Ad

খাদ্য মজুতে টান, বাড়ছে ঝুঁকি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৪৪
ফাইল ছবি

দেশে চাল ও গমের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, একই সঙ্গে কমেছে খাদ্যশস্য আমদানি। ফলে সরকারি গুদামে খাদ্যের মজুত কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ধীরগতি এবং আমদানি কমায় দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে বাজারে চালের দাম বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি গুদামে মজুত ছিল ১১ লাখ ৬৭ হাজার টন খাদ্যশস্য। কিন্তু ৩ ডিসেম্বর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯০ হাজার টনে। হিসাব অনুযায়ী, মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে গুদামে মজুত কমেছে ৭৭ হাজার টন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার টনের বেশি খাদ্য মজুত কমছে। অথচ দৈনিক সংগ্রহ হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ৭১৪ টন। বর্তমান মজুতের মধ্যে চাল রয়েছে ৬ দশমিক ৬৯ লাখ টন, গম ৪ দশমিক ২০ লাখ টন এবং ধান মাত্র ১ হাজার টন। অথচ চার মাস আগেও সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত ছিল প্রায় ১৮ লাখ টন, যা বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ এই সময়ে সরকারি গুদামে খাদ্যের মজুত কমেছে ৮ লাখ টন।

অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় পিছিয়ে

চলতি আমন মৌসুমে ১০ লাখ টন ধান, চাল ও গম সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। তবে ১৭ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিনে সরকারি গুদামে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৪ হাজার টন, যা দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৭১৪ টন। অথচ দৈনিক সংগ্রহ হওয়ার কথা ১১ হাজার টনের বেশি। এই ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও সংগ্রহের গতি কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের সংগ্রহ বিভাগের কর্মকর্তারা তেমন কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তাঁরা সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

চাহিদার তুলনায় আমদানিতে ধস

দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে গড়ে ৫ লাখ ৫২ হাজার টন খাদ্য আমদানি করা প্রয়োজন। তবে চলতি অর্থবছরে আমদানির গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৬৬ দশমিক ২৮ লাখ টন খাদ্য আমদানি হয়েছে, যার পুরোটাই গম। তবে চাল আমদানির হার খুব কম।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সরকারিভাবে কোনো চাল আমদানি হয়নি, তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছিল। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে আমদানি হয়েছে মাত্র ২২ লাখ ৬২ হাজার ২২০ টন খাদ্য, যা মোট চাহিদার ৩১ শতাংশ। এদিকে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে মাত্র ২৩ হাজার ৩১০ টন, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

বর্তমানে সরকারি মজুত যে পরিমাণে রয়েছে, তা কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয়। সরকারের উচিত দ্রুত আমন সংগ্রহের গতি বাড়ানো। কমপক্ষে ১৫ লাখ টন চাল সংগ্রহ করে মজুত করতে হবে।
ড. জাহাঙ্গীর আলম খান,
কৃষি অর্থনীতিবিদ

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আমদানির এই ধীরগতির ফলে দেশে খাদ্য মজুতের ঘাটতি হতে পারে, যার প্রভাব বাজারে সরবরাহের চাপ বাড়াবে এবং উচ্চমূল্যস্ফীতি আরও তীব্র হতে পারে। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী জুলাই নাগাদ সরকারি গুদামে ১১ লাখ টন খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সরকারের চাল আমদানি শুল্ক তুলে দেওয়ার পরও বেসরকারি আমদানিকারকদের অনীহা এবং বৈশ্বিক বাজারের উচ্চমূল্যের কারণে আমদানি আশানুরূপ হয়নি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, বিশেষ করে চালের আমদানি বাড়ানোর মাধ্যমে খাদ্য মজুতের ঘাটতি পূরণ করা।

বিষয়:

ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত