
রনি পি সাসমিতা

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত সংবাদ দেখা যাচ্ছে, ভারতে মুসলিমরা তাদের ধর্মবিশ্বাসের কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই খবরগুলো দুঃখজনক একটা বাস্তবতা সামনে এনেছে। ভারতের গণতন্ত্র তাদের অন্তর্নিহিত মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছে। এখন আর এটি বলার উপায় নেই যে, এই ঘটনাগুলো বিরল বিচ্ছিন্ন ঘটনা। হঠাৎ করে ঘটে গেছে। বরং এগুলোর মধ্য দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর ঘৃণার একটা প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর তার দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অধীনে এই ঘৃণার মাত্রা আরো বেড়েছে। ভারত নিজেদের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ দাবি করে। কিন্তু তাদের রাজনীতি আর সমাজে অসহিষ্ণুতার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। বিশুদ্ধ ভণ্ডামি ছাড়া এটাকে আর কিই বা বলা যায়? ভারত বিশ্বকে বৈচিত্র্যের গল্প শোনায়। কিন্তু নিজের দেশে তারা জনগণকে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই বাস্তবতায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জেগে ওঠা উচিত। তারা ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তাদের এখন এই সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
ভারতে গো-রক্ষার নামে কট্টরপন্থিদের হামলার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। গরু বহন করার দুর্বল অজুহাতে মুসলিম পুরুষদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। ১০ বছর ধরে এ ধরনের হামলা চলে আসছে। খুব কম ঘটনাতেই দোষীদের শাস্তি হয়েছে। সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের মতো আইনের কারণে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এই আইনে কিছু ধর্মের মানুষদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আর মুসলিমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বহু শহরে মুসলিমরা বিচ্ছিন্ন এলাকায় বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। ধর্মীয় পক্ষপাতিত্বের কারণে তাদের স্বাভাবিক আবাসিক এলাকায় ঘরবাড়িতে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। এর সবকিছু থেকে একটা জিনিসই পরিষ্কার বোঝা যায়। সেটা হলো, ভারতের গণতন্ত্র কিছু নির্দিষ্ট মানুষের জন্য, সবার জন্য নয়।
এই প্রবণতাটা উদ্বেগজনক। কারণ ভারতীয় নেতাদের গোচরেই এগুলো ঘটছে। তারপরও তারা এগুলো অগ্রাহ্য করছেন বা এগুলোকে ছোট করে দেখছেন। মোদি ঐক্য আর প্রবৃদ্ধির গল্প শোনাচ্ছেন। কিন্তু তার সমর্থকরা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের ওপর ভিত্তি করে চাঙা হচ্ছে। মুসলিমদের তারা হুমকি বা শত্রু হিসেবে দেখছে। তার দল বিভিন্ন কথাবার্তায় সূক্ষ্ম ইঙ্গিতও দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে অনুসারীদের ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে, সংখ্যালঘুদের ক্ষতি করা দোষের কিছু নয়। মুসলিমদের ওপর হামলার তদন্তে পুলিশের মধ্যেও অনীহা রয়েছে। কর্মকর্তাদের ঘৃণা বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা তারা দেখেও দেখে না। তাদের ভণ্ডামিটা খুবই খোলামেলা। ভারত বৈশ্বিক শ্রদ্ধা পেতে চায়। কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে তাদের যেসব সংখ্যালঘু গোষ্ঠী রয়েছে, তাদেরই তারা সুরক্ষা দিতে পারে না।
সংখ্যাগরিষ্ঠদের নয়, বরং সংখ্যালঘুদের কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া হয়, সেটি দিয়েই বোঝা যায় গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী। ভারত এই পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। ব্যক্তি-স্বাধীনতা সূচকে যে বৈশ্বিক প্রতিবেদন, সেখানেও ভারতের অবস্থানের অবনতি হয়েছে। মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ করতে গেলে সংবাদপত্র আর অধিকারকর্মীরা শঙ্কিত থাকেন। কিছু আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়, তাদের জেলে পর্যন্ত পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে সত্য লুকানো হচ্ছে। সম্প্রীতির একটা মিথ্যা গল্প তারা আওড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমাজ ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছে। একটা গণতান্ত্রিক সমাজে যখন সংবাদমাধ্যমকে শুধু ইতিবাচক খবর দেখানোর জন্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তখন সেটা ভণ্ডামিতে রূপ নেয়।
মধ্যপ্রাচ্যকে অবশ্যই এদিকে মনোযোগ দিতে হবে। এই অঞ্চলের অনেক দেশই ভারতের সঙ্গে ব্যবসা জোরদার করেছে। জ্বালানি থেকে নিয়ে প্রকল্প উন্নয়ন সবই রয়েছে এর মধ্যে। কিন্তু এই সম্পর্কের একটা মাত্রা থাকা উচিত। গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের মতো গ্রুপগুলোর ক্ষমতা আছে। তারা পরিবর্তনের আহ্বান জানাতে পারে। তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো ভারতের জ্বালানি চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক না গড়ে তাদের উচিত সত্যিকারের অর্জনগুলোর দিকে নজর রাখা। তাদের দেখা উচিত, কীভাবে সেখানে ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করা হচ্ছে বা কীভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। যে সরকার তার দেশের মধ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে দিচ্ছে, তাদের কেন সাহায্য করতে হবে? যেসব দেশের ইসলামিক শিকড় রয়েছে, তাদের এগুলো মেনে নেওয়া ঠিক নয়।
তাছাড়া, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অর্থ ভারতের রাস্তাঘাট আর ভবনের পেছনেও ব্যয় হচ্ছে। ভারতের নেতারা এসব অবকাঠামোকে তাদের উদীয়মান শক্তির প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু স্ট্যাটাস অর্জনের জন্য একটা মূল্য দিতে হয়। এই অঞ্চল থেকে যে সম্পদের তহবিল যাচ্ছে, এগুলোর বিনিময়ে পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়া উচিত। এই পরিবর্তনের মধ্যে অবশ্যই সবার জন্য সমান আইন আর অধিকারের জন্য চাপ দিতে হবে। কেউ কেউ বলেন, ব্যবসায়িক সম্পর্ক শান্তি নিয়ে আসে। কিন্তু এই ধারণা এখানে কাজ করেনি। বাণিজ্য বাড়লেও ভারতে ঘৃণার বিস্তার কমেনি। অর্থ দিয়ে যদি দায়বদ্ধতার জন্য চাপ দেওয়া না যায়, তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হবে অথবা আরো অবনতির দিকে যাবে।
এখানে বৃহত্তর বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিও রয়েছে। ভারত দরিদ্র দেশগুলোকে নেতৃত্ব দিতে চায় এবং মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে মিলে টিম গড়তে চায়। অথচ নিজের দেশে তারা যেসব গল্প ছড়াচ্ছে, সেখানে মুসলিমদের হয় বিপজ্জনক অথবা বহিরাগত হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এই বিভাজনটা উপেক্ষা করা যাবে না। যে দেশ বাইরে বৈচিত্র্যের প্রশংসা করে বেড়ায় আর নিজের দেশে দেয়াল গড়ে তোলে, তারা কারো আস্থাভাজন হতে পারে না। মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা মনে করছেন, এই বিভাজন কখনো তাদের কোনো ক্ষতি করবে না। তাদের এই ভাবনাটা ভুল।
কৌশল হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উচিত সম্পদ বিক্রির ভিন্ন উপায় বের করা। সেটা করা হলে তেলের এত সহজ সুবিধা পাবে না ভারত। তেল বিক্রির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে অথবা চুক্তির শর্ত কঠিন করা হলে একটা শক্ত বার্তা যাবে। বিদেশি তেল ভারতের খুবই প্রয়োজন। এই শক্তি ভারতকে ভাবতে বাধ্য করবে। দাবি তুলতে হবে, যাতে ঘৃণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হয়। মুসলিম পবিত্র স্থাপনাগুলোর জন্য এর মাধ্যমে সুরক্ষা আরো মজবুত হবে। তাছাড়া স্থানীয় যেসব শক্তি বিচ্ছিন্নতা উসকে দিচ্ছে, তাদের অপশাসনেরও ইতি ঘটবে।
সেই সঙ্গে স্কুল ও সংস্কৃতিকেন্দ্রিক চুক্তিগুলো বন্ধ রাখা যেতে পারে, যতক্ষণ না অধিকারের প্রশ্নে ভারত সত্যিকারের অগ্রগতি দেখায়। প্রবাসী জনগোষ্ঠী এবং শিল্পকলার মাধ্যমে ভারত নিজেদের শান্তিপূর্ণ চেহারা প্রচার করেছে এবং এর মাধ্যমে তারা অনেক কিছু অর্জন করেছে। সেই প্রচারণায় তারা ঘৃণার চেহারাটা লুকিয়ে রাখে। মধ্যপ্রাচ্যের গোষ্ঠীগুলো নতুন চুক্তির আগে যদি ভারতীয় মুসলিমদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণের দাবি করে, তাহলে ভারতের শীর্ষ ব্যক্তিদের ওপর ভেতর থেকে চাপ বাড়বে।
কেউ কেউ বলেন, সম্পর্ক ছিন্ন করলে ভারত চীনের মতো শক্তিগুলোর দিকে ঝুঁকবে। অথবা এতে আঞ্চলিক শান্তি ক্ষুণ্ণ হবে। এই মতের ধারকরা ভারতের বিকল্প সম্পর্কে বেশি উচ্চ ধারণা পোষণ করছেন। প্রবৃদ্ধির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের তেল আর অর্থের বিকল্প নেই ভারতের কাছে। এই জায়গাটা অন্য কেউ এত দ্রুত পূরণ করতে পারবে না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো অবশ্যই তাদের নিজেদের শক্তির দিকে তাকাতে হবে। তাদের ছোট চিন্তা করা বন্ধ করতে হবে।
অন্যদের উদ্বেগের কারণ হলো, তারা মনে করছেন, এ ধরনের দাবি হিন্দু কট্টরপন্থিদের ক্ষুব্ধ করে তুলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই ক্ষোভ আগে থেকেই সেখানে আছে। এই বাস্তবতাটা স্বীকার না করার অর্থ হলো খারাপ কাজকে উৎসাহ দেওয়া। এখন বলার সময় এসেছে যে, ভালো ব্যবসার জন্য ভালো নৈতিকতা নিয়ে আসতে হবে।
ভারতের গণতন্ত্রের সামনে বড় সিদ্ধান্তের সময় এসেছে। দেশের বাইরে বৈচিত্র্যের গল্প বলে দেশের ভেতরে বিচ্ছিন্নতার চর্চা করে তারা আর পার পেতে পারে না। মুসলিম জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ অধিকার দিতে হবে। উপহার হিসেবে নয়, বরং আইনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ভারত যদি এটা না করে, তাহলে বিশ্বের মুসলিম গোষ্ঠীগুলো এবং মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। কথা বলার সময় চুপ থাকার অর্থ হলো তাদের সঙ্গে একমত হওয়া। কোনো শর্ত ছাড়াই অর্থ দেওয়ার অর্থ হলো তাদের উজ্জীবিত করা। কোনো চাপ না দিয়ে তেল বিক্রির অর্থ হলো আশা ত্যাগ করা।
জোরালো আইন প্রণয়ন এবং নেতাদের সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমে ভারত যদি সত্যিকারের পরিবর্তন দেখাতে না পারে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উচিত হবে তাদের চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করা। ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ঘৃণার মুখোমুখি শক্ত হয়ে দাঁড়াতে না পারলে, তাদের গণতন্ত্র কখনোই পুরোনো সুনাম ফিরে পাবে না।
মিডলইস্ট মনিটর অবলম্বনে জুলফিকার হায়দার

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত সংবাদ দেখা যাচ্ছে, ভারতে মুসলিমরা তাদের ধর্মবিশ্বাসের কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই খবরগুলো দুঃখজনক একটা বাস্তবতা সামনে এনেছে। ভারতের গণতন্ত্র তাদের অন্তর্নিহিত মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছে। এখন আর এটি বলার উপায় নেই যে, এই ঘটনাগুলো বিরল বিচ্ছিন্ন ঘটনা। হঠাৎ করে ঘটে গেছে। বরং এগুলোর মধ্য দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর ঘৃণার একটা প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর তার দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অধীনে এই ঘৃণার মাত্রা আরো বেড়েছে। ভারত নিজেদের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ দাবি করে। কিন্তু তাদের রাজনীতি আর সমাজে অসহিষ্ণুতার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। বিশুদ্ধ ভণ্ডামি ছাড়া এটাকে আর কিই বা বলা যায়? ভারত বিশ্বকে বৈচিত্র্যের গল্প শোনায়। কিন্তু নিজের দেশে তারা জনগণকে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই বাস্তবতায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জেগে ওঠা উচিত। তারা ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তাদের এখন এই সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
ভারতে গো-রক্ষার নামে কট্টরপন্থিদের হামলার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। গরু বহন করার দুর্বল অজুহাতে মুসলিম পুরুষদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। ১০ বছর ধরে এ ধরনের হামলা চলে আসছে। খুব কম ঘটনাতেই দোষীদের শাস্তি হয়েছে। সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের মতো আইনের কারণে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এই আইনে কিছু ধর্মের মানুষদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আর মুসলিমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বহু শহরে মুসলিমরা বিচ্ছিন্ন এলাকায় বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। ধর্মীয় পক্ষপাতিত্বের কারণে তাদের স্বাভাবিক আবাসিক এলাকায় ঘরবাড়িতে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। এর সবকিছু থেকে একটা জিনিসই পরিষ্কার বোঝা যায়। সেটা হলো, ভারতের গণতন্ত্র কিছু নির্দিষ্ট মানুষের জন্য, সবার জন্য নয়।
এই প্রবণতাটা উদ্বেগজনক। কারণ ভারতীয় নেতাদের গোচরেই এগুলো ঘটছে। তারপরও তারা এগুলো অগ্রাহ্য করছেন বা এগুলোকে ছোট করে দেখছেন। মোদি ঐক্য আর প্রবৃদ্ধির গল্প শোনাচ্ছেন। কিন্তু তার সমর্থকরা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের ওপর ভিত্তি করে চাঙা হচ্ছে। মুসলিমদের তারা হুমকি বা শত্রু হিসেবে দেখছে। তার দল বিভিন্ন কথাবার্তায় সূক্ষ্ম ইঙ্গিতও দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে অনুসারীদের ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে, সংখ্যালঘুদের ক্ষতি করা দোষের কিছু নয়। মুসলিমদের ওপর হামলার তদন্তে পুলিশের মধ্যেও অনীহা রয়েছে। কর্মকর্তাদের ঘৃণা বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা তারা দেখেও দেখে না। তাদের ভণ্ডামিটা খুবই খোলামেলা। ভারত বৈশ্বিক শ্রদ্ধা পেতে চায়। কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে তাদের যেসব সংখ্যালঘু গোষ্ঠী রয়েছে, তাদেরই তারা সুরক্ষা দিতে পারে না।
সংখ্যাগরিষ্ঠদের নয়, বরং সংখ্যালঘুদের কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া হয়, সেটি দিয়েই বোঝা যায় গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী। ভারত এই পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। ব্যক্তি-স্বাধীনতা সূচকে যে বৈশ্বিক প্রতিবেদন, সেখানেও ভারতের অবস্থানের অবনতি হয়েছে। মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ করতে গেলে সংবাদপত্র আর অধিকারকর্মীরা শঙ্কিত থাকেন। কিছু আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়, তাদের জেলে পর্যন্ত পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে সত্য লুকানো হচ্ছে। সম্প্রীতির একটা মিথ্যা গল্প তারা আওড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমাজ ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছে। একটা গণতান্ত্রিক সমাজে যখন সংবাদমাধ্যমকে শুধু ইতিবাচক খবর দেখানোর জন্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তখন সেটা ভণ্ডামিতে রূপ নেয়।
মধ্যপ্রাচ্যকে অবশ্যই এদিকে মনোযোগ দিতে হবে। এই অঞ্চলের অনেক দেশই ভারতের সঙ্গে ব্যবসা জোরদার করেছে। জ্বালানি থেকে নিয়ে প্রকল্প উন্নয়ন সবই রয়েছে এর মধ্যে। কিন্তু এই সম্পর্কের একটা মাত্রা থাকা উচিত। গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের মতো গ্রুপগুলোর ক্ষমতা আছে। তারা পরিবর্তনের আহ্বান জানাতে পারে। তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো ভারতের জ্বালানি চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক না গড়ে তাদের উচিত সত্যিকারের অর্জনগুলোর দিকে নজর রাখা। তাদের দেখা উচিত, কীভাবে সেখানে ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করা হচ্ছে বা কীভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। যে সরকার তার দেশের মধ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে দিচ্ছে, তাদের কেন সাহায্য করতে হবে? যেসব দেশের ইসলামিক শিকড় রয়েছে, তাদের এগুলো মেনে নেওয়া ঠিক নয়।
তাছাড়া, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অর্থ ভারতের রাস্তাঘাট আর ভবনের পেছনেও ব্যয় হচ্ছে। ভারতের নেতারা এসব অবকাঠামোকে তাদের উদীয়মান শক্তির প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু স্ট্যাটাস অর্জনের জন্য একটা মূল্য দিতে হয়। এই অঞ্চল থেকে যে সম্পদের তহবিল যাচ্ছে, এগুলোর বিনিময়ে পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়া উচিত। এই পরিবর্তনের মধ্যে অবশ্যই সবার জন্য সমান আইন আর অধিকারের জন্য চাপ দিতে হবে। কেউ কেউ বলেন, ব্যবসায়িক সম্পর্ক শান্তি নিয়ে আসে। কিন্তু এই ধারণা এখানে কাজ করেনি। বাণিজ্য বাড়লেও ভারতে ঘৃণার বিস্তার কমেনি। অর্থ দিয়ে যদি দায়বদ্ধতার জন্য চাপ দেওয়া না যায়, তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হবে অথবা আরো অবনতির দিকে যাবে।
এখানে বৃহত্তর বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিও রয়েছে। ভারত দরিদ্র দেশগুলোকে নেতৃত্ব দিতে চায় এবং মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে মিলে টিম গড়তে চায়। অথচ নিজের দেশে তারা যেসব গল্প ছড়াচ্ছে, সেখানে মুসলিমদের হয় বিপজ্জনক অথবা বহিরাগত হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এই বিভাজনটা উপেক্ষা করা যাবে না। যে দেশ বাইরে বৈচিত্র্যের প্রশংসা করে বেড়ায় আর নিজের দেশে দেয়াল গড়ে তোলে, তারা কারো আস্থাভাজন হতে পারে না। মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা মনে করছেন, এই বিভাজন কখনো তাদের কোনো ক্ষতি করবে না। তাদের এই ভাবনাটা ভুল।
কৌশল হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উচিত সম্পদ বিক্রির ভিন্ন উপায় বের করা। সেটা করা হলে তেলের এত সহজ সুবিধা পাবে না ভারত। তেল বিক্রির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে অথবা চুক্তির শর্ত কঠিন করা হলে একটা শক্ত বার্তা যাবে। বিদেশি তেল ভারতের খুবই প্রয়োজন। এই শক্তি ভারতকে ভাবতে বাধ্য করবে। দাবি তুলতে হবে, যাতে ঘৃণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হয়। মুসলিম পবিত্র স্থাপনাগুলোর জন্য এর মাধ্যমে সুরক্ষা আরো মজবুত হবে। তাছাড়া স্থানীয় যেসব শক্তি বিচ্ছিন্নতা উসকে দিচ্ছে, তাদের অপশাসনেরও ইতি ঘটবে।
সেই সঙ্গে স্কুল ও সংস্কৃতিকেন্দ্রিক চুক্তিগুলো বন্ধ রাখা যেতে পারে, যতক্ষণ না অধিকারের প্রশ্নে ভারত সত্যিকারের অগ্রগতি দেখায়। প্রবাসী জনগোষ্ঠী এবং শিল্পকলার মাধ্যমে ভারত নিজেদের শান্তিপূর্ণ চেহারা প্রচার করেছে এবং এর মাধ্যমে তারা অনেক কিছু অর্জন করেছে। সেই প্রচারণায় তারা ঘৃণার চেহারাটা লুকিয়ে রাখে। মধ্যপ্রাচ্যের গোষ্ঠীগুলো নতুন চুক্তির আগে যদি ভারতীয় মুসলিমদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণের দাবি করে, তাহলে ভারতের শীর্ষ ব্যক্তিদের ওপর ভেতর থেকে চাপ বাড়বে।
কেউ কেউ বলেন, সম্পর্ক ছিন্ন করলে ভারত চীনের মতো শক্তিগুলোর দিকে ঝুঁকবে। অথবা এতে আঞ্চলিক শান্তি ক্ষুণ্ণ হবে। এই মতের ধারকরা ভারতের বিকল্প সম্পর্কে বেশি উচ্চ ধারণা পোষণ করছেন। প্রবৃদ্ধির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের তেল আর অর্থের বিকল্প নেই ভারতের কাছে। এই জায়গাটা অন্য কেউ এত দ্রুত পূরণ করতে পারবে না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো অবশ্যই তাদের নিজেদের শক্তির দিকে তাকাতে হবে। তাদের ছোট চিন্তা করা বন্ধ করতে হবে।
অন্যদের উদ্বেগের কারণ হলো, তারা মনে করছেন, এ ধরনের দাবি হিন্দু কট্টরপন্থিদের ক্ষুব্ধ করে তুলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই ক্ষোভ আগে থেকেই সেখানে আছে। এই বাস্তবতাটা স্বীকার না করার অর্থ হলো খারাপ কাজকে উৎসাহ দেওয়া। এখন বলার সময় এসেছে যে, ভালো ব্যবসার জন্য ভালো নৈতিকতা নিয়ে আসতে হবে।
ভারতের গণতন্ত্রের সামনে বড় সিদ্ধান্তের সময় এসেছে। দেশের বাইরে বৈচিত্র্যের গল্প বলে দেশের ভেতরে বিচ্ছিন্নতার চর্চা করে তারা আর পার পেতে পারে না। মুসলিম জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ অধিকার দিতে হবে। উপহার হিসেবে নয়, বরং আইনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ভারত যদি এটা না করে, তাহলে বিশ্বের মুসলিম গোষ্ঠীগুলো এবং মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। কথা বলার সময় চুপ থাকার অর্থ হলো তাদের সঙ্গে একমত হওয়া। কোনো শর্ত ছাড়াই অর্থ দেওয়ার অর্থ হলো তাদের উজ্জীবিত করা। কোনো চাপ না দিয়ে তেল বিক্রির অর্থ হলো আশা ত্যাগ করা।
জোরালো আইন প্রণয়ন এবং নেতাদের সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমে ভারত যদি সত্যিকারের পরিবর্তন দেখাতে না পারে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উচিত হবে তাদের চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করা। ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ঘৃণার মুখোমুখি শক্ত হয়ে দাঁড়াতে না পারলে, তাদের গণতন্ত্র কখনোই পুরোনো সুনাম ফিরে পাবে না।
মিডলইস্ট মনিটর অবলম্বনে জুলফিকার হায়দার

ঢাকা শহরে যাতায়াত মানে এক ধরনের যুদ্ধ। প্রতিদিন অফিসে যাওয়া-আসার পথে এ যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয় লাখ লাখ মানুষকে। অশেষ বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় অন্য যাতায়াতকারীদেরও। যানজটে মূল্যবান সময় অপচয় আর যানবাহনের তেলই শুধু পুড়ছে না; বরং ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব বহুমাত্রিক। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী
১৫ ঘণ্টা আগে
লৌহমানবীখ্যাত মার্গারেট থ্যাচার যখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী, তখন তার ছেলে ট্রাফিক আইনলঙ্ঘন করার দায়ে জরিমানার শিকার হয়েছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সন্তান বলে রক্ষা পাননি। কারণ ইংল্যান্ডে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, প্রধানমন্ত্রী, লর্ড, ব্যারন কিংবা সাধারণ মানুষ যেই হন না কেন। এই তো অতিসম্প্রতি ব্রিটেনে
১৫ ঘণ্টা আগে
কী করে যেন একই সময়ে দেখা গেল পশ্চিমি গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ভারতে পালিয়ে থাকা বাংলাদেশের পতিত শাসক শেখ হাসিনার বর্বর হত্যাকাণ্ড অস্বীকার করে নির্বিকার সাফাই চেষ্টা এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ নিয়ে দেশে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। এটা কি শুধুই কাকতালীয় ব্যাপার?
১৫ ঘণ্টা আগে
জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ‘গ্লোবাল মাইগ্রেশন এজেন্ডা’র বিরুদ্ধে তার ভাষণে সরব হন, তখন সেটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রতিফলন হিসেবে না দেখে এক বৈশ্বিক রাজনৈতিক সংকেত হিসেবে দেখা উচিত, যা জাতীয়তাবাদী ও বর্জনমুখী শাসনব্যবস্থাগুলোর জন্য এক
২ দিন আগে