মাহমুদুল হাসান
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপি অবাধ রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম পেলেও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলটি আজ গভীর সংকটে রয়েছে। আধুনিক রাজনীতির উপযোগিতা এবং দলীয় আদর্শগত অবস্থানের দুর্বলতার কারণে তরুণ ও সাধারণ ভোটারদের মনে স্থান করে নেওয়ার জায়গায় দলটি অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। বিএনপির বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য গভীর বিশ্লেষণ প্রয়োজন, কারণ এই সংকট শুধু তাদের ক্ষমতায় ফেরা নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে দলের ভেতরে একটি কার্যকর থিংক ট্যাংকের অনুপস্থিতি। আধুনিক রাজনীতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং রাজনৈতিক রণকৌশল নির্ধারণে থিংক ট্যাংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পতিত আওয়ামী লীগ যেটা অর্থ খরচ করে হলেও রক্ষা করে চলত কিংবা জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দলগুলোয় এমন প্রাতিষ্ঠানিক পরামর্শদাতার ভূমিকা রয়েছে, যা তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাহায্য করে। কিন্তু বিএনপির কোনো থিংক ট্যাংক না থাকায় তারা আধুনিক রাজনীতির চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। যেটা দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্য-বিবৃতিতে অনেকবার স্পষ্ট হয়েছে।
দলটির আরেকটি বড় দুর্বলতা হলো মিডিয়া প্ল্যাটফরমের ঘাটতি। আধুনিক যুগে রাজনৈতিক দলের জন্য মিডিয়া একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। পতিত আওয়ামী লীগের শক্তিশালী মিডিয়া কাঠামোর কারণে তাদের অনেক অপকর্ম চাপা দিতে পেরেছিল। বিপরীতে বিএনপির কোনো শক্তিশালী মিডিয়া নেই। বিএনপির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জোরালো উপস্থিতি নেই।
বিএনপির আরেকটি বড় সমস্যা হলো তাদের সাংগঠনিক সংস্কারের অভাব। তারা দাবি করে ক্ষমতায় গিয়ে দেশ সংস্কার করবে, কিন্তু দলীয় চাঁদাবাজি এবং গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব এখনো সমাধান করতে পারেনি। এমন প্রেক্ষাপটে জনগণ কীভাবে বিশ্বাস করবে যে, তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় সৎ ও দক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারবে? নির্বাচনে নমিনেশন বাণিজ্যের মতো দুর্নীতির অভিযোগ আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জনগণ এখন সৎ, যোগ্য এবং জনকল্যাণমুখী প্রার্থীর প্রত্যাশা করে, যারা সমাজের উন্নয়ন ঘটাবে এবং স্বৈরাচারী আচরণ থেকে বিরত থাকবে।
রাজনৈতিক ব্যর্থতার পাশাপাশি, বিএনপি নেতাদের ইসলামি মূল্যবোধের প্রতি অসংবেদনশীলতা একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশের আলেম সমাজ ৫ আগস্টের ঘটনার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, কিন্তু বিএনপি নেতারা তাদের সমালোচনায় লিপ্ত হয়েছেন। এর ফলে ধর্মপ্রাণ মানুষ বিএনপিকেও ইসলামবিরোধী বলে ভাবতে শুরু করেছে। এই ইস্যুতে দলের ভেতরেও একাধিক গ্রুপিং ও কোন্দল তাদের দুর্বল করছে, যা দলীয় ঐক্যকে নষ্ট করছে।
তৃণমূলপর্যায়ে বিএনপির শক্তি থাকা সত্ত্বেও, চাঁদাবাজি ও গুন্ডামির মতো অভিযোগ সেই শক্তিকে দুর্বল করেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের মতো ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা এখন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষ সহজ, সৎ, ধার্মিক এবং দক্ষ নেতৃত্ব চায়, যা বিএনপির অনেক নেতার ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।
বিএনপি বর্তমানে অতিদ্রুত নির্বাচন আয়োজনের জন্য তৎপর হলেও, দলটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা, অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং এবং অযোগ্য প্রার্থীদের প্রাধান্য মূল সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। দ্রুততার কারণে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর প্রচারণা এবং জনসম্পৃক্ততার অভাব দলটির অবস্থানকে আরো দুর্বল করে তুলতে পারে। তা ছাড়া, ৫ আগস্ট-পরবর্তী চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য অভিযোগের কালিমা ইতোমধ্যে লেগেছে বিএনপির গায়ে, যা জনগণের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে। এ কারণে, বিএনপি কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে সক্ষম, এমন বিশ্বাস জনগণের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নির্বাচন দ্রুত হলেও, তাদের নেতিবাচক ইমেজ, সাংগঠনিক অযোগ্যতা এবং কৌশলগত পরিকল্পনার অভাব তাদের ভালো ফল অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। জনগণের আস্থা ফেরাতে তাদের সৎ, দক্ষ নেতৃত্ব এবং আধুনিক প্রচারণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
বিএনপিকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা একটি সৎ, দক্ষ, এবং জনকল্যাণমুখী দল। অন্যথায়, ক্ষমতায় ফিরলেও দেশ ও জাতিকে তারা ভালো কিছু দিতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। দেশের মানুষ এখন স্বৈরতন্ত্র, চাঁদাবাজি এবং দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি চায়। বিএনপি মানুষের এই প্রত্যাশার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে না পারলে তাদের ভবিষ্যৎ আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
লেখক : পিএইচডি গবেষক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল : [email protected]
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপি অবাধ রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম পেলেও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলটি আজ গভীর সংকটে রয়েছে। আধুনিক রাজনীতির উপযোগিতা এবং দলীয় আদর্শগত অবস্থানের দুর্বলতার কারণে তরুণ ও সাধারণ ভোটারদের মনে স্থান করে নেওয়ার জায়গায় দলটি অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। বিএনপির বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য গভীর বিশ্লেষণ প্রয়োজন, কারণ এই সংকট শুধু তাদের ক্ষমতায় ফেরা নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে দলের ভেতরে একটি কার্যকর থিংক ট্যাংকের অনুপস্থিতি। আধুনিক রাজনীতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং রাজনৈতিক রণকৌশল নির্ধারণে থিংক ট্যাংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পতিত আওয়ামী লীগ যেটা অর্থ খরচ করে হলেও রক্ষা করে চলত কিংবা জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দলগুলোয় এমন প্রাতিষ্ঠানিক পরামর্শদাতার ভূমিকা রয়েছে, যা তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাহায্য করে। কিন্তু বিএনপির কোনো থিংক ট্যাংক না থাকায় তারা আধুনিক রাজনীতির চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। যেটা দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্য-বিবৃতিতে অনেকবার স্পষ্ট হয়েছে।
দলটির আরেকটি বড় দুর্বলতা হলো মিডিয়া প্ল্যাটফরমের ঘাটতি। আধুনিক যুগে রাজনৈতিক দলের জন্য মিডিয়া একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। পতিত আওয়ামী লীগের শক্তিশালী মিডিয়া কাঠামোর কারণে তাদের অনেক অপকর্ম চাপা দিতে পেরেছিল। বিপরীতে বিএনপির কোনো শক্তিশালী মিডিয়া নেই। বিএনপির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জোরালো উপস্থিতি নেই।
বিএনপির আরেকটি বড় সমস্যা হলো তাদের সাংগঠনিক সংস্কারের অভাব। তারা দাবি করে ক্ষমতায় গিয়ে দেশ সংস্কার করবে, কিন্তু দলীয় চাঁদাবাজি এবং গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব এখনো সমাধান করতে পারেনি। এমন প্রেক্ষাপটে জনগণ কীভাবে বিশ্বাস করবে যে, তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় সৎ ও দক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারবে? নির্বাচনে নমিনেশন বাণিজ্যের মতো দুর্নীতির অভিযোগ আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জনগণ এখন সৎ, যোগ্য এবং জনকল্যাণমুখী প্রার্থীর প্রত্যাশা করে, যারা সমাজের উন্নয়ন ঘটাবে এবং স্বৈরাচারী আচরণ থেকে বিরত থাকবে।
রাজনৈতিক ব্যর্থতার পাশাপাশি, বিএনপি নেতাদের ইসলামি মূল্যবোধের প্রতি অসংবেদনশীলতা একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশের আলেম সমাজ ৫ আগস্টের ঘটনার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, কিন্তু বিএনপি নেতারা তাদের সমালোচনায় লিপ্ত হয়েছেন। এর ফলে ধর্মপ্রাণ মানুষ বিএনপিকেও ইসলামবিরোধী বলে ভাবতে শুরু করেছে। এই ইস্যুতে দলের ভেতরেও একাধিক গ্রুপিং ও কোন্দল তাদের দুর্বল করছে, যা দলীয় ঐক্যকে নষ্ট করছে।
তৃণমূলপর্যায়ে বিএনপির শক্তি থাকা সত্ত্বেও, চাঁদাবাজি ও গুন্ডামির মতো অভিযোগ সেই শক্তিকে দুর্বল করেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের মতো ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা এখন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষ সহজ, সৎ, ধার্মিক এবং দক্ষ নেতৃত্ব চায়, যা বিএনপির অনেক নেতার ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।
বিএনপি বর্তমানে অতিদ্রুত নির্বাচন আয়োজনের জন্য তৎপর হলেও, দলটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা, অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং এবং অযোগ্য প্রার্থীদের প্রাধান্য মূল সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। দ্রুততার কারণে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর প্রচারণা এবং জনসম্পৃক্ততার অভাব দলটির অবস্থানকে আরো দুর্বল করে তুলতে পারে। তা ছাড়া, ৫ আগস্ট-পরবর্তী চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য অভিযোগের কালিমা ইতোমধ্যে লেগেছে বিএনপির গায়ে, যা জনগণের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে। এ কারণে, বিএনপি কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে সক্ষম, এমন বিশ্বাস জনগণের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নির্বাচন দ্রুত হলেও, তাদের নেতিবাচক ইমেজ, সাংগঠনিক অযোগ্যতা এবং কৌশলগত পরিকল্পনার অভাব তাদের ভালো ফল অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। জনগণের আস্থা ফেরাতে তাদের সৎ, দক্ষ নেতৃত্ব এবং আধুনিক প্রচারণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
বিএনপিকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা একটি সৎ, দক্ষ, এবং জনকল্যাণমুখী দল। অন্যথায়, ক্ষমতায় ফিরলেও দেশ ও জাতিকে তারা ভালো কিছু দিতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। দেশের মানুষ এখন স্বৈরতন্ত্র, চাঁদাবাজি এবং দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি চায়। বিএনপি মানুষের এই প্রত্যাশার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে না পারলে তাদের ভবিষ্যৎ আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
লেখক : পিএইচডি গবেষক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল : [email protected]
জুলহাস যা তৈরি করেছেন, তা মূলত একটি বড় আকারের খেলনা। জুলহাসের এই প্রতিভাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে আমরা ভাবতে পারি। কিন্তু তাকে নিয়ে আমরা অনেকেই যে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি, তা রীতিমতো ভয়ংকর!
৪ মিনিট আগেএকটি দেশের গণমাধ্যম তার চেতনার দর্পণ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু যখন সেই দর্পণে প্রতিবিম্বিত হয় অন্য রাষ্ট্রের স্বার্থ, তখন গণমাধ্যম আর স্বাধীন থাকে না, হয়ে ওঠে এক অভিনব উপনিবেশ। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা কতটা ছিল, সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ।
১ দিন আগেআমার এই লেখা যেদিন দৈনিক আমার দেশ-এ ছাপা হবে তার আগের দিন অর্থাৎ ১৩ মার্চ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশে এসে পৌঁছানোর কথা চার দিনের সফরে। আমাদের স্বাধীনতার মাসে ও পবিত্র রমজানে এদেশের বেশিরভাগ মানুষের ধর্মানুভূতির প্রতি সম্মান দেখাতে তিনি নাকি একদিন রোজা রাখবেন বলেও কথা রটেছে।
১ দিন আগেআওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি সরকারকে পরাজিত করে। সে নির্বাচনটি যে পুরোপুরি নিরপেক্ষ ছিল, তা অধিকাংশ জনগণই মনে করে না; কারণ ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদের নির্বাচনই ছিল পুরোপুরি সুষ্ঠু নির্বাচন। সে নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে, যে সত্য সর্বজনস্বীকৃত।
১ দিন আগে