Ad

৬৩ কোটি লিটারের পানি শোধনাগার বানাতে চায় চট্টগ্রাম ওয়াসা

আতিকুর রহমান, চবি
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ৩১
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ০১
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মহানগরীতে পানি সরবরাহে কর্ণফুলীর নদীর পানি শোধনাগার নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। দক্ষিণ বোয়ালখালীর ভাণ্ডালজুড়িতে পানি পরিশোধনাগারের আশপাশে ৬৩ কোটি লিটার সক্ষমতার এই কেন্দ্রটির ইনটেক পয়েন্ট করা হবে। ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ২০৪২ সালে গিয়েও নগরীতে পানির বর্ধিত চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির নাম 'লবণাক্ততা পরিহারের লক্ষ্যে মোহরা পানি শোধনাগারের ইনটেক স্থানান্তর এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’।

কয়েক বছর ধরেই এই সংকট চলছে। শুষ্ক মৌসুমে নগরীর হালিশহর, উত্তর কাট্টলী, পতেঙ্গা, বাকলিয়া, লালখান বাজার, শুলকবহর, আমানবাজার, আমবাগান, শেরশাহ, কালুরঘাট শিল্প এলাকা, চন্দনপুরাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হয়।

চলমান এই সংকটের সঙ্গে আছে পানির বর্ধিত চাহিদা। চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, ২০৩২ সালে চট্টগ্রামে পানির দৈনিক চাহিদা ৭৫ কোটি লিটার ছাড়িয়ে যাবে। ২০৪২ সালে চাহিদা হবে ১০০ কোটি লিটারের বেশি।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘বর্তমানে পানির দৈনিক গড় চাহিদা ৫৮ কোটি লিটার। বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৪৮ থেকে ৪৯ কোটি লিটার।’

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেছেন, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রাথমিক প্রস্তাবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমতি দিয়েছে। দুই-তিন মাসের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হতে পারে। তিনি জানান, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের ভাণ্ডালজুড়ি বা যে অংশে সারা বছর প্রবাহ ভালো থাকে, সেরকম কোনো স্থান থেকে এই পানি নিতে চায় তারা।

এদিকে পরিবেশবিদরা বলছেন, দৈনিক ৬৩ কোটি লিটার পানি নিলে কর্ণফুলী নদীর জীববৈচিত্র্য কিংবা বাস্তুতন্ত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা, তা নিশ্চিত হয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়া উচিত।

হালদা নদী যেখানে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিশেছে, তার আধা কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার মোহরা পানি শোধনাগার ফেইজ-১। এর জন্য দিনে ৯ কোটি লিটার পানি তোলা হয়।

দুই নদীর সংযোগস্থলের ছয় কিলোমিটার উজানে মদুনাঘাট পানি শোধনাগারের জন্যও প্রতিদিন ৯ কোটি লিটার পানি প্রয়োজন পড়ে।

ওয়াসার এই উদ্যোগের বিষয়ে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘ভূগর্ভের পরিবর্তে নদীর পানি পরিশোধন করা ভালো। কিন্তু নদী থেকে কতটুকু পানি উত্তোলনযোগ্য, সেটা আগে জানতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কর্ণফুলী জোয়ার-ভাটার নদী। হয়তো পানি পরিশোধনের জন্য তুলে নিলে তা আবার জোয়ারের পানিতে পূরণ হবে। কিন্তু কতটুকু পানি দৈনিক নেওয়া হবে, সম্ভাব্যতা যাচাই না করে সেটা বলাটা ঠিক হবে না।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘এখনো দুটি প্রকল্পে দৈনিক ১৮ কোটি লিটার পানি কর্ণফুলী থেকে নেওয়া হয়। যে প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে, তাতে প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেশি পানি তোলা হবে দিনে। তাই এই প্রকল্পে নদী ও পরিবেশের প্রভাব বিবেচনা করতে হবে।’

ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত