Ad

হাসিনা ও আসাদ: ভোট ডাকাতিতে দারুণ মিল

দুই দেশেই স্বৈরাচারী সরকারের পতনের সূত্রপাত হয় মূলত নির্বাচনকে কুক্ষিগত করার কারণে। বাংলাদেশে ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোট পেয়েছিল ৬৫ শতাংশ। আর সিরিয়ার বাথ পার্টি ভোট পেয়েছিল ৩৮ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪: ১৯
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪: ৪২

২০২৪ সাল বিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরই স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের মানুষ। ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মানুষের ওপর ১৫ বছর ধরে চেপে বসেছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার। অবশেষে ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। মুক্তি পায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ। এদিকে জনগণের আন্দোলনের মুখে গতকাল (রবিবার) হাসিনার মতো দেশ ছেড়ে পালিয়েছে সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ।

হাসিনা ও আসাদের মিল-অমিল

শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হয়ে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের অতীত কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন তিনি তবে আসাদের বিষয়টা একটু ভিন্ন। তিনি বেড়ে ওঠেন দামেস্কের অভিজাত মহলে। পিতা হাফিজের পর প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা ছিল তার বড় ভাইয়ের। তাকেই উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছিলেন হাফিজ। বাশার মেডিক্যালে পড়াশোনা করেন লন্ডনে। পরে চক্ষুবিশেষজ্ঞ হিসেবে সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

তবে ১৯৯৪ সালে সব সমীকরণ পাল্টে যায়। সে বছর এক গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হন বাশারের বড় ভাই বাসেল আল আসাদ। তখন বাশার সিরিয়ায় ফিরে এসে বাসেলের দায়িত্ব বুঝে নেন। তখন তাকে সামরিক একাডেমিতে ভর্তি হতে হয়। ১৯৯৮ সালে লেবাননে মোতায়েনকৃত সিরিয়ান সেনাদের নেতৃত্ব দেন তিনি।

পিতা হাফিজ আল আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালের ১৭ জুলাই ক্ষমতা গ্রহণ করেন বাশার আল আসাদ।

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রবিবার (৮ ডিসেম্বর) অবসান হয়েছে বাশার আল আসাদের শাসনামলের। তিনি দেশে ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বন্ধুদেশ রাশিয়ায়।

২০১১ সালের মার্চে আন্দোলনকারীদের দমনে গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। বিরোধীদের দমনে আরও কঠোর হন বাশার। ধীরে ধীরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন রূপ নেয় সহিংসতায়, সেখান থেকেই শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। এ যুদ্ধ এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের জন্ম দিয়েছে। এ সংঘাত একসময়ের সমৃদ্ধ ও প্রাচীন সিরিয়ান জনপদকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। মানবিক সহায়তা সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের মোট শরণার্থীর ২৫ শতাংশই সিরিয়ার। গণতন্ত্রকামী জনগণ যদি ৩৬ জুলাই শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে না পারতেন, তাহলে বাংলাদেশও হয়তো সিরিয়ার পথেই হাঁটতো।

বাংলাদেশ ও সিরিয়ার মধ্যে মিল যেখানে

বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। এই দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের সেনারা। ক্ষমতার মসনদে বসেন আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। অন্যদিকে নিজ দলের মধ্যে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতায় বসেন বাশার আল আসাদের পিতা হাফিজ আল-আসাদ। আরো একটি মিল হচ্ছে, দুই দেশের নামের সঙ্গেই রয়েছে রিপাবলিক। রিপাবলিক বাংলাদেশ এবং সিরিয়ার আরব রিপাবলিক। বাস্তবে শেখ হাসিনা ও বাশার আল আসাদের শাসনামলে গণতন্ত্রের লেশমাত্র ছিল না।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ঠিক সে বছরেই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন হাফিজ। আমৃত্যু (তিন দশক) ছিলেন রাষ্ট্রক্ষমতায়। তবে তিনি সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারলেও শেখ মুজিব বাংলাদেশে সেটি পারেননি।

২০২৪ সালে বিশ্বের ৭২টি দেশে নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও সিরিয়াসহ অন্যান্য দেশ। বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারি বিরোধী কোনো দল অংশ না নিলেও হাসিনা নিজ দলের লোকদের নিয়ে ডামি নির্বাচন করেন। আবার ৫ বছরের জন্য স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করার চেষ্টা করেন শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা। স্বৈরশাসক হাসিনা বারবার দাবি করেছেন, তার সব কর্মকাণ্ড নাকি ছিল পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন।

দুই দেশেই স্বৈরাচারী সরকারের পতনের সূত্রপাত হয় মূলত নির্বাচনকে কুক্ষিগত করার কারণে। বাংলাদেশে ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোট পেয়েছিল ৬৫ শতাংশ। আর সিরিয়ার বাথ পার্টি ভোট পেয়েছিল ৩৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ও সিরিয়ায় নির্বাচন ছিল নামকাওয়াস্তে। এসব ছিল নির্বাচনের নামে প্রহসন। জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। সেই বঞ্চনা থেকেই বাংলাদেশ ও সিরিয়ায় জনগণের বিক্ষোভ রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। স্বৈরাচারমুক্ত হয় বাংলাদেশ ও সিরিয়া।

ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত