জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জাতির স্বার্থে নির্বাচনের জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা সাড়ে ১৭ বছর ধৈর্য ধরেছি। যেনতেন নির্বাচন চাই না। নির্বাচনের জন্য যুগ যুগ অপেক্ষাও করতে চাই না।

শুক্রবার সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াতের আমীর বলেন, লুন্ঠন, জুলুম, অত্যাচারের খলনায়ক হচ্ছে আওয়ামী লীগ। গত ১৫ বছরে আওয়ামীলীগ জেল, জুলুম, নির্যাতন করে দেশকে গোরস্থান ও শ্মশানে পরিণত করেছে। তারা এতদিন বলেছে, দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। তাহলে তারা দেশ থেকে পালিয়েছে কেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে চাঁদাবাজি, গুম, খুন, হত্যা, ব্যাংক লুট ও আয়না ঘরের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চা করেছে। যে কারণে তারা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতি-চাঁদাবাজি করব না, কাউকে করতেও দেব না। এজন্য জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে সর্বত্র গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা ছাত্র-জনতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে চাই।

তিনি আরও বলেন, ২০০৬ সালে লগি বৈঠার আওয়ামী তাণ্ডবের ফলে জাতি বর্বর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। তারা লাশের উপর নৃত্য করেছিল। দীর্ঘ ১৬ বছরে তারা ইতিহাসের বর্বর ও আগ্রাসী শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে গণধিকৃত একটি দলে পরিণত হয়েছে।

ডা. শফিক বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র বিভক্তির বদলে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় হয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়েছে। জামায়াত কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি, কেবলই আল্লাহর কাছে মাথা নত করেছে।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ থেকে শুরু করে ২০২৪ পর্যন্ত অনেক জামায়াতের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছে। ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জীবন দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে আমাদের সন্তানেরা। এ আন্দোলনে মা তার ছেলের হাত ধরে রাস্তায় নেমে এসেছে। দশ মাসের বাচ্চাকে নিয়ে গুলির সামনে এসেছে। সবার মুখে একটাই শব্দ ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ আমরা ন্যায়বিচার চাই। স্বৈরাচারের পতন হলেও দেশ এখনো স্বাধীন হয়নি। আমাদের ২০ হাজার নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বলেছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে তাদের পাঁচ লাখ লোককে হত্যা করা হবে। একথা বলে আওয়ামী লীগ তার লোকজনকে পশুত্বের আচরণে বাধ্য করেছিল।

জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পরও একটি গোষ্ঠী লুটতরাজ করে আখের গুছিয়েছে। বর্তমান সরকার তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে পারেনি। রাষ্ট্র উদ্যোগ নিলে আমরা রাষ্ট্রের পক্ষে থাকবো, দেশে অন্যায় অবিচার হতে দেবো না। আমরা দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

যারা এখনো ফ্যাসিবাদের দোসর, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। জনগণের পাওনা জনগণের কাছে বুঝিয়ে দিতে হবে।

জামায়াতে ইসলামী ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মো. দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মনজুরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার, মুন্সিগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, ঢাকা জেলা শাখার সেক্রেটারি আফজাল হোসেন ও ঢাকা জেলা শাখার সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক কামাল হোসেন প্রমুখ।