Ad T1

নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ

বন্ধুসুলভ পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে ইউরোপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২: ২৫
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈশ্বিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থাকে নতুন করে গড়ে তুলতে চান। লক্ষ্য পূরণে বিশ্বব্যাপী শুল্কারোপকে বেছে নিয়েছেন তিনি। এর বিপরীতে ইউরোপ কঠিনভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থা যা-ই হোক না কেন, তা যেন এ মহাদেশকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়।
বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মুক্ত অর্থনীতির অধিকারী হিসেবে ইউরোপে বাণিজ্যের নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন রয়েছে, যা খুব কমই পরিবর্তিত হয়। ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো তাদের গাড়ি, ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য ও যন্ত্রপাতি রপ্তানি করে মুনাফা অর্জন করে। অপরদিকে ইউরোপীয় ভোক্তারা আমেরিকান সার্চ ইঞ্জিন ও জ্বালানি থেকে লাভবান হয়।
ইউরোপের এ কার্যকারিতা এখনো ফুরিয়ে যায়নি।
ইউরোপীয় দেশগুলোর সহযোগিতা সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিচালনাকারী কমিশনের প্রধান উরসুলা ভর ডার লিয়েন গত কয়েক সপ্তাহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ ও বৈঠকে সময় কাটিয়েছেন। তিনি ও তার সহকর্মীরা বিদ্যমান বিভিন্ন বাণিজ্যিক চুক্তি গভীর করা এবং নতুন চুক্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যকার পারস্পরিক বাধাবিপত্তি দূর করতে তারা আলোচনা করেছেন।
ভন ডার লিয়েন ও তার সহকর্মীদের মতে, আমেরিকার বাজার অনেক বড় কিন্তু সেটিই শেষ কথা নয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ট্রেড কমিশনার মারোস সেফকোভিচ বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যে আমেরিকার দখলে রয়েছে মাত্র ১৩ ভাগ। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বের বাকি ৮৭ ভাগ বাণিজ্য রক্ষা করা এবং বাকিদের জন্য বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখা।
তবে সাফল্য এক্ষেত্রে এখনো সুদূরপরাহত। আমেরিকা এখনো বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং ইউরোপে সামরিক প্রযুক্তি ও নেতৃত্বের কৌশলগত জোগানদাতা। এ বিষয়টি রাতারাতি পরিবর্তনের বাস্তব কোনো আশা নেই।
তবে পরিবর্তনই একমাত্র বিবেচ্য বিষয় নয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন ভন ডার লিয়েন।
তিনি বলেন, ভালো সংকটকে হেলায় হারানোর সুযোগ নেই।
ইউরোপ স্পষ্ট করেছে তারা আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। মারোস সেফকোভিচ এরইমধ্যে কয়েক দফা ওয়াশিংটন সফর করেছেন এবং আগামী সোমবার আবার আমেরিকা সফরে যাচ্ছেন।
শুক্রবার ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র ওলফ গিল জানিয়েছেন, এ সফরের মূল উদ্দেশ্য দুই পক্ষেরই সমানভাবে লাভবান হওয়া।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন চাচ্ছে নিজেদের শিল্পপণ্যের ওপর শুল্ক কর্তন ও আমেরিকার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস কেনা বাড়ানো। তবে যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়, সংস্থাটি পাল্টা প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিয়েছে। একইসঙ্গে নতুন বন্ধু তৈরির কৌশলও হাতে নিচ্ছে ইউরোপ।
ট্রাম্পের তৃতীয় দফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারণার মধ্যেই অন্য অংশীদারদের সঙ্গে বাণিজ্যের উন্নতির চেষ্টা শুরু করে ইউরোপ। মেক্সিকো, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা আলোচনা করেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যের জন্য আলোচনা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়া চলতি সপ্তাহে কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির সঙ্গেও কথা বলেন ভন ডার লিয়েন।
তবে ইউরোপের মূল কৌশল স্পষ্ট, তারা আমেরিকার সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে চাচ্ছে। একইসঙ্গে ক্রমেই বিশ্বের পরিবর্তিত হওয়ার বিষয়টি তারা স্বীকৃতি দিয়েছে।
বাস্তবতা হলো, ইউরোপ আমেরিকার সহযোগিতার ওপর শুধু বাণিজ্যিক কারণেই নির্ভরশীল নয়। ইউক্রেনে যুদ্ধ ও ন্যাটোর চুক্তির কারণে ইউরোপ-আমেরিকার কৌশলগত সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানের জন্য নিয়মনীতি নতুন করে তৈরির বিষয়টি গ্রহণ করেছেন ইউরোপীয় নেতারা।
Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত