এলাহী নেওয়াজ খান
মার্চ ফর গাজা। অসাধারণ একটা ঘটনা ঘটে গেল ঢাকায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং তার চারপাশজুড়ে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ। হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা। লাখ লাখ কণ্ঠে গগনবিদারী সেই স্লোগান, নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার। সম্মিলিত কণ্ঠে বিশ্ববাসীকে তারা জানিয়ে দিল স্বাধীন করো ফিলিস্তিন।
এটা ছিল ১২ এপ্রিলের ঘটনা। দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে চিরকাল। কারণ ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের জন্য এত বড় সমাবেশ আর কখনোই বাংলাদেশে হয়নি। অতীতে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ছোট ছোট প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে। কিন্তু সব দল-মত ভেদাভেদ ভুলে একই মঞ্চে একই স্রোতোধারায় একাকার হয়ে এমন ঐক্যের দৃষ্টান্ত আর কখনো দেখা যায়নি। রাস্তায় মানুষের ঢল দেখে একজন অন্যজনকে বলছিলেন, এ যেন ৫ আগস্টের সেই দিনটির মতো।
প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের উদ্যোগে গাজায় ইসরাইলে গণহত্যার বিরুদ্ধে এই মহাসমাবেশ একদিকে যেমন জাতীয় ঐক্যের প্রতিফলন ঘটিয়েছে; তেমনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের দৃঢ় চেতনার বহিঃপ্রকাশও বটে। সাধারণ মানুষ এটা জানিয়ে দিয়ে গেল, শুধু ফিলিস্তিন নয়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যেকোনো অপশক্তিকে রুখে দিতে তারা সদা প্রস্তুত ও ঐক্যবদ্ধ।
ফিলিস্তিনের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের জন্য বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা নতুন কিছু নয়। অতীতে এ দেশের মানুষ ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য জীবন পর্যন্ত দিয়েছে। আশির দশকের সেই দিনগুলোর কথা হয়তো অনেকের মনে আছে। সে সময় ইসরাইল অত্যাধুনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি যুবকদের পাথর ছুড়ে লড়াই করার সেই দৃশ্য টেলিভিশনের পর্দায় কে না দেখেছে। তখন বাংলাদেশের হাজার হাজার তরুণ স্থলপথে পাঁচ হাজারের অধিক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দখলদারদের ইসরাইলি সৈনিকদের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। তাদের অনেকে যুদ্ধ করতে করতে যুদ্ধক্ষেত্রেই শহীদ হয়েছিলেন। অনেকে ইসরাইলের হাতে বন্দি হয়ে অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। তাদের সংখ্যা প্রায় ৫০০ ছিল। সেসব অকুতোভয় সাহসী যুবকদের খবর কে রাখে! সে সময় সেই যোদ্ধাদের অনেকের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, তাদের যুদ্ধের কাহিনিও লিখেছি। তাদের কজন আজ বেঁচে আছেন জানি না।
তখন আট হাজারেরও বেশি যুবক ফিলিস্তিনে গিয়েছিল ইসরাইলি বর্বর বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। তবে সেই যোদ্ধাদের অনেকেরই মূল লক্ষ্য ছিল আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করা। অর্থাৎ পুনরুদ্ধার করা। সেই সঙ্গে তারা ইসরাইল রাষ্ট্রকেও পরাজিত করতে চেয়েছিল। এরা ছিল সেসব তরুণ, যাদের অনেকে ৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। এসব তরুণ যুগে যুগে আবির্ভূত হয় সব অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। যেমন করে ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে বিজয় হয়েছিল। কেমন করে এই তরুণরাই জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটিয়েছিল। ‘মার্চ ফর গাজার’ সেই ঐতিহাসিক সমাবেশেও তরুণদের সরব উপস্থিতি নগরবাসীকে বিমোহিত করেছে।
এই প্রথম একটি মহাসমাবেশে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি দেশের বিখ্যাত আলেম ও পত্রিকার সম্পাদকদের উপস্থিতি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনন্য একটা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। বিশেষ করে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান গাজায় ইসরাইলে গণহত্যার বিরুদ্ধে তার অবস্থান জানান দিয়ে এটা প্রমাণ করেছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সব মানুষের সমান অধিকার। সাংবাদিকরাও এর থেকে পিছিয়ে থাকতে পারে না।
পরিশেষে যে বিষয়টি দেশবাসীকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে, তা হচ্ছে, মঞ্চ উপবিষ্ট সব দল ও মতের নেতাদের অপূর্ব সংহতি প্রকাশ। তাই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন হচ্ছে, ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য যদি এ দেশের রাজনীতিবিদ আলেম-ওলামা ও বিভিন্ন পেশার মানুষ যদি এক মঞ্চে একত্র হতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের জনগণের ভবিষ্যতের জন্য কিংবা বাংলাদেশের কল্যাণের জন্য এভাবে কেন সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না?
সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড পামার স্টোন (Lord Palmer Stone, 1784-1865 পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী) বলেছিলেন, ‘Great Britain doesn’t have permanent friend or foe, but has got permanent interest.’ পররাষ্ট্রনীতি-বিশারদরা এ উক্তিকে রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক বিন্যাসের নিয়ামক মনে করেন।
১৫ ঘণ্টা আগেসংকটকালে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারায় আমাদের জাতীয় জীবনে যেমন অনেক বিপর্যয় নেমে এসেছে, তেমনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে আমরা রক্ষাও পেয়েছি। আবার শক্তির মদমত্ততা, রাগ ও প্রতিশোধের স্পৃহা থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো কতটা ভুল হতে পারে, তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
১৫ ঘণ্টা আগেএকদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসনের মাধ্যমে বিরোধী মত দমন, প্রশাসনকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করাই হয়ে উঠেছিল শাসনব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য। অথচ গণতন্ত্রের প্রকৃত অর্থ হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও জনস্বার্থে নীতিনির্ধার
১৫ ঘণ্টা আগেযেকোনো জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, সামাজিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে গণিকাবৃত্তিকে বৈধ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। গণমানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে এমন প্রস্তাব উত্থা
১৬ ঘণ্টা আগে