Ad

পুলিশ সংস্কারে ৫ সুপারিশ বিএনপির

পুলিশ বাহিনীকে সঠিক দিক নির্দেশনা, পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদানের জন্য একটি পুলিশ কমিশন গঠন করা। কমিশনের কার্যক্রমের মধ্যে আছে, পুলিশের জনবান্ধব ও গ্রহণযোগ্য আচরণ নিশ্চিত করা। বাহিনীর কল্যাণ ও উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ।

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬: ০৪
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭: ২৩

পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাছে ৫ সুপারিশ করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপার্সন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ প্রশাসন সংস্কার বিষয়ক কমিটির প্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ একথা বলেন।

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ জানান, আমরা পুলিশ কমিশন গঠন, প্রত্যেক উপজেলা/থানায় একটি নাগরিক কমিটি গঠন করা, র‍্যাবকে বিলুপ্ত করা, কমিউনিটি পুলিশিং সহ রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের অনুরূপ প্রতিটি বিভাগীয়/মেট্রোপলিটন শহরে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে।

পুলিশ সংস্কারে বিএনপির সুপারিশগুলো হলো-

১। পুলিশ বাহিনীকে সঠিক দিক নির্দেশনা, পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদানের জন্য একটি পুলিশ কমিশন গঠন করা। কমিশনের কার্যক্রমের মধ্যে আছে, পুলিশের জনবান্ধব ও গ্রহণযোগ্য আচরণ নিশ্চিত করা। বাহিনীর কল্যাণ ও উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ। বাহিনী পরিচালনায় প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন। বাহিনীর সম্প্রসারণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংগ্রহ। সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে উন্নত বিশ্বের অনুকরণে আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান। সর্বোচ্চ বিভাগীয় কমান্ড কর্তৃক প্রচলিত আইন ও বিধির ব্যত্যয় ঘটার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।

এছাড়াও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ন ইস্যুতে পুলিশকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান। দায়িত্ব পালনকালে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরা বলতর অবনতি রোধকল্পে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও সরকার কর্তৃক নির্দেশিত বিশেষ দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।

২। স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশকে অপরাধ দমনে সহায়তা প্রদান, জনসাধারণ পুলিশ সম্পর্ক উন্নয়নে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পরামর্শ প্রদানের জন্য প্রত্যেক উপজেলা/থানায় একটি নাগরিক কমিটি গঠন করার সুপারিশ করেছে দলটি। সেজন্য স্থানীয় গণ্যমান্য, সুশিক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিবর্গ সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করার সুপারিশ করেছে বিএনপি।

৩। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে থাকা র‍্যাব ইতোমধ্যে দেশে এবং বিদেশে ব্যাপকভাবে নিন্দিত ও সমালোচিত হয়েছে। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন, জাতিসংঘ, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং সুধীজন র‍্যাবকে দেশে সংঘটিত অধিকাংশ গুম, খুন, নির্যাতন ও নিপীড়নের জন্য দায়ী করেছে। বাহিনীটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। এই প্রেক্ষাপটে র‍্যাবকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে বিএনপি। র‍্যাবের দায়িত্ব আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং থানা পুলিশ যেন পালন করতে পারে সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয় সুপারিশে।

৪। কমিউনিটি কর্তৃক পরিচালিত পুলিশি ব্যবস্থাকেই বলা হয় কমিউনিটি পুলিশিং। এর উদ্দেশ্য হলো জনগণের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সামাজিক সমস্যাদি সমাধানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সমাজে বিবিধ অপরাধ প্রবনতা এবং সামাজিক অস্থিরতা কমবে, পুলিশ-জনসাধারণের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস পাবে, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করবে এবং আইনের শাসন জোরালো হবে।

এই উদ্দেশ্যে গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি ইউনিয়নে এবং শহরাঞ্চলে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ১জন অবসরপ্রাপ্ত কম্যুনিটি পুলিশ অফিসার (সাব-ইন্সপেক্টর পদের নিয়ে নয়) নিয়োজিত হবেন। সংশ্লিষ্ট এলাকায় তার একটি অস্থায়ী দপ্তর থাকবে। উক্ত অফিসার নিয়মিতভাবে এলাকার গণপ্রতিনিধি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, ইমাম, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, মহিলা সমাজ, কৃষক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সংগে নিয়মিত বৈঠক করবেন। সকলের অংশগ্রহণে প্রাপ্ত সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে কম্যুনিটি পুলিশ অফিসার সংশ্লিষ্ট এলাকায় অপরাধ দমন ও নিবারণে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। এছাড়াও এলাকায় অর্থি সীমানা-সম্পদ মালিকানা, মানহানি বা অন্যবিধ কারণে অধিবাসীদের মধ্যে মতবিরোধ, গৃহবিবাদ, শিশু ও নারী নির্যাতন, মাদক গ্রহন, জুয়াখেলা, সুদব্যবসা, গ্যাং কালচার, সাম্প্রদায়িক উস্কানি ইত্যাদি আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা চালাবেন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইনী পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করবেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পুলিশ ও জনগণ মিলে নিরাপত্তা পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা নিবেন। নিয়োজিত কমিউনিটি পুলিশ অফিসারের বেতন-ভাতা সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ বহন করবেন।

৫। বাংলাদেশ পুলিশে বর্তমান জনবল প্রায় সোয়া ২ লক্ষ। তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্য সংখ্যা যুক্ত হলে তা দাড়ায় প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ। তাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করার দায়িত্ব প্রতিটি বিভাগ বা জেলায় স্থাপিত পুলিশ হাসপাতালের। বর্তমানে এই সেবা বেশ অপ্রতুল বিধায় প্রতিটি জেলা শহরে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও জনবলসহ পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল স্থাগন/সম্প্রসারণ করার সুপারিশ করা হয়।

এছাড়াও কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, রাজারবাগ, ঢাকা ছাড়া অন্য কোন বিভাগীয়/জেলা হাসপাতালের কোথাও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান বা সরঞ্জামাদি নেই। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের সন্তান-সন্ততিদের চিকিৎসা সেবা প্রদানকল্পে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের অনুরূপ প্রতিটি বিভাগীয়/মেট্রোপলিটন শহরে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল পরিচালনা করা যেতে পারে। এই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ডাক্তার, টেকনিশিয়ান এবং যন্ত্রপাতি সন্নিবেশনের প্রয়োজন হবে বলেও সুপারিশমালায় উল্লেখ করে বিএনপি।

বিষয়:

বিএনপি
ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত