আওয়ামী শাসনে আলেম নিপীড়ন
রকীবুল হক
পবিত্র রমজানে দিনভর রোজা শেষে স্বাভাবিকভাবেই ইফতারের জন্য প্রস্তুত হন রোজাদাররা। তবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে স্বাভাবিক পরিবেশে ইফতার করারও নিশ্চয়তা পাননি অনেকে। বিশেষ করে আলেম-ওলামাদের গ্রেপ্তার করতে ইফতারের আগ মুহূর্তেও বিভিন্ন স্থানে হানা দিতো পুলিশ। বিনা অপরাধে ধরে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নামে চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। এমনই নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব। রোজার মাসেও রিমান্ডে নেওয়া হয় তাকে। দীর্ঘ দেড় মাস রিমান্ড শেষে কারাজীবন ছিল আরও বিভীষিকাময়। ফাঁসির আসামিদের মতো আবদ্ধ সেলে বন্দি করে রাখা হয় ‘খতিবে বাঙ্গালখ্যাত’ এই আলেমকে।
মূলত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ব্যানারে ইসলামি ইস্যুতে রাজপথে সোচ্চার থাকার কারণেই আওয়ামী সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এই যুগ্ম মহাসচিব। চলাফেরা, ওয়াজ মাহফিল বা সাংগঠনিক কাজকর্মে সব সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়তেন তিনি। সার্বক্ষণিক নজরদারির কারণে ছিল গ্রেপ্তার আতঙ্কও। তার পরিবারের সদস্যদের ওপরও নেমে আসে নানা নির্যাতন। বন্ধ করে দেওয়া হয় তার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলো। আওয়ামী সরকারের এসব জুলুম-নির্যাতনের তথ্য আমার দেশকে জানিয়েছেন তিনি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসন এবং ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আলেম-ওলামারা। রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অনেকেই নির্যাতিত হয়েছেন, তা আমরা অস্বীকার করি না। হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম ও শহীদ হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছেন। লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে তা সব মেলালেও ওলামায়ে কেরামের ওপর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এক রাতের বর্বরতার সমান হবে না। ’
তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছর কোনো মসজিদের মেহরাব নিরাপদ ছিল না। কোনো খতিবের মিম্বার বিপদমুক্ত ছিল না। কোনো ওয়াজ মাহফিল, ইসলামি সম্মেলন, ইসলাহী মজলিস, খানকা-কোনো তালিমি মজলিসের অনুমতি মিলত না। কোথাও ওয়াজ মাহফিল, ইসলামি সম্মেলন করলেই বাধার সৃষ্টি করা হতো।’
এর একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি বলেন, ‘মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তির পর আমার মাদ্রাসায় আসার কথা ছিল। কিন্তু সকাল থেকেই মাদ্রাসার চতুর্দিকের রাস্তা ব্লক করে রাখা হয়। সেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এভাবে ইসলামি আন্দোলনে জুলুম-নির্যাতন করেছে সরকার। এক কথায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার ছিল ইসলামবিদ্বেষী। ইসলামকে দেশ থেকে উৎখাত করাই ছিল তাদের মূল টার্গেট।’
নিজের গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট ও নির্যাতন প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের এই নেতা বলেন, ‘২০১৩ সালে আমাদের বিরুদ্ধে কয়েকশ মামলা দেওয়া হয়। জুনায়েদ বাবুনগরীসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পরদিন আমার মাদ্রাসা ঘেরাও করে পুলিশ। আমার জামাই মুফতি আব্দুল মালেকসহ চার শিক্ষক ও পাঁচজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মাদ্রাসার কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মূল্যবান কাগজপত্র-সবকিছু নিয়ে যায় তারা। ছাত্র-শিক্ষকদের পিটিয়ে বের করে দিয়ে সেখানে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর থেকে আমি খুব আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটিয়েছি। আমি যেখানে যেতাম সেখানেই পুলিশ হানা দিত। আমি বেঁচে আছি আল্লাহর রহমতে।’
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে আল্লামা শফীর ইন্তেকালের পর আমরা যখন আবার ঘুরে দাঁড়ালাম, আল্লামা বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামকে পুনর্গঠিত করলাম, তখন থেকেই আমাদের ওপর সরকারের ক্ষোভ ছিল। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমী, মামুনুল হক, জুনায়েদ আল হাবীব-এ ধরনের লোকদের কমিটিতে রাখা যাবে না। কিন্তু আমরা কোনো বাধা মানিনি। তখন থেকেই আমাদের প্রতি ক্ষোভ ছিল। গ্রেপ্তার আতঙ্ক নিয়েই আমরা চলতাম। শেষ পর্যন্ত তাদের বাবার ভাস্কর্যের নামে সারাদেশে মূর্তি স্থাপনের, বিশেষ করে পদ্মা সেতুর প্রবেশমুখে মূর্তি স্থাপনের জোরালো প্রতিবাদ করি আমরা। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মুখে সেখানে মূর্তি স্থাপন করতে পারেনি সরকার। আমরা আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে সব ঘরানার ওলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধ করি।’
‘দ্বিতীয়ত, ২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণের প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। এক পর্যায়ে আমরা কর্মসূচি দিই। কিন্তু বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজের সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ সাধারণ মুসল্লিদের ভেতর ঢুকে অতর্কিত হামলা করে। এর প্রতিবাদে সারাদেশে বিশেষ করে হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্র ও তৌহিদী জনতা মাঠে নামে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক এমপি উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরীর প্রকাশ্য নির্দেশে তাদের ওপর পাখির মতো গুলি করা হয়। সেখানে আমাদের সাতজন শাহাদতবরণ করেন। হত্যার প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ একটি হরতাল ডেকেছিলাম। কিন্তু উত্তরা-যাত্রাবাড়ীসহ কিছু জায়গায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ তাণ্ডব চালায়। এরপর আমাদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দেয় এবং গ্রেপ্তার শুরু করে।’
জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘আমি কখনো কোথাও আত্মগোপন করিনি। ওই বছরের ৪ রমজান আমি বারিধারা মাদ্রাসায় ছিলাম। আসরের পর গোটা মাদ্রাসায় ডিবি এবং সিভিল ড্রেসে পুলিশ ঘেরাও করে। আমাকে সেখান থেকে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে একজন অফিসারের সামনে বসিয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। পরে আমাকে পাশের একটি রুমে নিয়ে যায়। সেখানে দেখলাম, আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ অনেক ওলামায়ে কেরাম আছেন। সেখানে তাদের সঙ্গে বুট-মুড়ি দিয়ে ইফতার করলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমি দেড় মাস রিমান্ডে ছিলাম। একমাস ছিলাম ডিবিতে। ১৫ দিন ছিলাম রমনা, তেজগাঁও ও পল্টন থানায়। রিমান্ডে আমাকে অনেক অত্যাচার করা হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হতো। রাতদিন ২৪ ঘণ্টা আমাকে ঘুমাতে দেয়নি। সাতটা টিম আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এমন কোনো মানসিক নির্যাতন নেই, যা করেনি। দেড় মাস বারবার বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য দলের সঙ্গে আমার যোগাযোগের কথা জানতে চেয়েছে। তাদের কাছে নাকি রিপোর্ট আছে-আমার সঙ্গে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এক কথা ১০-২০ বার জিজ্ঞাসা করত। সেখানে বারবার আমাকে পাকিস্তানি রাজাকার বলে গালি দেওয়া হয়েছে। এমনকি হাফেজ্জি হুজুর থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষ আলেদের রাজাকারের কমান্ডার বলাসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে।’
রিমান্ডকালের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘কেরানীগঞ্জ কারাগারে ফাঁসির সেলে দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখা হতো আমাদের। আমাদের যে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল, সেখানে লাল ফিতায় ‘হেফাজত ওয়ার্ড’ লেখা ছিল। সেখানে অন্য কোনো লোকজনকে আসতে দিত না। পুলিশ বাইরে ডিউটি করত, আমাদের খাবার দিয়ে যেত, কিন্তু কোনো কথা বলত না। ৪৫-৫০ ফুট লম্বা একটি বারান্দায় আমরা ছিলাম ৬৫ জন। বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। এই অবস্থায় কেটেছে কেরানীগঞ্জের কারাজীবন।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস পর আমাদের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে প্রায় দেড় বছর ছিলাম। তিনটি ঈদ গেছে কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগারে। এক বছর পর্যন্ত আমাদের পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। আমার পরিবার যে কুরবানি দিতে পেরেছে তা জেনেছি ৯ মাস পরে। এভাবে দুই বছর কারাবন্দি জীবন কেটেছে।’
মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘আমাকে ২০টি মামলায় অ্যারেস্ট দেখানো হয়। এর মধ্যে ১২টি ঢাকায় এবং ৮টি চট্টগ্রামের মামলা। এ মামলাগুলো ছিল মিথ্যা। দীর্ঘ ৯ মাসে এক এক করে ২০টি মামলায় আমার জামিন হয়। মুক্তির পরও আমি চট্টগ্রামের মামলায় মাসে আট দিন হাজিরা দিয়েছি। ১২ দিন হাজিরা দিতাম ঢাকায়। এভাবে মাসে ২০ দিন আমার কোর্টের ভেতরে কাটত।’
গ্রেপ্তার ও দুই বছর কারাজীবনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে তার পরিবারের ওপর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার গ্রেপ্তারের পর পল্লবী ও বিরুলিয়ায় অবস্থিত আমার দুইটা মাদ্রাসা প্রায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয় সরকার। আমার পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে। আমার ছেলেদের ধরার জন্য বাসা ঘেরাও করত, পুলিশ সব সময় হানা দিত। আমার জামাইদের ধরার চেষ্টা করত। শেষ পর্যন্ত আমার পরিবার ঢাকায় থাকতেই পারেনি। পীরেরবাগের বাসা ছেড়ে সাভারে গিয়ে গ্রামগঞ্জে মানবেতর জীবনযাপন করেছে তারা। আমার ছেলে ও জামাইরা ছয় মাস পর্যন্ত আত্মগোপনে ছিল।’
১৯৬৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণকারী মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব মিরপুর মুসলিম বাজার দারুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০০০ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন জামিয়া কাসিমিয়া আশরাফুল উলূম মাদ্রাসা। বর্তমানে নিজের প্রতিষ্ঠিত দুই-তিনটি মাদ্রাসা পরিচালনায় নিয়োজিত আছেন মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব।
পবিত্র রমজানে দিনভর রোজা শেষে স্বাভাবিকভাবেই ইফতারের জন্য প্রস্তুত হন রোজাদাররা। তবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে স্বাভাবিক পরিবেশে ইফতার করারও নিশ্চয়তা পাননি অনেকে। বিশেষ করে আলেম-ওলামাদের গ্রেপ্তার করতে ইফতারের আগ মুহূর্তেও বিভিন্ন স্থানে হানা দিতো পুলিশ। বিনা অপরাধে ধরে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নামে চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। এমনই নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব। রোজার মাসেও রিমান্ডে নেওয়া হয় তাকে। দীর্ঘ দেড় মাস রিমান্ড শেষে কারাজীবন ছিল আরও বিভীষিকাময়। ফাঁসির আসামিদের মতো আবদ্ধ সেলে বন্দি করে রাখা হয় ‘খতিবে বাঙ্গালখ্যাত’ এই আলেমকে।
মূলত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ব্যানারে ইসলামি ইস্যুতে রাজপথে সোচ্চার থাকার কারণেই আওয়ামী সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এই যুগ্ম মহাসচিব। চলাফেরা, ওয়াজ মাহফিল বা সাংগঠনিক কাজকর্মে সব সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়তেন তিনি। সার্বক্ষণিক নজরদারির কারণে ছিল গ্রেপ্তার আতঙ্কও। তার পরিবারের সদস্যদের ওপরও নেমে আসে নানা নির্যাতন। বন্ধ করে দেওয়া হয় তার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলো। আওয়ামী সরকারের এসব জুলুম-নির্যাতনের তথ্য আমার দেশকে জানিয়েছেন তিনি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসন এবং ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আলেম-ওলামারা। রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অনেকেই নির্যাতিত হয়েছেন, তা আমরা অস্বীকার করি না। হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম ও শহীদ হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছেন। লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে তা সব মেলালেও ওলামায়ে কেরামের ওপর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এক রাতের বর্বরতার সমান হবে না। ’
তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছর কোনো মসজিদের মেহরাব নিরাপদ ছিল না। কোনো খতিবের মিম্বার বিপদমুক্ত ছিল না। কোনো ওয়াজ মাহফিল, ইসলামি সম্মেলন, ইসলাহী মজলিস, খানকা-কোনো তালিমি মজলিসের অনুমতি মিলত না। কোথাও ওয়াজ মাহফিল, ইসলামি সম্মেলন করলেই বাধার সৃষ্টি করা হতো।’
এর একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি বলেন, ‘মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তির পর আমার মাদ্রাসায় আসার কথা ছিল। কিন্তু সকাল থেকেই মাদ্রাসার চতুর্দিকের রাস্তা ব্লক করে রাখা হয়। সেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এভাবে ইসলামি আন্দোলনে জুলুম-নির্যাতন করেছে সরকার। এক কথায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার ছিল ইসলামবিদ্বেষী। ইসলামকে দেশ থেকে উৎখাত করাই ছিল তাদের মূল টার্গেট।’
নিজের গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট ও নির্যাতন প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের এই নেতা বলেন, ‘২০১৩ সালে আমাদের বিরুদ্ধে কয়েকশ মামলা দেওয়া হয়। জুনায়েদ বাবুনগরীসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পরদিন আমার মাদ্রাসা ঘেরাও করে পুলিশ। আমার জামাই মুফতি আব্দুল মালেকসহ চার শিক্ষক ও পাঁচজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মাদ্রাসার কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মূল্যবান কাগজপত্র-সবকিছু নিয়ে যায় তারা। ছাত্র-শিক্ষকদের পিটিয়ে বের করে দিয়ে সেখানে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর থেকে আমি খুব আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটিয়েছি। আমি যেখানে যেতাম সেখানেই পুলিশ হানা দিত। আমি বেঁচে আছি আল্লাহর রহমতে।’
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে আল্লামা শফীর ইন্তেকালের পর আমরা যখন আবার ঘুরে দাঁড়ালাম, আল্লামা বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামকে পুনর্গঠিত করলাম, তখন থেকেই আমাদের ওপর সরকারের ক্ষোভ ছিল। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমী, মামুনুল হক, জুনায়েদ আল হাবীব-এ ধরনের লোকদের কমিটিতে রাখা যাবে না। কিন্তু আমরা কোনো বাধা মানিনি। তখন থেকেই আমাদের প্রতি ক্ষোভ ছিল। গ্রেপ্তার আতঙ্ক নিয়েই আমরা চলতাম। শেষ পর্যন্ত তাদের বাবার ভাস্কর্যের নামে সারাদেশে মূর্তি স্থাপনের, বিশেষ করে পদ্মা সেতুর প্রবেশমুখে মূর্তি স্থাপনের জোরালো প্রতিবাদ করি আমরা। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মুখে সেখানে মূর্তি স্থাপন করতে পারেনি সরকার। আমরা আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে সব ঘরানার ওলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধ করি।’
‘দ্বিতীয়ত, ২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণের প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। এক পর্যায়ে আমরা কর্মসূচি দিই। কিন্তু বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজের সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ সাধারণ মুসল্লিদের ভেতর ঢুকে অতর্কিত হামলা করে। এর প্রতিবাদে সারাদেশে বিশেষ করে হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্র ও তৌহিদী জনতা মাঠে নামে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক এমপি উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরীর প্রকাশ্য নির্দেশে তাদের ওপর পাখির মতো গুলি করা হয়। সেখানে আমাদের সাতজন শাহাদতবরণ করেন। হত্যার প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ একটি হরতাল ডেকেছিলাম। কিন্তু উত্তরা-যাত্রাবাড়ীসহ কিছু জায়গায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ তাণ্ডব চালায়। এরপর আমাদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দেয় এবং গ্রেপ্তার শুরু করে।’
জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘আমি কখনো কোথাও আত্মগোপন করিনি। ওই বছরের ৪ রমজান আমি বারিধারা মাদ্রাসায় ছিলাম। আসরের পর গোটা মাদ্রাসায় ডিবি এবং সিভিল ড্রেসে পুলিশ ঘেরাও করে। আমাকে সেখান থেকে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে একজন অফিসারের সামনে বসিয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। পরে আমাকে পাশের একটি রুমে নিয়ে যায়। সেখানে দেখলাম, আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ অনেক ওলামায়ে কেরাম আছেন। সেখানে তাদের সঙ্গে বুট-মুড়ি দিয়ে ইফতার করলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমি দেড় মাস রিমান্ডে ছিলাম। একমাস ছিলাম ডিবিতে। ১৫ দিন ছিলাম রমনা, তেজগাঁও ও পল্টন থানায়। রিমান্ডে আমাকে অনেক অত্যাচার করা হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হতো। রাতদিন ২৪ ঘণ্টা আমাকে ঘুমাতে দেয়নি। সাতটা টিম আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এমন কোনো মানসিক নির্যাতন নেই, যা করেনি। দেড় মাস বারবার বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য দলের সঙ্গে আমার যোগাযোগের কথা জানতে চেয়েছে। তাদের কাছে নাকি রিপোর্ট আছে-আমার সঙ্গে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এক কথা ১০-২০ বার জিজ্ঞাসা করত। সেখানে বারবার আমাকে পাকিস্তানি রাজাকার বলে গালি দেওয়া হয়েছে। এমনকি হাফেজ্জি হুজুর থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষ আলেদের রাজাকারের কমান্ডার বলাসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে।’
রিমান্ডকালের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘কেরানীগঞ্জ কারাগারে ফাঁসির সেলে দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখা হতো আমাদের। আমাদের যে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল, সেখানে লাল ফিতায় ‘হেফাজত ওয়ার্ড’ লেখা ছিল। সেখানে অন্য কোনো লোকজনকে আসতে দিত না। পুলিশ বাইরে ডিউটি করত, আমাদের খাবার দিয়ে যেত, কিন্তু কোনো কথা বলত না। ৪৫-৫০ ফুট লম্বা একটি বারান্দায় আমরা ছিলাম ৬৫ জন। বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। এই অবস্থায় কেটেছে কেরানীগঞ্জের কারাজীবন।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস পর আমাদের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে প্রায় দেড় বছর ছিলাম। তিনটি ঈদ গেছে কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগারে। এক বছর পর্যন্ত আমাদের পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। আমার পরিবার যে কুরবানি দিতে পেরেছে তা জেনেছি ৯ মাস পরে। এভাবে দুই বছর কারাবন্দি জীবন কেটেছে।’
মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘আমাকে ২০টি মামলায় অ্যারেস্ট দেখানো হয়। এর মধ্যে ১২টি ঢাকায় এবং ৮টি চট্টগ্রামের মামলা। এ মামলাগুলো ছিল মিথ্যা। দীর্ঘ ৯ মাসে এক এক করে ২০টি মামলায় আমার জামিন হয়। মুক্তির পরও আমি চট্টগ্রামের মামলায় মাসে আট দিন হাজিরা দিয়েছি। ১২ দিন হাজিরা দিতাম ঢাকায়। এভাবে মাসে ২০ দিন আমার কোর্টের ভেতরে কাটত।’
গ্রেপ্তার ও দুই বছর কারাজীবনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে তার পরিবারের ওপর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার গ্রেপ্তারের পর পল্লবী ও বিরুলিয়ায় অবস্থিত আমার দুইটা মাদ্রাসা প্রায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয় সরকার। আমার পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে। আমার ছেলেদের ধরার জন্য বাসা ঘেরাও করত, পুলিশ সব সময় হানা দিত। আমার জামাইদের ধরার চেষ্টা করত। শেষ পর্যন্ত আমার পরিবার ঢাকায় থাকতেই পারেনি। পীরেরবাগের বাসা ছেড়ে সাভারে গিয়ে গ্রামগঞ্জে মানবেতর জীবনযাপন করেছে তারা। আমার ছেলে ও জামাইরা ছয় মাস পর্যন্ত আত্মগোপনে ছিল।’
১৯৬৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণকারী মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব মিরপুর মুসলিম বাজার দারুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০০০ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন জামিয়া কাসিমিয়া আশরাফুল উলূম মাদ্রাসা। বর্তমানে নিজের প্রতিষ্ঠিত দুই-তিনটি মাদ্রাসা পরিচালনায় নিয়োজিত আছেন মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব।
এখন শেখ হাসিনাকে দেখভালের দায়িত্ব ভারতেরই এবং ভারত সেই দায়িত্ব নিয়েছে। শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময়ের জন্য ভারতেই থাকবেন এটাই এখন সবচেয়ে বড় সত্যি। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা ইসুতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি হলেও তাকে আশ্রয় দেওয়া ছাড়া ভারতের সামনে আর কোনো পথ নেই।
২০ ঘণ্টা আগেবিগত সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনিয়ম বিষয়ে এই সরকার একটি কমিটি করেছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন নামে এই কমিটি তাদের রিপোর্টও জমা দিয়েছে। রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে জিডিপি, মূল্যস্ফীতি ও মাথাপিছু আয়ের পরিসংখ্যানে গোঁজামিল ছিলো। জনগণকে এক ধাঁধার মধ্যে ফেলে ‘উচ্চতর প্রবৃদ্ধির' কাল্পনিক গল্প শোনানো হয়েছে
২১ ঘণ্টা আগেজুলাই বিপ্লবের দিন ৫ আগস্ট সাড়ে ১২ ঘণ্টা সংসদ ভবনের বাংকারে আত্মগোপনে ছিলেন সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর সেনাবাহিনী তাকে ক্যান্টনমেন্টে সেনা হেফাজতে নিয়ে যায়।
২ দিন আগেবঙ্গভবনের দরবার হল। রাষ্ট্রপতির জন্য অপেক্ষা করছেন অতিথিরা। আসনে বসে আছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমর্ষ ও ভীতসন্ত্রস্ত রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন দরবার হলে প্রবেশ করলেন। একে একে সবার সঙ্গে হাত মেলালেন।
২ দিন আগে