Ad

কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল: পকেট কাটছে ব্যবসায়ীরা!

আনছার হোসেন, কক্সবাজার
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬: ৪৯
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬: ২৭

পর্যটন মৌসুম আসলেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সমাগম বাড়ে ভ্রমণ পিপাসুদের। স্পটগুলোতে পা ফেলারও জায়গা হয় না। ডিসেম্বরে পরিণত হয় জনারণ্যে। এখন তেমনই চলছে। একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি অন্যদিকে বিজয় দিবস, বড়দিন আর থার্টিফাস্ট নাইটকে ঘিরে পর্যটকের ঢল নেমেছে দেশের দ্বিতীয় ব্যয়বহুল এই শহরে।

গত তিনদিন ধরে কক্সবাজার শহর ও আশপাশের হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজে ভাড়া দেয়ার মতো কোন কক্ষ খালি নেই। অনেক পর্যটক খোলা আকাশের নিচে, সমুদ্রের বালুকাবেলায় রাত কাটাচ্ছেন। পর্যটকদের এই ভিড়ে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেলের অধিকাংশই ‘গলাকাটা’ ভাড়া আদায় করছেন। এসব হোটেলে অন্য সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বাস, ট্রেন ও ফ্লাইটেও একই অবস্থা চলছে। ট্রেনেও একই অবস্থা। ফ্লাইটেও কোন সিট খালি নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এতো মানুষ ফ্লাইটের টিকেট খুঁজছেন যে, বিমান ও ট্যুরিজম সাইট গুলোর ফ্লাইট বিভাগে ঢোকাই যাচ্ছে না। সাইটে ঢুকতে চাইলে অতিরিক্ত ট্রাফিক দেখাচ্ছে।

এদিকে কক্সবাজার শহর ও সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর পর্যটন পলস্নী, হিমছড়ির ঝর্ণা, পাথুরে সৈকত ইনানী-পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, টেকনাফ থানার ঐতিহাসিক প্রেমের নিদর্শন মাথিন কূপ, নেচার পার্ক, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধ বিহারসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতেও মানুষের জমজমাট সমাগম। কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটের জাহাজেও পর্যটকের জোয়ার লেগেছে।

শুক্রবার ও শনিবার কক্সবাজার শহরের কলাতলী হোটেল মোটেল জোন ও সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, এক হোটেল থেকে আরেক হোটেলে ছুটছেন পর্যটকরা। এমনও পাওয়া গেছে, ৫০টি হোটেল ঘুরেও রুম পাননি পর্যটকরা। এছাড়াও সৈকতের বালিয়াড়িতে ভিড় করেছেন পর্যটকরা।

সুদূর রাজশাহী থেকে এসেছেন মামুনুর রশিদ। তিনি পরিবারের ১০ সদস্য নিয়ে ছুটি কাটাতে কক্সবাজার এসেছেন। তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে কক্সবাজারে এসে পৌঁছেছি। রাত থেকে অনেক ঘুরেও রুম পাইনি। বাধ্য হয়ে সৈকতের চেয়ারে রাত কাটিয়েছি। রুম না পাওয়ায় আমরা বাধ্য হয়ে হয়ে চলে যাচ্ছি।

জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন মনে করেন, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার প্রতিদিন কম করে হলেও এক লাখ পর্যটক সমুদ্র সৈকতে নেমেছেন। তার ভাষায়, শহরের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট সৈকতে শুক্রবার ও শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কমপক্ষে দেড় লাখ পর্যটক নেমেছেন।

পর্যটকদের কক্সবাজার ভ্রমণের আগে অনলাইনে হোটেলকক্ষ বুকিং দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার। তিনি বলেন, শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজের কক্ষ শতভাগ বুকিং চলছে। তাই অগ্রিম বুকিং দিয়ে না আসলে পর্যটকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল কালাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পর্যটকবাহী ৭-৮ হাজার যানবাহন কক্সবাজার শহরে আসছেন। এতে যানজট সৃষ্টি হয়। তবে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন বলে দাবি করেন তিনি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে। হোটেল কক্ষের ভাড়া ও রেস্তুরাগুলোতে খাবারের দাম অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত