Ad

সুমনকে হত্যা করে যুবলীগের সন্ত্রাসীরা

জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৫৯
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ৩৫

অভাব-অনটনের সংসারের বাবার আয় দিয়ে দুই ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ জোগানো সম্ভব ছিল না। আর তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি স্থানীয় এক ব্রডব্যান্ডের দোকানে খণ্ডকালীন চাকরি নেয় সুমন ।

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল, তখন যমুনা তীরের সিরাজগঞ্জও উত্তপ্ত। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা সিরাজগঞ্জ শহরে মিছিল বের করে। সেই মিছিলে মুক্তিপাগল ছাত্র-জনতার সঙ্গে যোগ দেন সুমন। বাবাকে না জানিয়ে সেই মিছিলে যোগ দিয়ে হাজারো জনতার সঙ্গে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে স্লোগানে কন্ঠ মিলান। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় এস এস রোডের ইলিয়ড ব্রিজের কাছে যুবলীগের সন্ত্রাসীরা মিছিলে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সমুন। শহীদের কাতারে যুক্ত হয় তার নাম।

শহীদ সুমন শেখ (২৮) সিরাজগঞ্জ শহরের গয়লা মহল্লার গঞ্জের আলী পুত্র, বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী কাঙাল শেখের নাতি।

সুমন শেখ ছোট থেকেই রাজনৈতিক সচেতন। বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতেই আগস্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নেন তিনি।

পিতামাতা, দুই ভাই, এক বোন নিয়ে সুমনের পরিবার। সংসারে ছিল অভাব। বাবা কালীবাড়ী বাজারে একটি চায়ের দোকান করেন, মা গৃহিণী। সিরাজগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি (কারিগরি) পাস করার পর সুনামগঞ্জ পলিটেকনিকে ডিপ্লোমা পড়ার সুযোগ পান। পিতার আয় দিয়ে সংসার ও লেখাপড়ার খরচ চলে না বলে স্থানীয় একটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। বাবার দোকানে মাঝে মাঝে সহযোগিতা করেন। সুমনের বড় ভাই রুবেল দোকানে সার্বক্ষণিক কাজ করেন। একমাত্র বোন আদুরী খাতুন সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যালে পাস করেছেন ২০২২ সালে।

যুবলীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ সুমন শেখের পিতা গঞ্জের শেখ বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে সুমন আমার দোকানে আসে। আমি বাজার করে দিলে বাড়িতে নিয়ে যায়। সকাল ১০টায় ছাত্র-জনতার মিছিলে যোগ দেয় আমার অজান্তেই। সকাল ১১টায় খবর পাই সুমনের বুকে গুলি লেগেছে। নর্থবেঙ্গল হাসপাতালে নিয়ে গেছে তাকে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে যাই। গিয়ে শুনি সুমন ইতোমধ্যে মারা গেছে। মুহূর্তেই আমার সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেলো।

কেঁদে কেঁদে সুমনের বাবা আরো বলেন, তাকে বিয়ে করানোর অনেক চেষ্টা করেছি। অনেক পাত্রীও দেখেছি, কিন্তু সে রাজি হতো না। বলতো ভালো চাকরি পেয়ে বাড়ি পাকা করার পর বিয়ে করবো। তার জন্য আর পাত্রী দেখতে হবে না। ছেলে চলে গেছে, তাকে তো আর ফিরে পাবো না। আমি বেঁচে থাকতে যেন ছেলে হত্যার বিচার দেখি।

সুমনের বড় ভাই রুবেল শেখ বলেন, মানুষ রক্ত দেয়, কিন্তু মুক্তি আসে না। আমার ছোট ভাইকে বিনা কারণে হত্যা করলো, তাদের শাস্তি চাই। বর্তমান সরকারের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী জানতে চাইলে বলেন, আমার বোন সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা পাস করেছে। তার একটি চাকরির ব্যবস্থা করলে আমাদের পরিবারের অভাব ঘুচবে।

শহীদ সুমনের একমাত্র ছোট বোন আদুরী খাতুন বলেন, আমরা দাদা একজন ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমার ভাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মিছিলে গিয়ে খুন হয়েছেন। আমরা এই হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সুমনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।

ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত