আলফাজ আনাম
বঙ্গভবনের দরবার হল। রাষ্ট্রপতির জন্য অপেক্ষা করছেন অতিথিরা। আসনে বসে আছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমর্ষ ও ভীতসন্ত্রস্ত রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন দরবার হলে প্রবেশ করলেন। একে একে সবার সঙ্গে হাত মেলালেন। বিষণ্ণ রাষ্ট্রপতির হাত তখন কাঁপছে। এই দৃশ্য দরবার হলে সামনের সারিতে বসা রাজনীতিকদের দৃষ্টি এড়ায়নি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর বঙ্গভবনের দরবার হলে মাগরিবের নামাজের পর রাজনৈতিক নেতারা ও তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক হয় রাষ্ট্রপতির। এর আগে ক্যান্টেনমেন্টেই রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকা-উজ-জামান।
সেদিন বঙ্গভবনে কী ঘটেছিল? উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি সে সময়কার পরিস্থিতি তুলে ধরে আমার দেশকে বলেন, প্রেসিডেন্ট এসে সবার সঙ্গে হাত মেলালেন। নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর মান্নাকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর আমাকে সাইফুল ভাই বলে জড়িয়ে ধরেন। যদিও তার সঙ্গে আগে কখনো দেখা হয়নি। সে সময় তিনি অস্থির ছিলেন, কাঁপছিলেন।
বঙ্গভবনে জামায়াতে ইসলামীর আমিরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা শেখ মোহাম্মাদ মাসউদ। সেই সন্ধ্যার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি যখন সামনে বসা জাতীয় নেতাদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিলেন, তখন তিনি ছিলেন খুবই বিমর্ষ। তার সঙ্গে হাত মেলানোর সময় তিনি কাঁপছিলেন। তিনি ছিলেন ভীত ও সন্ত্রস্ত। বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিমর্ষ ও হতাশ।
রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে হাত মেলানোর পর রাষ্ট্রপতি তার আসনে বসেন। এরপর সূচনা বক্তব্য রাখেন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। দেশে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেনাপ্রধান জানান, আমরা জাতীয় নেতাদের নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে বসেছিলাম। এই পরিস্থিতিতে আমরা আলোচনা করেছি একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করার বিষয়ে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো এগিয়ে আসায় তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামাল দেওয়া দরকার। এখন একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়া প্রয়োজন।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি অগ্রাধিকারে রাখতে হবে। কারণ, তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বর্তমান অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য সমর্থন করে জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ অন্য নেতারা বক্তব্য দেন। মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর জানান, এ সময় দ্বিধান্বিত রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমরা তো কয়েক দিনের মধ্যে ইনটারিম গভর্নমেন্ট করব, তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’ তখন সেনাপ্রধান বলেন, ‘না। আপনি রাষ্ট্রপতি_ রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী। আপনি এটা কালকেই করতেই পারেন।’ প্রেসিডেন্ট এরপর চুপ করে থাকেন।
আলোচনার একপর্যায়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক রাষ্ট্রপতির কাছে জানতে চান, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র তিনি পেয়েছেন কি না? বিষয়টি এখানে যারা উপস্থিত আছেন তাদের এবং জাতির কাছে স্পষ্ট হওয়া দরকার। মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর ও শেখ মোহাম্মাদ মাসউদ আমার দেশ-কে বলেন, সাইফুল হকের এই প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি স্পষ্টভাবে জানান, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি পদত্যাগপত্র পেয়েছেন। সাইফুল হক আমার দেশ-কে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল হামিদুল হক দেশের পরিস্থিতি অতিরঞ্জিতভাবে তুলে ধরে বলেন, আপনারা দেশের যে অবস্থার কথা তুলে ধরেছেন, তার চেয়েও পরিস্থিতি ভয়াবহ। তিনি আরও বলেন, তার কাছে তথ্য আছে, সাতটি থানা সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সব পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
এ পর্যায়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এখন মার্শাল ল’ জারি করা দরকার। জিএম কাদেরের এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান উপস্থিত রাজনৈতিক দলের নেতারা। প্রতিবাদের মুখে অবস্থান পরিবর্তন করে কাদের বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে সেনা মোতায়েনের কথা বলেছেন। আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মার্শাল ল’ জারির কথা বলেননি। ল’ অ্যান্ড অর্ডার ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এখনো দেশে ল’ অ্যান্ড অর্ডার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে তার মার্শাল ল’ জারির প্রস্তাবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাইফুল হক ও শেখ মোহাম্মদ মাসউদ।
বঙ্গভবনে আলোচনার একপর্যায়ে মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর আয়ানাঘরে বন্দিদের সেদিনই মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান। এ সময় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, আয়নাঘর বলে তো আমার কিছু জানা নেই। আসলে এমন কিছু আছে নাকি?
সে সময়কার ঘটনা তুলে ধরে মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বলেন, তিনি বঙ্গভবনে থাকা অবস্থায় জানতে পারেন, গুম ও আটক থাকা ব্যক্তিদের স্বজনরা ডিজিএফআই অফিসের সামনে জড়ো হয়েছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কিছু সেনা অফিসার। বিষয়টি জানার পর রাষ্ট্রপতির সামনে তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতি তখন বলেন, ‘আয়নাঘর বলে আসলে কিছু আছে নাকি?’ জবাবে মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আয়নাঘর আছে কি নেই, আপনিও জানেন না, আমিও জানি না। এখানে ডিজিএফআইয়ের ডিজি উপস্থিত আছেন। তিনি বলতে পারবেন, আয়নাঘর আছে কি নেই। যদি থেকে থাকে তাহলে তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত।’ তার বক্তব্যের পর সেনাপ্রধান বলেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন। এর ফলে পরের দিন গুম হওয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমিসহ অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ সময় সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। রাষ্ট্রপতি এ সময় জানান, তিনি জানতে পেরেছেন, সংসদ ভবনে ভাঙচুর চলছে। সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে জামায়াতসহ ও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও কথা বলেন। এ বিষয়ে আলোচনার সময় বলা হয়, সংসদ ভেঙে দেওয়ার কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতা আছে। ফলে কিছুটা সময় লাগবে।
অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা ফয়জুল করীম নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন।
সরকার গঠন নিয়ে নানা প্রস্তাবের মধ্যে জামায়াতের আমির বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের কারণে ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি এ সময় আন্দোলনে শহীদ ও আহত ছাত্রদের জন্য সবার কাছে দোয়া করার আহ্বান জানান। সিদ্ধান্ত হয় এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে দোয়া করা হবে। সবাই উঠে দাঁড়ান। দোয়া করেন মাওলানা ফয়জুল করীম।
বৈঠকের সময় সামনের সারিতে বসে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, হামিদুর রহমান আজাদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, মাহমুদুর রহমান মান্না, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, গণসংহতির জোনায়েদ সাকি এবং জামায়াতের আমিরের সঙ্গে থাকা শেখ মোহাম্মাদ মাসউদ। এছাড়া বঙ্গভবন থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, সেদিন বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। হেফাজতে ইসলামীর মাওলানা মামুনুল হক, মনির কাসেমি ও মাহবুবর রহমান, জাকের পার্টির শামিম হায়দার, খেলাফত মজলিসের মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ, গণঅধিকার পরিষদের অ্যাডভোকেট গোলাম সারওয়ার জুয়েল, ফিরোজ আহমদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আব্দুল্লাহ আল হোসাইন, আরিফ তালুকদার, ওমর ফারুক, মোবাশেরা করিম মিমি ও ইঞ্জিনিয়ার মো. আনিছুর রহমান।
বঙ্গভবনে লিখিত সিদ্ধান্ত : তিন বাহিনী প্রধানের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে এই বৈঠকটি হয় বলে বঙ্গভবন থেকে গণমাধ্যমকে সেদিন জানানো হয়। এতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিতি ছিলেন। বৈঠকে চারটি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সভায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করা হয়।
সভায় অনতিবিলম্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবাইকে ধৈর্য ও সহনশীল আচরণের আহ্বান জানানো হয়। সেনাবাহিনীকে লুটতরাজ ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এবং সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় আটক সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি যেন কোনোভাবেই বিনষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে সভায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
এসব সিদ্ধান্তের আলোকে বঙ্গভবন থেকে ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার কথা জানানো হয়।
সেনা ভবনের ঘটনাবলি
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান হাসিনার পলায়নের আগের রাতেই রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। বিএনপি নেতা মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর জানান, চার আগস্ট রাতে তাকে জানানো হয়, সেনাপ্রধান পরের দিন ৫ আগস্ট সকালে তার সঙ্গে কথা বলতে চান। মিটিংটি হবে ওয়ান টু ওয়ান। এরপর তিনি সকাল ১০টায় সেনা ভবনে উপস্থিত হন। এই বৈঠক প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর আমার দেশ-কে বলেন, সেনাপ্রধান তার সঙ্গে আলোচনায় তিনটি বিষয়ে কথা বলেন।
সেনাপ্রধান তাকে বলেন—‘১. আমরা কোনো ধরনের রক্তপাতের অংশীদার হব না। ২. আমি কোনো ক্ষমতা চাই না। ৩. দেশের পরিস্থিতি নিয়ে দ্রুত সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার ইতি টানতে চাই।’ তখন মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর জানতে চান, ‘স্টেকহোল্ডার বলতে কাদের বোঝাচ্ছেন?’ জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কথা তিনি বোঝাচ্ছেন।’ সেনাপ্রধান অনুরোধ করেন, ‘জেনারেল আকবর যেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের এই দায়িত্বটি নেন। যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে তিনি তাদের সঙ্গে বসতে চান। তা দ্রুত করতে হবে।’
ভারতীয় সেনাপ্রধানের ফোন
এরপর ১০টা ২৫ মিনিটে সেনাপ্রধান তাকে জানান, ‘ইনডিয়ার সেনাপ্রধান সাড়ে ১০টার দিকে তাকে ফোন করবেন।’ তাৎক্ষণিকভাবে মেজর জেনারেল আকবর চলে আসার জন্য উঠে দাঁড়ান। এ সময় সেনাপ্রধান বলেন, ‘আপনি ইচ্ছা করলে থাকতে পারেন। আপনি শুনতে পারেন, আমি তাকে কী বলি।’ মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ‘আমাকে বিশ্বাস করার জন্য ধন্যবাদ। তবে বিষয়টি না শোনা আমাদের জন্য ভালো হবে।’ এরপর তিনি দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে যান।
এরপর মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাকে জানানো হয়, দুপুরে সেনাপ্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। পরে মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বেলা দেড়টায় আবার সেনা ভবনে পৌঁছান। সে সময় তিনি আরও কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাদের সেখানে দেখতে পান, যাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল হামিদ যোগাযোগ করেছেন। ২টার দিকে সেনাপ্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগ করেছেন। আমরা এখন একটি ইনটারিম গভর্নমেন্ট করব। তিনি এ সময় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সহযোগিতা চান। এতে সবাই সম্মতি দেন।
বেলা ২টার কিছু আগে সেনা সদরে পৌঁছেন জিএম কাদের ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এরপর পৌঁছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারা পৌঁছার কিছুক্ষণের মধ্যে জামায়াতের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমান সেনা ভবনে যান। এরপর আসেন জোনায়েদ সাকি, ফিরোজ আহমদ ও অধ্যাপক আসিফ নজরুল। এছাড়া জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা মামুনুল হক ও মুফতি ফয়জুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় রাজনৈতিক দলের নেতারা সেনাপ্রধানের অফিসের বাইরে অতিথিকক্ষে অবস্থান করেন। সে সময় পরবর্তী সরকারে কারা আসতে পারে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কেউ কেউ আলোচনা করেন। উপস্থিত একজন অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কাছে জানতে চান ‘অন্তর্বর্তী সরকারে কারা আসবেন, সে ব্যাপারে কোনো হোমওয়ার্ক আছে কি না?’ জবাবে আসিফ নজরুল জানান, ‘কয়েক দিন ধরে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে, এসব চিন্তা করার সময় কোথায়?’
সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক শুরু হলে রাজনৈতিক দলের নেতারা সবাই পরামর্শ দেন, তিনি যেন জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেন এবং জানান শিগগিরই একটি বেসামরিক সরকার গঠন করা হবে। সেনাপ্রধান এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমানকে দেশবাসীকে শান্ত থাকতে টেলিভিশনে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান। এ সময় তারা বলেন, ক্যানটনমেন্ট থেকে তাদের কথা বলা ঠিক হবে না। বাইরে গিয়ে বলবেন।
এরপর সেনাপ্রধান রাজনৈতিক নেতাদের তার সঙ্গে বঙ্গভবনে যাওয়ার অনুরোধ করেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমে বঙ্গভবনে যেতে রাজি হননি। এ সময় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সবার বঙ্গভবনে যাওয়া উচিত।’ সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমার পাশে আপনারা থাকুন।’ এরপর সবাই বঙ্গভবনে যেতে রাজি হন। এর আগে বৈঠকে হেফাজত নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহর উপস্থিতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মাওলানা মামুনুল হকসহ আরও দুই আলেম। তাকে শেখ হাসিনার দোসর বলে আখ্যায়িত করা হয়। ফলে বঙ্গভবনে মুফতি ফয়জুল্লাহকে আর নেওয়া হয়নি।
একটি মিনিবাস ও জিপে চড়ে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারা বঙ্গভবনের পথে রওনা হন। অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জোনায়েদ সাকি ও ফিরোজ আহমদ জিপে রওনা হন। মিনিবাসে ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ডাক্তার শফিকুর রহমান, জিএম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ফয়জুল করীম, মামুনুল হকসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা।
রাজনৈতিক নেতাদের বহনকারী জিপ ও মিনিবাস রাস্তায় লাখো মানুষের জনসমুদ্রে ধীরে ধীরে চলতে থাকে। পেছনে ছিল সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি, যেগুলোয় ছিলেন সেনাপ্রধানসহ তিন বাহিনীর প্রধান।
জাহাঙ্গীর গেট পার হওয়ার পর জনস্রোতে আটকে যায় গাড়িগুলো। এ সময় আসিফ নজরুল গাড়ি থেকে নেমে জনতার উদ্দেশে কথা বলেন। অপরদিকে মিনিবাসে থাকা জিএম কাদের ও আনিসুল হক ছিলেন ভীতসন্ত্রস্ত। তারা এ সময় জানালার পর্দা টেনে নিচু হয়ে থাকেন, যাতে কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের নজরে না পড়েন।
মাগরিবের আজানের কিছুক্ষণ পর রাজনৈতিক দলের নেতা ও সেনাপ্রধানের গাড়িবহর বঙ্গভবনে প্রবেশ করে। মিনিবাসটি আগে বঙ্গভবনে প্রবেশ করে। তারপর সেনাপ্রধানের গাড়ি এবং আসিফ নজরুল ও অন্যদের বহন করা জিপ প্রবেশ করে।
বঙ্গভবনে প্রবেশের পর দরবার হলের পাশে একটি কক্ষে মাওলানা ফয়জুল করীমের ইমামতিতে নামাজ আদায় করেন ডাক্তার শফিকুর রহমান, মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুল ইসলামসহ অন্য নেতারা।
এরপর সেনাপ্রধান বঙ্গভবনে পৌঁছালে তার সঙ্গে থাকা সেনা কর্মকর্তারা নামাজ আদায় করেন। এই জামাতে ইমামতি করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এরপর দরবার হলে শুরু হয় বৈঠক। এর মধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হকসহ আরও কয়েকটি দলের নেতারা বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন।
সমন্বয়ক নিয়ে জটিলতা
বঙ্গভবনের দরবার হলে সেদিন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত থাকলেও আন্দোলনের মূল শক্তি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক বা নেতা উপস্থিত ছিলেন না। অভিযোগ ওঠে সমন্বয়ক পরিচয়ে যারা বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন, তারা কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন না। বিষয়টি একাধিক সমন্বয়ক আমার দেশ-কে নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র ও সমন্বয়ক ইব্রাহিম মাহমুদ আমার দেশ-কে জানান, সমন্বয়ক পরিচয়ে বঙ্গভবনে যাওয়া ব্যক্তিরা কেউই সমন্বয়ক ছিলেন না।
সমন্বয়করা কখন কীভাবে বঙ্গভবনে উপস্থিত হলেন, তা নিয়ে জানতে চাইলে শেখ মোহাম্মদ মাসউদ জানান, সমন্বয়ক পরিচয়ে কয়েকজন বঙ্গভবনে প্রবেশের আগে গণসংহতির জোনায়েদ সাকি তৎপর হয়ে ওঠেন। তিনি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জানান, কয়েকজন সমন্বয়ক আসবেন, তাদের যেন দরবার হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। কিছু পরে সমন্বয়ক পরিচয়ে পাঁচজন প্রবেশ করেন। এ ব্যাপারে আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে জোনায়েদ সাকির কাছে জানতে চাইলে তিনি তার ভূমিকার কথা অস্বীকার করে বলেন, তার সঙ্গে কথিত সমন্বয়কদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। তিনি গণতন্ত্র মঞ্চের তিন নেতাকে বঙ্গভবনে ঢুকতে দেওয়ার জন্য সেনা কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছিলেন।
দরবার হলের বৈঠক শেষে তাদের সঙ্গে নিয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন। তাদের ছাত্র প্রতিনিধি ও সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, এ বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই। অপরদিকে মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বলেন, কয়েকজন ছাত্র মিটিংয়ের একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌঁছান। অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও গোয়েন্দাপ্রধানের সঙ্গে তাদের দেখা যায়। তিনি আরও জানান, সেনাভবন ও বঙ্গভবনে ছাত্রদের প্রসঙ্গ আলোচনায় তেমনভাবে আসেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা গুরুত্ব পেয়েছে। তবে কথিত সমন্বয়কদের নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান হয়নি।
বঙ্গভবনের দরবার হল। রাষ্ট্রপতির জন্য অপেক্ষা করছেন অতিথিরা। আসনে বসে আছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমর্ষ ও ভীতসন্ত্রস্ত রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন দরবার হলে প্রবেশ করলেন। একে একে সবার সঙ্গে হাত মেলালেন। বিষণ্ণ রাষ্ট্রপতির হাত তখন কাঁপছে। এই দৃশ্য দরবার হলে সামনের সারিতে বসা রাজনীতিকদের দৃষ্টি এড়ায়নি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর বঙ্গভবনের দরবার হলে মাগরিবের নামাজের পর রাজনৈতিক নেতারা ও তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক হয় রাষ্ট্রপতির। এর আগে ক্যান্টেনমেন্টেই রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকা-উজ-জামান।
সেদিন বঙ্গভবনে কী ঘটেছিল? উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি সে সময়কার পরিস্থিতি তুলে ধরে আমার দেশকে বলেন, প্রেসিডেন্ট এসে সবার সঙ্গে হাত মেলালেন। নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর মান্নাকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর আমাকে সাইফুল ভাই বলে জড়িয়ে ধরেন। যদিও তার সঙ্গে আগে কখনো দেখা হয়নি। সে সময় তিনি অস্থির ছিলেন, কাঁপছিলেন।
বঙ্গভবনে জামায়াতে ইসলামীর আমিরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা শেখ মোহাম্মাদ মাসউদ। সেই সন্ধ্যার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি যখন সামনে বসা জাতীয় নেতাদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিলেন, তখন তিনি ছিলেন খুবই বিমর্ষ। তার সঙ্গে হাত মেলানোর সময় তিনি কাঁপছিলেন। তিনি ছিলেন ভীত ও সন্ত্রস্ত। বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিমর্ষ ও হতাশ।
রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে হাত মেলানোর পর রাষ্ট্রপতি তার আসনে বসেন। এরপর সূচনা বক্তব্য রাখেন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। দেশে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেনাপ্রধান জানান, আমরা জাতীয় নেতাদের নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে বসেছিলাম। এই পরিস্থিতিতে আমরা আলোচনা করেছি একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করার বিষয়ে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো এগিয়ে আসায় তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামাল দেওয়া দরকার। এখন একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়া প্রয়োজন।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি অগ্রাধিকারে রাখতে হবে। কারণ, তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বর্তমান অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য সমর্থন করে জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ অন্য নেতারা বক্তব্য দেন। মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর জানান, এ সময় দ্বিধান্বিত রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমরা তো কয়েক দিনের মধ্যে ইনটারিম গভর্নমেন্ট করব, তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’ তখন সেনাপ্রধান বলেন, ‘না। আপনি রাষ্ট্রপতি_ রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী। আপনি এটা কালকেই করতেই পারেন।’ প্রেসিডেন্ট এরপর চুপ করে থাকেন।
আলোচনার একপর্যায়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক রাষ্ট্রপতির কাছে জানতে চান, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র তিনি পেয়েছেন কি না? বিষয়টি এখানে যারা উপস্থিত আছেন তাদের এবং জাতির কাছে স্পষ্ট হওয়া দরকার। মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর ও শেখ মোহাম্মাদ মাসউদ আমার দেশ-কে বলেন, সাইফুল হকের এই প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি স্পষ্টভাবে জানান, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি পদত্যাগপত্র পেয়েছেন। সাইফুল হক আমার দেশ-কে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল হামিদুল হক দেশের পরিস্থিতি অতিরঞ্জিতভাবে তুলে ধরে বলেন, আপনারা দেশের যে অবস্থার কথা তুলে ধরেছেন, তার চেয়েও পরিস্থিতি ভয়াবহ। তিনি আরও বলেন, তার কাছে তথ্য আছে, সাতটি থানা সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সব পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
এ পর্যায়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এখন মার্শাল ল’ জারি করা দরকার। জিএম কাদেরের এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান উপস্থিত রাজনৈতিক দলের নেতারা। প্রতিবাদের মুখে অবস্থান পরিবর্তন করে কাদের বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে সেনা মোতায়েনের কথা বলেছেন। আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মার্শাল ল’ জারির কথা বলেননি। ল’ অ্যান্ড অর্ডার ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এখনো দেশে ল’ অ্যান্ড অর্ডার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে তার মার্শাল ল’ জারির প্রস্তাবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাইফুল হক ও শেখ মোহাম্মদ মাসউদ।
বঙ্গভবনে আলোচনার একপর্যায়ে মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর আয়ানাঘরে বন্দিদের সেদিনই মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান। এ সময় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, আয়নাঘর বলে তো আমার কিছু জানা নেই। আসলে এমন কিছু আছে নাকি?
সে সময়কার ঘটনা তুলে ধরে মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বলেন, তিনি বঙ্গভবনে থাকা অবস্থায় জানতে পারেন, গুম ও আটক থাকা ব্যক্তিদের স্বজনরা ডিজিএফআই অফিসের সামনে জড়ো হয়েছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কিছু সেনা অফিসার। বিষয়টি জানার পর রাষ্ট্রপতির সামনে তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতি তখন বলেন, ‘আয়নাঘর বলে আসলে কিছু আছে নাকি?’ জবাবে মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আয়নাঘর আছে কি নেই, আপনিও জানেন না, আমিও জানি না। এখানে ডিজিএফআইয়ের ডিজি উপস্থিত আছেন। তিনি বলতে পারবেন, আয়নাঘর আছে কি নেই। যদি থেকে থাকে তাহলে তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত।’ তার বক্তব্যের পর সেনাপ্রধান বলেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন। এর ফলে পরের দিন গুম হওয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমিসহ অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ সময় সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। রাষ্ট্রপতি এ সময় জানান, তিনি জানতে পেরেছেন, সংসদ ভবনে ভাঙচুর চলছে। সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে জামায়াতসহ ও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও কথা বলেন। এ বিষয়ে আলোচনার সময় বলা হয়, সংসদ ভেঙে দেওয়ার কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতা আছে। ফলে কিছুটা সময় লাগবে।
অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা ফয়জুল করীম নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন।
সরকার গঠন নিয়ে নানা প্রস্তাবের মধ্যে জামায়াতের আমির বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের কারণে ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি এ সময় আন্দোলনে শহীদ ও আহত ছাত্রদের জন্য সবার কাছে দোয়া করার আহ্বান জানান। সিদ্ধান্ত হয় এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে দোয়া করা হবে। সবাই উঠে দাঁড়ান। দোয়া করেন মাওলানা ফয়জুল করীম।
বৈঠকের সময় সামনের সারিতে বসে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, হামিদুর রহমান আজাদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, মাহমুদুর রহমান মান্না, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, গণসংহতির জোনায়েদ সাকি এবং জামায়াতের আমিরের সঙ্গে থাকা শেখ মোহাম্মাদ মাসউদ। এছাড়া বঙ্গভবন থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, সেদিন বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। হেফাজতে ইসলামীর মাওলানা মামুনুল হক, মনির কাসেমি ও মাহবুবর রহমান, জাকের পার্টির শামিম হায়দার, খেলাফত মজলিসের মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ, গণঅধিকার পরিষদের অ্যাডভোকেট গোলাম সারওয়ার জুয়েল, ফিরোজ আহমদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আব্দুল্লাহ আল হোসাইন, আরিফ তালুকদার, ওমর ফারুক, মোবাশেরা করিম মিমি ও ইঞ্জিনিয়ার মো. আনিছুর রহমান।
বঙ্গভবনে লিখিত সিদ্ধান্ত : তিন বাহিনী প্রধানের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে এই বৈঠকটি হয় বলে বঙ্গভবন থেকে গণমাধ্যমকে সেদিন জানানো হয়। এতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিতি ছিলেন। বৈঠকে চারটি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সভায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করা হয়।
সভায় অনতিবিলম্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবাইকে ধৈর্য ও সহনশীল আচরণের আহ্বান জানানো হয়। সেনাবাহিনীকে লুটতরাজ ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এবং সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় আটক সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি যেন কোনোভাবেই বিনষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে সভায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
এসব সিদ্ধান্তের আলোকে বঙ্গভবন থেকে ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার কথা জানানো হয়।
সেনা ভবনের ঘটনাবলি
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান হাসিনার পলায়নের আগের রাতেই রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। বিএনপি নেতা মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর জানান, চার আগস্ট রাতে তাকে জানানো হয়, সেনাপ্রধান পরের দিন ৫ আগস্ট সকালে তার সঙ্গে কথা বলতে চান। মিটিংটি হবে ওয়ান টু ওয়ান। এরপর তিনি সকাল ১০টায় সেনা ভবনে উপস্থিত হন। এই বৈঠক প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর আমার দেশ-কে বলেন, সেনাপ্রধান তার সঙ্গে আলোচনায় তিনটি বিষয়ে কথা বলেন।
সেনাপ্রধান তাকে বলেন—‘১. আমরা কোনো ধরনের রক্তপাতের অংশীদার হব না। ২. আমি কোনো ক্ষমতা চাই না। ৩. দেশের পরিস্থিতি নিয়ে দ্রুত সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার ইতি টানতে চাই।’ তখন মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর জানতে চান, ‘স্টেকহোল্ডার বলতে কাদের বোঝাচ্ছেন?’ জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কথা তিনি বোঝাচ্ছেন।’ সেনাপ্রধান অনুরোধ করেন, ‘জেনারেল আকবর যেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের এই দায়িত্বটি নেন। যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে তিনি তাদের সঙ্গে বসতে চান। তা দ্রুত করতে হবে।’
ভারতীয় সেনাপ্রধানের ফোন
এরপর ১০টা ২৫ মিনিটে সেনাপ্রধান তাকে জানান, ‘ইনডিয়ার সেনাপ্রধান সাড়ে ১০টার দিকে তাকে ফোন করবেন।’ তাৎক্ষণিকভাবে মেজর জেনারেল আকবর চলে আসার জন্য উঠে দাঁড়ান। এ সময় সেনাপ্রধান বলেন, ‘আপনি ইচ্ছা করলে থাকতে পারেন। আপনি শুনতে পারেন, আমি তাকে কী বলি।’ মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ‘আমাকে বিশ্বাস করার জন্য ধন্যবাদ। তবে বিষয়টি না শোনা আমাদের জন্য ভালো হবে।’ এরপর তিনি দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে যান।
এরপর মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাকে জানানো হয়, দুপুরে সেনাপ্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। পরে মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বেলা দেড়টায় আবার সেনা ভবনে পৌঁছান। সে সময় তিনি আরও কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাদের সেখানে দেখতে পান, যাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল হামিদ যোগাযোগ করেছেন। ২টার দিকে সেনাপ্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগ করেছেন। আমরা এখন একটি ইনটারিম গভর্নমেন্ট করব। তিনি এ সময় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সহযোগিতা চান। এতে সবাই সম্মতি দেন।
বেলা ২টার কিছু আগে সেনা সদরে পৌঁছেন জিএম কাদের ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এরপর পৌঁছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারা পৌঁছার কিছুক্ষণের মধ্যে জামায়াতের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমান সেনা ভবনে যান। এরপর আসেন জোনায়েদ সাকি, ফিরোজ আহমদ ও অধ্যাপক আসিফ নজরুল। এছাড়া জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা মামুনুল হক ও মুফতি ফয়জুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় রাজনৈতিক দলের নেতারা সেনাপ্রধানের অফিসের বাইরে অতিথিকক্ষে অবস্থান করেন। সে সময় পরবর্তী সরকারে কারা আসতে পারে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কেউ কেউ আলোচনা করেন। উপস্থিত একজন অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কাছে জানতে চান ‘অন্তর্বর্তী সরকারে কারা আসবেন, সে ব্যাপারে কোনো হোমওয়ার্ক আছে কি না?’ জবাবে আসিফ নজরুল জানান, ‘কয়েক দিন ধরে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে, এসব চিন্তা করার সময় কোথায়?’
সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক শুরু হলে রাজনৈতিক দলের নেতারা সবাই পরামর্শ দেন, তিনি যেন জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেন এবং জানান শিগগিরই একটি বেসামরিক সরকার গঠন করা হবে। সেনাপ্রধান এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমানকে দেশবাসীকে শান্ত থাকতে টেলিভিশনে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান। এ সময় তারা বলেন, ক্যানটনমেন্ট থেকে তাদের কথা বলা ঠিক হবে না। বাইরে গিয়ে বলবেন।
এরপর সেনাপ্রধান রাজনৈতিক নেতাদের তার সঙ্গে বঙ্গভবনে যাওয়ার অনুরোধ করেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমে বঙ্গভবনে যেতে রাজি হননি। এ সময় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সবার বঙ্গভবনে যাওয়া উচিত।’ সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমার পাশে আপনারা থাকুন।’ এরপর সবাই বঙ্গভবনে যেতে রাজি হন। এর আগে বৈঠকে হেফাজত নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহর উপস্থিতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মাওলানা মামুনুল হকসহ আরও দুই আলেম। তাকে শেখ হাসিনার দোসর বলে আখ্যায়িত করা হয়। ফলে বঙ্গভবনে মুফতি ফয়জুল্লাহকে আর নেওয়া হয়নি।
একটি মিনিবাস ও জিপে চড়ে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারা বঙ্গভবনের পথে রওনা হন। অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জোনায়েদ সাকি ও ফিরোজ আহমদ জিপে রওনা হন। মিনিবাসে ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ডাক্তার শফিকুর রহমান, জিএম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ফয়জুল করীম, মামুনুল হকসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা।
রাজনৈতিক নেতাদের বহনকারী জিপ ও মিনিবাস রাস্তায় লাখো মানুষের জনসমুদ্রে ধীরে ধীরে চলতে থাকে। পেছনে ছিল সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি, যেগুলোয় ছিলেন সেনাপ্রধানসহ তিন বাহিনীর প্রধান।
জাহাঙ্গীর গেট পার হওয়ার পর জনস্রোতে আটকে যায় গাড়িগুলো। এ সময় আসিফ নজরুল গাড়ি থেকে নেমে জনতার উদ্দেশে কথা বলেন। অপরদিকে মিনিবাসে থাকা জিএম কাদের ও আনিসুল হক ছিলেন ভীতসন্ত্রস্ত। তারা এ সময় জানালার পর্দা টেনে নিচু হয়ে থাকেন, যাতে কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের নজরে না পড়েন।
মাগরিবের আজানের কিছুক্ষণ পর রাজনৈতিক দলের নেতা ও সেনাপ্রধানের গাড়িবহর বঙ্গভবনে প্রবেশ করে। মিনিবাসটি আগে বঙ্গভবনে প্রবেশ করে। তারপর সেনাপ্রধানের গাড়ি এবং আসিফ নজরুল ও অন্যদের বহন করা জিপ প্রবেশ করে।
বঙ্গভবনে প্রবেশের পর দরবার হলের পাশে একটি কক্ষে মাওলানা ফয়জুল করীমের ইমামতিতে নামাজ আদায় করেন ডাক্তার শফিকুর রহমান, মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুল ইসলামসহ অন্য নেতারা।
এরপর সেনাপ্রধান বঙ্গভবনে পৌঁছালে তার সঙ্গে থাকা সেনা কর্মকর্তারা নামাজ আদায় করেন। এই জামাতে ইমামতি করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এরপর দরবার হলে শুরু হয় বৈঠক। এর মধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হকসহ আরও কয়েকটি দলের নেতারা বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন।
সমন্বয়ক নিয়ে জটিলতা
বঙ্গভবনের দরবার হলে সেদিন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত থাকলেও আন্দোলনের মূল শক্তি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক বা নেতা উপস্থিত ছিলেন না। অভিযোগ ওঠে সমন্বয়ক পরিচয়ে যারা বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন, তারা কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন না। বিষয়টি একাধিক সমন্বয়ক আমার দেশ-কে নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র ও সমন্বয়ক ইব্রাহিম মাহমুদ আমার দেশ-কে জানান, সমন্বয়ক পরিচয়ে বঙ্গভবনে যাওয়া ব্যক্তিরা কেউই সমন্বয়ক ছিলেন না।
সমন্বয়করা কখন কীভাবে বঙ্গভবনে উপস্থিত হলেন, তা নিয়ে জানতে চাইলে শেখ মোহাম্মদ মাসউদ জানান, সমন্বয়ক পরিচয়ে কয়েকজন বঙ্গভবনে প্রবেশের আগে গণসংহতির জোনায়েদ সাকি তৎপর হয়ে ওঠেন। তিনি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জানান, কয়েকজন সমন্বয়ক আসবেন, তাদের যেন দরবার হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। কিছু পরে সমন্বয়ক পরিচয়ে পাঁচজন প্রবেশ করেন। এ ব্যাপারে আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে জোনায়েদ সাকির কাছে জানতে চাইলে তিনি তার ভূমিকার কথা অস্বীকার করে বলেন, তার সঙ্গে কথিত সমন্বয়কদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। তিনি গণতন্ত্র মঞ্চের তিন নেতাকে বঙ্গভবনে ঢুকতে দেওয়ার জন্য সেনা কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছিলেন।
দরবার হলের বৈঠক শেষে তাদের সঙ্গে নিয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন। তাদের ছাত্র প্রতিনিধি ও সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, এ বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই। অপরদিকে মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বলেন, কয়েকজন ছাত্র মিটিংয়ের একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌঁছান। অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও গোয়েন্দাপ্রধানের সঙ্গে তাদের দেখা যায়। তিনি আরও জানান, সেনাভবন ও বঙ্গভবনে ছাত্রদের প্রসঙ্গ আলোচনায় তেমনভাবে আসেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা গুরুত্ব পেয়েছে। তবে কথিত সমন্বয়কদের নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান হয়নি।
‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার ছিল ইসলামবিদ্বেষী। ইসলামকে দেশ থেকে উৎখাত করাই ছিল তাদের মূল টার্গেট’
২ ঘণ্টা আগেএখন শেখ হাসিনাকে দেখভালের দায়িত্ব ভারতেরই এবং ভারত সেই দায়িত্ব নিয়েছে। শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময়ের জন্য ভারতেই থাকবেন এটাই এখন সবচেয়ে বড় সত্যি। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা ইসুতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি হলেও তাকে আশ্রয় দেওয়া ছাড়া ভারতের সামনে আর কোনো পথ নেই।
৭ ঘণ্টা আগেবিগত সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনিয়ম বিষয়ে এই সরকার একটি কমিটি করেছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন নামে এই কমিটি তাদের রিপোর্টও জমা দিয়েছে। রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে জিডিপি, মূল্যস্ফীতি ও মাথাপিছু আয়ের পরিসংখ্যানে গোঁজামিল ছিলো। জনগণকে এক ধাঁধার মধ্যে ফেলে ‘উচ্চতর প্রবৃদ্ধির' কাল্পনিক গল্প শোনানো হয়েছে
৮ ঘণ্টা আগেজুলাই বিপ্লবের দিন ৫ আগস্ট সাড়ে ১২ ঘণ্টা সংসদ ভবনের বাংকারে আত্মগোপনে ছিলেন সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর সেনাবাহিনী তাকে ক্যান্টনমেন্টে সেনা হেফাজতে নিয়ে যায়।
১ দিন আগে