Ad

জাহাজে সাত খুন নিয়ে রহস্য!

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ৩৭
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ০৫

চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। শুরুতে এটি ডাকাতির ঘটনা মনে হয়েছিল। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা এটিকে ডাকাতি মনে করছেন না। এখানে অন্য কিছু রয়েছে বলে মনে করেন তারা।

পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, সিআইডি ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা কাজ শুরু করেছে।

সোমবার বিকালে মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের এমভি আল-বাখেরা জাহাজ থেকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় আরও তিন জনকে। আহতদের চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর দুজনের মৃত্যু হয়। একই পদ্ধতিতে সবাইকে হত্যা করা রহস্যজনক। এটি কারা ঘটিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।

জাহাজে নিহতরা হলেন এর চালক (মাস্টার) কিবরিয়া, ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল মুন্সি, গ্রিজার সজিবুল, আজিজুল ও মাজেদুল ইসলাম। নিহত একজনের পরিচয় জানা যায়নি। আহত অপর ব্যক্তির নাম জুয়েল। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এদের সবার বাড়ি নড়াইল জেলায়। জাহাজে পাওয়া গেছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তাক্ত কুড়াল। সেখান থেকে কোনো সার খোয়া যায়নি।

ঘটনার বিষয়ে হাইমচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা নাজনীন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে খবর পেয়ে দ্রুত ওসিসহ সেখানে যাই। জাহাজের মেঝে পড়েছিল রক্তাক্ত একটি চাইনিজ কুড়াল। এটি সারবাহী জাহাজ। সারের একটি বস্তাও খোয়া যায়নি। ডাকাতি করতে এলে তো সার বা জাহাজ নিয়ে যাবে। কিছুই নেয়নি। জাহাজের কর্মীদের ঘুমন্ত অবস্থায় কোপানো হয়েছে। হত্যার পর বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে। নিজ নিজ কক্ষে একই পদ্ধতিতে হত্যা করেছে। ডাকাতদের বাধা দেয়া সম্ভব হয়নি।’

সালমা নাজনীন আরো বলেন, ‘আহত অবস্থায় তিন জনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। তাদের কাছ থেকে কোনও তথ্য জানা যায়নি। আহত অপরজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তার শ্বাসনালি কেটে ফেলায় কথা বলতে পারেননি। কোনও তথ্য আমরা নিতে পারিনি। ঘটনা তদন্ত করছি আমরা। এর পেছনে অন্য রহস্য রয়েছে কিনা, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে বলা যাবে না। এটি ডাকাতি নয়, তা বোঝাই যাচ্ছে।’

খোয়া যায়নি কোনও মালামাল

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি জানান, ‘জাহাজের কোনও মালামাল খোয়া যায়নি। সারের বস্তাগুলো সাজানো-গোছানো আছে। কিছুই চুরি হয়নি। সাত জনকে হত্যা করা হয়েছে। আসলে জাহাজে কী ঘটেছে, এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক। বলেন, ‘তবে বিষয়টিকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি বলছি না। অনেক জায়গায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা সতর্ক আছি, তদন্ত করছি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ধরা যায়। তবে তদন্তের আগে পরিষ্কার করে কিছু বলা যাচ্ছে না। নৌপথে নিরাপত্তার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। নিরাপত্তা আরও জোরদার করার চেষ্টা করছি।’

নিহতদের মাথায় গুরুতর আঘাত

চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (নৌ-পুলিশ) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘মনে হচ্ছে রবিবার রাত ১টা থেকে ২টার মধ্যে ঘটনা ঘটেছে। সোমবার দুপুরে খবর পেয়েছি। পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এটি। সবার মাথায় আঘাত করা হয়েছে। পাঁচটি কক্ষে পাঁচজনের লাশ পেয়েছি। তিনজনকে পেয়েছি গুরুতর অবস্থায় পেয়েছি। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়। মনে হয় ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘জাহাজের কোনও মালামাল চুরি হয়নি। আমার মনে হচ্ছে এটি ডাকাতি নয়। জাহাজে কয়েক কোটি টাকার সার ছিল। নিহতদের মোবাইলগুলো পেয়েছি। তারা কিছু নিয়েছে মনে হচ্ছে না। তাদের টার্গেট ছিল হত্যা। আপাতদৃষ্টিতে বলা যায় এটি ডাকাতি নয়।’

তরিকুল ইসলাম ৯৯৯ নম্বরে ঘটনাটি জানান

হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা নাজনীন বলেন, ‘তরিকুল ইসলাম নামে একজন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেছিলেন। ওই ফোনের ভিত্তিতে ডিসি স্যার আমাকে বিকাল ৩টায় বিষয়টি জানিয়েছেন। পরে জানতে পেরেছি জাহাজের মালিক স্টাফদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। তখন একই কোম্পানির আরেকটি জাহাজের স্টাফদের বলেন জাহাজটি কোথায় আছে খোঁজ নিতে। তারা আল-বাখেরা জাহাজটিকে মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করা অবস্থায় দেখেন। পরে তারা জাহাজে উঠে দেখেন পাঁচ জন মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন।

জাহাজটির মালিক দিপলু রানা বলেন, ‘রবিবার রাত সাড়ে ৮টায় চালকের (মাস্টার) সঙ্গে আমার সর্বশেষ কথা হয়। তখন তারা জানান মেঘনা নদীতে আছেন। তবে সকালে মোবাইলে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে আমাদের আরেকটি জাহাজের (মুগনি-৩) নাবিকদের বিষয়টি জানাই। তারা ওই জাহাজের কাছাকাছি ছিল। তারা সেখানে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয় জানতে পারেন।’

মুগনি-৩ জাহাজের মাস্টার বাচ্চু মিয়া ও গ্রিজার মাসুদ বলেন, খালি জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলাম। মালিকের ফোন পেয়ে দুপুরে আল-বাখেরা জাহাজের কাছে যাই। সেখানে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পাঁচজনকে পড়ে থাকতে দেখেন সুকানি রবিউল। তারা জীবিত ছিলেন না। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনজন পড়ে ছিলেন। বিষয়টি পুলিশকে জানাই। তখন পুলিশ আসে। হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুজন মারা যায়। কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে সবাইকে।

বিষয়:

দুর্ঘটনা
ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত