Ad

ঋণ শ্রেণিকরণ আরও কঠোর চায় আইএমএফ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ৫০

ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালা আরও কঠোর চায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নিলে সঙ্গে সঙ্গে সেই ঋণ নিয়মিত দেখাতে পারবে না। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের মধ্যবর্তী পর্যালোচনা বৈঠকে এ আলোচনা হয়।

চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে বাংলাদেশ চতুর্থ কিস্তির অর্থ পাবে। চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের আগে তৃতীয় কিস্তির পর্যালোচনা করতে আইএমএফের ১০ সদস্যের একটি দল ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় এসেছে। দলটি বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নেয়ার পর ব্যাংকগুলো ওই ঋণটি সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত দেখায়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসরণ করা হচ্ছে না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে বলেছে আইএমএফ।

ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নিলেও ওই ঋণ তিন মাসের আগে নিয়মিত দেখাতে পারবে না। এই তিন মাস যদি গ্রাহক ঠিক মতো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে তাহলে ঋণ নিয়মিত দেখাতে পারবে। তবে দেশের ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার সঙ্গে সঙ্গে ঋণটি নিয়মিত দেখাচ্ছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণিকরণ নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত নীতিমালার প্রশংসা করেছে সংস্থাটি। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কোনো ঋণ পরিশোধ না করলে তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য হবে। এরপর অনাদায়ি হিসেবে ওই ঋণ ৯০ দিন অতিক্রম করলে খেলাপি হয়ে যাবে।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণসংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করে। পাশাপাশি আগামী বছরের জুনে এই নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবেদন তৈরিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো তিন মাস ভিত্তিতে ঋণের মানসংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে, ফলে এপ্রিল মাস থেকে এই নীতিমালা কার্যকর হবে।

এই নীতিমালার ফলে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি রেকর্ড দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক বৈঠকে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে ডলারের দামের ওঠানামা চেয়েছিল আইএমএফ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, সাধারণত মুদ্রার বিনিময় হার যেভাবে ওঠানামা করার কথা, সেভাবে করছে না। এই বাস্তবতায় মানুষের মধ্যে ডলার ধরে রাখার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। প্রভাব পড়তে পারে বাজারে ডলারের সরবরাহে। সে জন্য ক্রলিং পেগের কথা বলেছে আইএমএফ।

এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটিও বিনিময় হারের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে সম্পূর্ণভাবে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করা, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তা আধুনিক করা এবং আমদানির ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ অবশিষ্ট থাকলে তা তুলে নেওয়ার জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন।

আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। এখন পর্যন্ত তিন কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ।

গত ডিসেম্বরে পেয়েছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর গত জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের বাকি প্রায় ২৩৯ কোটি ডলার পাওয়া যাবে চার কিস্তিতে, যার এক কিস্তি পাওয়া যেতে পারে চলতি ডিসেম্বরে।

ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত