দায় এড়াতে পারে না বিশ্বব্যাংক এডিবি ও দেশের সুশিলরা
সৈয়দ মিজানুর রহমান
আর্থিক খাতে শেখ হাসিনার পুরো শাসনামল জুড়েই ছিল বানোয়াট পরিসংখ্যানের ছড়াছড়ি। অর্থনৈতিক দুর্বলতা ঢাকতে প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, খেলাপি ঋণ, রাজস্ব আদায়, মূল্যস্ফীতিসহ সব সূচকেই পরিসংখ্যান জালিয়াতি করা হয়। বানোয়াট পরিসংখ্যানের উন্নয়ন গল্পে প্রতারিত হয়েছে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)সহ দেশি বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীরা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ হাসিনা সরকারের পরিসংখ্যান জালিয়াতিকে ‘এক বিষ্ময়কর টপ টু বটন দুর্নীতির উন্নয়ন’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, বিগত দেড় দশকে আর্থিক খাতকে যেভাবে জালিয়াতি তথ্যের ওপর দাঁড় করানো হয়েছিল-তা দেশের ইতিহাসে তো বটেই দুনিয়াতেও বিরল।
পরিসংখ্যান জালিয়াতির মাধ্যমে ভয়াবহ এমন দুর্নীতি হলেও, কোনো এক অদৃশ্য কারণে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি। ঠিক একই ভাবে দেশে যাঁরা সরকারের দেয়া তথ্যের ওপর ভর করে বিভিন্ন গবেষণা কর্মকান্ড চালিয়েছেন, তারাও ছিলেন নিরব। এই নিরবতার পেছনে হাসিনার চতুরতা ও ভিন্ন পথে তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ না থাকাকেও যৌক্তিক কারণ বলে দাবি করেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা।
বানোয়াট পরিসংখ্যান সাজিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর মূল কারিগর ছিলেন হাসিনার সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী লোটাস কামাল, হাসিনার অতি বিশ্বস্ত সালমান রহমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল গভর্ণর। এদের সঙ্গে গড়ে উঠেছিলো আর্থিক খাতে ডাটা কেলেঙ্কারির একটি সিন্ডিকেট।
ব্যবসায়ী-অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েছিল গোটা দেশের পরিসংখ্যান। ফলে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখে বানোয়াট প্রবৃদ্ধি দেখানো হতো। কিন্তু সামষ্টিক অর্থনীতির সঙ্গে পরিসংখ্যানের কোনো মিল ছিল না। মূলত রাজনৈতিক কারণে এবং দেশের অর্থনীতিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর জন্যই পদ্ধতিগত পরিবর্তন এনে সরবরাহ করা হয় বিকৃত পরিসংখ্যান।
হাসিনা সরকারের পরিসংখ্যান জালিয়াতির বড় ঘটনা নজরে আসে রপ্তানি আয় নিয়ে। ২০২৩-২০৪ অর্থবছরের ১০ মাসের রপ্তানি আয় প্রকৃত পরিমাণের চেয়ে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি দেখানোর ঘটনা বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ইপিবির তথ্যে বলা হয়, দশ মাসে দেশে পণ্য রফতানি হয়েছে মোট ৪৭ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে দেখা যায়, ওই একই সময়ে রফতানি আয় এসেছে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রফতানির মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর একটি খাতকে নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি তথ্য প্রকাশের এমন ঘটনায় একই সঙ্গে বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন অর্থনীতিবিদরা। এমন ডাহা মিথ্যা তথ্যের পর দেশের জিডিপি, মোট জাতীয় উৎপাদন (জিএনপি), বিদেশি বিনিয়োগ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ঋণ গ্রহণের নীতি লেনদেনের ভারসাম্যসহ অর্থনীতির অনেক সূচক এবং নীতির যথার্থতা নিয়েও তখন প্রশ্ন উঠে।
২০১৮ সালে প্রবৃদ্ধির তথ্যে বিস্তর ফারাক নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রথম বার দ্বন্দ্বে জড়ান মুস্তফা কামাল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। যদিও লোটাস কামাল ওই বছরের এপ্রিলে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ হবে বলে দাবি করেন। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ছিল, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে বড়জোর ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এডিবির পক্ষ থেকেও সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা হয়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের ডাটাকে চ্যালেঞ্জ করে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘আমাদের ডাটাই সঠিক।’ সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাংককে ‘আলটিমেটাম’ দিয়ে অচিরেই বিবিএসের সঙ্গে বসে ডাটা সংশোধনের জন্য সময়ও বেঁধে দিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। করোনাকালে সারা দুনিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি যখন নেতিবাচক, তখনও লোটাস কামালের যাদুতে বাংলাদেশের জিডিপি’র এক আজগুবি তথ্য হাজির করা হয়েছিল। এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখানো হয় ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি চেপে রাখতে বহু বছর ধরেই হাসিনার সরকার প্রকৃত তথ্য আড়ালে রেখেছে। দশ টাকা দরে চাল খাওয়ানোর টোপ ফেলা হাসিনার পনের বছরের শাসনামলে দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের মাঝে চরম হতাশা তৈরি হয়। ২০০৫ সালে বাজারে প্রতিকেজি চালের গড় মূল্য ছিল ২৪ টাকা। ২০০৫ থেকে ২০১০ সময়কালে এ মূল্য ছিল ২৭-২৮ টাকা। হাসিনার ক্ষমতায় আসার পরই বাজার সিন্ডিকেটের কবলে নিত্যপণ্যর দাম বাড়তে থাকে। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে চালের দাম এক লাফে বেড়ে হয় ৪৫ টাকা। চালের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে তেল, চিনি, ডাল, আটার দাম। তবে অবাক করার বিষয় সেই সাথে মানুষের আয় তেমন না বাড়লেও অর্থনীতির সূত্র পাল্টে দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমতে থাকে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে আসে। ওই বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয় মাত্র ৫ দশমিক ২২ ভাগ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর পর থেকে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখীই ছিল। মূল্যস্ফীতির এই নিম্নহার জালিয়াতির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।
মানুষের গড় আয় নিয়েও ডাহা মিথ্যাচার করেছে হাসিনার সরকার। বাংলাদেশে গৃহস্থালি আয় ও ব্যয় সমীক্ষা ২০২২ প্রতিবেদন অনুযায়ি ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১২ বছরে গড় গৃহস্থালি আয় ১১ হাজার ৪৭৯ টাকা থেকে বেড়ে ৩২ হাজার ৪২২ টাকায় দেখানো হয়। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরো সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
মিথ্যাচার হয়েছে দারিদ্রতা নিয়ে। হাসিনার চাটুকাররা দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশে গরিব মানুষ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাদের সাজানো পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০ থেকে ২০২২ সালে দৈনিক ২.১৫ ডলারের নিচে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা ১৮.২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ প্রতি ৫ বছরে প্রায় ৫ শতাংশ হ্রাস। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর সংশ্লিষ্টরা বলছেন এর কোন ভিত্তি নেই।
এভাবে সাজানো তথ্যের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়েছে অর্থনীতির মূল প্রাণ ব্যাংকিং খাত। ব্যাংক খাতে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার পরও খেলাপি গ্রাহককের সেই ঋণ গোপন রেখে কৌশলে একই গ্রাহককে দেয়া হতো নতুন ঋণ। তথ্য জালিয়াতির এই প্রক্রিয়ায় ধামাচাপা দেয়া ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ এখন ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণের ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯১০ কোটি টাকাই হাসিনার পনের বছরের। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টদের মতে প্রকৃত খেলাপির পরিমাণ অনেক বেশি।
রিজার্ভ নিয়েও জালিয়াতি করেছে হাসিনার আওয়ামী সরকার। ৪৫ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ দেখানো হয়েছিলো কাগজে-কলমে। আর্থিক খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’র গবেষণা পরিচালক ড. বজলুল হক খন্দরকার বিগত হাসিনা সরকারের বানোয়াট পরিসংখ্যানকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উল্লেখ করে ভবিষ্যতে এ ধরণের ভয়ঙ্কর তথ্য জালিয়াতি রোধে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়ার দাবি করেন।
তার কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পরিসংখ্যান জালিয়াতি যে রাজনৈতিক ভাবে হচ্ছে তা আপনারা জেনেও নিরব থাকার কারণ কি ছিলো? উত্তরে তিনি আমার দেশকে বলেন, বিগত দেড় দশকে আর্থিক খাতের পরিসংখ্যান নিয়ে যা হয়েছে তার সবই মনগড়া ও বানোয়াট। সেখানে যেমন বিশেষজ্ঞদের মতামত উপক্ষো করা হয়েছে, তেমনি সাজানো তথ্য তৈরিতে ছিলো কঠোর নজরদারি।
হাসিনার বানোয়াট পরিসংখ্যান বিষয়ে প্রথম বারের মতো বিশ্বব্যাংক ও এডিবিকে সর্তক করেছিলেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক। ২০২০ এবং ২০২৩ সালে আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান এ নিয়ে বিস্তর তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশের প্রধান দুই উন্নয়ন সহযোগী, বিশ্বব্যাংক ও এডিবিকে চিঠি দিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাংক দায়সাড়া ভাবে চিঠির উত্তর দিলেও, এডিবি ছিলো চুপ।
এই প্রতিবেদকের কাছে চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বিকার করে ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেহরিন আহমেদ মাহবুব জানান, তাদের হাতে ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর একটি চিঠি এসেছিলো সাউথ এশিয়ান পলিসি ইনিশিয়েটিভ এর পক্ষ থেকে। ঐ চিঠিতে বিশ্ব ব্যাংককে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের ভয়াবহ দুর্নীতি ও পরিসংখ্যান জালিয়াতির কথা তুলে ধরা হয়। মেহরিন আহমেদ বলেন, ঐ চিঠি প্রাপ্তির একদিন পর ১২ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষ থেকে জবাব পাঠানো হয়।
পরিসংখ্যান জালিয়াতির সুস্পষ্ট তথ্য তুলে ধরা ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবরের সেই চিঠির একটি কপি সংগ্রহ করে দেখা যায় সেখানে সাতটি বিষয়ে বিশ্বব্যাংককে ব্যবস্থা নেয়ার কথা তুলে ধরা হয়। এর প্রথমটিই ছিলো অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান জালিয়াতির বিষয়। হিসাবের গরমিলের বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষন করে মাহমুদুর রহমান লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান পরিসংখ্যানে বিশাল গরমিল রয়েছে। রপ্তানি, আমদানি, রেমিট্যান্স এবং বিদেশি মুদ্রা স্থানান্তরের হিসাব সঠিক নয়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর রপ্তানি আয়ের তথ্য মিলছে না।’
অর্থ পাচারের বিষয়ে বলা হয়েছিলো, ‘শেখ হাসিনা এবং তার ওলিগার্করা গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন দেশে এবং নিরাপদ জায়গায় পাচার করেছেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এরকম বহু-জাতীয় দুর্নীতির একটি উদাহরণ।’
ড. মাহমুদুর রহমান বিশ্বব্যাংককে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার জন্য দায় এড়াতে পারে না। তারা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের ভুয়া জিডিপি পরিসংখ্যানকে গ্রহণ করেছে এবং এমনকি কখনো কখনো এগুলোকে আরও বাড়িয়ে দেখিয়েছে। আমি আশা করি, বিশ্বব্যাংক এই পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করবে এবং এর কর্মকর্তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখবে।
বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে সাপি অনুরোধ করছিলো বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ লুটপাট করা সরকারের সব তহবিল স্থগিত করা, নতুন ঋণ প্রদান বন্ধ এবং শেখ হাসিনা সরকারকে আন্তর্জাতিক ভাবে ‘অর্থনৈতিক অচ্ছুত’ হিসাবে ঘোষণা ।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেহরিন আহমেদ মাহবুব দৈনিক আমার দেশকে জানান, তারা সাপিকে বিশ্বব্যাংকের জবাব পাঠিয়েছিলেন। সেই জবাবে অবশ্য সুস্পষ্ট কিছুই বলেনি বিশ্বব্যাংক। ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর সাপি বরাবর বিশ্বব্যাংকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত যে সুশাসন এবং স্বচ্ছতা টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূলভিত্তি। আমাদের অর্থায়িত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে, আমরা দুর্নীতির বিষয়ে শূন্য সহনশীলতা বজায় রাখি এবং নিশ্চিত করি যে অর্থ যথাযথ উদ্দেশ্যে ও বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভূটানের ডিরেক্টর আব্দুলায়ে সেক।
পরিসংখ্যান জালিয়াতির বিষয়টি সতর্ক করে দিয়ে আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান তার আগে ২০২০ সালের ৬ জুলাই চিঠি দেন এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ এর কাছে। তিনি সেখানে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেন ‘এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক একটি দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী সরকারকে অর্থায়ন করছে।’
ড. মাহমুদুর রহমান এডিবিকে জানান, ‘আমি ভুলভাবে ভেবেছিলাম যে এডিবি স্বচ্ছতা, গণতান্ত্রিক শাসন, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে মূল্য দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার উল্লেখিত সকল ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার নজির সৃষ্টি করেছে।’
আমার দেশ সম্পাদক এডিবিকে জানিয়েছিলেন, ‘এডিবি কর্তৃক শেখ হাসিনার সরকারকে অন্ধভাবে সমর্থনের কারণে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এডিবি যেমন সরকারের পক্ষপাতিত্ব করছে, তেমনি সরকারের ভুল পরিসংখ্যানকেও যাচাই-বাছাই ছাড়াই সমর্থন দিচ্ছে।’
এ বিষয়ে ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ২০২০ সালের লেখা এই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি এডিবি। তবে বিশ্ব ব্যাংক একটি দায়সারা জবাব দিয়েছিল।
বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে বানোয়াট পরিসংখ্যান নিয়ে এডিবি দায় এড়াতে পারে কিনা বা এডিবি কীভাবে দায়বদ্ধ থাকবে? এমন প্রশ্ন করা হলে সংস্থাটির বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের এক্সটার্নাল রিলেশন টিম লিডার গোবিন্দ বার একটি লিখিত বিবৃতি পাঠান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘উচ্চ-মানের তথ্য প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণ ও কার্যকর প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাল্টিল্যাটারাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকগুলো, যেমন এডিবি, তাদের সদস্য দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক তথ্য প্রণয়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থাগুলো প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে, আর আমাদের কিছু প্রক্ষেপণ, যা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি সূচকগুলোর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, তা কখনো কখনো সরকারি পূর্বাভাস থেকে ভিন্ন হতে পারে। এডিবি আমাদের সদস্য দেশগুলোর নির্ভরযোগ্য, সময়োপযোগী, এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সঠিক তথ্য উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের সব ধরনের সরকারি পরিসংখ্যান তৈরি ও প্রকাশ করে থাকে। এক সময় এটি একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠান ছিলো। তবে লোটাস কামাল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই এর অধীন বিবিএসকে পুরোপুরি জালিয়াতি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। অভিযোগ রয়েছে সে সময় বিবিএসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিপিআই শাখার দক্ষ সৎ কর্মকর্তাদের একযোগে সরিয়ে দেয়া হয়।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাবেক এক পরিচালক নিজের নাম প্রকাশে অপারগতা জানিয়ে বলেন, গত দেড় দশকে প্রতিষ্ঠানটিতে কথা বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না। পরিসংখ্যান নিয়ে কেউ ন্যূনতম আপত্তি তুললে বা কথা বলার চেষ্টা করলে ঢাকার বাইরে বা কম গুরুত্বপূর্ণ শাখায় বদলি করে দেয়া হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ন্যাশনাল একাউন্টিং উইং এর পরিচালক রফিকুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, অতীতে এখানে অনেক কিছুই ঘটেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। তথ্য সংগ্রহে কোন নীতিমালা মানা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে এ ধরণের সুযোগ আর তৈরি হবে না। ইতিমধ্যে তারা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ শুরু করেছেন। আন্তর্জাতিক মানদন্ডের বাইরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই বলেও তিনি জানান।
পরিসংখ্যান জালিয়াতি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থউপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আমার দেশকে বলেন, ‘মূলত একটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি থেকে শুরু করে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নির্ধারণ এবং অর্থনৈতিক নানান নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিসংখ্যান সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করে থাকে। তবে হাসিনা সরকার পরিসংখ্যান জালিয়াতি করে দেশের জনগনের সঙ্গে প্রতারণা করে গেছেন।’
হাসিনা সরকারের পরিসংখ্যান জালিয়াতির কারণে দেশের প্রকৃত রপ্তানি আয় নিয়ে ধোঁয়াশা ছিলো বহুদিন ধরেই। তবে রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীরা সরকারি সুবিধা ভোগী হওয়ায় নিরব থেকেছেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। তাই ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে বর্তমানে বিকেএমইএ’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ হাতেম। তিনি আমার দেশকে বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানিসহ বিভিন্ন খাতে তারা দীর্ঘদিন ধরেই তথ্যের বড় জালিয়াতি দেখে আসছেন। কিন্তু তাদের বক্তব্য বিগত সরকার আমলে নেয়নি। তিনি বলেন, ২০২২ সালেও রপ্তানি আয়ের হিসাবে বড় গড়মিল আসে। সেই থেকেই আমরা বলছি যে, ইপিবির রফতানি তথ্যে ভুল আছে। কিন্তু আমাদের কথা সেভাবে আমলে নেওয়া হয়নি।’
বিগত সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনিয়ম বিষয়ে এই সরকার একটি কমিটি করেছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন নামে এই কমিটি তাদের রিপোর্টও জমা দিয়েছে। রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে জিডিপি, মূল্যস্ফীতি ও মাথাপিছু আয়ের পরিসংখ্যানে গোঁজামিল ছিলো। জনগণকে এক ধাঁধার মধ্যে ফেলে ‘উচ্চতর প্রবৃদ্ধির' কাল্পনিক গল্প শোনানো হয়েছে এতো বছর। কমিটি মনে করে, রাজনৈতিকভাবে বাহবা পাওয়ার জন্য জিডিপির হার ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে, বাস্তবতার সঙ্গে যার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আর্থিক খাতে শেখ হাসিনার পুরো শাসনামল জুড়েই ছিল বানোয়াট পরিসংখ্যানের ছড়াছড়ি। অর্থনৈতিক দুর্বলতা ঢাকতে প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, খেলাপি ঋণ, রাজস্ব আদায়, মূল্যস্ফীতিসহ সব সূচকেই পরিসংখ্যান জালিয়াতি করা হয়। বানোয়াট পরিসংখ্যানের উন্নয়ন গল্পে প্রতারিত হয়েছে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)সহ দেশি বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীরা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ হাসিনা সরকারের পরিসংখ্যান জালিয়াতিকে ‘এক বিষ্ময়কর টপ টু বটন দুর্নীতির উন্নয়ন’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, বিগত দেড় দশকে আর্থিক খাতকে যেভাবে জালিয়াতি তথ্যের ওপর দাঁড় করানো হয়েছিল-তা দেশের ইতিহাসে তো বটেই দুনিয়াতেও বিরল।
পরিসংখ্যান জালিয়াতির মাধ্যমে ভয়াবহ এমন দুর্নীতি হলেও, কোনো এক অদৃশ্য কারণে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি। ঠিক একই ভাবে দেশে যাঁরা সরকারের দেয়া তথ্যের ওপর ভর করে বিভিন্ন গবেষণা কর্মকান্ড চালিয়েছেন, তারাও ছিলেন নিরব। এই নিরবতার পেছনে হাসিনার চতুরতা ও ভিন্ন পথে তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ না থাকাকেও যৌক্তিক কারণ বলে দাবি করেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা।
বানোয়াট পরিসংখ্যান সাজিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর মূল কারিগর ছিলেন হাসিনার সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী লোটাস কামাল, হাসিনার অতি বিশ্বস্ত সালমান রহমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল গভর্ণর। এদের সঙ্গে গড়ে উঠেছিলো আর্থিক খাতে ডাটা কেলেঙ্কারির একটি সিন্ডিকেট।
ব্যবসায়ী-অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েছিল গোটা দেশের পরিসংখ্যান। ফলে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখে বানোয়াট প্রবৃদ্ধি দেখানো হতো। কিন্তু সামষ্টিক অর্থনীতির সঙ্গে পরিসংখ্যানের কোনো মিল ছিল না। মূলত রাজনৈতিক কারণে এবং দেশের অর্থনীতিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর জন্যই পদ্ধতিগত পরিবর্তন এনে সরবরাহ করা হয় বিকৃত পরিসংখ্যান।
হাসিনা সরকারের পরিসংখ্যান জালিয়াতির বড় ঘটনা নজরে আসে রপ্তানি আয় নিয়ে। ২০২৩-২০৪ অর্থবছরের ১০ মাসের রপ্তানি আয় প্রকৃত পরিমাণের চেয়ে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি দেখানোর ঘটনা বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ইপিবির তথ্যে বলা হয়, দশ মাসে দেশে পণ্য রফতানি হয়েছে মোট ৪৭ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে দেখা যায়, ওই একই সময়ে রফতানি আয় এসেছে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রফতানির মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর একটি খাতকে নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি তথ্য প্রকাশের এমন ঘটনায় একই সঙ্গে বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন অর্থনীতিবিদরা। এমন ডাহা মিথ্যা তথ্যের পর দেশের জিডিপি, মোট জাতীয় উৎপাদন (জিএনপি), বিদেশি বিনিয়োগ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ঋণ গ্রহণের নীতি লেনদেনের ভারসাম্যসহ অর্থনীতির অনেক সূচক এবং নীতির যথার্থতা নিয়েও তখন প্রশ্ন উঠে।
২০১৮ সালে প্রবৃদ্ধির তথ্যে বিস্তর ফারাক নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রথম বার দ্বন্দ্বে জড়ান মুস্তফা কামাল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। যদিও লোটাস কামাল ওই বছরের এপ্রিলে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ হবে বলে দাবি করেন। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ছিল, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে বড়জোর ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এডিবির পক্ষ থেকেও সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা হয়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের ডাটাকে চ্যালেঞ্জ করে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘আমাদের ডাটাই সঠিক।’ সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাংককে ‘আলটিমেটাম’ দিয়ে অচিরেই বিবিএসের সঙ্গে বসে ডাটা সংশোধনের জন্য সময়ও বেঁধে দিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। করোনাকালে সারা দুনিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি যখন নেতিবাচক, তখনও লোটাস কামালের যাদুতে বাংলাদেশের জিডিপি’র এক আজগুবি তথ্য হাজির করা হয়েছিল। এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখানো হয় ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি চেপে রাখতে বহু বছর ধরেই হাসিনার সরকার প্রকৃত তথ্য আড়ালে রেখেছে। দশ টাকা দরে চাল খাওয়ানোর টোপ ফেলা হাসিনার পনের বছরের শাসনামলে দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের মাঝে চরম হতাশা তৈরি হয়। ২০০৫ সালে বাজারে প্রতিকেজি চালের গড় মূল্য ছিল ২৪ টাকা। ২০০৫ থেকে ২০১০ সময়কালে এ মূল্য ছিল ২৭-২৮ টাকা। হাসিনার ক্ষমতায় আসার পরই বাজার সিন্ডিকেটের কবলে নিত্যপণ্যর দাম বাড়তে থাকে। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে চালের দাম এক লাফে বেড়ে হয় ৪৫ টাকা। চালের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে তেল, চিনি, ডাল, আটার দাম। তবে অবাক করার বিষয় সেই সাথে মানুষের আয় তেমন না বাড়লেও অর্থনীতির সূত্র পাল্টে দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমতে থাকে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে আসে। ওই বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয় মাত্র ৫ দশমিক ২২ ভাগ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর পর থেকে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখীই ছিল। মূল্যস্ফীতির এই নিম্নহার জালিয়াতির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।
মানুষের গড় আয় নিয়েও ডাহা মিথ্যাচার করেছে হাসিনার সরকার। বাংলাদেশে গৃহস্থালি আয় ও ব্যয় সমীক্ষা ২০২২ প্রতিবেদন অনুযায়ি ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১২ বছরে গড় গৃহস্থালি আয় ১১ হাজার ৪৭৯ টাকা থেকে বেড়ে ৩২ হাজার ৪২২ টাকায় দেখানো হয়। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরো সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
মিথ্যাচার হয়েছে দারিদ্রতা নিয়ে। হাসিনার চাটুকাররা দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশে গরিব মানুষ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাদের সাজানো পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০ থেকে ২০২২ সালে দৈনিক ২.১৫ ডলারের নিচে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা ১৮.২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ প্রতি ৫ বছরে প্রায় ৫ শতাংশ হ্রাস। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর সংশ্লিষ্টরা বলছেন এর কোন ভিত্তি নেই।
এভাবে সাজানো তথ্যের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়েছে অর্থনীতির মূল প্রাণ ব্যাংকিং খাত। ব্যাংক খাতে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার পরও খেলাপি গ্রাহককের সেই ঋণ গোপন রেখে কৌশলে একই গ্রাহককে দেয়া হতো নতুন ঋণ। তথ্য জালিয়াতির এই প্রক্রিয়ায় ধামাচাপা দেয়া ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ এখন ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণের ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯১০ কোটি টাকাই হাসিনার পনের বছরের। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টদের মতে প্রকৃত খেলাপির পরিমাণ অনেক বেশি।
রিজার্ভ নিয়েও জালিয়াতি করেছে হাসিনার আওয়ামী সরকার। ৪৫ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ দেখানো হয়েছিলো কাগজে-কলমে। আর্থিক খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’র গবেষণা পরিচালক ড. বজলুল হক খন্দরকার বিগত হাসিনা সরকারের বানোয়াট পরিসংখ্যানকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উল্লেখ করে ভবিষ্যতে এ ধরণের ভয়ঙ্কর তথ্য জালিয়াতি রোধে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়ার দাবি করেন।
তার কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পরিসংখ্যান জালিয়াতি যে রাজনৈতিক ভাবে হচ্ছে তা আপনারা জেনেও নিরব থাকার কারণ কি ছিলো? উত্তরে তিনি আমার দেশকে বলেন, বিগত দেড় দশকে আর্থিক খাতের পরিসংখ্যান নিয়ে যা হয়েছে তার সবই মনগড়া ও বানোয়াট। সেখানে যেমন বিশেষজ্ঞদের মতামত উপক্ষো করা হয়েছে, তেমনি সাজানো তথ্য তৈরিতে ছিলো কঠোর নজরদারি।
হাসিনার বানোয়াট পরিসংখ্যান বিষয়ে প্রথম বারের মতো বিশ্বব্যাংক ও এডিবিকে সর্তক করেছিলেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক। ২০২০ এবং ২০২৩ সালে আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান এ নিয়ে বিস্তর তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশের প্রধান দুই উন্নয়ন সহযোগী, বিশ্বব্যাংক ও এডিবিকে চিঠি দিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাংক দায়সাড়া ভাবে চিঠির উত্তর দিলেও, এডিবি ছিলো চুপ।
এই প্রতিবেদকের কাছে চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বিকার করে ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেহরিন আহমেদ মাহবুব জানান, তাদের হাতে ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর একটি চিঠি এসেছিলো সাউথ এশিয়ান পলিসি ইনিশিয়েটিভ এর পক্ষ থেকে। ঐ চিঠিতে বিশ্ব ব্যাংককে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের ভয়াবহ দুর্নীতি ও পরিসংখ্যান জালিয়াতির কথা তুলে ধরা হয়। মেহরিন আহমেদ বলেন, ঐ চিঠি প্রাপ্তির একদিন পর ১২ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষ থেকে জবাব পাঠানো হয়।
পরিসংখ্যান জালিয়াতির সুস্পষ্ট তথ্য তুলে ধরা ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবরের সেই চিঠির একটি কপি সংগ্রহ করে দেখা যায় সেখানে সাতটি বিষয়ে বিশ্বব্যাংককে ব্যবস্থা নেয়ার কথা তুলে ধরা হয়। এর প্রথমটিই ছিলো অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান জালিয়াতির বিষয়। হিসাবের গরমিলের বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষন করে মাহমুদুর রহমান লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান পরিসংখ্যানে বিশাল গরমিল রয়েছে। রপ্তানি, আমদানি, রেমিট্যান্স এবং বিদেশি মুদ্রা স্থানান্তরের হিসাব সঠিক নয়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর রপ্তানি আয়ের তথ্য মিলছে না।’
অর্থ পাচারের বিষয়ে বলা হয়েছিলো, ‘শেখ হাসিনা এবং তার ওলিগার্করা গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন দেশে এবং নিরাপদ জায়গায় পাচার করেছেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এরকম বহু-জাতীয় দুর্নীতির একটি উদাহরণ।’
ড. মাহমুদুর রহমান বিশ্বব্যাংককে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার জন্য দায় এড়াতে পারে না। তারা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের ভুয়া জিডিপি পরিসংখ্যানকে গ্রহণ করেছে এবং এমনকি কখনো কখনো এগুলোকে আরও বাড়িয়ে দেখিয়েছে। আমি আশা করি, বিশ্বব্যাংক এই পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করবে এবং এর কর্মকর্তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখবে।
বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে সাপি অনুরোধ করছিলো বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ লুটপাট করা সরকারের সব তহবিল স্থগিত করা, নতুন ঋণ প্রদান বন্ধ এবং শেখ হাসিনা সরকারকে আন্তর্জাতিক ভাবে ‘অর্থনৈতিক অচ্ছুত’ হিসাবে ঘোষণা ।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেহরিন আহমেদ মাহবুব দৈনিক আমার দেশকে জানান, তারা সাপিকে বিশ্বব্যাংকের জবাব পাঠিয়েছিলেন। সেই জবাবে অবশ্য সুস্পষ্ট কিছুই বলেনি বিশ্বব্যাংক। ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর সাপি বরাবর বিশ্বব্যাংকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত যে সুশাসন এবং স্বচ্ছতা টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূলভিত্তি। আমাদের অর্থায়িত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে, আমরা দুর্নীতির বিষয়ে শূন্য সহনশীলতা বজায় রাখি এবং নিশ্চিত করি যে অর্থ যথাযথ উদ্দেশ্যে ও বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভূটানের ডিরেক্টর আব্দুলায়ে সেক।
পরিসংখ্যান জালিয়াতির বিষয়টি সতর্ক করে দিয়ে আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান তার আগে ২০২০ সালের ৬ জুলাই চিঠি দেন এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ এর কাছে। তিনি সেখানে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেন ‘এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক একটি দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী সরকারকে অর্থায়ন করছে।’
ড. মাহমুদুর রহমান এডিবিকে জানান, ‘আমি ভুলভাবে ভেবেছিলাম যে এডিবি স্বচ্ছতা, গণতান্ত্রিক শাসন, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে মূল্য দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার উল্লেখিত সকল ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার নজির সৃষ্টি করেছে।’
আমার দেশ সম্পাদক এডিবিকে জানিয়েছিলেন, ‘এডিবি কর্তৃক শেখ হাসিনার সরকারকে অন্ধভাবে সমর্থনের কারণে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এডিবি যেমন সরকারের পক্ষপাতিত্ব করছে, তেমনি সরকারের ভুল পরিসংখ্যানকেও যাচাই-বাছাই ছাড়াই সমর্থন দিচ্ছে।’
এ বিষয়ে ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ২০২০ সালের লেখা এই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি এডিবি। তবে বিশ্ব ব্যাংক একটি দায়সারা জবাব দিয়েছিল।
বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে বানোয়াট পরিসংখ্যান নিয়ে এডিবি দায় এড়াতে পারে কিনা বা এডিবি কীভাবে দায়বদ্ধ থাকবে? এমন প্রশ্ন করা হলে সংস্থাটির বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের এক্সটার্নাল রিলেশন টিম লিডার গোবিন্দ বার একটি লিখিত বিবৃতি পাঠান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘উচ্চ-মানের তথ্য প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণ ও কার্যকর প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাল্টিল্যাটারাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকগুলো, যেমন এডিবি, তাদের সদস্য দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক তথ্য প্রণয়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থাগুলো প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে, আর আমাদের কিছু প্রক্ষেপণ, যা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি সূচকগুলোর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, তা কখনো কখনো সরকারি পূর্বাভাস থেকে ভিন্ন হতে পারে। এডিবি আমাদের সদস্য দেশগুলোর নির্ভরযোগ্য, সময়োপযোগী, এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সঠিক তথ্য উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের সব ধরনের সরকারি পরিসংখ্যান তৈরি ও প্রকাশ করে থাকে। এক সময় এটি একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠান ছিলো। তবে লোটাস কামাল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই এর অধীন বিবিএসকে পুরোপুরি জালিয়াতি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। অভিযোগ রয়েছে সে সময় বিবিএসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিপিআই শাখার দক্ষ সৎ কর্মকর্তাদের একযোগে সরিয়ে দেয়া হয়।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাবেক এক পরিচালক নিজের নাম প্রকাশে অপারগতা জানিয়ে বলেন, গত দেড় দশকে প্রতিষ্ঠানটিতে কথা বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না। পরিসংখ্যান নিয়ে কেউ ন্যূনতম আপত্তি তুললে বা কথা বলার চেষ্টা করলে ঢাকার বাইরে বা কম গুরুত্বপূর্ণ শাখায় বদলি করে দেয়া হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ন্যাশনাল একাউন্টিং উইং এর পরিচালক রফিকুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, অতীতে এখানে অনেক কিছুই ঘটেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। তথ্য সংগ্রহে কোন নীতিমালা মানা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে এ ধরণের সুযোগ আর তৈরি হবে না। ইতিমধ্যে তারা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ শুরু করেছেন। আন্তর্জাতিক মানদন্ডের বাইরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই বলেও তিনি জানান।
পরিসংখ্যান জালিয়াতি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থউপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আমার দেশকে বলেন, ‘মূলত একটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি থেকে শুরু করে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নির্ধারণ এবং অর্থনৈতিক নানান নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিসংখ্যান সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করে থাকে। তবে হাসিনা সরকার পরিসংখ্যান জালিয়াতি করে দেশের জনগনের সঙ্গে প্রতারণা করে গেছেন।’
হাসিনা সরকারের পরিসংখ্যান জালিয়াতির কারণে দেশের প্রকৃত রপ্তানি আয় নিয়ে ধোঁয়াশা ছিলো বহুদিন ধরেই। তবে রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীরা সরকারি সুবিধা ভোগী হওয়ায় নিরব থেকেছেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। তাই ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে বর্তমানে বিকেএমইএ’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ হাতেম। তিনি আমার দেশকে বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানিসহ বিভিন্ন খাতে তারা দীর্ঘদিন ধরেই তথ্যের বড় জালিয়াতি দেখে আসছেন। কিন্তু তাদের বক্তব্য বিগত সরকার আমলে নেয়নি। তিনি বলেন, ২০২২ সালেও রপ্তানি আয়ের হিসাবে বড় গড়মিল আসে। সেই থেকেই আমরা বলছি যে, ইপিবির রফতানি তথ্যে ভুল আছে। কিন্তু আমাদের কথা সেভাবে আমলে নেওয়া হয়নি।’
বিগত সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনিয়ম বিষয়ে এই সরকার একটি কমিটি করেছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন নামে এই কমিটি তাদের রিপোর্টও জমা দিয়েছে। রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে জিডিপি, মূল্যস্ফীতি ও মাথাপিছু আয়ের পরিসংখ্যানে গোঁজামিল ছিলো। জনগণকে এক ধাঁধার মধ্যে ফেলে ‘উচ্চতর প্রবৃদ্ধির' কাল্পনিক গল্প শোনানো হয়েছে এতো বছর। কমিটি মনে করে, রাজনৈতিকভাবে বাহবা পাওয়ার জন্য জিডিপির হার ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে, বাস্তবতার সঙ্গে যার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার ছিল ইসলামবিদ্বেষী। ইসলামকে দেশ থেকে উৎখাত করাই ছিল তাদের মূল টার্গেট’
১৫ ঘণ্টা আগেএখন শেখ হাসিনাকে দেখভালের দায়িত্ব ভারতেরই এবং ভারত সেই দায়িত্ব নিয়েছে। শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময়ের জন্য ভারতেই থাকবেন এটাই এখন সবচেয়ে বড় সত্যি। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা ইসুতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি হলেও তাকে আশ্রয় দেওয়া ছাড়া ভারতের সামনে আর কোনো পথ নেই।
২০ ঘণ্টা আগেজুলাই বিপ্লবের দিন ৫ আগস্ট সাড়ে ১২ ঘণ্টা সংসদ ভবনের বাংকারে আত্মগোপনে ছিলেন সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর সেনাবাহিনী তাকে ক্যান্টনমেন্টে সেনা হেফাজতে নিয়ে যায়।
২ দিন আগেবঙ্গভবনের দরবার হল। রাষ্ট্রপতির জন্য অপেক্ষা করছেন অতিথিরা। আসনে বসে আছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমর্ষ ও ভীতসন্ত্রস্ত রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন দরবার হলে প্রবেশ করলেন। একে একে সবার সঙ্গে হাত মেলালেন।
২ দিন আগে