ড. মো. খলিলুর রহমান
চাল আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য। এখনো অনেকেই দিনে তিনবেলা ভাত খেয়ে থাকেন। তার পরিমাণও কম নয়। খাদ্যাভ্যাস আমাদের দেশে এরূপ যে, ভাত হলেই চলে। তরকারির দিকে বেশি খেয়াল রাখে না। সীমিত আয়ের মানুষের অনেকেই লবণ, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ সঙ্গে ডাল হলেই সকালের নাশতা সেরে ফেলেন। যদিও সকালে ভাজি, রুটির প্রচলনও আছে অনেক। একজন শিশু (৩ বছর বয়স) ৮০০-৯০০ কিলো ক্যালরি বা ২০০-২২৫ গ্রাম চাল দিনে খেয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক লোকের দৈনিক ২ হাজার ৫০০ কিলো ক্যালরি দরকার হয়, যা প্রায় ৬৫০ গ্রাম চালের সমান। চালের ১০০ গ্রামে ৩৫০ কিলো ক্যালরি পাওয়া যায়, সঙ্গে ডাল, মাছ, তরিতরকারি, শাকসবজি ও মাংস খেয়ে থাকেন। তবে বাংলাদেশের লোক খুব বেশি ভাত খান, জাপানে সবাই তিনবেলাই ভাত খান। কিন্তু প্রতিবার এক পেয়ালা করে সঙ্গে স্যুপ থাকে, থাকে একটি গরম ডিম ও ফলমূল। এসব দেশে মিয়ানমারসহ লোকসংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম থাকায় খাবারের অভাব হয় না। মিয়ানমারের চাল উৎপাদন দেশের কৃষিজমির ৪৩ ভাগ, যা এদিক দিয়ে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৬৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন হেক্টরের জমির মধ্যে ১২ দশমিক ৮ মিলিয়ন চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। শুধু ২০১৯ সালে মিয়ানমারে ১৩ দশমিক ৩০০ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
ধানের জন্য অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষি সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে মিয়ানমার নিজেকে একটি প্রধান ধান উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারত থেকে প্রথম চালানের পর মিয়ানমার থেকে দ্বিতীয় চালান আসছে, দেখা যাক এর গুণগতমান কী হয়। ২২ হাজার টন আতব চাল নিয়ে এমভি স্টার জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসেছে। জাহাজে যে চাল এসেছে, তা আতব চাল। আতব চাল ও সেদ্ধ চালের মধ্যে গুণগত পার্থক্য আছে। চট্টগ্রাম কক্সবাজার, রাঙামাটি এলাকায় সাধারণ আতব চালের ভাতের প্রচলন বেশি। তবে সেদ্ধ চালের ও ঢেঁকিছাঁটা চালের পুষ্টিগুণ বেশি হয়। সমগ্র বাংলাদেশে আতব চাল পিঠাপুলির জন্য খাওয়া হয়। বিদেশ থেকে ধান হিসেবে প্রাপ্ত চালের মান খারাপ থাকে। কেনা চালের মান নিশ্চিতভাবে ভালো মানের হবে।
নিজেদের সমস্যা ছাড়া বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা। হাসিনা সরকার কার ইঙ্গিতে বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, তা শুধু তিনিই জানেন। তবে সব কারণটা মানবিক নয়, পুরো দেশের বিশেষ করে কক্সবাজারের পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক করে ফেলেছে তারা। শস্যসবুজ বিপ্লবের বারোটা বাজিয়েছে শরণার্থীরা। গাছপালা, শস্যক্ষেত, পাহাড়ি এলাকা তারা নষ্ট করে দিচ্ছে। রিলিফের ওপরে তারা ভরসা করে চলে আর অনেক অনৈতিক কাজ করে থাকে। একেক পরিবারের অনেক সদস্য-সদস্যা। নিজ দেশ থেকে সামরিক জান্তার অত্যাচারে, গুলির ভয়ে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে এ দেশে চলে এসেছে। সামরিক জান্তা ইচ্ছা করেই তাদের অত্যাচার করে তাড়িয়ে দিয়েছে। যখন রিলিফ দেওয়া শুরু হয়েছে, তখন তারা তাদের আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে।
এখানে তারা অনেক অনৈতিক কাজ করে, মারামারি, হত্যাযজ্ঞের সঙ্গেও তারা যুক্ত হয়। দিন দিন তাদের সংখ্যা বাড়ছে, তারা ফ্যামিলি নিয়ন্ত্রণ করে না। কবে নিজ দেশে ফিরে যাবে, তারও কোনো ইয়ত্তা নেই। এর আগেও তিন-চার লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সরকার গ্রহণ করেনি। সব মিলিয়ে এখন প্রায় ১৪-১৫ লাখ রোহিঙ্গাদের ভাড় এ দেশকে বহন করতে হচ্ছে। এমনিতেই বাংলাদেশ একটি সমস্যাসংকুল, অল্প আয়ের দেশ, যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায় বছরই শস্যহানি ঘটে। উজানের নদীগুলো থেকে পানির স্রোতে বন্যা হয় প্রতিবছরই। এসব কারণে এ দেশের সমস্যা রোহিঙ্গারা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, তা ছাড়া রোহিঙ্গাদের বিশেষ করে যুবকদের ব্যবহার খুবই খারাপ। দাতাদের সহায়তা না পেলে এত বিপুল জনগোষ্ঠীর ভাড় বাংলাদেশ বহন করবে কীভাবে। এখনই নতুন অফিস ও সাইনবোর্ডে কক্সবাজার জেলা আরো সয়লাব হয়ে চাচ্ছে। যাহোক, বাংলাদেশে চাল মিয়ানমার থেকে গোডাউনে জায়গা করে নিয়েছে। আগে মুদ্রা (কিয়েট) বেশ ভালো ছিল, বর্তমানে কিয়েটের কোনো মূল্যই নেই, এক ডলার=ছয় হাজার কিয়েট, বার্মার (মিয়ানমার) আয়তন ৬৭৬.৫৫ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা ৫ কোটি ১৩ লাখ, প্রতিবছর তাদের জনসংখ্যা আরো কমে যাচ্ছে।
এদিকে দেড় মাস ধরে আমনের ভরা মৌসুমেও সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। এক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের চালে কেজিপ্রতি ৪-৮ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। ব্যাপারটি খুব দুঃখজনক ও অমানবিক। আসলে আমাদের দেশটা তো এখনো দরিদ্র। ব্যবসায়ীদের অমানবিক হওয়া সাজে না। তেমনই ঘটেছে গোল আলু ও চিনির বাজারে। তেল, মসলা, ডলার ও স্বর্ণের বাজারেও। এর আগে চলতি মাসের দুই দফায় আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫৭ হাজার টন চাল আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। এরই মধ্যে পাকিস্তান থেকে আরেকটি চালান প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
১৯৯৮ সালে আমাদের দেশের খাদ্য ঘাটতির সময় সরকারকে বিদেশি সাহায্যের জন্য হাত পাততে হয়েছে। তা করা হয়েছিল উপযুক্ত সময় পার করে অসময়ে। কারণ পরিস্থিতি তখন ভয়াবহ। কেন, তার সরকার ভালো জানে, তখনকার সময়ে আমাদের খাদ্য ঘাটতি ছিল ২০-০৯-১৯৯৮ সালে ৪৩ লাখ টন। তখন ভারতেও বন্যা, চীনেও সেবার বন্যা হয়েছে। তখনকার সরকার বার্মা ও থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানি করেছে, তাদের ব্যবসায়ী মনোবৃত্তি ভালো। আর আমাদের সাবেক সরকারি সিদ্ধান্ত ছিল শুধু ভারত থেকে চাল আমদানি করা হবে। সুযোগ পেয়ে যান তারা, তারা জানেন কীভাবে তাদের দেশের অখাদ্য পচা চাল, চালবাজি করে বাংলাদেশে পুশইন করেছিল। সে চাল বন্যাকবলিত লোকদের না খাইয়ে নগদ অর্থের বিনিময়ে সুকৌশলে বাংলাদেশে বিক্রি করেছে। সে চাল এতই পচা ছিল, খাবার অনুপযুক্ত, সাত হাজার টন চাল সমুদ্রে নিক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুধু কি তাই, পচা বস্তার সঙ্গে এসেছিল শত শত ইঁদুর। চালগুলো এত নিকৃষ্ট ও পচা ছিল, তা গরু-ছাগলকেও খাওয়ানোর অযোগ্য। পচা চাল, পচে গুঁড়ো হয়ে যাওয়া হলুদ চাল, কাঁকর মেশানো চাল, কুচি পাথর মেশানো চাল খেলে তা অবশ্যই পুষ্টিমানে চরম হুমকি, দুর্গন্ধযুক্ত চাল কোয়ারেন্টাইনে মান পরীক্ষা করার অনুপযুক্ত।
আশা করি মিয়ানমার থেকে যে চাল আসবে, সেগুলো ভালো হবে। কারণ সেগুলোর ভাত তাদের লোকজনও এ দেশে খাবে। সাধারণ এক কেজি চালে ৩ হাজার ৫০০ কিলো ক্যালরি, ৬ গ্রাম আমিষ, ১২০-১৩০ মিলি লিটার পানি, ১০-১৫ গ্রাম ফ্যাট, ৭০০-৭৫০ শর্করা, ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও বি১, বি২ ভিটামি খাদ্য উপাদান বিদ্যমান। পচা চালে অপকারিতা অনেক, পেটফাঁপা, খাওয়ার ইচ্ছা থাকে না, পচা চালে ছত্রাক জন্মেÑএসপারজিলাস ফ্রেভার্স নামক ছত্রাক জন্মে, যা আলফাটক্সিন নামক বিষ নিঃসৃত করে। কাজেই সাবধান থাকতে হবে পচা চাল যাতে কেউ না খায়। বাংলাদেশ জনসংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও সামরিক শক্তিতে মিয়ানমার শক্তিশালী। বিশ্বে তারা ৩১তম, বাংলাদেশ ৫৭তম। অবস্থা সংকটময় মিয়ানমারের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। গৃহযুদ্ধ বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি, ২০২১ সালে মিয়ানমারে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায়। বর্তমানে অর্থনীতি রীতিমতো খাবিখাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে মানুষের আয় কমেছে দিন দিন। এ অবস্থায় চাল বিক্রি করে কতটা মেকআপ দেবে সেখানকার সামরিক জান্তা। মিয়ানমারে এখন বিশৃঙ্খলা চলছে।
লেখক : সাবেক প্রফেসর ও চেয়ারম্যান
প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও
প্রতিষ্ঠাতা নিউরোসায়েন্সেস রিসার্চ সেন্টার অব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
চাল আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য। এখনো অনেকেই দিনে তিনবেলা ভাত খেয়ে থাকেন। তার পরিমাণও কম নয়। খাদ্যাভ্যাস আমাদের দেশে এরূপ যে, ভাত হলেই চলে। তরকারির দিকে বেশি খেয়াল রাখে না। সীমিত আয়ের মানুষের অনেকেই লবণ, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ সঙ্গে ডাল হলেই সকালের নাশতা সেরে ফেলেন। যদিও সকালে ভাজি, রুটির প্রচলনও আছে অনেক। একজন শিশু (৩ বছর বয়স) ৮০০-৯০০ কিলো ক্যালরি বা ২০০-২২৫ গ্রাম চাল দিনে খেয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক লোকের দৈনিক ২ হাজার ৫০০ কিলো ক্যালরি দরকার হয়, যা প্রায় ৬৫০ গ্রাম চালের সমান। চালের ১০০ গ্রামে ৩৫০ কিলো ক্যালরি পাওয়া যায়, সঙ্গে ডাল, মাছ, তরিতরকারি, শাকসবজি ও মাংস খেয়ে থাকেন। তবে বাংলাদেশের লোক খুব বেশি ভাত খান, জাপানে সবাই তিনবেলাই ভাত খান। কিন্তু প্রতিবার এক পেয়ালা করে সঙ্গে স্যুপ থাকে, থাকে একটি গরম ডিম ও ফলমূল। এসব দেশে মিয়ানমারসহ লোকসংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম থাকায় খাবারের অভাব হয় না। মিয়ানমারের চাল উৎপাদন দেশের কৃষিজমির ৪৩ ভাগ, যা এদিক দিয়ে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৬৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন হেক্টরের জমির মধ্যে ১২ দশমিক ৮ মিলিয়ন চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। শুধু ২০১৯ সালে মিয়ানমারে ১৩ দশমিক ৩০০ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
ধানের জন্য অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষি সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে মিয়ানমার নিজেকে একটি প্রধান ধান উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারত থেকে প্রথম চালানের পর মিয়ানমার থেকে দ্বিতীয় চালান আসছে, দেখা যাক এর গুণগতমান কী হয়। ২২ হাজার টন আতব চাল নিয়ে এমভি স্টার জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসেছে। জাহাজে যে চাল এসেছে, তা আতব চাল। আতব চাল ও সেদ্ধ চালের মধ্যে গুণগত পার্থক্য আছে। চট্টগ্রাম কক্সবাজার, রাঙামাটি এলাকায় সাধারণ আতব চালের ভাতের প্রচলন বেশি। তবে সেদ্ধ চালের ও ঢেঁকিছাঁটা চালের পুষ্টিগুণ বেশি হয়। সমগ্র বাংলাদেশে আতব চাল পিঠাপুলির জন্য খাওয়া হয়। বিদেশ থেকে ধান হিসেবে প্রাপ্ত চালের মান খারাপ থাকে। কেনা চালের মান নিশ্চিতভাবে ভালো মানের হবে।
নিজেদের সমস্যা ছাড়া বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা। হাসিনা সরকার কার ইঙ্গিতে বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, তা শুধু তিনিই জানেন। তবে সব কারণটা মানবিক নয়, পুরো দেশের বিশেষ করে কক্সবাজারের পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক করে ফেলেছে তারা। শস্যসবুজ বিপ্লবের বারোটা বাজিয়েছে শরণার্থীরা। গাছপালা, শস্যক্ষেত, পাহাড়ি এলাকা তারা নষ্ট করে দিচ্ছে। রিলিফের ওপরে তারা ভরসা করে চলে আর অনেক অনৈতিক কাজ করে থাকে। একেক পরিবারের অনেক সদস্য-সদস্যা। নিজ দেশ থেকে সামরিক জান্তার অত্যাচারে, গুলির ভয়ে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে এ দেশে চলে এসেছে। সামরিক জান্তা ইচ্ছা করেই তাদের অত্যাচার করে তাড়িয়ে দিয়েছে। যখন রিলিফ দেওয়া শুরু হয়েছে, তখন তারা তাদের আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে।
এখানে তারা অনেক অনৈতিক কাজ করে, মারামারি, হত্যাযজ্ঞের সঙ্গেও তারা যুক্ত হয়। দিন দিন তাদের সংখ্যা বাড়ছে, তারা ফ্যামিলি নিয়ন্ত্রণ করে না। কবে নিজ দেশে ফিরে যাবে, তারও কোনো ইয়ত্তা নেই। এর আগেও তিন-চার লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সরকার গ্রহণ করেনি। সব মিলিয়ে এখন প্রায় ১৪-১৫ লাখ রোহিঙ্গাদের ভাড় এ দেশকে বহন করতে হচ্ছে। এমনিতেই বাংলাদেশ একটি সমস্যাসংকুল, অল্প আয়ের দেশ, যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায় বছরই শস্যহানি ঘটে। উজানের নদীগুলো থেকে পানির স্রোতে বন্যা হয় প্রতিবছরই। এসব কারণে এ দেশের সমস্যা রোহিঙ্গারা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, তা ছাড়া রোহিঙ্গাদের বিশেষ করে যুবকদের ব্যবহার খুবই খারাপ। দাতাদের সহায়তা না পেলে এত বিপুল জনগোষ্ঠীর ভাড় বাংলাদেশ বহন করবে কীভাবে। এখনই নতুন অফিস ও সাইনবোর্ডে কক্সবাজার জেলা আরো সয়লাব হয়ে চাচ্ছে। যাহোক, বাংলাদেশে চাল মিয়ানমার থেকে গোডাউনে জায়গা করে নিয়েছে। আগে মুদ্রা (কিয়েট) বেশ ভালো ছিল, বর্তমানে কিয়েটের কোনো মূল্যই নেই, এক ডলার=ছয় হাজার কিয়েট, বার্মার (মিয়ানমার) আয়তন ৬৭৬.৫৫ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা ৫ কোটি ১৩ লাখ, প্রতিবছর তাদের জনসংখ্যা আরো কমে যাচ্ছে।
এদিকে দেড় মাস ধরে আমনের ভরা মৌসুমেও সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। এক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের চালে কেজিপ্রতি ৪-৮ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। ব্যাপারটি খুব দুঃখজনক ও অমানবিক। আসলে আমাদের দেশটা তো এখনো দরিদ্র। ব্যবসায়ীদের অমানবিক হওয়া সাজে না। তেমনই ঘটেছে গোল আলু ও চিনির বাজারে। তেল, মসলা, ডলার ও স্বর্ণের বাজারেও। এর আগে চলতি মাসের দুই দফায় আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫৭ হাজার টন চাল আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। এরই মধ্যে পাকিস্তান থেকে আরেকটি চালান প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
১৯৯৮ সালে আমাদের দেশের খাদ্য ঘাটতির সময় সরকারকে বিদেশি সাহায্যের জন্য হাত পাততে হয়েছে। তা করা হয়েছিল উপযুক্ত সময় পার করে অসময়ে। কারণ পরিস্থিতি তখন ভয়াবহ। কেন, তার সরকার ভালো জানে, তখনকার সময়ে আমাদের খাদ্য ঘাটতি ছিল ২০-০৯-১৯৯৮ সালে ৪৩ লাখ টন। তখন ভারতেও বন্যা, চীনেও সেবার বন্যা হয়েছে। তখনকার সরকার বার্মা ও থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানি করেছে, তাদের ব্যবসায়ী মনোবৃত্তি ভালো। আর আমাদের সাবেক সরকারি সিদ্ধান্ত ছিল শুধু ভারত থেকে চাল আমদানি করা হবে। সুযোগ পেয়ে যান তারা, তারা জানেন কীভাবে তাদের দেশের অখাদ্য পচা চাল, চালবাজি করে বাংলাদেশে পুশইন করেছিল। সে চাল বন্যাকবলিত লোকদের না খাইয়ে নগদ অর্থের বিনিময়ে সুকৌশলে বাংলাদেশে বিক্রি করেছে। সে চাল এতই পচা ছিল, খাবার অনুপযুক্ত, সাত হাজার টন চাল সমুদ্রে নিক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুধু কি তাই, পচা বস্তার সঙ্গে এসেছিল শত শত ইঁদুর। চালগুলো এত নিকৃষ্ট ও পচা ছিল, তা গরু-ছাগলকেও খাওয়ানোর অযোগ্য। পচা চাল, পচে গুঁড়ো হয়ে যাওয়া হলুদ চাল, কাঁকর মেশানো চাল, কুচি পাথর মেশানো চাল খেলে তা অবশ্যই পুষ্টিমানে চরম হুমকি, দুর্গন্ধযুক্ত চাল কোয়ারেন্টাইনে মান পরীক্ষা করার অনুপযুক্ত।
আশা করি মিয়ানমার থেকে যে চাল আসবে, সেগুলো ভালো হবে। কারণ সেগুলোর ভাত তাদের লোকজনও এ দেশে খাবে। সাধারণ এক কেজি চালে ৩ হাজার ৫০০ কিলো ক্যালরি, ৬ গ্রাম আমিষ, ১২০-১৩০ মিলি লিটার পানি, ১০-১৫ গ্রাম ফ্যাট, ৭০০-৭৫০ শর্করা, ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও বি১, বি২ ভিটামি খাদ্য উপাদান বিদ্যমান। পচা চালে অপকারিতা অনেক, পেটফাঁপা, খাওয়ার ইচ্ছা থাকে না, পচা চালে ছত্রাক জন্মেÑএসপারজিলাস ফ্রেভার্স নামক ছত্রাক জন্মে, যা আলফাটক্সিন নামক বিষ নিঃসৃত করে। কাজেই সাবধান থাকতে হবে পচা চাল যাতে কেউ না খায়। বাংলাদেশ জনসংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও সামরিক শক্তিতে মিয়ানমার শক্তিশালী। বিশ্বে তারা ৩১তম, বাংলাদেশ ৫৭তম। অবস্থা সংকটময় মিয়ানমারের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। গৃহযুদ্ধ বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি, ২০২১ সালে মিয়ানমারে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায়। বর্তমানে অর্থনীতি রীতিমতো খাবিখাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে মানুষের আয় কমেছে দিন দিন। এ অবস্থায় চাল বিক্রি করে কতটা মেকআপ দেবে সেখানকার সামরিক জান্তা। মিয়ানমারে এখন বিশৃঙ্খলা চলছে।
লেখক : সাবেক প্রফেসর ও চেয়ারম্যান
প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও
প্রতিষ্ঠাতা নিউরোসায়েন্সেস রিসার্চ সেন্টার অব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বেশ কিছুদিন হলো ভারতের সেনাপ্রধান বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি অযাচিত মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচিত সরকার এলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হবে। এ সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি ওঠে, তা হলো-একটি রাষ্ট্রের সেনাপ্রধান কি অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে কথা বলতে পারেন?
১৫ ঘণ্টা আগেপ্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকোনমিস্টের তালিকায় ২০২৪ সালে বর্ষসেরা দেশ হয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় স্থানে ছিল সিরিয়া। সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ এবং বাংলাদেশের শেখ হাসিনা, এই দুই কুখ্যাত শাসকের পতনের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য আছে।
১৮ ঘণ্টা আগেগত ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার দিবাগত রাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে গেল। বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী ও স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা ভেঙে দিয়েছে ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি।
১৮ ঘণ্টা আগে২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে। পরে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি উঠেছিল। কিন্তু সেই সংস্কার কীভাবে হবে, কারা করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল।
১৯ ঘণ্টা আগে