Ad

সাকিব এখন সম্পদ না সমস্যা!

এম. এম. কায়সার
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৫৫

তার ফর্ম: চলতি বছর ৫টি টেস্ট খেলেছেন সাকিব। কোনো হাফসেঞ্চুরি নেই। সর্বোচ্চ ৩৬। তিনবার আউট সিঙ্গেল ডিজিটে। বোলিংয়েও পারফরম্যান্স সাধারণ মানের। বছরজুড়ে টেস্ট ম্যাচে ১৩ উইকেট। ২০২৪-এ কোনো ওয়ানডে ম্যাচ খেলেননি সাকিব। এই বছর সবচেয়ে বেশি ১২ ম্যাচ খেলেন সাকিব টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। কিন্তু পারফরম্যান্স পাস করার মতো নয়। ১২ ম্যাচে সাকুল্যে একটা হাফসেঞ্চুরি। ১১ ইনিংসে ছয়বার সিঙ্গেল ডিজিটে শেষ তার ইনিংস। এই ১২ ম্যাচে তার উইকেট শিকার সংখ্যা মাত্র ৯। আরেকটু বিস্তারিত বললে ছয় ম্যাচে উইকেট শূন্য!

এই ফর্মকে আপনি কী বলবেন? গড়পড়তারও নিচে। সাধারণ মানের। ম্যাচ উইনার তো প্রশ্নই আসে না।

তার রাজনীতি: গত বছর বিশ্বকাপের পর জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে রাজনীতিতে লাফিয়ে নেমে পড়েন সাকিব আল হাসান। ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ একজন ক্রিকেটার এমনভাবে রাজনীতিতে নামার এখতিয়ার রাখেন কি না সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। জনসেবার বুলি ছড়িয়ে সাকিবের এই রাজনীতিতে নামার সিদ্ধান্তই আজ তাকে ক্রিকেট থেকে যে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। মূলত ক্ষমতা ও সুবিধা লুটতে সাকিব পলিটিক্সে নামেন। তবে তার এই ‘ট্রিক্স-ই’ তাকে ডোবায়। ক্রিকেট মাঠের একনিষ্ঠ সমর্থন ও আর রাজনীতির মাঠের সস্তা হাততালিতে যে অনেক পার্থক্য সেটা এখন সাকিব বুঝছেন বেশ। জুলাই বিপ্লবের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার হেঁয়ালি আচরণ সাধারণ মানুষকে ভীষণ কষ্ট দেয়। বুকে গুলি খেয়ে রাজপথে ছাত্র-জনতা মারা যাচ্ছে আর ফেসবুকে তিনি হাসিমুখে ছবি দিচ্ছেন। স্বজনহারা হয়ে যখন কারও চোখের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি বিত্ত বৈভবের আনন্দের ফোয়ারায় ফেসবুকে বিলাসবহুল গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর ছবি দিচ্ছেন। সাকিবের এই মনোভাবে সাধারণ জনতা অনেক কষ্ট পেয়েছিল, সেই দায়-ই এখন চুকাতে হচ্ছে তাকে পরদেশি হয়ে। হত্যা মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে। চেক জালিয়াতি মামলাও রয়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বেরিয়েছে। এমন সব মামলায় সাকিবের চেয়ে অনেক হেভিওয়েট আওয়ামী রাজনীতিবিদ এখন কারাগারে, রিমান্ডে, আদালত চত্বরে। সাকিবের সামনেও এখন মাঠের ক্রিকেট ছাপিয়ে হাতকড়া, পুলিশ ভ্যান, জামিন, কারাগার এসব শব্দ এবং শঙ্কা বেশি ভাসছে! এই সংকটে পড়ার পর থেকে সাকিব শুধু দেশের বাইরে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন। দেশের মাটিতে খেলার সুযোগ আর হলো না তার। নিকট ভবিষ্যতেও যে খুব শিগগিরই সাকিব দেশে ফিরে খেলতে পারবেন- এমন সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। দলের সঙ্গে না থেকে, অনুশীলন এড়িয়ে শুধু বিদেশের মাটিতে সিরিজ বা টুর্নামেন্টে খেলতে সাকিবের জন্য এমন ‘পৃথক নিয়ম’ ক্রিকেটীয় সংহতির বিপরীত সুর।

তার ইনজুরি: ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় থেকেই চোখের রেটিনার জটিলতায় ভুগছেন সাকিব। ধেয়ে আসা বল দেখতে তার সমস্যা হচ্ছে। বিসিবির চিকিৎসক জানান, এক্সট্রাফোভাল সেন্ট্রাল রোগে ভুগছেন সাকিব। যা বাম চোখের সেরাস কোরিওরেটিনোপ্যাথি। এই রোগে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। সাকিব এই সমস্যা সমাধানের জন্য দাঁতে স্ট্র্যাপ চেপে ঘাড় আরও সোজা করে রাখার নতুন কৌশল নেন। তার এই চেষ্টা জানান দেয় সমস্যা কাটাতে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। তবে ঘাড় সোজা রাখার তার এই চেষ্টা ঠিক থাকলেও ব্যাটিংয়ের মনোযোগের ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে পড়ে। আর তাই ব্যাট হাতে কখনোই তাকে খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি। সফলও হতে পারেননি।

অবৈধ বোলিং অ্যাকশন: ক্যারিয়ারে এই প্রথমবারের মতো বোলিং অ্যাকশন নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন সাকিব। ইংলিশ কাউন্টি লিগ তার বোলিং অ্যাকশনকে অবৈধ ঘোষণা দিয়েছে। সেই সংকট কাটাতে সাকিব বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষাও দেন। কিন্তু সেখানেও পাস করতে পারেননি। দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা দিতে যান চেন্নাইয়ের বায়ো-মেকানিক্যাল ল্যাবে। সেই পরীক্ষার ফল এখনো জানা যায়নি। নিজের বোলিং অ্যাকশনে বৈধতা আনতে অ্যাকশনেও বদল এনেছেন সাকিব। নতুন বোলিং অ্যাকশনে তিনি মাঠের ক্রিকেটে কতখানি সফল হবেন তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

আসলে সার্বিক অর্থেই সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ার এখন অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে। টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে বিদায় নিয়েছেন তিনি। ওয়ানডেতে এখনো বহাল। ফেব্রুয়ারির চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলে সেই ফরম্যাট থেকেও বিদায় নেওয়ার নিজের সুপ্ত ইচ্ছার কথা আগেই জানিয়েছিলেন তিনি। তবে তার সাম্প্রতিক ফর্ম, রাজনৈতিক অভিলাষ, ইনজুরি, অবৈধ ঘোষিত বোলিং অ্যাকশন এবং দেশের মাটিতে অপাঙ্‌ক্তেয়, গ্রেপ্তার না হওয়ার গ্যারান্টি খোঁজা, শুধু বিদেশে খেলার খায়েশ- এসব অনুষঙ্গ যোগ করলে একটাই উত্তর মিলছে সাকিব আর সম্পদ নন, ক্রমশ সমস্যা।

সরি সাকিব!

ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত