান যথেষ্ট উজ্জীবিত
২১ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে প্রায়ই দেখা যায়, প্রগতিশীল রাজনীতি হিসেবে নিজেদের দাবি করা বামপন্থি রাজনীতিবিদ ও দলগুলো জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নানা ইস্যুতে নানা কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসে, সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে সর্বজনীন মানবাধিকার এবং এ ধরনের ইস্যুতে সরব হয়।
২১ ঘণ্টা আগে
গণমাধ্যমে ইসলামবিদ্বেষ হচ্ছে ইসলাম সম্পর্কে এমন নেতিবাচক, বিকৃত ও শত্রুতাপূর্ণ উপস্থাপন, যা ভয়, ঘৃণা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। গণমাধ্যমের এই বিদ্বেষ সরাসরি ‘ইসলাম খারাপ’ বলার মাধ্যমে নয়; বরং প্রশ্নের ভাষা ও প্রেক্ষাপটে মুসলিমসমাজকে সন্দেহের চোখে দেখানো হয়।
২ দিন আগে